Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জল বাগানের জন্য আদর্শ ১০টি জলজ উদ্ভিদ

বাগান করার শখ একটি অতি জনপ্রিয় ও সার্বজনীন শখ। শৈশবে ‘গার্ডেনিং’ প্যারাগ্রাফ পড়া হলেও বড় হয়ে নিজের ইচ্ছামতো একটি বাগান আর করা হয়ে ওঠে না। সময়ের অভাবে তো বটেই, কখনোবা পরিকল্পনার অভাবও এর পেছনে কাজ করে। তবে বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে পতিত জমি আর তেমন নেই, যেখানে বাগান করা যাবে। ভূমির শতভাগই এখন মানুষ কাজে লাগাতে চায়। সৌন্দর্য চেতনার আগে স্থান পায় প্রয়োজনীয়তা। তবে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে ‘ওয়াটার গার্ডেনিং’ বা জল বাগান। বাড়ির পাশে যদি এক টুকরো জলাশয় থাকে তাতেই করে ফেলতে পারেন মনোরম জল বাগান। মাছ চাষের পাশাপাশি একটি জলাশয়কে সর্বোত্তম রূপে ব্যবহার করার জন্য বাগান করার বিকল্প নেই। কীভাবে সাজাবেন সেই বাগান? নিচের জলজ উদ্ভিদগুলো হতে পারে তার অন্যতম ভালো সমাধান।

১) হর্সটেইল উদ্ভিদ

হর্সটেইল উদ্ভিদ; source: botano.gr

ইকুইসেটাসিয়া গোত্রের একমাত্র জীবিত গণ (Genus) ইকুইসেটাম। গোত্র তো দূরের কথা, পুরো একটি শ্রেণী ইকুইসেটোপসিডার একমাত্র জীবিত উদ্ভিদ এই ইকুইসেটাম যা ‘হর্সটেইল’ বা ‘স্নেকগ্রাস’ নামে পরিচিত। নামগুলো শুনতে অদ্ভুত হলেও মোটেও অপ্রাসঙ্গিক নয়। এই উদ্ভিদ দেখতে কিছুটা সাপের মতো কিংবা পরিণত বয়স্ক ঘোড়ার লেজে মতো! এমনকি বৈজ্ঞানিক নাম ইকুইসেটামও এসেছে গ্রীক শব্দ ‘ইকুইসেটা’ থেকে, যার অর্থ ঘোড়ার লোম।

যা-ই হোক, জীববিজ্ঞানীদের কাছে বেশ কদর রয়েছে এই উদ্ভিদের। শীত প্রধান অঞ্চলের উদ্ভিদ হলেও এর ‘হাইব্রিড’ বা সংকর প্রজাতিগুলো গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের জন্য মানানসই। সংকর প্রজাতি সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে একে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা হ্রাস করা। আশার ব্যাপার হচ্ছে, এর অদ্ভুত সৌন্দর্য একে জলজ বাগানের জন্য উপযুক্ত একটি উদ্ভিদে পরিণত করেছে, যা উদ্ভিদপ্রেমীদের আকৃষ্ট করছে।

২) লোবেলিয়া কার্ডিনালিস

লোবেলিয়া কার্ডিনালিস; source: easywildflowers.com

এই টকটকে লাল ফুলবিশিষ্ট উদ্ভিদের ১০ এর অধিক নাম রয়েছে। স্কারলেট লোবেলিয়া, পিংক বে, ওয়াটার গ্লাডিওল, সিংকউইড, বগ সেজ, ইন্ডিয়ান পিংক সহ আরো বেশ কিছু নাম আছে এই উদ্ভিদের। তবে সাধারণভাবে লোবেলিয়া বা কার্ডিনাল ফুল নামেই পরিচিত। ২- ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় প্রতিটি লোবেলিয়া উদ্ভিদ। সাধারণত ভেজা মাটিতেই জন্মে থাকে। তবে গোড়া জলনিমগ্ন হয়ে গেলে মারা যায়। লোবেলিয়ার জন্য তাই যথাযথ স্থান হচ্ছে পুকুরের পাড়। এতে একদিকে পুকুরের পাড় রক্ষা পাবে ক্ষয় থেকে। অন্যদিকে অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা কিংবা আগাছার ঝামেলামুক্ত এই উদ্ভিদ সৌন্দর্যবর্ধন করবে বহুগুণে। তবে এর আসল গুণটি এখনো বলা হয়নি। হামিংবার্ড আর প্রজাপতির জন্য লোবেলিয়া একপ্রকার প্রাকৃতিক চুম্বক! তাই একাধারে একগুচ্ছ লোবেলিয়া রোপণ করলে তাদের উপর হামিংবার্ড আর প্রজাপতির বিচরণ স্বর্গীয় সৌন্দর্য এনে দেবে।

