সাগরের সুগভীর নীল জল কে না ভালোবাসে? স্বচ্ছ নীলাভ পানি যখন দূর দিগন্তে আকাশের নীলে মেশে, তা যে কারো মন জুড়াতে বাধ্য। সৌন্দর্য শুধু সাগরের উপরিভাগেই সীমাবদ্ধ নেই, লোনা পানির এই জগতের গভীরেও অবারিত দ্বার মেলে বসে আছে সৌন্দর্য- যার এক অত্যাবশ্যকীয় অংশ প্রবাল তথা প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীর ও একে ঘিরে থাকা নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী সম্পর্কে কমবেশি সকলেই অবহিত। প্রবালঘেরা রহস্যময় জগতে কী আছে, আর কী করেই বা তৈরি হয় সুবিশাল প্রাচীর? কী করে গড়ে ওঠে সাগরতলের ঐ অদ্ভুত মায়াবী জগত? এমন অসংখ্য উত্তর নিয়েই সাজানো এই লেখনীটি।
প্রবাল কী?
কোরাল বা প্রবাল হচ্ছে সাগরকুসুম (sea anemones) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত একধরনের জীব এবং এরা সকলেই একই ধরনের সাধারণ গঠন প্রণালীবিশিষ্ট, যাকে ‘পলিপ’ বলা হয়। পলিপ অনেকটা টিনের ক্যানের মতো, যেটি কি না শুধুমাত্র একপাশে খোলে- এই উন্মুক্ত দিকেই অবস্থিত মুখগহ্বর এবং একে ঘিরে থাকা কর্ষিকাগুচ্ছ। কর্ষিকাগুলোতে থাকে ‘নেমাটোসিস্ট’ নামক বিষাক্ত কোষ, যা কোরাল পলিপকে এর খুব কাছ ঘেঁষে যাওয়া ছোট ছোট সামুদ্রিক জীবকে ধরে ফেলতে সাহায্য করে। কোরালের পলিপের ভেতরে থাকে জনন ও পরিপাকীয় কোষকলাসমূহ। কোরালসমূহ সাগরকুসুমের ন্যায় হলেও এটি সাগরকুসুম থেকে ভিন্ন। কেননা, এটি খনিজ পদার্থের শক্ত গাঠনিক অংশ (mineral skeleton) তৈরি করে।
অগভীর উষ্ণ পানিতে বসবাসকারী কোরালগুলোর একটি ভিন্ন খাদ্য উৎস হলো ‘জুওজ্যান্থেলি’ (zooxanthellae) নামক এককোষী শৈবাল। এই শৈবালগুলো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরি করে এবং সৌরশক্তি থেকে তৈরিকৃত এ খাদ্যের কিয়দংশ তাদের খাবার হিসেবে গ্রহণকারী কোরালগুলোর কাজে লাগে।
প্রতিদান হিসেবে কোরাল থেকে এরা পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে। শৈবালের সাথে এহেন সম্পর্কের বদৌলতেই অগভীর প্রাণীর কোরালসমূহ বেশ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং অসংখ্য গাঠনিক বস্তু তৈরি করে, যাকে আমরা প্রবালপ্রাচীর বলি। কোরালের রঙের অধিকাংশ পরিমাণের জন্যই এই জুওজ্যান্থেলি নামক শৈবাল দায়ী।
কোরালের রকমফের
পাথুরে কোরাল (stony corals)
অধিকাংশ নিরক্ষীয় প্রবালপ্রাচীরসমূহ এই ধরনের কোরালে তৈরি, এসব প্রবালের প্রতিটি পলিপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটের তৈরি কাপে বসানো থাকে। পাথুরে কোরালগুলোই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রবালপ্রাচীর সংগঠক হলেও অরগ্যানপাইপ কোরাল (organpipe corals), মূল্যবান লাল কোরাল (precious red corals) এবং নীল কোরালেরও (blue corals) পাথুরে শক্ত গাঠনিক কাঠামো রয়েছে।
শক্ত কোরালগুলোকে দুটি উপদলে ভাগ করা হয়।
১. জুওজ্যান্থেলেট (zooxanthellate)
এরা প্রাচীর সৃষ্টিকারী (reef-building or hermatypic) কোরাল। এরা পুষ্টির জন্য জুওজ্যান্থেলি নামক শৈবালের ঊপর নির্ভরশীল। এসব অগভীর পানির প্রবালের প্রবালপ্রাচীর তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। এগুলো সাধারণত ৫০ মিটারের কম গভীরতার পরিষ্কার পানিতে পাওয়া যায়, যেহেতু শৈবালটির সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাবার তৈরির জন্য সূর্যালোক প্রয়োজন।
২. অ্যাজুওজ্যান্থেলেট (azooxanthellate)
