Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জ্যাসন আর আর্গোন্যাটসদের গল্প (পর্ব – ৩)

হেরাক্লসের অভিযানের পরিসমাপ্তি

প্রোপোন্টিসের দক্ষিণ উপকূলে মাইশিয়া দ্বীপ। আর্গোন্যাটসরা ডোলিওনেসদের আবাস ছেড়ে এখানে এসে যাত্রাবিরতি করে। দ্বীপের মানুষেরা তাদের যথেষ্ট আদর-আপ্যায়ন করল। অন্য সাথীরা যখন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত তখন হেরাক্লস দ্বীপের জঙ্গলে প্রবেশ করলেন দাঁড় তৈরি করার মতো কোনো গাছের সন্ধানে। তার পিছু নিয়ে হাইলাসও সেখানে চলে যায়। এদিকে পলিফেমাস আবার হাইলাসকে অনুসরণ করলেন। কিন্তু জঙ্গলের ভেতরে তিনি হাইলাসকে হারিয়ে ফেললেন।

মাইশিয়া; Image Source: henzen.org

হাইলাস দত্তক পিতাকে খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে পড়েন। এখানে নির্জন আর বিচ্ছিন্ন এলাকাতে জলপ্রপাতে বাস করা দেবী তরুণ হাইলাসের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে যান। তিনি তাকে টেনে নিয়ে গেলেন পানির গভীরে নিজ রাজ্যে। অসহায় তরুণের বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে পেয়ে পলিফেমাস তাড়াহুড়ো করে হেরাক্লসের কাছে উপস্থিত হন। তার কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ পেয়ে হেরাক্লস ও পলিফেমাস চারিদিকে অনুসন্ধান চালালেন। কিন্তু হাইলাসের কোনো চিহ্নই তারা দেখতে পেলেন না।

হাইলাসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন জলদেবী; Image Source: amazon.com

হেরাক্লস ও পলিফেমাস যখন মাইশিয়ার বনে তখন জ্যাসন আর তার সাথীরা আর্গোতে ফিরে এল। কেউ খেয়াল করল না যে হেরাক্লস, পলিফেমাস আর হাইলাস জাহাজে নেই। কাজেই নোঙর তুলে জাহাজ ছেড়ে দেয়া হলো। কিছুদূর আসার পর সবার মনে পড়ল, আরে! হেরাক্লস কই? এবার পলিফেমাস আর হাইলাসের অনুপস্থিতিও দৃশ্যমান হলো। তারা মাইশিয়াতে রয়ে গেছে বুঝতে পেরে নতুন এক বিতর্কের সূচনা হয়।আর্গোন্যাটসরা দুই দিলে ভাগ হয়ে গেল। একদল চাইল না থেমে সামনে এগিয়ে যেতে, আরেকদল বলল, অবশ্যই ফিরে গিয়ে আগে ফেলে আসা সাথীদের উদ্ধার করতে হবে।

দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে সমুদ্র থেকে উত্থিত হলেন এক গ্রীক দেবতা, গ্লকাস। তিনি জ্যাসনকে জানালেন হেরাক্লস আর তাদের সাথে যেতে পারবেন না, কারণ জিউস তার জন্য নতুন আরেক অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন। ফলে আর্গোন্যাটসরা এগিয়ে চলতে লাগল। এদিকে হেরাক্লস নতুন অ্যাডভেঞ্চারে চলে গেলেও পলিফেমাস মাইশিয়াতে থেকে যান। এখানে তিনি নতুন এক নগরীর পত্তন করে এর রাজা হয়ে বসেন।

পোলাক্সের কুস্তি

আর্গোন্যাটসরা এবার এসে পড়ল বেব্রিশিয়ানদের রাজ্যে। তাদের রাজা অ্যামিকাস, দক্ষ একজন কুস্তিগির। নিজের শক্তিতে তার অসীম আস্থা। অ্যামিকাসের দৃঢ় বিশ্বাস তাকে কুস্তিতে হারানোর মতো কোনো মানব এই ধরিত্রীতে নেই। রাজ্যে নতুন কেউ আসলেই অ্যামিকাসের কাজ ছিল তাকে লড়াইয়ে আহ্বান করা, এবং অনেক সময়ই প্রতিপক্ষ কুস্তিতে তার হাতে নিহত হত।

