Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জাপানি উপকথার নায়ক নায়িকারা || পর্ব ১

গ্রিক আর রোমান উপকথার প্রাচুর্যে অন্যান্য উপকথা প্রায়ই চাপা পড়ে যায়। একটু বিস্তৃত চোখে তাকালে খুঁজে পাওয়া যায় মিসর, ব্যাবিলন, স্ক্যান্ডিনেভিয়া কিংবা ভারতের নাম। পুরাণ পাঠের জলসায় জাপানের নাম সচরাচর উঠে না। অথচ ঐতিহ্য কিংবা ধর্ম চর্চায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কম বৈচিত্র্য প্রমাণিত হয়নি। জাপানি দেবদেবীরা মূলত উঠে এসেছেন স্থানীয় লোককথা থেকে। প্রাধান্য বিস্তারকারী শিন্টো ধর্মের সূত্র খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। পরবর্তীতে বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মেরও প্রভাব পড়েছে বেশ ভালো মতোই।

অষ্টম শতকের দিকে প্রথম সংকলন শুরু হয় জাপানি উপকথার। তাও আবার অনেকটা ইতিহাস হিসেবে। অধিকাংশ বিবরণীই বিবৃত কোজিকি এবং নিহোন শোকি নামক গ্রন্থে। বই দুইটি রচনায় বাদ পড়ে যাওয়া প্রচলিত লোককথাগুলো সংকলিত হয় নবম শতাব্দীর কোগোশোই পুস্তকে। শিন্টো ধর্মের অধিকাংশ মন্দিরে আলোচিত হতো সেসব দেবতাদের কীর্তিকথা। জমিনে বিচরণকারী আত্মা এবং অলৌকিক শক্তি জাপানি সংস্কৃতিতে পরিচিত কামি নামে। পরবর্তীতে দেবতা এবং দেবী চরিত্রের বিকাশে এই কামি ধারণার প্রভাব বিদ্যমান।

ইজানামি এবং ইজানাগি

অন্যান্য সংস্কৃতির উপকথার মতো জাপানি সৃষ্টিতত্ত্বও বেশ চমকপ্রদ। সৃষ্টির আদিতে কিছুই ছিল না। শূন্য থেকেই অস্তিত্ব লাভ করলো স্বর্গ এবং পৃথিবী। গোড়ার দিকে অবশ্য কেবল স্বর্গই বসবাসের যোগ্য ছিল। পৃথিবী তখনো বিরান। আদিম দেবতারা তাদের আশির্বাদ সমেত পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন ইজানামি এবং ইজানাগিকে। দৈবশক্তির অধিকারী দুই ভাইবোন। তারাই উত্তাল সমুদ্রে ভারসম্য আনেন। আকাশের নিচে বিশৃঙ্খলা দূর করে স্থাপন করেন নতুন যুগের। স্বর্গের খুঁটিতে দাঁড়িয়েই সমুদ্র মন্থন করলেন। জন্ম নিল প্রথম দ্বীপ জাপান। পরবর্তীতে দুইজন বিয়েতে আবদ্ধ হন।

পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা ঘটে ইজানামি এবং ইজানাগির মাধ্যমে; Image Source: mygodpictures.com

ইজানামি এবং ইজানাগির মাধ্যমেই জন্ম নেন দেবতা ইবিসু। পরবর্তীতে অনেক দেবতাই আগমন করেন তাদের থেকে। জন্ম নেয় জাপানের প্রধান আটটি দ্বীপ এবং ৮০০ জন কামি। সবিশেষ আগুনদেবতা কাগুতসুচিকে জন্মদানের সময় যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেন ইজানামি। নিয়ে যাওয়া হয় পাতালে মৃত্যুপুরীতে। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীর বিরহে ইজানাগি নিজেও রওনা হন সেই পথে। কিন্তু সব চাওয়া কি পূরণ হয়? অনন্তকালের জন্য পাতালের সাথে আটকে গেছেন ইজানামি। শরীর আর কর্মকাণ্ডে বিভৎসতার চিহ্ন। আতঙ্কে ফিরে আসেন ইজানাগি। টের পান, একসময়ের প্রিয়তমা স্ত্রী একবার পৃথিবীতে আসতে পারলে তছনছ করে দেবে সব। বন্ধ করে দেন পাতালের দরজা। নিযুক্ত করেন দানব প্রহরী। রাগান্বিত ইজানামি ওয়াদা করেন, প্রতিদিন জগতের এক হাজার মানুষকে হত্যা করা হবে। ইজানাগি হাল ছাড়ার পাত্র না। জবাব দেন শক্তভাবে, ‘তাহলে পৃথিবীতে প্রতিদিন জন্ম নেবে দেড় হাজার মানুষ’। এভাবে জগৎ হয়ে উঠে জনবহুল। 

