Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অবিশ্বাস্য ত্বকের রঙের অধিকারী মানুষেরা

মানুষের শরীরের রং নানারকমের হয়। কিন্তু তাই বলে নীল কিংবা সবুজ! হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন অনেক রঙয়ের মানুষ এখন পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে পৃথিবীতে। তাদের কেউ জন্ম থেকেই ভিন্ন বর্ণের, কেউ আবার জন্মের পর নিজের নানারকম কর্মকান্ডের মাধ্যমে গায়ের রঙ পালটে ফেলেছেন। চলুন, দেখে আসি এমন রং বেরঙয়ের কিছু মানুষকে।

দি ক্যানারি গার্লস

কারখানায় ব্যস্ত ক্যানারি গার্লস; Source: Messy Nessy Chic

ক্যানারি গার্লসদের খুঁজে পাওয়া যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। সেইসময় পুরুষেরা যুদ্ধে অংশ নিতে শুরু করলে কারখানার কাজে দলে দলে যোগ দেয় নারীরা। তাদের মধ্যে অনেকেই যোগ দেয় কার্তুজে টিএনটি ভরার কাজে, যুদ্ধোপকরণ তৈরির কারখানায়। না, ব্যাপারটা এমন নয় যে তারা ক্যানারি বা হলদে পাখীর মতো গান গাইতো কাজের সময়। তবে এই কাজে যোগ দেওয়ার ফলে তাদের ত্বক এবং চুলের রঙ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হলুদ হয়ে যায়। এ কাজে সমস্যা আরো ছিল। চর্মরোগ, বুক ব্যথা আর সর্দি তো বটেই, সেইসাথে ছিল বিস্ফোরণের ভয়। তাই এসবকে পাশ কাটিয়ে শরীরের রঙয়ের কথা কারো ভাবার অবসর ছিল না। এই পুরো ঘটনাটির মজার এবং একইসাথে বিপদজনক ব্যাপারটি ছিল এই যে, কেবল নারীরাই নয়, ঐ সময়ে তাদের কোল থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের চামড়াও উজ্জ্বল হলুদ হতে শুরু করে। ফলে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এরপর থেকে শরীরে উজ্জ্বল হলুদ রঙ নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষকে।

উলপিটের সবুজ শিশুরা

১২ শতকের কথা। ইংল্যান্ডের উলপিট গ্রামে কৃষকেরা কাজ করার সময় দেখতে পায় দুটি অনাথ শিশুকে। একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে শিশু। দুজন এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একটু খারাপ লাগার মতোই ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে সেটি এভাবে উল্লেখ করার মতন কী হল, এটাই তো ভাবছেন? আর দশটা অনাথ শিশুদের চাইতে একটু আলাদা এই শিশুগুলোর গায়ের রঙ ছিল সবুজ। আর তাই তাদেরকে নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গ্রামে।

উলপিটের সবুজ শিশুরা; Source: YouTube

সবুজ এই শিশুরা পরিচিত কোনো ভাষায় কথা বলতে পারছিল না। তাই তাদেরকে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই খাবার দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু কোনো খাবারই খেতে চাচ্ছিল না তারা। শেষ পর্যন্ত তাজা শিমের বীজ এনে দিলে সেটা খেতে শুরু করে শিশু দুটি। কে জানে, হয়তো প্রচুর পরিমাণ সবুজ শিমের বীজ খাওয়ার কারণেই এমন ত্বকের রঙ পেয়েছিল তারা। এটি অবশ্য একটা ধারণামাত্র। অনেকে মনে করেন খাবার তালিকা এবং রক্তশূন্যতার কারণেই এমন অদ্ভুত রঙ ধারণ করেছিল তাদের শরীর। ছেলেটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত মেয়েটি বেঁচে যায়। তার শরীরের রঙ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায় আর ইংরেজিও শিখে ফেলে সে। মেয়েটি জানায় যে তারা ‘ল্যান্ড অব সেইন্ট মার্টিন’ থেকে এসেছে। সেখানে সবার ত্বকের রঙ সবুজ আর এমন কোনো সূর্যও নেই। সত্যিই কি তাই? জানা যায় নি।

দি ব্লু ফুগেটস

নীল ত্বকের অধিকারী ফুগেটস পরিবার; Source: blogs.plos.org

জীন থেকে নানারকম শারীরিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তা সেটা সোনালি চুল কিংবা কালো চোখই হোক আর নীল রঙয়ের চামড়াই হোক! অবাক হলেন? ত্বকের রঙ আবার নীল কী করে হয়? হয়। আর এমন এক অদ্ভুত উদাহরণ হলো ফুগেটস পরিবার। একজন বা দুজন নয়, এই পরিবারের অনেকের শরীরের রঙই নীল। ১৮০০ সালের দিকে মার্টিন ফুগেট বিয়ে করেন ফ্রান্সের এক স্থানীয় নারীকে। অবশ্য ফুগেটের দেশ ফ্রান্স ছিল না। সেখানকার অভিবাসী ছিলেন তিনি। মোট সাতটি সন্তান জন্ম দেন এই দম্পতি। আর আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের মধ্যে চারজনের শরীরের রঙ ছিল নীল।

