Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জ্যানাস ও টার্মিনাস: রোমানদের নিজস্ব দুই দেবতার কথা

বর্তমানে ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হওয়া গ্রিস প্রাচীনকালে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপের অধিকারী। শুধু নিজেদের অধিবাসীদের উপরেই নয়, তারা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল আশপাশের প্রায় সবগুলো সমসাময়িক সভ্যতার উপর। এমনকি পরবর্তীকালে যেসব সভ্যতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তারাও গ্রিক-প্রভাবের বাইরে ছিল না। 

শৌর্য-বীর্য বা সাম্রাজ্যের আকৃতির দিক দিয়ে চিন্তা করতে গেলে, রোমানরা এগিয়ে থাকবে যোজন-যোজন। কিন্তু এই রোমানদের উপরও জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা গ্রিকদের সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। রোমানদের প্রায় সব দেব-দেবীর ধারণাই বলতে গেলে, গ্রিক পুরাণ থেকে এসেছে। যদিও নামের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে।

গ্রিকদের প্রধান দেবতা জিউস, রোমানদের কাছে হয়ে যায জুপিটার; অ্যাথেনা হয়ে যান মিনার্ভা এবং হেরা হয়ে যান জুনো। এছাড়া হার্মিস থেকে মার্কারি, এরিস থেকে মার্স, অ্যাফ্রোদিতি থেকে ভেনাস, হেফাস্টাস থেকে ভলকান, পোসাইডোন থেকে নেপচুন এবং হেডিস থেকে প্লুটোও আছেন এই তালিকায়।

তবে প্রাচীন রোমান পৌরাণিক গল্পে যে মৌলিক ও নিজস্ব দেবতা একেবারে নেই, তা নয়। রোমান দেব-দেবীদের মাঝেও এমন অনেকে আছেন যারা নিজ মহিমায় ভাস্বর। কোনো গ্রিক দেবতার আদলে এদের তৈরি করে তোলার দরকার হয়নি। সংখ্যায় হাতে গোনা হলেও, রোমানদের জীবনে এই দেবতাদের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। এমন দুই দেবতা হচ্ছেন জ্যানাস এবং টার্মিনাস।

১. জ্যানাস

প্রাচীন রোমের কিংবদন্তি অনুসারে, জ্যানাস হচ্ছেন নতুন কোনোকিছু শুরুর দেবতা, দরজা এবং তোরণের দেবতা। কোনো সফরের প্রথম পদক্ষেপটা তার অনুমতি ব্যতীত নেওয়া অনুচিত কাজ। বছরের প্রথম মাস, জানুয়ারি, তার নামানুসারেই রাখা হয়েছে বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের ধারণা। কখনো কখনো তাকে সময়ের দেবতা বলেও অভিহিত করা হয়।

কোথাও কোথাও ফসল বোনা ও তোলার মৌসুমের শুরুতেও তার আরাধনা করা হতো। এমনকি জন্ম, বিয়ে, শেষকৃত্য এবং কিশোরদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোতেও এই দেবতার উদ্দেশে নৈবেদ্য উৎসর্গিত হতো।

জ্যানাসকে অধিকাংশ সময় উপস্থাপন করা হয় দুই মস্তকধারী হিসেবে। দুটো মাথা পরস্পর বিপরীত দিকে মুখ করে আছে। তার অধিকাংশ মূর্তিতে রয়েছে এক গাল দাড়ি। ডান হাতে ধরে আছেন একটা ছড়ি, যেন সঠিক পথ দেখাতে পারেন ভ্রমণকারীদের। বাঁ হাতে আছে একটা চাবি, যা দিয়ে খুলে ফেলা যায় যেকোনো দরজা।

ডানে হাতে ছড়ি ও বাঁ হাতে চাবি ধরে আছেন জ্যানাস; Image: theconversation.com

রোমান সভ্যতার একদম শুরুতেই জ্যানাসের উপস্থিতি দেখা যায়। রোমুলাস যখন রোম প্রতিষ্ঠার পর স্যাবিন নারীদেরকে অপহরণ করলেন, তখন এক উষ্ণ পানির ঝর্ণার বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। এর ফলে, স্যাবিন রাজা টাটিয়াসের সৈন্যদের অধিকাংশই মারা যায় এবং বেঁচে যায় রোমানরা।

দেবরাজ জুপিটার যখন তার বাবা স্যাটার্নকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেন, তখন তাকে আশ্রয় দেন জ্যানাস। সেই আতিথেয়তায় সন্তুষ্ট হয়ে জ্যানাসকে অতীত এবং ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা উপহার দেন স্যাটার্ন।

অন্য এক কিংবদন্তি মতে, এই দেবতা এসেছিলেন থেসেলি থেকে। ল্যাটিয়ামে পা রাখার পর, সেখানে তাকে সাদরে বরণ করে নেন কেমিসে। এরপর তাদের বিয়ে হয়, তারা একাধিক সন্তানের জন্মও দেন। এই সন্তানদের একজন হচ্ছে টাইবার নদীর দেবতা টাইবারনিয়াস। কেমিসে ছাড়াও, জানা ও জুতুর্না নামে আরো দুজন স্ত্রী ছিল জ্যানাসের। টাইবারনিয়াস ছাড়াও ফন্টাস নামে আরেক বিখ্যাত সন্তানের পিতা ছিলেন তিনি।

ল্যাটিয়ামের প্রথম রাজা হিসেবে জ্যানাস বহুদিন রাজ্য পরিচালনা করেন। তিনিই অর্থের প্রচলন করেন। সেই সঙ্গে আইন এবং ক্ষেতে কৃষিকাজ করার প্রচলনও তার হাত ধরেই।