অপবিত্র পাতাল থেকে ফিরে এসে পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে গোসল করেন ইজানাগি। বাম চোখ ধোয়ার সময় জন্ম নেন সূর্যদেবী আমাতেরাসু। ডান চোখ ধোয়ার সময় চন্দ্রদেবতা সুকুয়োমি এবং নাক থেকে ঝড়ের দেবতা সুসানু। সেই পরিশুদ্ধি অর্জন বা হারাই শিন্টোধর্মের অন্যতম প্রধান আচার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় পরবর্তী কালে। পরিগণিত হয় সকল প্রকার পাপ আর অনিষ্ট থেকে নিজেকে বের করে আনার তরিকা হিসাবে।

ইবিসু

পৃথিবীতে আসা প্রথম সন্তান হিরুকো। ইজানাগি এবং ইজানামি বিয়ে সংক্রান্ত আচার পালনের পরে সহবাস করেন। কিন্তু আচারিক ত্রুটিজনিত কারণে জন্ম নেয়া সন্তান লাভ করে অস্বাভাবিক শারিরীক গড়ন। হাড় না থাকায় তাকে হিরুকো বা জোঁকশিশু নাম দেয়া হয়। ভাসিয়ে দেয়া হয় পানিতে। নিয়তির ছিল অন্য পরিকল্পনা। বাতাস তাকে টেনে আনে উপকূলে। সেখানে বেড়ে উঠেন ইবিসু সাবুরোর আশ্রয়ে। ধীরে ধীরে হাত পা গজিয়ে উঠতে থাকে। হাঁটতে এবং দৌড়াতে শুরু করেন হিরুকো। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে এইবার মানুষের মাঝে আনন্দ ও সৌভাগ্য বিলাতে শুরু করেন। পরিণত হন নাবিক, শিশু এবং সৌভাগ্য সুরক্ষার দেবতায়। এই হিরুকোই পরবর্তী কালের ইবিসু।

সৌভাগ্যের প্রধান দেবতাদের মধ্যে ইবিসু একজন; Image Source: japanthis.com

ইবিসুকে প্রায়শ মাথায় হ্যাট পরা নাবিকের অবয়বে চিত্রিত করা হয়। যদিও তিমি, জেলিফিশ কিংবা হাঙরের আকৃতি ধারণ করতেও সক্ষম। জেলে এবং নাবিকেরা তাকে স্মরণ করে বিশেষভাবে। উপকূল অঞ্চলগুলোতে অন্য অনেক দেবতার চেয়ে ইবিসু বেশি প্রাসঙ্গিক। এমনকি প্রাচুর্য্য প্রদানকারী বলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং ফিশারিজগুলোতে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। জাপানি লোককথায় বিখ্যাত সাত ভাগ্যদেবতার মধ্যে একজন ইবিসু।

