Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা

লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনেরও অনেকগুলো দিন কাটিয়ে দিয়েছেন। কাজের জায়গায় সুনাম কুড়িয়েছেন এর মধ্যেই। কাজে দক্ষতা, সময়ানুবর্তীতা, বিশদ জ্ঞান- আপনার ভালো দিকের তালিকা অনেকটাই দীর্ঘ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছে যেটা, সেটা হলো আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস- জীবনে সাফল্য এনে দেয়ার অন্যতম মন্ত্র আপনার। এই আত্মবিশ্বাস এমন এক জিনিস যা মানুষের ভেতরে ইতিবাচক মনোভাব জোরদার করে তোলে। আনন্দ, সুরক্ষার অনুভূতি দেয়; প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার শক্তি জোগায় আত্মবিশ্বাস।

আত্মবিশ্বাস, সাফল্যের অন্যতম সূত্র; Source: Aspire Sussex

কিন্তু ভেবে দেখেছেন কখনো, আপনার এত দারুণ বৈশিষ্ট্য পুরোটাই কেবল ইতিবাচক কি না? তার আগে এটা ভাবুন, নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আপনি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট কি না। অথবা, আপনি কি ততটাই আত্মবিশ্বাসী যতটা হতে চেয়েছেন? উত্তরগুলো না-বোধক হলে এই লেখাটি আপনারই জন্য। হয়তো আপনার ভেতরকার প্রবল আত্মবিশ্বাসে এমন কিছু খাদ রয়েছে যা আপনাকে সাফল্যের পথে অনেকদূর যেতে বাধা দিচ্ছে। 

লেখাটা তাদের জন্যেও প্রয়োজনীয় যারা আত্মবিশ্বাসের পথ হাতড়াচ্ছেন। আত্মবিশ্বাসী হবার তথাকথিত যেসব দৃশ্যপট তাদের মগজে রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, আর তাই তারা ঠিকঠাকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারছেন না। হাস্যকর শোনালেও কথাটা সত্য, কিছু জনশ্রুতি এমন থাকেই যেগুলো কি না যেকোনো বিষয়ের প্রতি আপনার চরম ভুল ধারণা তৈরি করে দেয় সহজেই। এমন কিছু শ্রুতি রয়েছে আত্মবিশ্বাস নিয়েও, যেগুলো অবশ্যই সঠিক নয়। সেগুলো সম্পর্কেই জানানো হয়েছে সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদনে

“আত্মবিশ্বাসী হলে কেউ ভীত বা উদ্বিগ্ন হয় না”

এই ধারণাটা আপনার ভেতরেও আছে কি? থাকলে ঝেড়ে ফেলুন দ্রুত। আত্মবিশ্বাস থাকার মানে এই নয় যে আপনি ভীত হবেন না, কখনোই ঘাবড়ে যাবেন না। ডক্টর রস হ্যারিস তার বই দ্যা কনফিডেন্স গ্যাপে এমনটাই বলেছেন। উদ্বেগ, উত্তেজনা এগুলো যেকোনো নতুন কাজ বা প্রচেষ্টার মুখোমুখি হওয়ার স্বাভাবিক অংশ। 

আত্নবিশ্বাসের অর্থ নিজের প্রতি ভরসা রাখা, এমনকি যখন আপনি ভয় পাবেন তখনো; Source: messinialive.gr

নিজেকে মনে করান, কোনো ঝুঁকি নেয়া বা নতুন কাজে হাত দেয়ার সময় ভীত বা উদ্বিগ্ন হওয়া আপনার মনের স্বাভাবিক অবস্থাই প্রকাশ করে। বরং এতে করে আপনি আরো নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি যা করতে যাচ্ছেন তা সত্যিকার অর্থেই বেশ গুরুত্ববাহী।

“আস্থা এমন এক জিনিস, যা হয় কারো মধ্যে রয়েছে, কিংবা নেই”