৩) ক্রিপিং জেনি

ক্রিপিং জেনি; source: saysaysamkin.blogspot.com

পুকুরের পাশে কি পাথর রয়েছে? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলেই আপনার জল বাগানের জন্য চোখ বন্ধ করে আপনি যে উদ্ভিদটি নির্বাচন করতে পারেন, তার নাম হচ্ছে ক্রিপিং জেনি। ‘লাইসিম্যাসিয়া নিউমুলারিয়া’ এর বৈজ্ঞানিক নাম। এর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এত দ্রুত যে কখনো বা আগাছার মতো মনে হতে পারে। তবে গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সোজা। পাথরের মাঝে ভেজা মাটিতে কিংবা ২ ইঞ্চি পানির নিচেও অনায়াসে বেড়ে উঠতে পারে এই উদ্ভিদ।

ধূসর কঠিন পাথরের উপর একঝাঁক উজ্জ্বল সবুজ ক্রিপিং জেনির গুচ্ছ দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই উদ্ভিদে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে ফেনলিক অ্যাসিড যার কারণে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ কাছে ঘেঁষে না। তাছাড়া ক্রিপিং জেনির রয়েছে কিছু ওষধি গুণাগুণ। বাতের ব্যথা সংক্রান্ত চিকিৎসায় চাইনিজরা ক্রিপিং জেনি ব্যবহার করে থাকে।

৪) পিকারেল রাশ

পিকারেল রাশ বা পিকারেল ব্লু; source: wholesalewaterlilies.com

পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য এবং উপযোগী একটি উদ্ভিদের নাম হচ্ছে পিকারেল রাশ। কারণ একবার রোপণ করার পর এই উদ্ভিদের জন্য আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই। ২-৩ ফুট গভীর পানিতে লাগানো হয় এই উদ্ভিদের চারা। সাধারণ বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে পিকারেলের। তবে কিছু প্রজাতির পিকারেলের ফুল বর্ষাকালেও ফোটে। এর উজ্জ্বল সবুজ পর্ণরাজির মাঝে বেগুনী নীল ফুল যেকোনো জলজ বাগানের শোভা বর্ধন করবে।

৫) ওয়াটার লেটুস

ওয়াটার লেটুস; source: 123rf.com

আপনার জলজ বাগানের কেন্দ্রে পানিতে ভাসমান কিছু ওয়াটার লেটুস বাগানের শোভাবর্ধনের সবচেয়ে সহজতম উপায়। এর পীতাভ সবুজ পাতাগুলো পানিতে রোজেটের আকৃতিতে সর্বোচ্চ ৪ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়ে ছড়িয়ে থাকে। এই উদ্ভিদের জন্য কোনো পরিশ্রমই করতে হবে না। কেবল কয়েকটি ওয়াটার লেটুস এনে পুকুরের মাঝখানে ছেড়ে দিন। এরা নিজেরাই বেড়ে উঠবে, বংশবৃদ্ধি করবে। কেবল সৌন্দর্যবর্ধন নয়, ওয়াটার লেটুস পুকুরের জন্য উপকারীও বটে। এই উদ্ভিদ পুকুরের পানিতে অতিরিক্ত অক্সিজেন ত্যাগ করে যা পুকুরের বাস্তুসংস্থানের জন্য উপকারী। এছাড়া পুকুরের উপরের স্তরে বসবাস করা মাছের জন্য ছায়া হিসেবে কাজ করে এই উদ্ভিদ। আর অতিরিক্ত জৈব পরিপোষক পদার্থ শোষণ করে ওয়াটার লেটুস আপনার পুকুরকে রাখবে শ্যাওলামুক্ত। তাই সৌন্দর্য এবং উপকারিতার বিচারে ওয়াটার লেটুস জলজ বাগানের জন্য সহজ বাছাই।

৬) মোজাইক উদ্ভিদ

মোজাইক উদ্ভিদ; source: worldoffloweringplants.com

পরপর গুচ্ছাকারে থাকা ৩ ইঞ্চি লাল এবং সবুজ পাতা এই প্রজাতির উদ্ভিদগুলোর বিশেষত্ব। ৬ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট গভীরতায় এই উদ্ভিদ রোপন করলে পরবর্তীতে আর কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। পূর্ণাঙ্গ মোজাইক উদ্ভিদ দেখতে পুকুরের পানিতে ঘরের মেঝে সদৃশ মোজাইকের মতো। প্রখর রৌদ্রে পুকুরের পানি ৬০/৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে গেলেও মোজাইক উদ্ভিদের জন্য তা ক্ষতিকর নয়। তবে এই উদ্ভিদের জন্য পুকুরের একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক, তা হলো পানির পিএইচ। পিএইচ লেভেল ৮ এর বেশি হলে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয় মোজাইক উদ্ভিদের জন্য। এর ডায়মন্ড আকৃতির পাতাগুচ্ছের মাঝে গ্রীষ্মকালে রক্তিম হলুদ কিংবা প্রজাতিভেদে লাল ফুল প্রস্ফুটিত হলে এক মন ভালো করে দেয়া সৌন্দর্যের দেখা পাওয়া যায়।

