Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেক ফোবিয়া: মানবমনে প্রযুক্তি বিষয়ক যত ভীতি

‘ফোবিয়া’ শব্দটির সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। এর আভিধানিক অর্থ হলো ভয় বা আতঙ্ক। কোনো বিশেষ বস্তু, বিষয় বা ঘটনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়া, এবং সেজন্য সেই ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে চলার প্রবণতাকে বলা হয়ে থাকে ফোবিয়া। যেমন- কারো উচ্চতাভীতি আছে, কারো বা আবার সমুদ্রভীতি আছে। কেউ সবসময় প্রিয়জনকে হারাবার আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, আবার কেউ হয়তো ভবিষ্যৎ পরিণতির আশঙ্কায় গভীর সম্পর্কে জড়াতেই ভয় পায়। এগুলো সবই হলো ফোবিয়া। আমাদের আশেপাশে এমন অজস্র মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে, যাদের এক বা একাধিক ফোবিয়া রয়েছে।

অনেকেই হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, মানুষের ফোবিয়ার বিষয়বস্তু থেকে বাদ পড়েনি প্রযুক্তিও। যে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে, অসংখ্য অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে, এমনকি অদূর ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বকেই নিজের আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে আসতে পারার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেই প্রযুক্তির ব্যাপারেও কিছু মানুষের ভয় ও আতঙ্কের শেষ নেই। মানুষের প্রযুক্তি বিষয়ক এসকল ভীতির নামই হলো ‘টেক ফোবিয়া’।

হয়তো ভাবছেন, টেক ফোবিয়া হয়তো মনোবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে একদমই নতুন কোনো সংযোজন। কিন্তু না, সেটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। বিগত কয়েক শতক ধরেই রয়েছে এর অস্তিত্ব। এমনকি সেই অষ্টাদশ শতকেও অস্তিত্ব ছিল ‘টেকনোফোবিয়া’ নামক একটি বিশেষ ফোবিয়ার, যার অর্থ হলো ‘প্রযুক্তিগত প্রভাবের ব্যাপারে অস্বাভাবিক ভীতি কিংবা উদ্বিগ্নতা’।

তাঁতযন্ত্র ভাঙছে লডাইটরা; Image Source: Wikimedia Commons

টেকনোফোবিয়া শব্দটির প্রথম আগমন ঘটে শিল্প বিপ্লবের (১৭৬০-১৮৪০) সময়। তখন থেকেই ইউরোপীয় শিল্প-কারখানায় মানুষের বিকল্প হিসেবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যায়। আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে কাজ হারিয়েছিল একদল তাঁতিও। তারা নিজেদেরকে পরিচয় দিত ‘লডাইট’ (The Luddites) হিসেবে। তারা এতটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে যে, বিভিন্ন কলকারখানায় গিয়ে তারা তাঁতযন্ত্র ভেঙে ফেলতে শুরু করে। অবস্থা নাগালের বাইরে চলে গেলে, ইংরেজ আইনসভা বাধ্য হয় যন্ত্র-ধ্বংসকে সর্বোচ্চ সাজার আওতাভুক্ত অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিতে।

ওই সময়টাতেই টেকনোফোবিয়া শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, আর যারা নতুন প্রযুক্তি বা কাজের ধরনকে ভয় পায় বা বিরোধিতা করে, তাদেরকে ডাকা হতে থাকে লডাইট নামে। তবে তখনকার দিনে যে ভীতিকে টেকনোফোবিয়া নাম দেয়া হয়েছিল, তার সাথে বর্তমানের টেক ফোবিয়াকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটেছে, এবং সেগুলোর একেকটি একেকভাবে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করে। সেই সকল ভীতির একটি সামষ্টিক রূপকে অভিহিত করা হয় টেক ফোবিয়া হিসেবে।

অবশ্য এখন আমরা সামগ্রিক টেক ফোবিয়া নিয়ে নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের টেক ফোবিয়া নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করব। তাহলে পাঠক, চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত টেক ফোবিয়াগুলোর সম্পর্কে।

মোবাইল ফোন ছেড়ে থাকার ভয় পায় অনেকে; Image Source: konbini.com

নোমোফোবিয়া

এটি হলো নিজের মোবাইল ফোন ছেড়ে থাকার ভয়। ‘নোমো’ শব্দটি মূলত ‘নো মোবাইল’ শব্দদ্বয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের পোস্ট অফিস এই বিশেষ ফোবিয়াটির নামকরণ করে। সেখানে কর্মরতদের মধ্যে যারা মোবাইল ব্যবহার করতো, তাদের মধ্যে বিভিন্ন উদ্বেগে ভোগার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছিল। এবং শেষমেষ পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার পর দেখা যায়, তাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগটি আসলে মোবাইল ফোন হারানো নিয়েই। সাইকোলজি টুডে’র এক প্রতিবেদন মতে, আজকাল কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে গোসল করতেও মোবাইল নিয়ে ঢোকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বয়ঃসন্ধিকালীন অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীর দাবি, তারা নাকি প্রয়োজনে নিজেদের কনিষ্ঠ আঙুল বিসর্জন দিতেও রাজি, তবু তারা মোবাইল কাছছাড়া করবে না!