অথচ, নিজের প্রতি আস্থার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি আপনার জিনগত বৈশিষ্ট্য। বাকি পঞ্চাশ শতাংশের পরিচর্যা করা সম্ভব বিভিন্ন উপায়ে। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন, ঝুঁকি নেয়ার মনোভাব গড়ে তুলুন আরো, এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাসেরই বৃদ্ধি ঘটবে। চিরকাল এক বিন্দুতে স্থির হয়ে থাকার জিনিস আত্মবিশ্বাস নয়। 

খেয়াল রাখুন, পরম আত্মবিশ্বাস বলে আক্ষরিক অর্থে কোনো জিনিস নেই। কোনো মানুষই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র নিয়ে আস্থাশীল নয়। নিজের উপর সন্দেহ দানা বাঁধার মতো সময়ও জীবনে আসবে, এটা বেশ সাধারণ ঘটনা। কখনো নিজেকে নিয়ে সন্দিহান হলে বরং সেটা কাজে লাগান নিজেকেই আরো সমৃদ্ধ করতে।

“আত্মবিশ্বাসের এক রূপ, এইটাই ধারা”

দারুণ আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি কল্পনা করুন তো। মনের মধ্যে কেমন ছবি আকার নিচ্ছে? প্রবল বহির্মুখী একজন মানুষ, দৃঢ়চেতা কেউ? নেতৃত্বপরায়ণ স্বভাব যার, এবং কর্তৃত্ব ফলাতেও যে পটু। হ্যাঁ, এমন ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসী হবে বটে, তবে আত্মবিশ্বাস নামক বিষয়টা স্রেফ এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা তো কেবল একজন এক্সট্রোভার্ট বা বহির্মুখী আত্মবিশ্বাসীর স্বরূপ। ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী যারা, আত্মবিশ্বাস আছে তাদেরও। নিজেদের মূল্যবোধে, দক্ষতায়, কাজের পরিবেশনায় তাদের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পায়। কাজেই আত্মবিশ্বাসী হতে গেলে আপনাকে একজন বহির্মুখী মানুষই হতে হবে, নিজের অন্তর্মুখী স্বভাব নিয়ে আত্মবিশ্বাস ধারণ করা যায় না, এই চিন্তা ভুল। নিজেকে জানিয়ে দিন, আপনি আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন অনেকভাবেই।

“গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শুরু করার আগে আত্মবিশ্বাসী অনুভূতি হওয়া চাই”

সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছেন, কিংবা, হাঁটবেন বলে ভাবছেন! রস হ্যারিসের মতে, আত্মবিশ্বাসের কার্যাবলী আসবে শুরুতে, তারপর আসবে আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি। কাজেই দৃশ্যপট এক্ষেত্রে এরকমটা হবে যে, আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সামলে নিতে পারলে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। সোজাসাপ্টা এই হিসাবটাই নিজেকে বোঝান। কাজ সম্পন্ন করার আগে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব খুঁজে বেড়ানো অর্থহীন, বরং কাজটা ঠিকঠাক মিটে গেলেই আপনি নিজের প্রতি আরো আস্থাশীল হতে পারবেন।

“বিশাল কোনো অর্জনই কেবল পারে কাঙ্খিত আত্মবিশ্বাস এনে দিতে”

বিশাল অর্জন- অবশ্যই তা খুব ভালো কিছু। আপনার মধ্যকার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে বড় বড় অর্জন ভূমিকা রাখবে। কিন্তু, রোজকার যেসব ছোটখাটো কাজ আপনি দারুণভাবে সামলাচ্ছেন, আপনার আত্মবিশ্বাসের কারণ হতে পারে সেগুলোও। কীভাবে আপনি নিত্যদিনের খুব সাধারণ অথচ ঝামেলার একটা কাজ সম্পন্ন করছেন, কেমন করে প্রতিনিয়ত নিজের রাগ প্রশমন করছেন, কিংবা অন্য কারো কাজে সাহায্য করছেন- এই সকল বিষয়ই আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। এমনটা হওয়া জরুরি নয় যে কেবল খুব বড় অর্জনগুলোই হিসাবের খাতায় উঠবে।

জীবনে কেবল খুব বড় কিছু অর্জনেই আত্মবিশ্বাস পাবেন, এই অপেক্ষায় থাকবেন না; Source: Eden Scott