গভীর পানির (deep water or ahermatypic) এ কোরালগুলোতে জুওজ্যান্থেলি নামক শৈবালের উপস্থিতি থাকে না। তাই এরা এদের পুষ্টি একমাত্র সাগরে থাকা ‘প্ল্যাঙ্কটন’ (plankton) থেকেই পেয়ে থাকে। এসকল প্রবাল আলাদা, একাকী কিংবা গোষ্ঠীবদ্ধ অবস্থায় বেশ বড়সড় আকৃতির গাঠনিক কাঠামো তৈরি করে। এসব কোরালের অধিকাংশই উপকূলীয় এলাকার প্রাচীরহীন পরিবেশে পাওয়া যায়। যেমন- কুইন্সল্যান্ডের মোরটন বে।
অপেক্ষাকৃত নমনীয় কোরাল
এমন অনেক কোরাল রয়েছে যেগুলো আরো স্থিতিস্থাপক পদার্থ কিংবা ছোটখাট শক্ত রডের ন্যায় অংশ দিয়ে তাদের গাঠনিক কাঠামো তৈরি করে, যেমন সিফ্যান (seafans) এবং সি-রড (sea rods), রাবারের ন্যায় নরম কোরাল এবং কালো কোরাল (black corals)।
কোরাল নামক প্রাণীগুলোর বংশানুক্রমিক ধারা বেশ জটিল। এদের কোনো কোনো দল অন্যদের তুলনায় একে অপরের সাথে বেশ সম্পর্কযুক্ত। আগুনে কোরাল তথা Fire coral (শক্তিশালী বিষাক্ত হুলের জন্য এরূপ নামকরণ) ব্যতীত অন্য সকল কোরালই অ্যান্থোজোয়ানদের (anthozoans) অন্তর্ভুক্ত। এই কোরালগুলোকে মূলত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়।
১. হেক্সাকোরাল (hexacorals)
প্রকৃত পাথুরে কোরাল, কালো প্রবাল এবং সি-অ্যানেমোনসমূহ এই প্রকরণের অন্তর্ভুক্ত। এদের প্রায়শই ছয় এর গুণিতক সংখ্যক সংখ্যার মসৃণ কর্ষিকা থাকে।
২. অক্টোকোরাল (octocorals)
নরম প্রবাল (soft corals), সিফ্যান (sea fans), সি-পেন (sea pens), অর্গ্যানপাইপ প্রবাল (organpipe corals) এবং নীলরঙা প্রবালসমূহ (blue corals) এই ধরনের কোরালের অন্তর্ভুক্ত। এদের ৮টি কর্ষিকা থাকে, যেগুলোর প্রতিটির সাথে ছোট ছোট অনেক শাখার ন্যায় অংশ রয়েছে। এই সকল প্রবালই Cnidaria পর্বের অন্তর্গত, যার সদস্য জেলিফিশও।
ফায়ার কোরাল
Millepora গণের এই দলবদ্ধভাবে বসবাসকারী জলজ জীবটি প্রবালের ন্যায় শারীরিক বৈশিষ্ট্যময় হলেও এগুলো প্রকৃত প্রবাল নয়। বরং হাইড্রা বা অন্য হাইড্রোজোয়ানদের সাথেই এটি বেশি মিলসম্পন্ন। এদের শরীরে নেমাটোসিস্ট নামক কাঁটাযুক্ত কর্ষিকাওয়ালা কোষ থাকে। যার ফলে ফায়ার কোরালের সংস্পর্শে এলে এগুলোর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে। ফলে অনুভূত হয় তীব্র যন্ত্রণাময় ব্যাথা।
প্রজনন
কোরাল বা প্রবালসমূহের নানাবিধ প্রজননগত পন্থা রয়েছে। তারা পুরুষ ও স্ত্রী দুই রূপেই থাকতে পারে এবং যৌন কিংবা অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করতে পারে। অযৌন জনন তাদের ঔপনিবেশিক আকার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ। অপরপক্ষে, যৌন জনন জীনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে এবং জন্মসূত্র তথা আদি উৎস থেকে দূরে নতুন উপনিবেশের সূত্রপাত করতে পারে।
অযৌন জনন (Asexual reproduction)
অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় এমন ধরনের পলিপ কিংবা উপনিবেশের সৃষ্টি হয়, যারা একে অপরের অনুরূপ/সম্পূর্ণ প্রতিরূপ। এদের প্রজনন কুঁড়ি (budding) কিংবা খণ্ডন (fragmentation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
কুঁড়িজ প্রজনন (Budding)
এই প্রক্রিয়ায় প্রবাল পলিপ বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছায় এবং বিভাজিত হয়। যার ফলে সৃষ্টি হয় জীনগতভাবে একইরকম একটি নতুন পলিপ। কোরালগুলো তাদের জীবদ্দশায় আজীবন এটি করে যায়।
খণ্ডন প্রক্রিয়া (fragmentation)