৭) শাপলা

শাপলা ফুল; source: Renatures.com

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। জলজ বাগান করার ক্ষেত্রে প্রকৃতির এই বিস্ময়কর সৌন্দর্যের কথা মাথায় চলে আসবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। এই চমৎকার ফুলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তাই দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, প্রজাতিভেদে বর্ণালীর সাতটি রঙই ফুটে উঠে এই ফুলে। আর সাত রঙের মিশ্রণ অর্থাৎ সাদা শাপলার সৌন্দর্য তো আরো মোহনীয়। সর্বনিম্ন ২ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ১২ ইঞ্চি ব্যাসের শাপলা ফুল পাওয়া যায়। অন্যদিকে এর সরু কান্ড রান্না করে খাওয়া যায়।

৮) ফোর লিফ ক্লোভার

ফোর লিফ ক্লোভার; source: thepondguy.com

এই উদ্ভিদটি ‘থ্রি লিফ ক্লোভার’ বা এক প্রকার ত্রিপত্রক গুল্ম উদ্ভিদের একটি বিরল প্রজাতি। মূলত ক্লোভার উদ্ভিদের একাধিক পত্র থাকতে পারে, থাকতে পারে চারের অধিক। তবে সে প্রজাতিগুলো আরো বিরল। প্রতি ৫,০০০ থ্রি লিফ ক্লোভারের বিপরীতে একটি ফোর লিফ ক্লোভার পাওয়া যায়। ফাইভ লিফ ক্লোভারের সংখ্যা আরো কম। পুরো পুকুর জুড়ে ক্লোভার পরিমিত পরিমাণে ছড়িয়ে দিলে পুকুরের পানির সাদামাটা সৌন্দর্য জমকালো হয়ে ওঠে।

১-৪ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট এই ভাসমান ছোট উদ্ভিদের জন্য কোনো বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। আরেকটি বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে, এই উদ্ভিদকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। তাই বাগানের সৌন্দর্য তো বটেই, এই উদ্ভিদ আনয়ন করতে পারে আপনার সৌভাগ্যও!

৯) ওয়াটার পপি

ওয়াটার পপি; source: waterartsinc.com

ওয়াটার পপি প্রকৃতির অন্যতম রুচিসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর হৃদয় আকৃতির গাঢ় সবুজ পত্রকগুলোর সাথে ফুলগুলো পানির উপরে অনায়াসে ভাসমান থাকে। গ্রীষ্মকালে যখন ওয়াটার পপিগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠবে, তখন মনে হতে পারে পুকুরে একটি চোখ ধাঁধানো কারুকার্যময় গালিচা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও এর ফুলগুলো ক্ষণজীবী (কয়েক ঘন্টা), তথাপি পুরো গ্রীষ্মজুড়েই ফুল ফুটতে থাকে এই বিশেষ জলজ উদ্ভিদটিতে। প্রধানত অগভীর জলে (৬ থেকে ১২ ইঞ্চি) এই উদ্ভিদ লাগাতে হয়। শাপলার মতোই এর কান্ড মাটি থেকে পানির উপরে ভাসমান উদ্ভিদ পর্যন্ত লম্বা হয়। পানির পিএইচ লেভেল ৮ এর নিচে থাকলে এই উদ্ভিদ নিজের পরিচর্যা নিজেই করে নিতে পারে!

১০) ডোয়ার্ফ প্যাপিরাস

ডোয়ার্ফ প্যাপিরাস; source: pinterest.com

‘ডোয়ার্ফ প্যাপিরাস’ বা ‘ডোয়ার্ফ ইজিপশিয়ান প্যাপিরাস’ উদ্ভিদগুলো মূলত বৃহদাকার প্যাপিরাসের ক্ষুদ্র সংস্করণ। এই উদ্ভিদ মূলত বাগান করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা একপ্রকার সংকর উদ্ভিদ। সর্বোচ্চ ৩০ ইঞ্চি লম্বা হওয়া ডোয়ার্ফ উদ্ভিদের কান্ডের শেষভাগে ছাতা আকৃতি হয়ে থাকে এক গোছা পত্রক। তবে এই উদ্ভিদ দ্রুত বর্ধনশীল এবং কখনো কখনো অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য আক্রমণাত্মক হতে পারে। তাই সাধারণ জলজ বাগানে একে সরাসরি না লাগিয়ে ৪/৫ লিটার আকৃতির গ্যালন বা সমআকৃতির কোনো পাত্রে লাগিয়ে সে পাত্রটি পুকুরের পানির নিচে স্থাপন করা হয়। আর্দ্রতাপ্রিয় এই উদ্ভিদের পানির প্রয়োজন মেটাতে একে অন্তত ৩/৪ ইঞ্চি গভীর পানিতেই রোপন করা হয়। সাধারণ একত্রে বেশি ডোয়ার্ফ প্যাপিরাস না লাগিয়ে গুচ্ছাকারে পৃথক পৃথক স্থানে অল্প করে লাগানো হয়। ফলে বাগানের সৌন্দর্যে বৈচিত্র্য আসে।

ফিচার ছবি: pinterest.com

Related Articles