আজকাল আবার নোমোফোবিয়ারও বিভিন্ন নতুন শ্রেণিবিভাগ তৈরি হয়েছে। যেমন- কিছুক্ষণ পরপর মোবাইল ফোন চেক করে দেখা যে নতুন কারো মেসেজ বা কল এলো কি না, এ প্রবণতাটি কমবেশি সবার মধ্যেই বিদ্যমান। আবার অনেকে অবসেসড থাকে তার মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে। হয়তো ১০০ শতাংশ চার্জ আছে মোবাইলে, তবু তাদের মনের মধ্যে সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করতে থাকে ভয়, “মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাবে না তো!” আর নোমোফোবিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো মোবাইল হারিয়ে ফেলা বা চুরি যাওয়ার ভয়। অর্থাৎ, মোবাইলের থেকে কিছুক্ষণ দূরে থাকার ভয়টাই এক পর্যায়ে এতটা তীব্র হয়ে ওঠে যে, ব্যবহারকারীর মনে প্রতি মুহূর্তে বিরাজ করে মোবাইল হারিয়ে ফেলা বা চুরি যাওয়ার আতঙ্ক।

সাইবারফোবিয়া

কম্পিউটার ব্যবহারের ব্যাপারেও অনেকের মনে অহেতুক ভয় কাজ করে, যার নাম হলো সাইবারফোবিয়া। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মনে করে, যেহেতু তারা ইতোপূর্বে কখনো কম্পিউটার ব্যবহার করেনি, তাই এখনো তারা এ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারবে না। এজন্য তারা সবসময় চেষ্টা করে কম্পিউটার থেকে দূরে থাকতে, এবং কর্মস্থল বা শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ দেয়া হলে সেটি এড়িয়ে যেতে। আর কেউ যদি নিতান্ত বাধ্য হয়ে কম্পিউটারে কাজ করতে শুরু করেও, তার মধ্য মাথাব্যথা, দুর্বল অনুভব করা, মানসিক উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া, মৃত্যুভীতি সৃষ্টি হওয়া, প্রচুর ঘাম হওয়া, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। অর্থাৎ, যতক্ষণ তারা কম্পিউটারে কাজ করে, ক্রমাগত তাদের দেহ ও মনে অস্বস্তি খেলা করতে থাকে, এবং কারো কারো ক্ষেত্রে তা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও ফেলে যায়।

ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রেও জাগতে পারে উদ্বিগ্নতা; Image Source: capitalfm.com

টেলিফোনোফোবিয়া

এটি সরাসরি টেলিফোন যন্ত্রটির প্রতি ভীতি নয়, বরং টেলিফোনে কথা বলার প্রতি ভীতি। আজকাল অনেকের মধ্যেই এই ফোবিয়াটি দেখা যায়। তারা হয়তো সামনাসামনি খুব বন্ধুত্বপরায়ণ। এমনকি মেসেজেও লিখিতভাবে খুব ভালো করেই নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করতে শুরু করে। তারা ভাবে, তারা হয়তো গুছিয়ে কথা বলতে পারবে না, যা বলতে চায় তা ঠিকভাবে বলতে পারবে না, কিংবা তাদের কথা শুনে অপর প্রান্তের মানুষটি তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেবে না, হাসবে, অথবা তার সমালোচনা করবে। এ কারণে অনেকে এমনকি রাইড বুকিং করা কিংবা খাবার অর্ডার দেয়ার মতো অতি সংক্ষিপ্ত ফোনকলও দিতে পারে না।

সেলফিফোবিয়া

বর্তমান সময়ে যার হাতেই একটি স্মার্টফোন আছে, তাকেই দেখা যায় সেলফি তথা নিজের ছবি নিজে তোলার চেষ্টা করতে। সেলফি তোলার এমন প্রবণতা রীতিমতো মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে মুদ্রার অপর পিঠে ভিন্ন চিত্রও কিন্তু রয়েছে। অনেকেই চায় সেলফির মাধ্যমে নিজের খুব সুন্দর কোনো ছবি তুলতে। কিন্তু যখন তাদের ছবি ভালো আসে না, কিংবা তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়, তখন সেলফির প্রতি তাদের মনে একধরনের বিতৃষ্ণা জন্মে যায়। তাই পরবর্তীতে আর কখনো তারা সেলফি তুলতে চায় না।