কখনো কখনো একটি উপনিবেশের একাংশ ভেঙ্গে গিয়ে একটি নতুন বসতি সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকে খণ্ডন প্রক্রিয়া বলা হয়, যা কি না কোনো না কোনো দুর্ঘটনাবশত, যেমন- ঝড় কিংবা মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত কোনো বস্তুর আঘাতে হয়ে থাকে।
যৌন জনন (sexual reproduction)
এক্ষেত্রে ডিম্বাণুসমূহ শুক্রাণুর (সাধারণত ভিন্ন উপনিবেশ থেকে আগত) মাধ্যমে নিষিক্ত হয়, পরবর্তীতে তারা মুক্তভাবে সঞ্চালনকারী লার্ভায় পরিণত হয়। মোট দু’ধরণের যৌন জনন প্রক্রিয়া রয়েছে প্রবালের; বহির্গত (external) এবং অভ্যন্তরীণ (internal)। প্রজাতি ও নিষেকের ধরনের উপর নির্ভর করে লার্ভাগুলো উপযুক্ত পদার্থের উপর স্থির হয় এবং কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পলিপ হয়ে ওঠে। যদিও কিছু কিছু প্রবাল সেটি করে ফেলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়!
বেশিরভাগ পাথুরে কোরালই তাদের ডিমগুলো ছড়িয়ে দেয় এবং নিষেক প্রক্রিয়া ঘটে তাদের দেহের বাইরে (external fertilization)। উপনিবেশ বা কলোনিগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম ও শুক্রাণু নির্গত হয়। এগুলো প্রায়ই আঠালো পদার্থের মাধ্যমে একত্রিত বা আঁটিবদ্ধ থাকে। এই স্তুপগুলো ভেসে ভেসে সাগরপৃষ্ঠে আসে।
ডিম্ব ও শুক্রাণুগুলোর এরূপে ছড়িয়ে যাবার ঘটনাটি বছরে একবার ঘটে। কিছু কিছু স্থানে সেখানে অবস্থিত সকল কোরালের জন্য এটি একসাথে ঘটে। বিশদাকারে এরূপ জননজনিত-প্রসারণ তথা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলো সাধারণত রাতে ঘটে। এগুলো খালি চোখে অনেকটা দৃশ্যমান ঘটনা। কিছু কিছু কোরাল তাদের ডিমগুলো পলিপের ভেতরেই রেখে দেয় এবং শুক্রাণুগুলোকে পানিতে ছেড়ে দেয়। শুক্রাণুগুলো ডুবতে শুরু করলে ডিমযুক্ত পলিপগুলো এগুলোকে নিষেকের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ নিষেক (internal fertilization) ঘটে। চান্দ্রচক্রানুযায়ী এই ধরনের প্রবালগুলো বছরে কয়েকবার প্রজননে অংশ নেয়।
কীভাবে তৈরি হয় প্রবালপ্রাচীর?
বিজ্ঞানীরা প্রবালপ্রাচীরকে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করেন।
ঝালরের ন্যায় প্রবালপ্রাচীর (fringing reefs), প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীর (barrier reefs), উপহ্রদ পরিবেষ্টনকারী বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর (atoll) এবং বিচ্ছিন্ন প্রবালপ্রাচীর (patch reefs)। যখন মুক্তভাবে সঞ্চালনকারী কোরালের লার্ভাগুলো ডুবোপাথর কিংবা উপমহাদেশীয় ভূখণ্ডের কিনারে অবস্থিত শক্ত কোনো পদার্থে যুক্ত হয়, তখনই তৈরি হতে শুরু করে একেকটি প্রবালপ্রাচীর। কোরালগুলোর যতই বর্ধিত ও প্রসারিত হয়, ততই প্রবালপ্রাচীরগুলো প্রধান তিনটি আকার; ঝালর (fringing), প্রতিবন্ধক (barrier), বৃত্তাকার (atoll)- যেকোনো একটিতে রূপান্তরিত হতে শুরু করে।
ঝালরের ন্যায় আকারবিশিষ্ট প্রবালপ্রাচীরগুলোই (Fringing reefs) সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এগুলো তীর থেকে সরাসরি সাগরের দিকে বিস্তৃত, যেখানে তা তটরেখা বরাবর ও দ্বীপকে ঘিরে সীমানার ন্যায় অঞ্চল সৃষ্টি করে। প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীরগুলোও (Barrier reefs) সীমারেখা সৃষ্টিকারী প্রবালপ্রাচীর। তবে তা তটরেখা থেকে আরো বেশি দূরত্বে বা ব্যবধানে হয়ে থাকে। এই প্রবালপ্রাচীরগুলো তাদের সংলগ্ন ভূখণ্ড থেকে একটি খোলা মুখযুক্ত হ্রদ দ্বারা পৃথক থাকে, যা সাধারণত গভীর পানির হ্রদ।