জ্যাসন বেব্রিশিয়ানদের এলাকাতে নামার অনুমতি চাইলে অ্যামিকাস তার স্বভাব মোতাবেক জানিয়ে দেন তাকে কুস্তিতে পরাস্ত করতে পারলেই কেবল এই অনুমতি পাওয়া যাবে। পোলাক্স ছিলেন তৎকালীন গ্রীসের সেরা কুস্তিগির। তিনি অ্যামিকাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। ভীষণ লড়াইয়ের পর অ্যামিকাস পোলাক্সের আঘাতে মৃত্যুবরণ করলেন। শেষ হলো তার মরণখেলার।

পোলাক্স আর অ্যামিকাসের কুস্তি; Image source: revgearsports.com

ফিনিয়াস ও হার্পিস

আর্গোন্যাটসরা এবার পা রাখল বিথাইনিয়াতে। এশিয়া মাইনরের সমুদ্রবর্তি এই অঞ্চল ঘিরে আছে বসফরাস, প্রোপোন্টিস আর কৃষ্ণসাগর। বিথাইনিয়ার হতভাগা রাজা ফিনিয়াস, যিনি একসময় ছিলেন দেবতা বোরিয়াসের কন্যা ক্লিওপেট্রার স্বামী। তার আছে ভবিষ্যৎ বলার জ্ঞান। কিন্তু এর অপব্যবহারের জন্য দেবতারা তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। ফলে ফিনিয়াস অন্ধ হয়ে যান এবং সময়ের আগেই বুড়িয়ে যেতে থাকেন। এছাড়াও তার আরেক উৎপাতের নাম ছিল হার্পিস। নারীর মুখাবয়বধারী পাখির মতো এই প্রানীরা দেবতাদের আদেশে ফিনিয়াস খেতে বসলেই তার খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। ফলে রাজা কিছুই খেতে পারছিলেন না। গ্রীক বীরেরা তার ভূখণ্ডে এলে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ফিনিয়াস তাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করলেন।

হার্পিস; Image Source: boardgamegeek.com

জেটিস আর ক্যালাইস ফিনিয়াসকে চিনতে পারলেন। এই তো তাদের বোনের স্বামী। তারা তাকে সহায়তার অঙ্গীকার করেন। সেই মোতাবেক সমুদ্রতটে খাবারদাবারের আয়োজন করা হয়। ফিনিয়াস উপস্থিত থাকাতে প্রত্যাশামতো হার্পিসরা আক্রমণ করে। তারা যখন সব খাদ্য নিয়ে উড়াল দিল তখনই বোরিয়াসের দুই ছেলে উন্মুক্ত তরবারি হাতে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের ধাওয়া খেয়ে হার্পিসরা যখন পালাচ্ছিল তখন দেবতাদের পক্ষ থেকে তাদের বার্তাবাহক আইরিস হাজির হন। তিনি জেটিস আর ক্যালাইসকে ক্ষান্ত হতে অনুরোধ করে কথা দিলেন যে হার্পিসরা আর ফিনিয়াসকে বিরক্ত করবে না।

অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেয়ে ফিনিয়াস অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হলেন। আর্গোন্যাটসদের যাত্রার উদ্দেশ্য জানতে পেরে তিনি তাদের কী কী বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে তার এক ফিরিস্তি দিয়ে দেন, সাথে সাথে বিপদ থেকে উদ্ধারের পথও বাতলে দিলেন। পনের দিন তার কাছ থেকে নানা পরামর্শ নেয়ার পর জ্যাসন পুনরায় যাত্রা শুরু করল।

