Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাল ছেড়ে দেয়ার পিছনে ১০টি খোঁড়া যুক্তি এবং সেগুলো দমনের উপায়

আচ্ছা বলুন তো, আপনি এখন যেরকম জীবনযাপন করছেন, সেটি কি আপনার নিজের কাছে পছন্দসই? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এর কারণটা কি ভেবেছেন? আপনি কি আপনার নিজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যথাসাধ্য কিংবা আদৌ চেষ্টা করছেন? নাকি নিজের অপারগতার সমর্থনে বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন নিজেকেই।

আসলে সাফল্য এমনই একটি বিষয়, যেটি একজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি আর একজন উদ্যমী ব্যক্তির কাছে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়। মূলত সফল মানুষদের সাফল্যের রহস্য হচ্ছে, তাঁরা অজুহাতে কখনোই হাল ছেড়ে দেন না। বরং নিজেদের চেষ্টায় খুঁজে নেন সাফল্যের পথ। তাঁরা হতাশ হয়ে বসে থেকে নিজেদের মন্দভাগ্যকে দোষারোপ করেন না। 

নিজেকে অক্ষম ভাবছেন কেন? আপনি কেবল নিজের প্রয়োজনে সাহসী পদক্ষেপটি নিতে পারছেন না। আপনার শুধু প্রয়োজন এমন কিছুর যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে উজ্জীবিত করবে আর আপনাকে সন্ধান দেবে সাফল্যের পথের। আসুন দেখে নেই, আপনার হাল ছেড়ে দেবার নেপথ্যে থাকা কোন ১০টি অজুহাত কাজ করছে এবং সাথে সাথে এগুলোর প্রতিকারও এখানে উল্লেখ করা হলো।

শুরুটা যে করব কিভাবে?

বদ অভ্যাস বা অজুহাতের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা সবার থেকে এগিয়ে, আমরা শুরুতেই ভেস্তে যাই। আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আমরা শুরুতেই কি করি, কাজের শেষ নিয়ে মনের মধ্যে একটা ছক আঁকি। কিন্তু বিপত্তিটা তখনই লাগে যখন দেখি ছকটা আমাদের চিরাচরিত আইন অনুযায়ী মিলছে না। ফলশ্রুতিতে আমরা সেই কাজটা শুরু করা নিয়ে গড়িমসি শুরু করে দেই। ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হতেই পারে, কিন্তু সেটা মহা পরিবর্তন বললে ভুল হবে।

বলা যায়, প্রচুর পরিমাণ তথ্য বা জ্ঞান অর্জন করে সেটিকে যদি বাস্তব জীবনে কাজে না লাগানো যায়, তাহলে সেই তথ্য বা জ্ঞান অর্থহীন। এর জন্য ছোট্ট একটি সমাধান হচ্ছে বরং আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বেছে নিন। এরপরে নিজের জীবনে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। এটি সম্পন্ন হলে তারপরে অন্য কাজ বাছাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিন। তবে মনে রাখবেন, আপনি যা-ই করছেন, সেটা আপনার কাজে তৎপর হবার জন্যই। যখন আপনার লেভেল আপনি বুঝতে পারবেন, তখন আরেকজনকে সেটি বুঝিয়ে বলবেন। তখন সেটা হবে আপনার দায়িত্ব।

সময় কোথায়?

এটি সবচেয়ে সাধারণ একটি অজুহাত যা শুধু আপনি নন, অনেকেই দিয়ে থাকেন। আপনি সময় খরচ করেই প্রতিদিন ঘুমান, টেলিভিশন দেখেন, গুজব নিয়ে মাথা ঘামান, নিজের ভাগ্যকে গালমন্দ করেন, তাই তো? তাহলে সময় আপনি পাবেন কোথা থেকে?

সফল মানুষেরা এমন কোনো কাজে সময় খরচ করেন না, যাতে তাঁদের জীবনীশক্তির বাজে অপচয় হয়। এই ধরণের অন্তত একটি কাজ ছেড়ে দিয়ে দেখুন, সাফল্যের পথে আপনি কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন!

স্টিভ জবস বলেছিলেন, “আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি আজ তাই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনি এই প্রশ্নের উত্তর “না” হতো পরপর বেশ কিছু দিন, আমি জানতাম আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে।

লোকে কি বলবে?

শৈশব থেকেই অন্য মানুষের সমালোচনার ভয় আমাদের মনে আসন গেঁড়ে বসে। আপনি আপনার বাবা-মা অথবা অন্য পরিচিতজনদের মতামতের উপরেই নির্ভর করে এসেছেন। এভাবেই আপনার মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয় যে, অন্য মানুষ যেটি মেনে নেবে, সেটিই আপনাকে করতে হবে। কিন্তু মনে রাখুন, আপনার আচরণ অথবা জীবনযাপন অপছন্দ করে, এমন মানুষ সবসময়ই থাকবে। তাই অন্যের মতামতের উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর না করে নিজের ভিতরের অনুভূতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। অন্য মানুষের সমালোচনার ভয়কে কাটিয়ে উঠে স্বাধীন জীবনযাপন করার এটিই শ্রেষ্ঠ পন্থা।

বড্ড বেশি ঝুঁকি হয়ে যায় কি ?

আপনি কি জানেন, আপনি প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই ঘুমাতে যাচ্ছেন? সকালে আপনি সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় জেগে উঠবেন কিনা, এর কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই! তারপরেও ঠিকই আপনি প্রতিরাতে ঘুমাতে যান। পরেরবার যদি ঝুঁকি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, তাহলে নিজেকে বলুন- “যদি আমি জানতাম যে আগামীকাল সকালে আমি জেগে উঠবো কিনা, তাহলে কি আমি ঝুঁকি নিতাম?