যখন একটি ঝালরের ন্যায় (fringing reef) প্রবালপ্রাচীর ডুবে যাওয়া কোনো আগ্নেয় দ্বীপকে ঘিরে তৈরি হয়, তখন আগ্নেয় দ্বীপটি সাগরতলে সম্পূর্ণ হারিয়ে গেলেও কোরালগুলো একে ঘিরে উর্ধ্বমুখী হয়ে বৃদ্ধি পায়। তাহলে সৃষ্টি হয় উপহ্রদ পরিবেষ্টক বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর (atoll)। এই প্রবালপ্রাচীরগুলো সাধারণত বৃত্তাকার কিংবা ডিম্বাকার হয়ে থাকে যার কেন্দ্রীয়ভাগে অবস্থান করে একটি হ্রদ। প্রাচীরের পৃষ্ঠদেশের বিভিন্ন অংশগুলো এক বা একাধিক দ্বীপ হিসেবে আবির্ভূত এবং প্রাচীরের অভ্যন্তরীণ ফাঁকা স্থানসমূহ কেন্দ্রগত হ্রদের প্রবেশক পথ হিসেবে কাজ করে।
প্রবালপ্রাচীর তৈরির ঘটনার নানা স্তর এখন বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।
প্রথম ধাপ: ঝালরের ন্যায় প্রাচীর (FRINGING REEFS)
প্রবালপ্রাচীর গঠনের প্রাথমিক ধাপে কোরালের লার্ভাগুলো তীরের নিকটবর্তী অঞ্চলের পানিতে অবস্থিত পাথর কিংবা মাটিতে যুক্ত হয়। লার্ভাগুলো এরপর পলিপে রূপান্তরিত হয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসরিত করে যা তাদের বহির্গঠক কাঠামো (exoskeleton) তৈরি করে। এই পলিপগুলো সাধারণত সেসব পানিতে জন্মে যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যালোক পানি ভেদ করে তাদের নিকটে পৌঁছাতে পারে। এদের জুওজ্যান্থেলি নামক শৈবালটির সঙ্গে মিথোজীবী সম্পর্ক থাকে। এই পলিপগুলো যত বৃদ্ধি পায় তত বেশি ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসৃত করে।
এই নির্গত ক্যালসিয়াম কার্বনেট পাথরগুলোর ওপর অধঃক্ষেপের ন্যায় জমা হয় এবং আরো বেশি সংখ্যক পলিপের আগমন ও সংযোজনস্থল হিসেবে কাজ করে। এভাবে বেশি বেশি সংখ্যক পলিপের আগমন ও যুক্ত হবার সাথে সাথে প্রবালপ্রাচীর তৈরি হতে থাকে। ক্যালসিয়াম কার্বনেটের গঠনযুক্ত শৈবালগুলোও প্রাচীরে তাদের অঃধক্ষেপীয় স্তর জমা করে। সামুদ্রিক আগাছা ও জলজ প্রাণীদের মৃত্যুর পর ডুবে গিয়ে তাদের অবশেষও প্রাচীরে জমা হয়। এগুলোর মাধ্যমে প্রাচীর আরো শক্তিশালী হয় এবং যেকোনো ধরনের ঝড়ের মোকাবেলা করতে পারে।
তীরবর্তী জলজ অঞ্চলের কাছে এভাবে প্রাথমিকভাবে গঠিত হওয়া প্রবালপ্রাচীরই হলো ঝালরের ন্যায় প্রবালপ্রাচীর তথা fringing reefs। পর্যাপ্ত সময় অতিবাহিত হলে চাপজনিত কারণে এই জমা হওয়া ক্যালসিয়াম কার্বনেট লাইমস্টোনে রুপান্তরিত হয়। এই ধরনের প্রবালপ্রাচীরগুলো দ্বীপ কিংবা সমতল ভূখণ্ডের কাছাকাছি পানিতে গঠিত হয়ে থাকে এবং তীর থেকে পৃথক থাকে অগভীর সরু হ্রদের মাধ্যমে। যতগুলো প্রবালপ্রাচীরের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে এই ধরনের প্রাচীরের সংখ্যাই সাধারণত বেশি।
প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীর (BARRIER REEF)
ঝালরের ন্যায় প্রাচীরগুলো ধীরে ধীরে পরস্পর একীভূত হয়ে তীর বরাবর সীমারেখার ন্যায় সৃষ্টি করে। ক্যালসিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ গাঠনিক কাঠামোগুলো আরো পলিপ আকৃষ্ট করে। তাই এর মাধ্যমে প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। এই প্রবালপ্রাচীরগুলো তীর বরাবর সারি তৈরি করে এবং দ্বীপকে ঘিরে বৃত্তাকার অংশ সৃষ্টি করে। এরা পানির নিচে সুন্দর ও রঙিন কাঠামো গঠন করে। পানি ভেদ করে আসা সূর্যালোক এদের একত্রে বেড়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক। অস্ট্রেলীয় তীরবর্তী ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ’ (Great Barrier Reef) পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এরূপ অবিচ্ছিন্ন প্রবালপ্রাচীর কাঠামো, এই অবস্থানে দ্বিতীয় নামটি হলো ‘মেসোআমেরিকান রীফ’ (Mesoamerican Reef)।
