Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ছয়টি অমর ট্র্যাজেডি

“উইলিয়াম শেক্সপিয়র সব আধুনিক এবং প্রাচীন কবিদের কবি, যার আত্মশক্তির ব্যাপকতা সর্বজনবিদিত।”
– জন ড্রাইডেন (১৬৩১- ১৭০০), Essay of Dramatic Poesy

ইংরেজি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক হলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়র। কবিতা, নাটক এমনকি অভিনয়েও সর্বজনবিদিত দক্ষতার অধিকারী শেক্সপিয়রকে ডাকা হয় ‘বার্ড অব অ্যাভন’ নামে। ইংল্যান্ডের এই জাতীয় কবি এবং পৃথিবীর ‘অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ নাট্যকার’ কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন ৩৯টি নাটক। কমেডি এবং ট্রাজেডি- নাটকের উভয় শাখায় অসামান্য দক্ষতার ছাপ রেখে যাওয়া তাঁর অধিকাংশ নাটক সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আজও অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল। তাঁর লিখে যাওয়া ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ৬টি ট্র্যাজেডি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো।

হ্যামলেট

পৃথিবীর অগণিত সাহিত্যকর্মের মাঝে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটক, যা জাত-পাত্র-কালের বিবেচনায় সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১৫৯৯-১৬০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে রচিত এই অমর ট্র্যাজেডির পুরো নাম ‘দ্য ট্র্যাজেডি অব হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক’। রচনার পর থেকেই অসংখ্য ভাষায় এবং সংস্করণে প্রকাশিত এই নাটকের মঞ্চায়নের হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি। পৃথিবীর নামিদামি সব অভিনেতাদের কাছে ‘হ্যামলেট’ চরিত্রে অভিনয় করা এক স্বপ্নের মতো, জীবনের এক পরম প্রাপ্তি  হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এক তরুণ যুবরাজের তার পিতার হত্যার প্রতিশোধের কাহিনী নিয়ে বেড়ে উঠেছে এই ট্র্যাজেডির প্লট। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, শিক্ষক এবং সারা পৃথিবীর কোটি কোটি শেক্সপিয়র গুণগ্রাহীর কাছে নাটকটি পরম আরাধ্য, অনেকটা গুপ্তধনের মতোই কোনো সম্পদ যার রহস্য এবং আবেদন আজও একটু কমেনি।

হ্যামলেট; Source: deviantart.net

ম্যাকবেথ

শেক্সপিয়রের সবথেকে জনপ্রিয় ট্র্যাজেডিগুলোর অন্যতম এই ট্র্যাজেডিটি ১৬০৩-০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত। শেক্সপিয়র যে কত বড় মাপের একজন চিন্তাশক্তিবিদ ছিলেন, তার পরিস্ফুটন ঘটেছে এই ডার্ক ট্র্যাজেডির মধ্যে। তিনি ‘মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং মানব জীবনের লালসা প্রবৃত্তি’র অপরূপ সম্মিলন দেখিয়েছেন এই নাটকের মধ্যে। অপেক্ষাকৃত ছোট এই নাটকটি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে লেখা, যা সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ও সম্পাদনা করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নামিদামি সব অভিনেতা অভিনয় করেছেন এই নাটকের অসংখ্য মঞ্চায়নে। এছাড়া এই নাটকের অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, রচিত হয়েছে আরও নানা বই।

নাটকটিতে ‘ম্যাকবেথ’ নামের এক স্কটিশ যোদ্ধার উত্থান এবং পতন দেখানো হয়েছে। এই যোদ্ধা তাঁর প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষী স্ত্রী ‘লেডি ম্যাকবেথ’ দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তাঁর রাজাকে খুন করেন। এক পর্যায়ে লেডি ম্যাকবেথ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান এবং পাপ, লালসা এবং অনুশোচনায় পুড়তে থাকা ম্যাকবেথকেও শেষে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এই ডার্ক ট্র্যাজেডির নায়ক ম্যাকবেথ হলেও তাঁর স্ত্রী লেডি ম্যাকবেথ ‘শেক্সপিয়ারিয়ান ট্র্যাজেডি’র ইতিহাসে এক অনবদ্য নারী চরিত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। নাটকটির প্লট কিছুটা রাফায়েল হলিন্সহেডের ‘কিং ম্যাকবেথ অব স্কটল্যান্ড’ এবং স্কটিশ দার্শনিক হেক্টর বোঁচ অনুপ্রাণিত। অসংখ্য গুজব এবং কুসংস্কার জড়িয়ে আছে এই নাটকটিকে ঘিরে। অনেকে নাটকটিকে বলে থাকেন এক অভিশপ্ত নাটক। অনেক অভিনেতা নাটকটির নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না, তাদের কাছে নাটকটির নাম ‘দ্য স্কটিশ প্লে’

ম্যাকবেথ; Source: squarespace.com

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ যুগ যুগ ধরে বিবেচিত হয়ে এসেছে এক অমর প্রেমের গীতিকবিতা হিসেবে। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে তাঁর এই অসম্ভব জনপ্রিয় নাটকটি ধারণা করা হয় ১৫৯১-৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো একসময়ে রচিত। ধারণা করা হয়, এটিই শেক্সপিয়র রচিত প্রথম ট্র্যাজেডি। শত্রুভাবাপন্ন দুই টুডর পরিবারের দুই কিশোর-কিশোরীর অমর প্রেমের গল্প নিয়ে নাটকটির পটভূমি গড়ে উঠেছে।  শেক্সপিয়রের আগে রোমিও ও জুলিয়েট চরিত্র দুটি নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত থাকলেও এই নাটকের মাধ্যমেই চরিত্র দুটি পৌঁছে গিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।