কাগুতসুচি

ইজানাগি এবং ইজানামির সন্তান কাগুতসুচি বস্তুত আগুনদেবতা। নিয়তির নির্মমতায় তারই আগুনে জন্মদানকালে মা ইজানামি মৃত্যুবরণ করেন। নিয়ে যাওয়া হয় পাতালে। শোক সন্তপ্ত পিতা ইজানাগি সন্তানকে অভিযুক্ত করে আঘাত হানেন। ধর থেকে আলাদা করে দেন মাথা। পতিত সেই রক্ত থেকে জন্মগ্রহণ করে অজস্র কামি। সৃষ্টি হয় বজ্রদেবতাগণের। জন্ম নেন পাহাড় দেবতারা। উত্থান ঘটে ড্রাগনদেবতার। কাগুতসুচিকে তাই শক্তিশালী আর দাপুটে দেবতাগণের পূর্বপুরুষ বলে গণ্য করা যেতে পারে অনায়াসে। তার উত্তরাধিকারের মাধ্যমেই জাপানে সূচনা ঘটে লোহা আর অস্ত্রের ব্যবহারের।

ধ্বংসাত্মক পৌরাণিকতার জন্য জাপানি ঐতিহ্যে কাগুতসুচি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে রাজকীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়েছিল কাগুতসুচিকে উৎসর্গ করে উদযাপিত উৎসব। কাগুতসুচির ক্রোধ প্রশমিত করা কিংবা প্রতিপক্ষের উপর বিজয়লাভ উভয়ই বিবেচ্য থাকতো। কখনো কখনো সেই রাজকীয় আচার চলেছে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে।

আমাতেরাসু

আমাতেরাসু ওমিকামি অর্থাৎ স্বর্গ থেকে প্রজ্জলিত মহানতম কামি। কেবল সূর্যদেবী না, সমগ্র কামি জগতের অধিষ্ঠাত্রী শাসক তিনি। সূর্যোদয়ের পাশাপাশি শৃঙ্খলা আর বিশুদ্ধতার সহাবস্থান ঘটান। পত্তন ঘটে রাজবংশের। জাপানি সংস্কৃতিতে রাজবংশগুলো তাদের উত্তরাধিকারের সূত্র আমাতেরাসুতেই ঠেকায়। আমাতেরাসু স্বীয় নাতি নিনিগিনো মিকোতোকে পৃথিবীর শাসনভার অর্পণ করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবংশের ইতিহাস। অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষেরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময় নিজেদের সূর্যদেবী আমাতেরাসুর উত্তরাধিকার দাবি করেছে।

আমাতেরাসুর প্রত্যাবর্তনে পুনরায় প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে উঠে পৃথিবী; Image Source: Wikimedia Commons

পাতাল ফেরত পিতা ইজানাগির বাম চোখ ধোয়ার সময় আমাতেরাসু জন্মলাভ করেন। বিয়ে হয় ভাই চন্দ্রদেবতা সুকুয়োমির সাথে। ঝড়ের দেবতা সুসানুর সাথে ভয়ানক এক দ্বন্দ্ব বাঁধে তার। শুরুটা ছিল সিংহাসন নিয়েই। ইজানাগি তার সন্তানদের মধ্যে আমাতেরাসুকেই পরিণত আর যোগ্য বলে গণ্য করেছিলেন পৃথিবীর জন্য। কিন্তু সুসানু প্রথম থেকেই সেই মনোনয়নের বিরোধিতা করে আসছে। এজন্য ইজানাগি তার উপর নির্বাসনের আদেশ জারি করেন। কিন্তু বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে সুসানু বোন আমাতেরাসুর কাছে যান। দ্বন্দ্ব বাঁধে উভয়ের মধ্যে। ক্রোধে অন্ধ হয়ে সুসানু একদিক থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকেন পৃথিবী আর স্বর্গব্যাপী। বিধ্বস্ত হয় আমাতেরাসুর ব্যক্তিগত ফসলের মাঠ এবং পশুপাল। মৃত্যুবরণ করে প্রতিনিধি।

সুসানুর এই হঠকারিতা আমাতেরাসুকে হতাশ করে। রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণায় আত্মগোপন করেন আমানো-ইওয়াতো গুহায়। সেই সাথে তামাম পৃথিবী আচ্ছন্ন হয়ে যায় অন্ধকারে। সেটাই পৃথিবীতে প্রথম শীতকাল। পৃথিবীতে জীবনধারণ সে মুহূর্তে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ সময়ের পর অন্যান্য দেবতারা তাকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হন। গুহার বাইরে আসেন আমাতেরাসু, আর পৃথিবী ফিরে পায় হারানো আলোকপর্ব।