প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীরগুলো অনেকটা ঝালরের ন্যায় প্রাচীরের মতোই। তারা উভয়ই উপকূলীয় তটরেখাকে ঘিরেই বেড়ে ওঠে। তবে প্রতিবন্ধক প্রাচীরগুলো সরাসরি তীর থেকে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে ভূমি থেকে বেশ অনেকটা জলজ এলাকার মাধ্যমে পৃথককৃত স্থলে বেড়ে ওঠে। এর ফলশ্রুতিতে, তটরেখা ও প্রবালপ্রাচীরের মধ্যে মুক্ত, গভীর পানির হ্রদের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তীরের সমান্তরালে তৈরি হলেও, এ ধরনের প্রাচীর ও তীরস্থ ভূমির মধ্যে আরও চওড়া ও গভীরতর হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই প্রাচীরগুলোর যে অংশ সবচেয়ে কম গভীর পানিতে থাকে, সেগুলো পানির পৃষ্ঠদেশ অতিক্রম করে নৌচলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
উপহ্রদ পরিবেষ্টনকারী বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর (ATOLL)
প্রবালগুলো যখন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন এগুলো ভারী হয়ে সমুদ্রের তলদেশের পাথরগুলোকে চাপ দিয়ে নিচে পাঠিয়ে দেয় এবং একটি দ্বীপের ন্যায় অংশ গঠন করে। কোরাল গঠনের পূর্ববর্তী ধাপগুলোর তুলনায় এই স্তরে বেশি জলজ প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এক বর্গ কিলোমিটার প্রবালপ্রাচীরে প্রায় দশ লাখেরও বেশি প্রজাতি দেখা যেতে পারে।
উপহ্রদবেষ্টক বৃত্তাকার এসব প্রবালপ্রাচীরগুলো (Atolls) বলয় আকৃতির কাঠামো সৃষ্টি করে এবং এই বলয়মধ্যবর্তী জলাশয়টি এই গঠন কাঠামোর দ্বারা সম্পূর্ণ আবদ্ধ তথা আবেষ্টিত থাকে। সাধারণত এই ধরনের প্রবালপ্রাচীরগুলো সমুদ্রের মাঝামাঝি অংশে পাওয়া যায়। এই ধরনের প্রবালপ্রাচীরগুলো তখন গঠিত হয় যখন ঝালরের ন্যায় প্রবালপ্রাচীর ঘেরা কোনো দ্বীপ ডুবে যায় কিংবা সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির স্তর বেশ বেড়ে যায় (দেখা যায় এ ধরনের দ্বীপগুলো প্রায়শই ডুবন্ত আগ্নেয়গিরির চূড়া)। এই ঝালরের ন্যায় প্রবালপ্রাচীরগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং উপহ্রদীয় জলজ অংশকে আবেষ্টন করে বৃত্তাকার আকৃতি গঠন করে।
বিচ্ছিন্ন/স্বতন্ত্র প্রবালপ্রাচীর (Patch reefs)
এগুলো ছোট, বিচ্ছিন্ন ধরনের প্রবালপ্রাচীর। দ্বীপীয় মুক্ত তলদেশ অথবা মহীসোপান থেকে উপরের দিকে বেড়ে ওঠে এরা। এগুলো সাধারণত ঝালরের ন্যায় প্রবালপ্রাচীর এবং প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে বেড়ে ওঠে। এরা আকারে বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং খুব কম ক্ষেত্রেই পানির পৃষ্ঠদেশে পৌঁছায়।
সাগরের কয়েকটি অন্যতম সুন্দর ও বিচিত্র জীবজগৎ-পরিবেষ্টিত জলজ আবাসস্থল হিসেবে বিরাজমান প্রতিবন্ধক ও উপহ্রদ পরিবেষ্টক বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীরগুলোর অনেকগুলোই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন প্রবালপ্রাচীরগুলোর অন্তর্ভুক্তও বটে। বিশালাকায় প্রবালের ক্ষেত্রে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ০.৩-২ সেন্টিমিটার এবং শাখা সৃষ্টিকারী প্রবালগুলোর জন্য তা বছরে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। একঝাঁক লার্ভা থেকে একটি প্রবালপ্রাচীর তৈরি হতে প্রায় ১০,০০০ বছর পর্যন্ত লাগতে পারে (বার্নস, ১৯৮৭)। আকারের উপর নির্ভর করে প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীর এবং উপহ্রদ পরিবেষ্টক বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীরগুলো সম্পূর্ণরূপে গঠিত হতে প্রায় ১০০,০০০ থেকে ৩০,০০০,০০০ বছর পর্যন্ত লাগতে পারে।