সিমপ্লেগেডস

সাগরের উপর ভেসে থাকা দুই পাথুরে দ্বীপ সিমপ্লেগেডস। তারা ক্রমাগত একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল। ফিনিয়াস আর্গোন্যাটসদের জানিয়েছিলেন তাদের এই দুই দ্বীপের মাঝের পথ ধরেই যেতে হবে। সিমপ্লেগেডস দেখতে পেয়ে তাই টাইফাস শক্ত হাতে হাল ধরলেন, আর ইউফেমিস হাতে এক ঘুঘু পাখি নিয়ে প্রস্তুত থাকলেন। “যখন ঘুঘু পাখি দুই দ্বীপের মধ্য দিয়ে নিরাপদে উড়ে যেতে পারবে,” ফিনিয়াস জ্যাসনকে বলেছিলেন, “তখন ধরে নেবে তোমাদের পথও পরিষ্কার”।

দুই পাথুরে দ্বীপ ধাক্কা খেয়ে আলাদা হয়ে যেতেই ইউফেমিস পাখিটিকে মুক্ত করে দিলেন। কয়েকটি পালক খসে গেলেও ঘুঘুটি নিরাপদে পার হয়ে যেতে সক্ষম হলো। পরের বার দ্বীপ দুটি আলাদা হয়ে যেতেই তীব্র গতিতে টাইফাস জাহাজ চালিয়ে দিয়ে সিমপ্লিগেডস পার হয়ে এলেন।

সিমপ্লেগেডসের মধ্য দিয়ে আর্গোর বিপদসঙ্কুল যাত্রা; Image Source: duguesclin.free.fr

স্ট্যাম্ফ্যালিডস

আর্গো চলতে থাকল পন্টাস রাজ্যের দক্ষিণ উপকূল ঘেঁষে। এখানে এরশিয়াস দ্বীপের কাছে আসলে খাবার ও পানীয় সংগ্রহের তাগিদের সেখানে নামার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু এই দ্বীপে বাস করত স্ট্যাম্ফ্যালিডস নামে হিংস্র এক জাতের পাখি। ডানা থেকে তারা নিক্ষেপ করত তীরের মতো ধারাল পালক, যা শরীরে লাগলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

স্ট্যাম্ফ্যালিড পাখি; Image Source: abookofcreatures.com

আর্গোন্যাটসরা আলোচনায় বসল। অ্যাম্ফিডামাসের পরামর্শে তারা যুদ্ধসাজে সজ্জিত হলো। শিরস্ত্রাণ পরিহিত বীরেরা তাদের ঢাল তুলে ধরে একসাথে হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে দ্বীপে পা রাখল। তাদের শোরগোলে ভীত হয়ে  স্ট্যাম্ফ্যালিডসরা পালানোর পথ পেল না। দ্বীপে নেমে আর্গোন্যাটসরা আবিষ্কার করল জাহাজডুবির শিকার চার তরুণকে। কথায় কথায় জানা গেল- এরা ফ্রিক্সাস আর চ্যালসিওপির সন্তান। জ্যাসন তাদের সাদরে আর্গোতে স্থান দিয়ে তাদের আসার কারণ জানাল। চার তরুণই সাগ্রহে তার সঙ্গী হতে সম্মত হয়। তারা জ্যাসনকে সতর্ক করল এই বলে যে, এইটিস ভয়ঙ্কর রকমের নিষ্ঠুর এক রাজা। দেবসন্তান হওয়ার কারণে তার শক্তি-সামর্থ্যও সাধারণের থেকে বহুগুনে বেশি। আর উদ্দিষ্ট মেষচর্ম এইটিসের হুকুমে প্রহরা দিচ্ছে এক বিশাল ড্রাগন। 

গন্তব্যে পদার্পণ

প্রভাতের প্রথম রশ্মি ককেশাসের চূড়া উদ্ভাসিত করে তুলল। আর্গোন্যাটসদের মাথার উপর থেকে ভেসে এলো পাখার ঝটপটানি। বিশাল এক ঈগল পাখি উড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের দিকে, যেখানে জিউসের আদেশে শৃঙ্খলিত হয়ে আছেন টাইটান প্রমিথিউস। ঈগল তার যকৃৎ ঠুকরে ঠুকরে খাওয়া শুরু করতেই প্রমিথিউসের আর্তনাদে চতুর্দিক কেঁপে উঠল। সবাই বুঝতে পারলেন তারা চলে এসেছেন এইটিসের রাজ্যে।

