Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নতুন মায়েদের মানসিক সমস্যা, তার কারণ ও প্রতিকার

প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি সকলের ক্ষেত্রে একরকম নয়। বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়ের আনন্দ ও উৎকণ্ঠা যতটা না থাকে, সন্তান জন্মানোর পর অনেক মায়েদের মাঝে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস আর চোখে পড়ে না। বরং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে ও আদর করতে অনীহা, বাচ্চার কাছ থেকে দূরে সরে থাকা ইত্যাদি নানা আচরণ অনেক মায়ের ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। বাচ্চা জন্মানোর এক সপ্তাহ পর এ সমস্যা আরো প্রবলভাবে দেখা দেয়।

প্রসবোত্তর মায়ের বিষণ্ণতায় ভারাক্রান্ত চেহারা

প্রায় সময় দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে বললেই মা রেগে যাচ্ছেন। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে বিষন্ন দেখায়। প্রসবোত্তর অনেক মায়েরাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৩ শতাংশ প্রসবোত্তর মায়েরা নানা বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন।

প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যা হওয়ার কারণ সমূহ

  • প্রসবোত্তর মায়েদের মস্তিষ্কের নিউরনে পরিবর্তন
  • মা যদি আগে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকেন
  • অল্প বয়সে মা হওয়া
  • পরিবারের মায়ের মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস থাকলে
  • সদ্যজাত সন্তানের যত্নের ব্যাপারে মায়ের ওপর চাপ
  • মানসিক চাপ
  • প্রথম সন্তান ছেলে না হওয়ায় পরিবারের বয়স্কদের তির্যক কথাবার্তা
  • দাম্পত্য অশান্তি,কলহ ইত্যাদি

মানসিক চাপ গ্রস্থ নতুন মা

প্রসবোত্তর যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন একজন নবজাতকের মা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন

  • অস্থির ও মনমরা থাকা
  • অযথা কান্নাকাটি করা 
  • খেতে না চাওয়া বা পরিমাণে বেশী খেতে চাওয়া 
  • কম ঘুমানো বা ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া 
  • উদ্যমহীন হয়ে পড়া 
  • অতিরিক্ত চিৎকার, চেঁচামেচি করা 
  • হঠাৎ হঠাৎ ভুলে যাওয়া 
  • বন্ধু ও পরিবার থেকে নিজেকে দূরে রাখা 
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব 
  • সবসময় নিজেকে অপরাধী ভাবা 
  • ঘনঘন মাথাব্যথা ও পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি

প্রসব পরবর্তী নবজাতক মায়েরা যে ৫ ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন

১. বেবি  ব্লু (Baby Blue)
২. পোস্টপার্টাম সাইকোসিস  (Postpartum Psychosis)
৩. পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpartum Depression)
৪. পোস্টপার্টাম এনক্সাআইটি (Postpartum Anxiety)
৫. পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post-Traumatic Stress Disorder)

বেবি  ব্লু (Baby Blue)

শতকরা ৫০-৭০ ভাগ প্রসবোত্তর মা বেবি ব্লু সমস্যায় ভোগেন। প্রসবের তিন-চারদিন পর এ ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

নতুন বেবি ব্লু’তে আক্রান্ত মা

প্রসূতি মায়েরা কী কারণে এ ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হন তা এখনও অজানা। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবের পর মায়ের হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ

  • চোখমুখে ঘোলা ঘোলা ভাব
  • ক্ষণে ক্ষণে মনের আবস্থার পরিবর্তন হওয়া
  • অকারণেই কেঁদে ফেলা
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া
  • অনিদ্রা
  • সন্তানের প্রতি অমনোযোগী
  • যে কোনো বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ
  • হঠাৎ হঠাৎ অধৈর্য হওয়া

বেবি ব্লু এবং পোস্টপার্টাম সাইকোসিসের কারণে বিষণ্ণতাগ্রস্থ

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস  (Postpartum Psychosis)

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। প্রতি হাজারে এক থেকে দু’জন প্রসূতি মা এ রোগে আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রসবোত্তর প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তায় এ রোগটি দেখা দেয়।

লক্ষণসমূহ

  • ঘুম না হওয়া
  • যখন তখন বিরক্তি প্রকাশ
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া
  • খাওয়া-দাওয়া ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীন
  • অযথা ভয় পাওয়া
  • সন্তানের যত্ন না নেয়া
  • নবজাতক সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাস

পোস্টপার্টাম সাইকোসিসের লক্ষণসমূহ

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সাইকোথেরাপি, সামাজিক সচেতনতার উন্নয়ন ও এন্টিসাইকোটিক ঔষুধ দ্বারা এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি) ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিছু কিছু রোগীর অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpartum Depression)