একটা সময় নীল রঙয়ের শরীর আরো দেখা যাওয়া শুরু করে এই অঞ্চলে। বিংশ শতকে ফুগেট পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে দেখা যেত কেউ নীল রঙয়ের শরীর নিয়ে জন্ম নিলেই চিকিৎসকদের কাছে ছুটতে। এমন ত্বকের রঙ দেখার ভাগ্য খুব কম চিকিৎসকেরই হয় অবশ্য! তবে বিনা কারণে নয়, শরীরের একটি বিশেষ জীনের কারণেই এমনটা হয়েছিল ফুগেট পরিবারের। এই জিন জন্ম দিত মেথায়েমোগ্লোবিনায়েমিয়ার, এতে শরীরের রক্ত খুব কম অক্সিজেন বহন করতে পারতো। ফলে রক্ত আরো কালচে রঙ ধারণ করতো আর বাইরে থেকে দেখলে ত্বকের রঙ নীল বলে মনে হত। বর্তমানে এই সমস্যা অনেক কমে গেছে। তাই নীল রঙয়ের মানুষও খুব বেশি দেখা যায় না।

দুধ সাদা গায়ের রঙ

ভাবছেন, এমনটা তো হতেই পারে। হ্যাঁ, তা পারে। তবে আমরা যেটাকে অসম্ভব সাদা বলে জানি, এই সাদা তার চাইতেও বেশি কিছু ছিল। বলছি রানী এলিজাবেথের সময়ের কথা। কেবল রানী এলিজাবেথই নয়, সেসময় আরো অনেকের এমন দুধ সাদা গায়ের রঙয়ের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল। এর কারণ আর কিছু নয়, তৎকালীন এক ধরনের ধাতব পণ্য।

রানী প্রথম এলিজাবেথ; Source: Medical Bag

সীসা দিয়ে তৈরি এই ধাতব তরল দিয়ে মানুষ তাদের পুরো মুখ পলেস্তার করে ফেলতো। কিন্তু তাতে দেখা গেল ভালোর চাইতে খারাপের পরিমাণটাই বেশি। সীসার প্রলেপ ত্বক হালকা ফর্সা করেছিল ঠিকই,  তবে সেই সাথে ত্বকের উপরে কালচে ছোপ রেখে গিয়েছিল। আর এই ছোপকে দূরে সরাতেই আরো বেশি করে সীসার পলেস্তার ব্যবহার করে মানুষ। অস্বাভাবিক রকমের সাদা হয়ে যায় তাদের গায়ের রঙ। অবশ্য এ কারণে বেশ ভুগতে হয়েছে তাদের। মনে করা হয় রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পেছনেও এই সীসার প্রলেপের প্রভাব ছিল। অসম্ভব সাদা ত্বক আর পচে যাওয়া দাঁত, সেই সাথে পড়তে থাকা চুল- সীসার প্রলেপ ব্যবহারের কারণে এমন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন তখনকার দুধ সাদা রঙয়ের অধিকারী নারীরা।

সোনালি-রুপালী রঙয়ের শরীর

স্বর্ণ আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা উপকারী নয়। অনেকে খাবারের সাথে খাবার সাজানোর জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করে থাকেন। এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত অপকারী। সোনা হজম করতে পারে না আমাদের শরীর। ফলে এটি ত্বকের ভিতরেই থেকে যায় আর শুরু হয় ‘গোল্ড পয়জনিং’। ত্বকে জমে থাকা এই স্বর্ণ ত্বকের রঙ পালটে দেয় আর এই পুরো ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘ক্রিসায়াসিস’

কলোডেল সিলভারের প্রভাব; Source: Rebrn.com

তবে কেবল স্বর্ণ নয়, রূপাও এগিয়ে আছে শরীরের রঙকে বদলে দিতে। আরগিরিয়া নামক এক শারীরিক সমস্যা আমাদের ত্বক এবং চোখে রুপা জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরের রঙ হয়ে যায় হালকা নীল। এইডস বা হার্পিস রোগের মতো সমস্যাগুলোকে দূরে রাখতে রেনেসাঁর সময় থেকে মানুষ কলোইডাল সিলভার গ্রহণ করে আসছে। আর তেমনই একজন হলেন পল কারাসন। বর্তমানে পলের শরীরের রঙ নীলচে। না, কোনো অসুখ নেই তার। তবে শরীরের রংটাই কেবল বদলে গিয়েছে। রাজনীতিবিদ স্ট্যান জোনাসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। কলোডেল সিলভার এমন কোনো সমস্যার জন্ম দেবে, ত্বকের রঙ বদলে দিবে- এটা বর্তমানে সবাই জানে। তবে তারপরও কলোডেন সিলভার আপনি ইচ্ছা করলেই কিনতে পারবেন। কেউ যদি নিজের শরীরের রঙ ইচ্ছা করে বদলাতে চায় তাহলে কারই বা কী বলার আছে!

ফিচার ইমেজ: YouTube

Related Articles