কলচিস সাম্রাজ্য; Image Source: twcenter.net

সমুদ্রের ঢেউ থেকে ফেসিস নদীর শান্ত পানিতে প্রবেশ করল আর্গো। নদীর দক্ষিণ তীরে কলচিসের রাজধানী সিউটা, নয়নাভিরাম এক নগরী। উত্তর তীরে বিস্তীর্ণ প্রান্তর গিয়ে মিলেছে এরিসের বাগানে, সেখানেই সবচেয়ে উঁচু গাছের মাথায় শোভা পাচ্ছে আর্গোন্যাটসদের এতো বিপদসঙ্কুল অভিযাত্রার লক্ষ্য- স্বর্ণপশমী সেই মেষচর্ম।

সঙ্গীদের সাথে পরামর্শ করে জ্যাসন ফ্রিক্সাসের চার ছেলে আর হাতে গোনা কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে চলল  এইটিসের সাথে সাক্ষাৎ করতে। প্রাসাদের কাছে এসে তাদের চোখ জুড়িয়ে গেল। বিশাল রাজপ্রাসাদ ঘিরে আছে মনোমুগ্ধকর এক বাগান। সবুজ গাছপালা আর ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এইটিসের দুই মেয়ে, চ্যালসিওপি আর তার ছোট বোন তরুণী মিডিয়া। জ্যাসনের সাথে হারিয়ে যাওয়া ছেলেদের দেখে চ্যালসিওপি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন, তিনি তো তাদেরকে মৃত বলেই ধরে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে সুদর্শন জ্যাসন আর অপরূপা মিডিয়া প্রথম দেখাতেই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল।

কলচিসের প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ; Image Source: ancient-origins.net

নাতিদের ফিরে পাওয়ার আনন্দে আর নতুন অতিথিদের সমাদর করতে এইটিস অবিলম্বে বিরাট আয়োজন করলেন। খাওয়াদাওয়া শেষে জ্যাসন ধীরে-সুস্থে তাদের আসার কারণ জানাল রাজার কাছে। এইটিস তো রাগে ফুঁসে উঠলেন। তার এত সাধের সম্পদ নিয়ে যাবে ভিনদেশী কিছু ইঁচড়ে পাকা যুবক, কখনোই না! জ্যাসন অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজাকে শান্ত করল। রফা হলো আর্গোন্যাটসরা কয়েকটি কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করবে যে তারা দেবতাদের আশীর্বাদধন্য। শুধু তাহলেই মেষচর্ম তাদের হস্তগত হবে। কী সেই কাজ তা এইটিস জানিয়ে দিলেন।

দেবতা হেপহেস্তুস তাকে দিয়েছিলেন বিশালাকায় ব্রোঞ্জের পদযুক্ত একজোড়া ষাঁড়, যাদের নিঃশ্বাসের সাথে বের হত আগুন। এদের ঘাড়ে জোয়াল চাপিয়ে লোহার লাঙ্গল দিয়ে চষতে হবে পাথুরে এক জমি, তারপর সেখানে বপন করতে হবে ড্রাগনের বিষাক্ত দাঁত। সেই দাঁত থেকে জন্ম নেবে একদল সেনা, তাদের হত্যা করতে হবে। সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারলেই কেবল এইটিস তাদের মেষচর্ম নিয়ে যাবার অনুমতি দেবেন। রাজা নিশ্চিত ছিলেন এই কাজ করতে গিয়ে জ্যাসন মারা পড়বেন।

This is a Bengali language article about Jason and his famous Argonauts. This article describes the adventures of Jason in search of the Golden Fleece.

Reference

  1. Berens, E. M. (2009) The Myths and Legends of Ancient Greece and Rome (Ed. S. M. Soares); MetaLibri, pp.182-194.

ফিচার ইমেজ; Image Source: ngv.vic.gov.au

Related Articles