প্রতি বছর প্রতিটি বিশেষ দিবসের মতোই সময়চক্রে আসে বন্ধু দিবস। বন্ধু দিবস ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে বন্ধুদের উপহার দিয়ে চমকে দিতে অনেকেই চায়। যদি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন সে কী চাইছে উপহার হিসেবে, তাহলে তো খুব ভাল হয়। কিন্তু সাধারণত এমনটা আমরা করি না চমকে দিতে পারার আনন্দটুকু নেওয়ার জন্য। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। কেমন উপহার দিলে বন্ধুকে মন থেকে খুশি করা যাবে, তার চিন্তাতে দিবস এগিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে শেষবেলায় তাড়াহুড়ো করে যে উপহার কেনা হয়, তা নিজেরও পছন্দ হয় না, বন্ধুও ভদ্রতা রক্ষার্থে “ধন্যবাদ” বলে এড়িয়ে যায়। বন্ধু দিবসে কাছের বন্ধুদের উপহার দেওয়ার আগে প্রস্তুত করে নিতে পারেন নিজেকে।
উপহারকে উৎসবে রূপ দিন
গুপ্তধন খোঁজার খেলা বা ‘ট্রেজার হান্ট’ এর নাম শুনেছেন? উপহারটা হতে পারে এমন কোন খেলা। উপহারের বাক্সটা সাদামাটাভাবে রঙিন কাগজে মুড়ে না দিয়ে বরং হাতে তুলে দিন ধাঁধা। ধাঁধার জবাব খুঁজে পেলে সে পৌঁছাবে একটা জায়গায়, যেখানে থাকবে দ্বিতীয় ধাঁধা। এভাবে চূড়ান্ত ধাপে লুকানো থাকবে উপহারটি। শেষ ধাপে সে যখন উপহারটা খুঁজে পাবে, তখন উপস্থিত থাকুন, তার আনন্দটা টের পাবেন নিজেই। এই উপহারগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন ছোট কোনো ট্রফিতে প্রিন্টের দোকান থেকে লিখে দিতে পারেন বন্ধুর বুদ্ধিমত্তায় আপনার প্রশংসা। আর তার খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে ধাঁধাগুলো সহজ এবং আপনাদের বন্ধুত্বের সাথে যুক্ত, এমন কিছু রাখুন।
তাকে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা দিন
বন্ধুকে কী উপহার দেবেন, কোনো ধারণা না থাকলেও তার সম্পর্কে, তার ভালোলাগার সম্পর্কে ধারণা তার প্রাত্যাহিক কথাবার্তা থেকেই পাওয়া যায়। ধরুন বন্ধুটি হ্যারি পটারের পাঁড় ভক্ত। সবগুলো বই তার নখদর্পণে, সব সিনেমা আর অজস্র পোস্টারে তার বাড়ি বোঝাই। বন্ধুর সাথে শপিং করুন। বন্ধুর পছন্দের হ্যারি পটার থিমের কিছু একটা নিজের নাম করে কিনুন। দোকান থেকে বের হয়ে সেটা তার হাতে ধরিয়ে দিন। অথবা বন্ধু ওই ধরনের কিছু কিনতে চাইলে টাকাটা তার হয়ে নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিন। ধরুন জানতে পারলেন বন্ধুর নৌকায় চাপার শখ থাকলেও সুযোগ হয়নি। কয়েকজন বন্ধু মিলে নৌকা করে ঘুরুন। এই ছোট ছোট খুশিগুলো বন্ধুত্ব মজবুত করবে।
তালিকা বানান
হ্যাঁ, এধরনের কাজগুলো সবসময়ই সাহায্য করে, তা আপনার ক্লাসের পরীক্ষা হোক বা বন্ধুত্বের। টানা দু’ মিনিট আপনার বন্ধুটি কোন কোন বিষয়ে আগ্রহী, তা লিখে ফেলুন। দেখুন ছোট কোনো বিষয় বাদ গেল কিনা। এখান থেকে ধারণা তৈরি করে ফেলুন। একটা উপহারের বদলে ছোট ছোট কয়েকটা উপহার দিন। অনেকসময় পরিমাণই খুশি করে মানুষকে। তালিকার ভেতর মগজধোলাই চালিয়ে খুঁজে নিন উপহার। যেমন ধরুন আপনার বন্ধুর যদি বই পড়ার নেশা থাকে, সাথে গাছের প্রতি ভালোবাসাও, তাকে উপহার দিতে পারেন গাছ নিয়ে কোনো বই। সাথে একটা নয়নতারার চারা (সহজে বাঁচে বলে)। বন্ধু যদি ভোজনরসিক হয়, তাকে রান্নার জিনিসপত্র দিতে পারেন সাথে একপেট খাইয়ে দিলেও মন্দ হয় না!