সুকুয়োমি

পশ্চিমা পুরাণে চন্দ্রকেন্দ্রিক বিবরণী ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি যেন মানুষের চিরন্তন উত্থান-পতনকেই প্রতীকায়িত করে। জাপানি সংস্কৃতিতে চন্দ্রদেবতা হিসেবে গীত হয়েছে সুকুয়োমির নাম। ইজানাগির ডান চোখ ধোয়ার সময় জন্ম নেন তিনি। সেই অর্থে তিনি আমাতেরাসুর ভাই। অবশ্য কিছু উপকথায় তাকে ইজানাগির ডানহাতে ধৃত সাদা আয়না থেকে জন্ম বলে গণ্য করার প্রবণতা আছে।

সুকুয়োমি বিয়ে করেন আমাতেরাসুকে। ফলে একই আকাশে মিলিত হয় চন্দ্র আর সূর্য। এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সুকুয়োমির আলো ও মঙ্গলময়তা বলতে গেলে আমাতেরাসুর থেকে প্রতিফলন মাত্র। সেই টানাপোড়েনের প্রকাশ ঘটে খাদ্যের দেবী উকে মুচিকে কেন্দ্র করে। উকে মুচি একটা ভোজের আয়োজন করেছিল। দাওয়াত করেছিল আমাতেরাসুকে। কিন্তু সূর্যদেবী আমাতেরাসু বিশেষ কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। তার বদলে প্রেরণ করলেন সুকুয়োমিকে। যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলে ন্যক্কারজনক দৃশ্য চোখে পড়ে সুকুয়োমির। তোলার সময় উকে মুচি খাবারে থুতু দিয়ে নেয়। পরিস্থিতি হজম করতে না পেরে উকে মুচিকে হত্যা করে বসেন সুকুয়োমি।

আমাতেরাসু আর সুকুয়োমির টানাপোড়েন দিয়েই ব্যাখ্যাত হয় দিনরাত্রি; Image Source: canadianstudies.isp.msu.edu

আমাতেরাসুর কানে খবর পৌঁছালে স্বামীকে দুষ্ট আত্মা তকমা দেন। বন্ধ করে দেন স্বর্গে ফেরার পথ। সম্পর্ক চুকিয়ে আকাশের দুই ভিন্ন প্রান্তে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেদিন থেকেই রাত্রি আর দিন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেল। পৃথক হয়ে গেল চাঁদ ও সূর্যের অবস্থানও। সেদিন থেকে সূর্য দূরে থাকতে শুরু করলো চাঁদ থেকে।

সুসানু

ইজানাগির নাক থেকে জন্মগ্রহণ করে সুসানু। সে হিসেবে তিনি আমাতেরাসু এবং সুকিয়োমির ভাই। ইজানাগি তাকে নিযুক্ত করেছিলেন স্বর্গের অভিভাবক হিসেবে। মানসিকতার দিক থেকে সুসানু অস্থির এবং বিশৃঙ্খলাপ্রবণ। ঝড়ের উপর তার পরম ক্ষমতার দরুন তাকে ঝড়ের দেবতা বলেই গণ্য করা হয়। তার মানে তার বদান্যতা ঢাকা পড়ে যায়নি। উপকূল, গভীর সমুদ্র এবং বাতাসের কাছাকাছি থাকা মানুষেরা তাকে স্মরণ করে দৃঢ়চিত্তে। দক্ষিণ জাপানে অবস্থিত তার মন্দির। সুসানুর অস্থিরতা আর উত্তরাধিকার লিপ্সার দরুন ইজানাগি তাকে স্বর্গে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। জারি করা হয় নির্বাসনের আদেশ। সেই গল্প ইতোমধ্যে বলা হয়েছে।