এটা ভেবে দেখেছেন কি, কারো জীবনেরই বেশিরভাগ সময়টা এই “খুব বড় অর্জন” নিয়ে পার হয় না? গোটা জীবন ধরে কেউ নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে না, খেলার আসরে কোনো রেকর্ড ভঙ্গ করছে না। বিশাল অর্জনগুলো নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর, কিন্তু এগুলো জীবনে ঘটবে কখনো কখনো। নিত্যকার ছোটখাট অর্জনগুলোই বরং সব সময়ের সাথী। আর তাই কাজে লাগান এগুলোকেই।

“সমালোচনা এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে”

কিছু মানুষ থাকবেই যারা অকারণ সমালোচনা করবে, মিথ্যা হলেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে আপনার কাজের। কিন্তু সবাই অবশ্যই তা নয়, তাই না? আপনি নিজেকে আরো উন্নত করতে পারবেন না যদি নিজের ভুলের ক্ষেত্রগুলো সঠিকভাবে না জানেন। কাজের জায়গায় আপনার সহকর্মীরা, ব্যক্তি জীবনে বন্ধুরা আপনার সমালোচক হয়ে আপনারই সমৃদ্ধি ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার সবচেয়ে কট্টর সমালোচক যে, সে-ও প্রভাবিত করতে পারে আপনার উন্নতির মাত্রাকে। তাই উদার চিত্তে নিজের সমালোচনা শুনুন। এবং তা নিয়ে ভাবুন অবশ্যই। সত্যিই কি সেখানে আপনার শোধরানোর জায়গা আছে?

“নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে আত্মসমালোচনা জরুরি”

বাইরের সমালোচকদের নিয়ে ভারি অসুবিধা হয়, কিন্তু ভেতরকার যে সমালোচক, তার বেলায় কী ধারণা? প্রতিনিয়ত নিজের ভুল ধরা, নিজেকে তিরস্কার করা, হাজারটা নিষেধের জালে জড়ানো, এসব ব্যাপারে কি খুব ইতিবাচক ধারণা রাখেন আপনি? ধারণা ইতিবাচক হলে তা পাল্টে নিন বরং এবার। হতে পারে আপনার এসব কঠোর আত্মসমালোচনার চোটে দিন দিন আপনার আত্মবিশ্বাস দুর্বলই হয়ে পড়ছে! 

নিজের সমালোচনা খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো? Source: Life Optimizer

আত্ম-সহানুভূতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন নেফের মতে, বেশিরভাগ মানুষই আত্মসমালোচনায় বেশ ভরসা রাখে। তারা মনে করে, এটা তাদের প্রেরণা দেবে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করার। যেখানে বাস্তব কথা হচ্ছে, যখন কেউ প্রতিনিয়ত নিজের সমালোচনা করতে থাকে, তখন তাকে বিষণ্নতা পেয়ে বসতে পারে। আর বিষণ্নতা মোটেও প্রেরণাদায়ক কোনো মনোভাব নয়! 

নিজের কট্টর সমালোচক হয়ে নয়, বরং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সাহায্য করুন নিজেকে। ক্রিস্টিন নেফের মতে, আত্ম-সহানুভূতি আপনার ভেতরকার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপনার ভেতরের সমালোচক সত্ত্বাটি কখন উগ্র হয়ে উঠছে, খেয়াল করুন। সেটাকে ছাপিয়ে আপনার সহানুভূতিশীল সত্ত্বাকে কাজ করতে দিন। আপনার ভেতরের আত্মবিশ্বাসের যত্ন নিতে এটি ত্রুটি করবে না, সেই ভরসা রাখুন। 

এই কয়টি বহুল প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন অবশ্যই, যদি নিজের আত্মবিশ্বাসের পরিচর্যা করতে চান। আত্মবিশ্বাস দারুণ একটা ব্যাপার। আপনার ভেতরের বিশ্বাসটাও যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ থাকুক, নিজের জন্য সেই চেষ্টাই করা উচিত সকলের।

ফিচার ইমেজ: newcitychurchkansascity.org

Related Articles