ভালোলাগার জিনিসগুলো সবসময়ই কি আমাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট? আপনি কি সত্যিই জানেন কোন কাজটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে, আপনার গভীর অনুরাগের জায়গা আসলে কোনটা? যে কাজ করে চলেছেন জীবিকা হিসেবে, তাতে সন্তুষ্ট আপনি? জীবন যেভাবে কাটাচ্ছেন, সেটাই চেয়েছিলেন তো? প্রশ্নগুলোর উত্তর সবার কাছে এত সহজ হয় না। জীবনে যা কিছু প্রিয়, সেসবের কাছাকাছি থাকা তো পরের কথা, সেগুলো ঠিকঠাক চিনে নিতেও অনেকেই হেরে যান। অধরা থেকে যায় ভালোলাগার জিনিসগুলো। অথচ একটা জীবন কেটে যায় সাফল্য আর পরাজয়ের হিসাব কষতে কষতে!
সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদনে লেখক গ্রিগ ল্যাভয় কিছু উপায় বাতলেছেন নিজের প্রিয় জিনিসগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হবার। এই লেখাটা মূলত কতগুলো প্রশ্নের সমষ্টি যা আপনি নিজেকে করতে পারেন। আর উত্তরে পেয়ে যাবেন আপনার গভীরতম অনুরাগের জিনিসগুলো। নিজেকে আবিষ্কারের আয়োজনে আপনাকে স্বাগতম!
আমাদের সবারই নিজেদের কিছু নিয়মনীতি থাকে, নির্ধারিত মানদন্ড থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেদের ভালোলাগা বা মন্দলাগাকে সংজ্ঞায়িত করি। কোনো একটা কাজ করতে গিয়ে স্রেফ বিরক্ত হচ্ছি, তো সেটা অপছন্দের জিনিস হয়ে যায়। আবার একটা কাজ করে ভীষণ আনন্দ লাগলে সেটাই হয় আমাদের প্রিয় কাজ। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টা এমনই, তবে কেবল এতটুকুই নয়।
পছন্দের জিনিসগুলোর কোনো তালিকা করেছেন কখনো? কোনো বস্তু, কোনো উপলক্ষ, কোনো কাজ তা সে যতই সামান্য হোক কিন্তু আপনাকে আনন্দ দেয়; তালিকাবদ্ধ হয়ে যাক। আত্মতৃপ্তি নিয়ে বাঁচার একটা জরুরি দিক হচ্ছে জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আনন্দগুলো সম্পর্কে জানা, এবং সেসব উপভোগ করা। যে কাজগুলো আপনার কাছে ভীষণ আনন্দের, সেগুলো আপনার কাছে কতটুকু সময় পাচ্ছে, খবর নিন। আপনাকে অভিভূত করার মতো কর্মকান্ড কোনগুলো? পাহাড়ে চড়া, সমুদ্রস্নান, কিংবা গবেষণাগারের কাজ নিয়ে কাটানো সময়, সবচেয়ে প্রিয় কোনটা? ক্যালেন্ডারের নির্দিষ্ট কোন দিনগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রাখে আপনাকে? নিজেকে জানার আয়োজনে জানতে হবে এই সবকিছুই।
কৌতূহলের কোন জায়গাটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি টানে? দুর্বার জানার ইচ্ছা কোন বিষয়টা বা বিষয়গুলো নিয়ে? কী নিয়ে পড়াশোনা করতে পছন্দ করেন খুব, কিংবা গবেষণা করতে চান কী নিয়ে? নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার ধার শানাই করতে বেছে নেন কোন ক্ষেত্রটা? জীবনের কোন সময়টাতে দুর্দান্ত সাহসী আর সপ্রতিভ ছিলেন? এখন আপনার কাছে সাহসের প্রতিরূপ কেমন? প্রতিটি প্রশ্নের সুনিশ্চিত উত্তর থাকা চাই নিজের কাছে।
অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নিয়ে ভেবেছেন কখনো? অতিপ্রাকৃত গল্প নিয়ে করা সিনেমা, কিংবা বই, বা টিভি সিরিজ পছন্দ করেন? উত্তর হ্যাঁ হলে তবে এটা ভাবুন তো, আপনাকে একটা অতিপ্রাকৃত শক্তি দেয়া হলে আপনি ঠিক কী চাইবেন? সিনেমা দেখা হয় নিশ্চয়ই? কোন ঘরানার সিনেমা সবচেয়ে পছন্দের আর কোন সিনেমাটি বা সিনেমাগুলো অসংখ্যবার দেখা হয়েছে, ভাবুন। প্রিয় সিনেমার বিষয়বস্তুকে বোঝার চেষ্টা করুন।
এমন একটা অবস্থার কথা খেয়াল আছে কি, যখন আপনি নিজের পুরোটা মনোযোগ নিবদ্ধ করে কোনো একটা কাজ করেছেন, সেটা উপভোগ করেছেন কঠিন হলেও, এমনকি সময়ের হিসাবটাও মাথায় রাখেননি? সেই কাজটা কী ছিলো, মনে করে দেখুন। এত নিবেদিত হয়ে করা কোনো কাজ অবশ্যই আপনার প্রবল ভালোলাগার কিছু হবে।
একজন বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে আপনি নিশ্চয় প্রার্থনা করে থাকেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়ে নিন যা কিছু প্রিয় আপনার। কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশিবার আসে আপনার প্রার্থনায়? বেশি করে কোন জিনিসটা চান? এমন একজন ব্যক্তির কথা ভাবুন, যার জীবনবোধ আপনাকে উদ্বুদ্ধ করে। এবার এটা বলুন তো, ঐ ব্যক্তির জীবনযাত্রার কোন দিকটা আপনার বেশি পছন্দের?