সুসানু মূলত বীরত্ব আর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্যই পরিচিত; Image Source: steemit.com

স্বর্গ থেকে পতনের পর সুসানু ইজুমোতে এক দম্পতির কাছে অবতরণ করেন। নেমেই শুনতে পান ভয়াবহ খবর। দম্পতির আটটা কন্যার মধ্যে সাতটিকেই ইয়ামাতানো ওরোচি নামক দুষ্ট ড্রাগন হত্যা করেছে। ড্রাগন দানবের মাথা আটটি। শীঘ্রই অষ্টম কন্যাকেও হত্যা করবে। সুসানু এই পরিস্থিতিতে স্থির হয়ে থাকতে পারলেন না। একটা বিহিত করতেই হবে। বের করা হলো কৌশল। দম্পতি আগে থেকেই বাইরে গামলায় মদ রেখে দিলে। যথা সময়ে ওরোচি আগমন করলো। আঙিনায় মদ পান করে মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে গেল। সুসানু তাকে টুকরো টুকরো করে কাটলেন। দানব বধে এই অবদানের জন্য লাভ করলেন বিখ্যাত তরবারি কুসানাগিনো সুরুগি। এবার নিশ্চিন্ত হয় ড্রাগনের ভয়ে তটস্থ থাকা নারী। সুসানু সেই অষ্টম কন্যাকে বিয়ে করেন পরবর্তীতে।

সূর্যদেবী আমাতেরাসুর বিরোধিতার কারণে তার চরিত্রে কিছুটা নেতিবাচক বিশেষণ যুক্ত। তবে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরে আসতে আর দেরি হয়নি। ড্রাগন হত্যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তরবারিটি নিয়ে বোন আমাতেরাসুকে প্রদান করেন সুসানু। অতীতের অনুতাপের চিহ্ন হিসেবে। ভুল সংশোধিত হয়। ইজানাগিও পুত্রকে গ্রহণ করেন সাদরে। নিজের পরে সুসানুকে পাতালের অভিভাবক নিযুক্ত করেন। সেই থেকে এখন অব্দি সুসানু মৃত্যুপুরীর অভিভাবক।

তারপর

আপাত চোখে জাপানি উপকথাকে কঠিন আর দুর্বোধ্য মনে হলেও অন্যান্য সংস্কৃতির উপকথার সমান্তরালে স্থাপন করা যায় সহজেই। গ্রিক মিথের জিউস এবং টাইফুনের সংঘাত, নর্স মিথের থর এবং ইয়োরমুঙ্গানদরের সংঘর্ষ, ভারতীয় পুরাণে ইন্দ্র এবং ভৃতের দ্বন্দ্বের সাথে পাশাপাশি রেখে পাঠ করা যায় সুসানু এবং ওরোচির সংঘাত। ইজানামি এবং ইজানাগির আখ্যান অনেকটা সাদৃশ্য দেখায় গ্রিক পুরাণের ওর্ফিয়ুস এবং ইউরিডাইসের উপকথার সাথে। কিছুটা অবশ্য হেডেস এবং পার্সিফোনির আখ্যানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাতেরাসুকে নর্স মিথের সল, ভারতীয় পুরাণের সূর্যের সাথে মেলানো যায়। অন্যদিকে সুকুয়োমি যেন মিশরীয় খনসু, নর্স পুরাণের মানি এবং ভারতীয় চন্দ্রদেবতার জাপানি সংস্করণ।

প্রতিটা সভ্যতাই পুরাণের সমুদ্রে জন্মগ্রহণ করে। নিজের জ্ঞান দিয়ে সংজ্ঞায়ন করতে চায় মানব অস্তিত্বের অতীত এবং ভবিষ্যৎকে। জাপান তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বব্যাপী পরিচিতি না পেলেও স্থানীয় ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে এর প্রভাব তীব্র। জাতীয়তাবাদের ঢেউ পরবর্তীতে আধুনিক জামানায় নির্মিত এনিমে এবং ফ্যান্টাসি মুভিগুলোতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পুরানো চিহ্ন।

Related Articles