খ্রিস্টপূর্ব ২৬০ সালে এই দেবতার সম্মানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিখ্যাত মন্দির ‘ইয়ানাস জেমিনাস’ বা ‘জ্যানাস জেমিনাস’। এছাড়াও জ্যানিকুলাম ও অন্যান্য জায়গায় ছিল তার মন্দির।

জ্যানাস জেমিনাস- দেবতা জ্যানাসের মন্দির; Image: yourrebegin.blogspot.com

দেবতা জ্যানাস এতটাই জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন যে, তার পুজো না করে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শুরুই হতো না। এভাবে তিনি বনে যান লক্ষণের দেবতাও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রোমানরা লক্ষণ দেখে কাজ করতে এবং ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে খুব পছন্দ করতো।

গ্রিক দেবতারা ভিন্ন ভিন্ন নামে রোমানদের প্রধান দেবতা হয়ে বসলেও, জ্যানাস তার নিজের অবস্থানে আসীন থাকেন। রোমান অনেক মুদ্রাতেও ব্যবহার করা হতো এই দেবতার চেহারা। এখনো রোমের নানান জায়গায় তার প্রতিকৃতি চোখে পড়বে। এ থেকেই আসলে এই দেবতার প্রতাপ অনুমান করা যায়।

রোমান মুদ্রায় জ্যানাসের চেহারা; Image: theconversation.com  

২) টার্মিনাস

রোমানদের সীমানার দেবতা ছিলেন টার্মিনাস। সীমানার দেবতা বলতে ব্যক্তিগত এবং সম্পত্তির সীমানা, উভয়েরই দেখভাল করতেন তিনি। সেই সঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের সীমানা তো আছেই। এমনিতে খুব শান্ত স্বভাবের হলেও নিয়ম ভাংতে দেখলে রাগে হুঁশ খুইয়ে বসতেন।

টার্মিনাস ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ মার্কার বা চিহ্ন। তিনি সবসময় সীমানা-চিহ্নের মাঝে বাস করতেন বলেই তার এমন নামকরণ। সাধারণত তাকে দেখানো হয় পাথুরে কোনো ফলক হিসেবে, যার কিছুটা অংশ মাটির ভেতরে প্রোথিত। নিয়ম-শৃঙ্খলা তার দারুণ পছন্দ, সেই অনুপাতেই সব কিছু হোক- সেটাই তিনি চান। একই সময়ে অনেকগুলো জায়গায় থাকতে পারেন তিনি।

সীমানা-দেবতা টার্মিনাস; Image:riordan.fandom.com

টার্মিনাসের সম্মানে প্রতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি উৎসব উদযাপন করতো জমি-মালিকরা। সেই উৎসবের নাম ছিল টার্মিনালিয়া।

এই উৎসবের শুরুতে খোঁড়া হতো এক খন্দ। এরপর সেখানে জ্বালানো হতো আগুন। পশুবলি দেওয়ার পর সেই রক্ত ঢালা হতো সেই খন্দে। সবশেষে পশুর দেহটিকে ছুঁড়ে দেওয়া হতো আগুনে। সেই সঙ্গে যোগ হতো ফল, মধু এবং মদ। দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে এবং আগুন নিভে গেলে, আগে থেকেই মালা পরানো পাথর এনে শক্ত করে বসানো হতো ছাইয়ের মাঝে।

টার্মিনালিয়া উৎসব; Image: romeacrosseurope.com

টার্মিনাসের বিগ্রহ হিসেবে পূজিত সীমানা পাথরকে এতটাই পবিত্র ধরা হতো যে, কেউ যদি ভুলেও সেটি সরাতো তাহলে তাকে হত্যা করার অধিকার পেতো জমির মালিকের। পরে অবশ্য মৃত্যুদণ্ডের প্রথা রহিত করে জরিমানা চালু করা হয়।

পরবর্তীকালে একবার রোমান রাজা টারকুইনিয়াস সুপারবাস এ ধরনের একটি পাথর সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জ্যোতিষীদের প্রবল বাধার মুখে এই সিদ্ধান্ত থেকে তাকে পিছু হটতে হয়েছিল। এতটা স্পর্শকাতরতা যে টার্মিনাসের দোহাইয়ে, তা বলা বাহুল্য।

রোমে টার্মিনাসের উপাসনা শুরু হয় রোমুলাসের রাজত্বের শেষ দিকে। অথবা তার পরবর্তী রাজা নুমার শাসনামলে। খুব দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন এই দেবতা। ক্যাপিটোলাইন পাহাড়ে অবস্থিত জুপিটার অপটিমাস ম্যাক্সিমাসের মন্দিরের পাশে পাওয়া গিয়েছে তার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি ছোট্ট মন্দির।

টার্ম, টার্মিনাল, টার্মিনেট-এর মতো বহুল ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দ এসেছে টার্মিনাস নামটি থেকেই।

গ্রিক, এট্রুসকান এবং আরো নানা সংস্কৃতি থেকে নিজেদের জন্য দেবতা ‘ধার’ করেছিল রোমানরা। একদম তাদের নিজস্ব দেবতার সংখ্যা খুব কম। যারাও বা ছিলেন, তারাও যে খুব গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী, এমনটিও নয়। তবে নিঃসন্দেহে জ্যানাস এবং টার্মিনাস তার ব্যতিক্রম।

Related Articles