আমাকে দিয়ে হবে না!

এই কথা উচ্চারণ করলে বুঝতে হবে, আসলে নিজেকে আপনি এভাবেই দেখে আসছেন। তার চেয়ে বরং নিজেকে বলুন- “আমি পারবই! অন্তত আমি চেষ্টা করে যাব!” নিজেকে ভিন্ন এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করান। আপনি যা চান, সেটি পাবার যোগ্য আপনাকে হতেই হবে, এমনটা কোথায় লেখা আছে? তাহলে নিজের কানে নেতিবাচক কথা কেন বলে চলেছেন?

মনে রাখবেন, এ কথাগুলো কখনোই আপনার নিজের কথা নয়, এগুলো অন্যদের কথা। তাই এতে আপনার কান দেবারও কিছু নেই।

আসলে আমার তো কিছুই জানা নেই এ বিষয়ে !

আপনার পছন্দসই বিষয়গুলো সম্বন্ধে আপনি সহজেই জেনে নিতে পারেন ইন্টারনেট থেকে। সফল আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বক্তব্য, চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানুন। তাঁদের সফলতার পিছনে কৌশল বোঝার চেষ্টা করুন। তাঁদের সাফল্যও কিন্তু রাতারাতি আসে নি। তবে তাঁরা উপলব্ধি করেছেন তাঁদের করণীয় কি, আর সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শ্রম দিয়েছেন।

ব্যর্থতার ভয় থেকেই যায়!

ব্যর্থতার চাইতে আসলে সাফল্যের ভয়টাই জোরালো বেশি। অনিরাপত্তাই আপনার জন্য আতঙ্কের অনুভূতি বয়ে নিয়ে আসে। “সফলতা এলে তো আমার জীবন আর এরকমটা থাকবে না! এরকম অবস্থার জন্য তো আমি একেবারেই মানসিকভাবে প্রস্তুত নই! সাফল্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব তো? সাফল্যের সাথে সাথে আরও দায়িত্ব, আরও কর্তব্য সামনে আসবেই! অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সামাল দিয়ে চলব কি ভাবে?” ভাবুন, আপনার মনোযোগ কোনদিকে? সাফল্যের দিকে, নাকি ব্যর্থতার দিকে? যেটি আপনার দৃষ্টিতে আপনার জীবনের জন্য ভাল, সেদিকেই মনোযোগ দিন। মনে রাখবেন, সাফল্য অর্জনের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে মনোযোগ দেওয়া।

এখানে আমার সুযোগ কি হবে ?

সব জায়গাতেই সম্ভাবনা থাকে, সুযোগ থাকে। আপনি সেগুলো দেখতে পাচ্ছেন না, কারণ আপনি বিশ্বাসই করেন না যে সম্ভাবনা আদৌ আছে! নতুন নতুন সম্ভাবনা আপনার সামনে আসবে, নিশ্চিত থাকুন। আপনি সেগুলো কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিজেও সম্ভাবনা তৈরি করার সুযোগ পাবেন।

সফল মানুষেরা নিজেদের সম্ভাবনা তৈরি করে নেন, অলসভাবে অপেক্ষা করেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, সম্ভাবনা এমন কোনো জিনিস নয় যা সামনে আসবে আপনার ইচ্ছামতো।

যা হয় হোক, আমি বর্তমান অবস্থাতেই ভাল আছি!

যদি আপনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন, তাহলেও কি বলবেন আপনি ভাল আছেন? যতই কষ্টকর হোক না কেন, বর্তমানের উপরেই সবকিছু নির্ভরশীল। যদি অবস্থার পরিবর্তন চান, তাহলে কেন আপনি বর্তমানে পড়ে থাকবেন? আপনার আরামদায়ক কিন্তু নেতিবাচক পরিবেশটির মায়া ত্যাগ করে আরেকটু ভাল পরিবেশ তো আপনি আশা করতেই পারেন। ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে নিজের অভ্যাস পাল্টাতে সচেষ্ট হোন।

স্বপ্ন যে অনেক বড়!

কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছোট কি বড় তা বিচার করতে বসা বোকামি। কারো লক্ষ্য অনেক বড় দেখে যদি আপনি এটাকে অসম্ভব বলে ধরে নেন, তবে এতে আপনার মানসিক দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। আপনার লক্ষ্য যদি অনেক বড় হয়, চেষ্টা করতে পারেন ছোট ছোট ধাপে আপনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের। নিজেকে মনে করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে আপনি আপনার লক্ষ্যমাত্রাটি লিখেও রাখতে পারেন। পৃথিবীর অনেক কীর্তিমান মানুষ গৌরব অর্জন করেছেন তাঁদের ‘বড়’ লক্ষ্যমাত্রার কারণেই।

মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের সাধ্যের মধ্যে ব্যাপক হারে গাড়ি তৈরির ‘বড়’ লক্ষ্যমাত্রা না থাকলে আজ আমরা হেনরি ফোর্ডের নাম জানতাম না। আঠারোটি Grand Slam Tournament জয়ের ‘বড়’ লক্ষ্যমাত্রা না থাকলে রজার ফেদেরার দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন কি না সন্দেহ। ভেবে দেখুন, আপনার লক্ষ্যমাত্রা কি এগুলোর চাইতেও ‘বড়’?

 তথ্যসূত্র

১) lifeshowyouliveit.com/excuses/

২) wealthygorilla.com/10-daily-excuses-put-motivation-hold/

Related Articles