১০-১৫% ভাগ মা প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায় ভোগেন। এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০% নারী শিশু জন্মপূর্ব বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন। প্রায় ৫০% প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রসবের দুই সপ্তাহ পর এ সমস্যা শুরু হয়।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশানগ্রস্থ নতুন মা

লক্ষণসমূহ

  • মায়ের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
  • সব কিছুতে উদাস থাকা
  • ক্লান্তিবোধ করা
  • অহেতুক দুশ্চিন্তা
  • বিষাদগ্রস্থ থাকা
  • খাওয়াতে অরুচি
  • ঘুমাতে কষ্ট
  • সন্তানের প্রতি অনাগ্রহ
  • প্রসূতির মনে ধারণা হওয়া যে তার সদ্যজাত সন্তানের কোনো শারীরিক বা মানসিক খুঁত আছে। কাজেই একে মেরে ফেলাই ভালো। প্রসূতি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন।

এ ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের জন্য বিষন্নতা বিরোধী ঔষধ এবং থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। যদি এই রোগ তীব্র আকার ধারণ করে, তবে রোগীকে ইলেকট্রিক শক থেরাপি দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।

 পোস্টপার্টাম এনক্সাইটি (Postpartum Anxiety)

শতকরা ১০ ভাগ প্রসূতি মায়েরা এ ধরনের মানসিক রোগে ভুগতে থাকেন।

লক্ষণসমূহ

  • চরম উদ্বেগে থাকা
  • কোন কারন ছাড়াই চরম অস্বস্তিবোধ হতে থাকা
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট
  • বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • মাথা ঘোরা
  • নির্জীব থাকা
  • শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা
  • পাগল হয়ে যাওয়ার ভয় বা মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত হওয়া

পোস্টপার্টাম এনক্সাইটিতে আক্রান্ত মায়েদের কাছ থেকে শিশুকে কিছু দিনের জন্য একটু দূরে রাখাই শ্রেয়।

এ ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মায়েদের চিকিৎসা হিসেবে স্বাস্থ্যকর নিরিবিলি জায়গা থেকে কয়েকদিন কাটিয়ে আসলে রোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post-Traumatic Stress Disorder)

সন্তান প্রসবের পর ১-৬%  প্রসূতি নারী এরকম সমস্যায় আক্রান্ত হন। স্বাভাবিক প্রসবের বদলে অপরিকল্পিত সিজারিয়ান, সন্তান জন্মানোর মুহূর্তে হঠাৎ মায়ের জটিলতা দেখা দেয়া, শিশু জন্মানোর সময় তীব্র শারীরিক কষ্ট পাওয়া, জন্মানোর পর সন্তানকে যদি আইসিওতে রাখা ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যার কারনে প্রসূতি মা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন।

লক্ষণসমূহ

  • সন্তান জন্মের মুহূর্তগুলো দু:স্বপ্ন হয়ে প্রতিনিয়ত দেখা দেয়া
  • বিষন্নতা
  • অনিদ্রা
  • উদ্বেগ এবং হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই আতঙ্কিত হয়ে পড়া
  • বাস্তবতা এবং জীবন থেকে নিজেকে দূর সরিয়ে রাখা
  • অতীতে কোনো দূর্ঘটনায় পুনরায় স্মৃতি ফিরে আসা এবং ভয়ে নিজেকে সিঁটিয়ে রাখা

এ ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মায়েদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া খুব প্রয়োজন। যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে প্রসূতি মা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার

সন্তান জন্মদান একজন নারীর জীবনে পরম আকাঙ্ক্ষিত ধন। সন্তান প্রসবের পর পর মায়ের দেহে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। নানা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। সন্তান প্রসবের পর মানসিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। রোগের লক্ষণ বোঝার চেষ্টা করা এবং দ্রুত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে সদ্যপ্রসূতির শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, সদ্যজাত শিশুর যত্নে পরিবারের সকল সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই এসব মানসিক সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সন্তান ও মায়ের সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন একটি জাতির সুস্থতার প্রতীক স্বরূপ।

 

This article is in Bangla language. It's about the mental problems faced by the mothers immediately after delivery.

References: 

1. postpartum.net/learn-more/postpartum-post-traumatic-stress-disorder/
2. rcpsych.ac.uk/healthadvice/problemsdisorders/postpartumpsychosis.aspx
3. helpguide.org/articles/depression/postpartum-depression-and-the-baby-blues.htm
4. americanpregnancy.org/first-year-of-life/baby-blues/
5. aafp.org/afp/1999/0415/p2259.html

Featured Image: viatademamica.ro

Related Articles