সমগ্র পৃথিবীর সব বয়সের মানুষের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় এই নাটকটিকে আজ এক ‘জনপ্রিয় সংস্কৃতি’র অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তো আজও কোনো ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক থাকলে তাদের রোমিও-জুলিয়েট নামে ডাকা হয়। নানা বই, সিনেমার পাশাপাশি এই ট্র্যাজেডিটি মঞ্চস্থ হয়েছে অসংখ্যবার। নাটকটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার পেছনে এর ভাষাগত ব্যবহার, অদ্ভুত নাট্যশৈলী এবং সময়ের কাছে হার না মানা প্লট কাজ করে, যা আজও সবাইকে আকর্ষণ করে চুম্বকের মতো।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট; Source: hamiltoncs.org

কিং লিয়ার

শেক্সপিয়র রচিত নাটকগুলোর মধ্যে সবথেকে জটিল এবং বিশ্লেষণধর্মী হচ্ছে ‘কিং লিয়ার’ ট্র্যাজেডিটি। মানব জীবনের নানা দিক যেমন দুঃখ, ক্লেশ এবং সর্বোপরি ভালোবাসার উপর এক সীমানাহীন অনুসন্ধানের ক্ষেত্র এই নাটকটি। শেক্সপিয়রের লেখক জীবনের শেষের দিকে রচিত এই জনপ্রিয় ট্র্যাজেডিটি ধারণা করা হয় ১৬০৫/১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে রচিত। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন রাজা লিয়ার, যিনি বার্ধক্যকালে তাঁর সাম্রাজ্য কন্যাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান। কিন্তু এক পর্যায়ে তাঁর ছোট কন্যার প্রতি অভিমানের কারণে তাকে নির্বাসনে দেন এবং এখান থেকেই নাটকটির ট্র্যাজেডির সূত্রপাত।

রাজা লিয়ারকে নিয়ে বেশ কয়েকটি কাহিনী প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয়, নাটকটি রোমান-পূর্ব সময়ের এক ‘কেল্টিক’ রাজার উপকথা নিয়ে গড়ে উঠেছে। পূর্বেকার কয়েকটি গল্পে ভিন্নধর্মী সমাপ্তি থাকলেও শেক্সপিয়রের ‘কিং লিয়ার নাটকের’ সমাপ্তি দর্শকদের এক শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। শুধু ‘কিং লিয়ার’ নয়, শেক্সপিয়রের অধিকাংশ ট্র্যাজেডি এখানেই তার উৎকর্ষের প্রমাণ রাখে।

কিং লিয়ার; Source: liberalarts.utexas.edu

ওথেলো

‘দ্য ট্র্যাজেডি অব ওথেলো, দ্য মুর অব ভেনিস’ শেক্সপিয়রের লেখা আরেকটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি। ধারণা করা হয়, নাটকটি ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত। নাটকটি বর্ণবাদ নিয়ে রচিত নাট্য সাহিত্যে ইতিহাসে সেরা কাজ হিসেবে অবিহিত করা হয়। হিংসা, বর্ণবাদ, ভালোবাসা, ধোঁকা ইত্যাদি নাটকটির মূল উপজীব্য বিষয়। ট্র্যাজেডিটির মূল চরিত্র চারজন। ওথেলো, তার স্ত্রী ডেসডিমনা, লেফটেন্যান্ট ক্যাসিও এবং ওথেলোর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ল্যাগো।

ট্রাজেডিটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার কারণে ১৬২২ থেকে ১৭০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নাটকটি সাতটি সংস্করণে আবির্ভূত হয়। শেক্সপিয়রের অধিকাংশ নাটকের মতোই এই ট্র্যাজেডিটি সব বয়সের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে নাটকটিকে ঘিরে, লেখা হয়েছে অনেক বিশ্লেষণধর্মী বই। এছাড়া বিভিন্ন আঙ্গিকে মঞ্চস্থ হয়েছে অসংখ্যবার দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে।

ওথেলো; Source: mvlteenvoice.files.wordpress.com

জুলিয়াস সিজার

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের আরেকটি জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি ‘জুলিয়াস সিজার’। ধারণা করা হয়, নাটকটি ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত। বন্ধুত্ব, দেশপ্রেম, আত্মসম্মান এসব উপজীব্য নিয়ে রচিত এই নাটকে বর্ণিত হয়েছে মহান রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের আখ্যান। মজার বিষয় হল, নাটকটির নামকরণ এই রোমান সম্রাটের নামে হলেও কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সম্রাটের হত্যাকারী বিশ্বাসঘাতক মারকাস ব্রুটাস এবং তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে।

রোমান ইতিহাসের উপর শেক্সপিয়রের লেখা নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম এই নাটকে উঠে এসেছে ঘৃণ্য রোমান রাজনৈতিক বিরোধের আখ্যান। ঘাতক ব্রুটাসের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে শেক্সপিয়র ট্র্যাজেডিটির মূল উপজীব্য বিষয়গুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

জুলিয়াস সিজার; Source: deviantart.net

ফিচার ইমেজ- wikimedia.org

Related Articles