আপনার কর্মজীবনে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে চান, সেটা কী হতে পারে? ইতিবাচক কিছু ভাবুন। এমন একটা পরিবর্তন যেটা ভালো প্রভাব বয়ে আনবে আপনার কাজে, সেটা কী? খবরের কাগজ বা টেলিভিশন খবরের খোঁজ রাখা হয়? এটা বলুন তো, কোন খবরগুলো তীব্র ক্ষোভ বা হতাশার জন্ম দেয় আপনার মধ্যে?
জীবনে খুব গাঢ় কোনো অসন্তোষ চাপা রয়েছে আপনার? হয়তো বেড়ে উঠেছেন অনেক পুরনো একটা ক্ষোভ নিজের ভেতর পুষে রেখে। সেটাই আপনাকে চালিত করতে পারে আপনার আকাঙ্খিত জীবনের প্রতি। আমাদের জীবনের বাজে কিছু অনুভূতি, রাগ বা অসন্তোষ এগুলো মাঝেমাঝে এত শক্তিশালী হয়, যে একটু সঠিক পথ দেখানো গেলে এরাই আমাদের ইতিবাচক জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। এমন একটা সিদ্ধান্তের কথা ভাবুন যা আপনি আজকে নিতে পারেন, যার জন্য আগামীতে নিজেকেই ধন্যবাদ দেবেন। কী হবে সেই সিদ্ধান্ত?
জীবনের শেষ প্রান্তে আছেন, ভেবে নিন। মৃত্যু এলো বলে! কাল দিনটাই যদি শেষ দিন হয়, তবে এই জীবনে কোন কাজটা না করার জন্য ভীষণ আফসোস হবে আপনার? ধরুন, আপনি একটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। দুই দিকে দুটো রাস্তা চলে গেছে। হাতে সময় নেই বেশি, দ্রুত বেছে নিতে হবে নিজের যাত্রাপথ। রাস্তা দুটির শুরুতে সাইনবোর্ড রয়েছে। কী লেখা থাকবে আপনার সামনে খোলা থাকা রাস্তা দুটোর সাইনবোর্ডে?
আবারো একটা তালিকা তৈরি করুন। ইচ্ছাপূরণ তালিকা। বাইরের দেশে এটাকে ‘বাকেট লিস্ট’ বলা হয়, যাতে রাখা থাকবে আপনার হরেক শখের নাম যা আপনি জীবনে অবশ্যই করতে চান। তেমন একটা তালিকা করুন নিজের জন্য। পৃথিবীকে বিদায় জানাবার পূর্বে অবশ্যই করতে চাওয়া কাজগুলো কী কী আপনার? স্কুবা ডাইভিং, বাঞ্জি জাম্পিং করার সাধ আছে? কিংবা নিজের একটা দারুণ বইয়ের দোকান হবে, বাবা-মাকে বিদেশ ভ্রমণে নিয়ে যাবেন, একটা লম্বা ইউরোপ ট্যুর? মনে করুন, নিজের কম্পিউটারে একটা বার্তা সাজিয়ে রাখতে পারেন আপনি যা সে নিত্যদিন বারবার আপনাকে মনে করাবে। যেকোনো কিছু, রোজকার কোনো কাজ বা আপনার কোনো স্বপ্ন যা এখনো পূরণ করার বাকি। সেই বার্তাটা কী?
জীবনে কোন সময়টায়, কোন জায়গাতে, কী কাজ করার বেলায়, কোন মানুষগুলোর সাথে থেকে এমনটা বলতে পেরেছেন যে, আপনি এই রূপে নিজেকে ভালোবাসেন? ঐ রূপটাই কি তাহলে সবচেয়ে কাঙ্খিত নয় আপনার নিজের কাছে? আপনার কী মনে হয় ভাবুন দেখি।
জীবন নিয়ে যদি কিছুমাত্রও হতাশা, আক্ষেপ বা স্রেফ মন খারাপ থাকে আপনার, ঝটপট এই কাজগুলো করে সেরে ফেলুন। কয়টা প্রশ্নই তো করবেন নিজেকে, আর দুইখানা তালিকা বানানো লাগবে। এটুকু করার পর নিজেই বুঝে যাবেন, জীবনটা ভালোলাগার পাল্লায় কতটা আছে, বা আদৌ আছেও কিনা। ছেলেমানুষি শোনালেও কাজে দেয়ার মতো উপায় বটে, চেষ্টা করেই দেখুন না একবার!
সময়ের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে হতাশার বুলি আওড়ানোর চেয়ে জীবনে সত্যিই পছন্দের কাজগুলো করছেন কিনা, নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো নয় কি?
ফিচার ইমেজ: radioglobo.globo.com