ঝালরের ন্যায়, প্রতিবন্ধক কিংবা উপহ্রদ পরিবেষ্টক- এই তিন ধরনের প্রবালপ্রাচীরেরই জৈব-ভৌগলিক রূপরেখা ও জীবনালেখ্য সাদৃশ্যপূর্ণ। তলদেশীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, গভীরতা, ঢেউ ও তরঙ্গের ক্ষমতা, আলো, তাপমাত্রা এবং জলমগ্ন অধঃক্ষেপীয় স্তর মিলিয়ে ভূমিকা রাখে প্রবাল, শৈবাল ও অন্যান্য প্রজাতির সমন্বয়ে গঠিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুভূমিক ও উল্লম্ব অংশযুক্ত প্রবালপ্রাচীরীয় অঞ্চল সৃষ্টিতে। এ সকল প্রাচীরযুক্ত অঞ্চল প্রাচীরের এলাকা ও ধরনভেদে বিভিন্নরকম হতে পারে। প্রবালপ্রাচীর তীর থেকে যত সমুদ্রবর্তী হতে থাকে সেই অনুসারে একে কয়েকটি সাধারণ ভাগে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে মুখ্য হচ্ছে প্রাচীর সমতল (reef flat), প্রাচীর-চূড়া (reef crest) বা শৈবালীয় শৈলশিরা (algal ridge), আলম্ব অঞ্চল (buttress zone) এবং সাগরমুখী মহীঢালীয় প্রাচীর (seaward slope)।
প্রাচীর সমতল (reef flat)
প্রবালপ্রাচীরের এই অংশটি, প্রাচীরটি ভূখণ্ডের যে অংশের সাথে যুক্ত যেই অঞ্চলের নিকটে অবস্থিত। এর মূল উপাদান হলো প্রবাল পাথর ও আলগা বালি এবং ভাটার সময় এর একটি বড় অংশ পানির ওপরে থাকে।
প্রাচীর-চূড়ো (reef crest)/শৈবালীয় শৈলশিরা (algal ridge)
এটি প্রবালপ্রাচীরের সর্বাপেক্ষা উঁচু অংশ এবং ভাটার সময় সাধারণত সবসময়ই পানির উপরে বিমুক্ত হয়। আগমনী ঢেউগুলোর পূর্ণ আক্রোশের সম্মুখীন হওয়া এই কাঠামোগুলোতে জীবিত প্রবাল প্রকৃতপক্ষে থাকে না বললেই চলে। ছোট কাঁকড়া, চিংড়ি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী এসকল প্রাচীর-চূড়ায় অবস্থিত গর্তগুলোতে বাস করে, যা তাদের ঢেউ এবং শিকারী থেকে সুরক্ষা দেয়।
আলম্ব অঞ্চল (buttress zone)
এটি প্রবালপ্রাচীর থেকে বের হওয়া এবড়োথেবড়ো খাড়া অংশ বা আলম্বযুক্ত অংশ। প্রবালপ্রাচীরের বহিরাবরণ থেকে নেমে আসা গভীর সুড়ঙ্গগুলো এসব আলম্ব অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে পরস্পর যুক্ত হয়। এই আলম্ব অঞ্চল শক্তিশালী ঢেউয়ের তীব্র আঘাতকে দুর্বল করে দেয় এবং প্রবালপ্রাচীরের গাঠনিক আকৃতিগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। এই অঞ্চলটি প্রবালপ্রাচীরের বর্জ্য ও অধঃক্ষেপগুলোকেও প্রাচীর থেকে অপসারণ করে গভীর পানিতে স্থানান্তরিত করে।
সাগরমুখী মহীঢালীয় প্রাচীর (seaward slope)
প্রবালপ্রাচীরের ঢালের নিম্নমুখী অংশটি শতাধিক ফুট পর্যন্ত নিচের দিকে ঢালু হয়ে যেতে পারে। যখন আলোর তীব্রতা কমে যায়, শক্তি হ্রাস পাওয়া ঢেউয়ের কার্যকারিতায় আরো বেশি পরিমাণে প্রবাল প্রজাতিগুলো তৈরি হতে থাকে। স্পঞ্জ, সি-হুইপ (sea whips), সি-ফ্যান (sea fans) এবং প্রবালপ্রাচীর তৈরিতে ভূমিকাবিহীন প্রবালগুলো (non-reef-building corals) সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে গভীর আলোহীন পানির প্রবালগুলোকে প্রতিস্থাপিত করে।
জীববৈচিত্র্য প্রবালপ্রাচীর