এক্সপেন্সিভটেকফোবিয়া

এর অর্থ হলো, কোনো প্রযুক্তির পেছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচের ভীতি। বিশেষ করে সেই প্রযুক্তিটি যদি কেউ ভালোভাবে ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে সেটির মাধ্যমে পয়সা উসুল হবে না বরং টাকাগুলো জলে যাবে, এমন রক্ষণশীল চিন্তা করতে দেখা যায় অনেককেই। যেমন- শুরুতে অনেকেই কম্পিউটার বা মোবাইল ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। মানুষ ব্যবহার করতে করতে এগুলোর ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে উঠবে, এমনটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যারা একটু বেশিই মিতব্যয়ী, তাদের কাছে মনে হতেই পারে, “আমি তো কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারি না। কেনার পর এটা এমনিই পড়ে থাকবে। তাহলে আমি কেন খামোকা এটার পেছনে এত টাকা খরচ করবো!” এমন ফোবিয়ার কারণে অনেকের পক্ষেই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও খুব দামি কোনো প্রযুক্তির মালিকানা লাভ করা সম্ভব হয় না।

যেকোনো সময় বিচ্ছিন্ন হতে পারে ইন্টারনেট কানেকশন; Image Source: Speedify

নোইন্টারনেটফোবিয়া

ইন্টারনেট কানেকশন হারিয়ে ফেলা বিষয়ক এই ফোবিয়াটি বোধহয় সকলেরই আছে। ধরুন, মেসেঞ্জারে প্রিয়জনের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন, কিংবা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দাপ্তরিক কাজ করছেন। এমতাবস্থায় যদি হুট করে ইন্টারনেট কানেকশন হারিয়ে ফেলেন, তাহলে কেমন হবে? অবশ্যই খুব খারাপ হবে। আর তাই কেউই চায় না এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে। শহরের বাইরে যাওয়ার সময় অনেকের মনেই আশঙ্কা জাগে, যদি নেটওয়ার্ক ভালো না থাকে? আবার এখন যেহেতু গরমকাল চলছে, আর গরমকালে বারবার লোডশেডিং হয়, তাই ওয়াইফাই ব্যবহারকারীদের এক সার্বক্ষণিক উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়, “হুট করে লোডশেডিং হয়ে ইন্টারনেট কানেকশনটাও চলে যাবে না তো!”  

লোরিমোফোবিয়া

সোফা কিংবা কাউচে বসে টিভি দেখতে দেখতে রিমোট কন্ট্রোলটি হারিয়ে ফেলেছেন কখনো? বাজি ধরে বলতে পারি, প্রত্যেকের জীবনেই এমন দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা অবশ্যই এসেছে, যখন সে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চ্যানেল পাল্টাতে চেয়েছে কিন্তু রিমোট কন্ট্রোলটি বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছে। আর যারা একটু বেশি অবসেসিভ, একবার এমন অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার পর পরবর্তীতে প্রতিবার টিভি দেখার সময় তাদের মনে আবারো রিমোট কন্ট্রোলটি হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা জাগা খুবই সম্ভব। তাছাড়া আজকাল যেহেতু টিভি ছাড়াও এসি, সাউন্ড সিস্টেম, স্ট্রিমিং সার্ভিসসহ আরো অনেক কিছু দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেই রিমোট কন্ট্রোলের প্রয়োজন হয়, তাই লোরিমোফোবিয়াও ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

ড্রোস্মার্টয়ফোবিয়া

এটি একটু অদ্ভুত ধরনের ফোবিয়া বটে, তবে অমূলক নয় মোটেই। বিশেষত যাদের অভ্যাস (কিংবা বদভ্যাস) রয়েছে টয়লেটে যাওয়ার সময়ও হাতে করে স্মার্টফোনটি নিয়ে যাওয়ার, তারা হয়তো সহজেই এই ফোবিয়াটির সাথে একাত্মতা অনুভব করতে পারবেন। টয়লেটে স্মার্টফোন নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সময়টুকুতেও ফোনের পর্দায় কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা। এদিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া শেষে কিছু বিশেষ কাজও করা আবশ্যক। তো, একসাথে দু’টি কাজ করতে গিয়ে যদি কোনোভাবে মনোযোগ সরে যায়, আর তখন ফোনটি হাত থেকে পিছলে কমোডের ভেতর পড়ে যায়? অনেককেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে, যে কারণে অন্যরাও এখন টয়লেটে গিয়ে ভয় পেতে থাকে, “এই বুঝি আমার ফোনটিও পড়ে গেল!” চাইলে এই ফোবিয়াটি থেকে কিন্তু খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। স্রেফ আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলো- টয়লেটে ফোন নিয়ে না ঢোকা, কিংবা ঢুকলেও সেটি হাতে নিয়ে টিপতে থাকার বদলে নিরাপদ কোনো স্থানে রেখে দেয়া।

পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়; Image Source: Vice

ফরমাসপাসফোবিয়া

পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়াটা নতুন কিছু নয়। প্রায়ই আমরা নিজেদের বিভিন্ন আইডির পাসওয়ার্ড ভুলে ফেলি, এবং তারপর ফরগেট পাসওয়ার্ড দিয়ে, নতুন করে একটি পাসওয়ার্ড সেট করে দিই। কিন্তু যদি এমন হয় যে আমরা আমাদের মাস্টার পাসওয়ার্ডটিই হারিয়ে ফেলি? হতে পারে সেটি মোবাইলের লক পাসওয়ার্ড, মূল মেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, কিংবা ঘরের দরজা খোলার পাসওয়ার্ড। এসব পাসওয়ার্ড একবার হারিয়ে ফেললে নিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে প্রচুর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে, প্রচুর সময় ব্যয় করে অ্যাকাউন্ট বা ডিভাইসটি পুনরুদ্ধার করা যাবে বটে, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সেটি চিরতরে ডিজেবল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থেকেই যায়। তাই তো, প্রযুক্তির সাথে যাদের নিত্য বসবাস, তাদেরকে সবসময় মাস্টার পাসওয়ার্ড স্মরণে রাখার চ্যালেঞ্জও জয় করতে হয়। আর যারা সহজেই ভয় পায় বা উদ্বিগ্ন হয়, তারা ফরমাসপাসফোবিয়ার শিকার হয়।

ফরআন্সাকুয়েফোবিয়া

পাসওয়ার্ড ছাড়াও আজকাল আমাদেরকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য কিছু গোপন প্রশ্নের উত্তর স্মরণে রাখতে হয়। কিন্তু কখনো কখনো পাসওয়ার্ড মনে রাখার চেয়েও এই উত্তরগুলো মনে রাখা ঢের বেশি কঠিন। মনে করুন, আপনি কোথাও নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলবেন, যেটির নিরাপত্তা প্রশ্ন হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাওয়া হলো, আপনার প্রিয় বই কোনটি। আপনার হয়তো একাধিক প্রিয় বই আছে। তাড়াহুড়ায় প্রথম যেটির নাম মাথায় এসেছে, সেটিই আপনি উত্তর হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর সেই উত্তরটি ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর অনেকদিন পর যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার প্রিয় বই কোনটি, তাহলে আপনি যে পূর্বোল্লিখিত বইয়ের নামটিই এবারও উত্তর হিসেবে দেবেন, তেমনটি তো না-ও হতে পারে। তাই আজকাল অনেককেই তাড়া করে বেড়ায় ফরআন্সাকুয়েফোবিয়া।

অন্যদের আনন্দ থেকে বাদ পড়ার ভয়; Image Source: Medium

ফোমো (FOMO) অথবা ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’

বর্তমান সময়ে এটিও খুব বড় একটি ফোবিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমাদের অনেকের জীবনটাই যেন একটি খোলা বইয়ের মতো হয়ে উঠেছে। আমরা প্রতিনিয়ত কী করছি, কী খাচ্ছি, কী পরছি, কোথায় যাচ্ছি, কার সাথে আড্ডা দিচ্ছি- সবকিছুর আপডেট দিতে থাকি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে। এর মাধ্যমে আমরা একধরনের মানসিক শান্তি পাই বটে। কিন্তু কখনো এটিই হতে পারে চরম মানসিক অশান্তির কারণ। হয়তো আমার বন্ধুরা সবাই মিলে কক্সবাজার ঘুরতে গেছে। আমি যেকোনো কারণেই হোক যেতে পারিনি। এখন আমি ফেসবুকে ঢুকতেও ভয় পাচ্ছি। কারণ ফেসবুকে ঢুকলেই তাদের আনন্দ করার ছবি, পোস্ট ইত্যাদি আমার চোখে পড়বে, এবং তখন আমার কাছে মনে হবে আমি হয়তো খুব বড় কিছু মিস করছি। আবার আমার মনে আফসোসও হবে, কেন আমি গেলাম না। অর্থাৎ আমি একপ্রকার নিশ্চিত যে ফেসবুকে ঢুকলেই আমার মন খারাপ হয়ে যাবে, আর তাই আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব ফেসবুক থেকে দূরে থাকার। এই ‘আমি’ কিন্তু কেবল আমিই নই, আপনারাও বিভিন্ন সময় এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, তা-ই নয় কি?

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the tech related phobias. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © The Tarot Lady

Related Articles