অতীত ঘেঁটে দেখুন
স্বাভাবিকভাবে মানুষ নস্টালজিয়ায় ভোগে। বন্ধুর যদি এমন কোনো জিনিস থাকে যা হারিয়ে সে বেশ কষ্ট পেয়েছিল, সেটি কিনে দিন। তার পরিবারের সাহায্য নিয়ে ছোটবেলার ছবি জোগাড় করে নতুন করে বাঁধিয়ে উপহার দিতে পারেন। বাবা মায়ের অনেক আগের ছবিও হতে পারে উপহার। তাতে লিখে দিতে পারেন আপনার শুভেচ্ছা। পরিবারের মানুষজনের কাছেই শুনে নিন ছোটবেলায় এমন কোনো জিনিস, যা সে খুব চাইত। বন্ধু দিবসে দেওয়া আপনার উপহার সে সারাজীবন মনে রাখবে।
নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন বন্ধুটির কী প্রয়োজন
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কিছু না কিছুর দরকার থাকে। তাহলে দুনিয়ার সবচাইতে ধনী লোকটা? সে তো চাইলে সব কিনতে পারে, তার আবার কীসের প্রয়োজন? তার প্রয়োজন সময়ের। আপনার এমন একজন কর্মব্যস্ত বন্ধুকে ঘড়ি দিতে পারেন উপহার, বার্তা লিখে দিতে পারেন যে আপনি তাকে সময় উপহার দিয়েছেন, কারণ সে ব্যস্ত। অতটা ব্যস্ততার মাঝেও আপনার বন্ধু টের পাবেন, আপনি তাকে কতটা ভেবে উপহার দিয়েছেন, কৃতজ্ঞ থাকবেন আপনার বন্ধুত্বের জন্য। এরকম আরও কত যন্ত্র চলে এসেছে জীবনকে সহজ করে তুলতে। আপনার বন্ধুর সমস্যা আর আপনার সাধ্য, মিলতে পারলেই হয়ে যাবে চমৎকার কোনো উপহার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুর প্রোফাইল ঘেঁটে তার চাওয়া না চাওয়া সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করে ফেলতে পারবেন। এছাড়াও কোনো কেনাকাটার পৃষ্ঠা বন্ধু পছন্দ করছে, কোথাও দাম জানার জন্য মন্তব্য করেছে, সেই অনুযায়ী উপহার দিতে পারেন। যদি এমন কিছু খুঁজে পান, যা সে কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু কোনো কারণে কেনা হয়নি, তারপর সে হয়ত ভুলেও গিয়েছে কী কিনতে চেয়েছিল, সেটা উপহার দিয়ে চমকে দিতে পারেন বন্ধুকে।
উপহারে নিজের ছোঁয়া রাখুন
সবকিছু কিনেই দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বন্ধুর শখের কোনোকিছু হাতেও বানিয়ে দিতে পারেন। ছোট ক্যানভাসে কিছু এঁকে ফেলুন, অথবা সেলাই করুন শখের রুমাল। ইউটিউব থেকে নিজের প্রয়োজনমাফিক উপহার বানিয়ে নিতে পারেন সহজেই। এই উপহারগুলো একাধিক হতে পারে, যেমন ভাঁজ করা কার্ড, অরিগ্যামি প্রাণী, বা কাপড়।
বন্ধুকে উপহার দিন হাসি
কৃত্রিমতার দিনগুলোতে আমরা সত্যিকারের হাসি খুব কমই হাসার সুযোগ পাই। আপনার উপহারের বদৌলতে বন্ধুটিকে প্রাণ খুলে হাসার সুযোগ দিন। বইপাগল বন্ধুকে উপহার দিতে পারেন ‘পাগলা দাশু’, ‘হ-য-ব-র-ল’ বা ‘জন্মদিনের উপহার’। আমাদের ভেতর অনেকেই আছে যারা আলু বা ঝাল খেতে পছন্দ করে। পাঁচ কেজি আলু বা হাফ কেজি কাঁচা মরিচ রঙিন কাগজে মুড়ে দিয়ে দিন। প্রাণখোলা হাসির সাথে বন্ধুটি বুঝবে, আপনি ভেবেচিন্তেই তাকে উপহারটা দিয়েছেন!
চিঠি লিখুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে চিঠির চল উঠে গেলেও এর মূল্যটা এখনো অটুট। বন্ধুকে নিয়ে ভেবেচিন্তে গুছিয়ে একটা চিঠি লিখে ফেলুন। নিজ হাতে বানিয়ে ফেলতে পারেন খাম। চিঠির সাথে বন্ধুর প্রিয় ফুল। সবচেয়ে কম খরচে হৃদয়গ্রাহী উপহার হতে পারে এটি।
দান করুন
ধরুন আপনার বন্ধু কোনো উপহার চায় না। বেশ উদার মনের মানুষ সে। এসব উপহার দিয়ে অকাজে টাকা নষ্ট করা তার ধাতে সয় না। তারপরও যদি বন্ধুকে উপহার দিয়ে খুশি করতে চান, তবে খুঁজে দেখুন বন্ধুটি কীসে টাকা খরচ করছে। হতে পারে কোনো দাতব্য সংস্থা বা ফাউন্ডেশন। অথবা শুধুই মানুষকে খেতে পরতে দিয়ে আনন্দ নিচ্ছে। এসব কাজে বন্ধুর পাশে দাঁড়ান। একটা দিন আপনার উপহারের টাকাটা তার জন্য দিন অন্য কাউকে, যার সেটা আসলেই দরকার। খুঁজলেই দেখবেন এমন অনেক দাতব্য কাজ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি আপনার বন্ধু রক্তদানের কোনো সংস্থার সাথে যুক্ত থাকে, রক্ত দিয়েও সাহায্য করতে পারেন। আপনার জন্য এটা হবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। বন্ধু খুশি, আপনি সন্তুষ্ট, যাকে সাহায্য করেছেন, তার চোখের উজ্জ্বলতা তো অমূল্য।
ডায়েরি, কলম, পুতুল এগুলো উপহার দেওয়ার নিরাপদ বুদ্ধি হলেও, এই উপহারগুলো দেওয়ার পেছনে যে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা করা লাগে না সেটা বুঝেই উপহার গ্রহীতা আপনার উপহারকে দায়সারা ভাবতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ক্লাসের পড়ার মতো পরিকল্পনা করে এগিয়ে যান, আশা করা যায় হাসিমুখ দেখার তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন না।
ফিচার ইমেজ- elitedaily.com