প্রবালপ্রাচীর তৈরি হওয়া এক ধরনের অনন্য প্রাকৃতিক ঘটনা। নিরক্ষীয় অঞ্চলের পানিতে এটি বহুমুখী বাস্তুসংস্থান সৃষ্টি করে এবং এটি স্কুবা ডাইভার (scuba divers) ও স্নরকেলার্সদের (snorkelers) বিচরণ-স্বর্গও বটে! প্রবালপ্রাচীরের জীববৈচিত্র্যকে অনেক সময় সাগরের রেইনফরেস্ট হিসেবেও ডাকা হয়। সাগরে বসবাসকারী মোট জীবকূলের প্রায় এক-চতুর্থাংশের আবাসস্থল হলো প্রবালপ্রাচীর। নিরক্ষীয় অঞ্চলে উপকূলীয় তটরেখা বরাবর প্রবালপ্রাচীর পাওয়া যায়, তবে গভীর সমুদ্রেও এগুলোর দেখা পাওয়া যায়।
প্রবালপ্রাচীর নানাবিধ জলজ জীবকূলের জন্য একটি বেশ জটিল বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি করে। প্রবালপ্রাচীরগুলো এমনকি ম্যানগ্রোভ এবং সামুদ্রিক ঘাসগুলোকেও জোয়ারের পানির আঘাত থেকে রক্ষা করে। শৈবাল, মাছ, একাইনোডার্ম (echinoderms বা একাইনোডার্মাটা পর্বভুক্ত প্রাণী) এবং অন্যান্য অনেক প্রজাতি তাদের আবাসস্থল ও খাদ্যের জন্য প্রবালপ্রাচীরের উপর নির্ভরশীল। প্রজাতির সংখ্যা প্রবালপ্রাচীরের ভরের সমানুপাতিক।
নানা ধরনের জলজ প্রাণী, পোকা, শামুক ও তারামাছ প্রবালের ওপর নির্ভরশীল। অপরিপক্ক প্রবালকে অনেকেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। ক্রাউন-অফ-থর্ন তারামাছগুলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবালের ওপর নির্ভরশীল, প্রবালপ্রাচীরের টিকে থাকার যুদ্ধেও এরা একধরনের প্রতিবন্ধকতা।
প্রবালকে বেশ সতর্ক থাকতে হয় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাপারে। এগুলো নেমাটোসিস্টে থাকা বিষাক্ত কাঁটা ব্যবহার করে অন্য বহিরাগত প্রবালকে দূরে সরিয়ে রাখে। প্রবালের বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলো সামুদ্রিক আগাছা। এগুলো প্রবাল অপেক্ষা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অনেকক্ষেত্রেই প্রবালের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এদের দেহে থাকে।
প্রবালপ্রাচীরের বিস্তৃতি
২০০১ সালে, জাতিসংঘের হিসাবানুযায়ী পৃথিবীতে প্রবালপ্রাচীরের মোট বিস্তৃত ক্ষেত্রফল ২,৮৪,৩০০ বর্গ কিলোমিটার, যেটি কিনা সম্ভবত পুরো ইতালির সমান। পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি প্রবালপ্রাচীর মাত্র ৫টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যেগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনস, ফ্রান্স (এর বৈদেশিক এলাকাসহ) এবং পাপুয়া নিউগিনি। এই প্রবালপ্রাচীরগুলো নিজেরাই প্রায় একেকটি দেশের আয়তনের সমতুল্য। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ার ৫১,০২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রবালপ্রাচীর আকারে প্রায় কোস্টারিকার সমান বড়।
প্রবালপ্রাচীরের বিস্তৃতি পৃথিবীর চারিদিকে বিদ্যমান, এমনকি এমন স্থানেও এর দেখা আপনি পাবেন যেখানে এগুলোর দেখা পাবার কথা ভাববেনও না। বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নরওয়ের উপকূলের কাছাকাছি এবং ভূমধ্যসাগরের সাগলের গভীর পানির তলদেশে এমন প্রবালপ্রাচীর আবিষ্কার করেছেন যেগুলো ঠান্ডা পানিতে জন্মে। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (WWF)’ এর তালিকাভুক্ত ক্রমসম্প্রসারণশীল প্রবালপ্রাচীরযুক্ত এলাকাগুলো হলো কোরাল ট্রায়াঙ্গল (Coral Triangle)।
মেসোআমেরিকান রীফ WWF এর একটি মুখ্য প্রাকৃতিক বাস্তুএলাকা। এর পরিব্যাপ্তি হন্ডুরাসের উত্তরের উপসাগরীয় দ্বীপগুলো থেকে মেক্সিকোর ইউক্যাটান পেনিনসুলা (Yucatan Peninsula) পর্যন্ত বিস্তৃত, যার মধ্যে গুয়াতেমালা ও বেলিজের উপকূলও অন্তর্ভুক্ত।
কেন প্রবাল প্রাচীর প্রয়োজনীয়?
প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা, এগুলো পর্যটন ব্যবসা থেকে বিলিয়ন ডলার আয়ের উৎস, পাশাপাশি এগুলো উপকূলীয় জনপদের ঘরবাড়িসমূহকে ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। অনেক সময় প্রবাল থেকে ওষধি গুণাগুণসম্পন্ন পদার্থ পাওয়া যায় এবং লক্ষ লক্ষ জলজ প্রজাতির আবাসস্থল হিসেবে এর ভূমিকা অপরিসীম।
প্রবালপ্রাচীরের উপকারিতার তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। একটি বৃহৎ পরিসরে জলজ জীবকূলের আশ্রয়স্থলের যোগান থেকে সাগরের ঢেউ থেকে মানুষের সুরক্ষা প্রদান অব্দি বিস্তৃত। সাগর তলদেশের শতকরা মাত্র ০.১ ভাগ স্থান দখল করলেও শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ জলজ সামুদ্রিক জীবের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কাজ করে প্রবালপ্রাচীর।
WWF এর হিসেব অনুযায়ী, প্রবালপ্রাচীর থেকে বাৎসরিক প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য মালামাল ও সেবা/ উপযোগ পাওয়া যায়। এই সংরক্ষক সংগঠনটির মতে, প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ খাদ্য ও মৎসজাত আয়ের জন্য প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল। সুনিয়ন্ত্রিত এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত প্রবালপ্রাচীর থেকে প্রতি বছরে প্রায় ১৫ টন সামুদ্রিক খাবার বা বিশ্বে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণের (২০ কিলোগ্রাম) ৭৫০ গুণ বেশি পাওয়া সম্ভব।
পর্যটন ব্যবসার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করা প্রবালপ্রাচীর বার্ষিক আয়ের একটি অংশের যোগানদাতাও। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া পরিষদের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশের দরুণ সংশ্লিষ্ট অঞ্চল বছরে প্রায় দশ লক্ষ পর্যটক হারাবে, ১০ হাজার কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে পর্যটনখাতে এক বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত খরচের ভার ওঠাতে হবে।
শক্তিশালী ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে প্রবালপ্রাচীর উপকূলকে শুধু রক্ষাই করে না, পাশাপাশি উপকূলীয় বন্যা ও ভূমিক্ষয় থেকেও সুরক্ষা দেয়। ২০১৪ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় ছাপানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রবালপ্রাচীরগুলো গড়ে ঢেউয়ের মোট শক্তির শতকরা প্রায় ৯৭ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস করে। গবেষকগণের তথ্য মোতাবেক, প্রায় ২০০ মিলিয়ন পর্যন্ত মানুষ সম্ভবত কোনো না কোনোভাবে প্রবালপ্রাচীরের মাধ্যমে সুরক্ষা পেয়ে থাকে। পৃথিবীর কিছু কিছু অঞ্চলে একটি বড় আকারের জনগোষ্ঠী প্রবালের ওপর বেশ গভীরভাবে নির্ভরশীল।
উদাহরণস্বরূপ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জবাসীদের অনেকেই খাদ্যের উৎস ও ঝড় থেকে সুরক্ষিত থাকার মাধ্যম হিসেবে প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল। ফিজি দ্বীপপুঞ্জের ‘গ্রেট সি রিফ’ সংলগ্ন ম্যাকুয়াটু প্রদেশের প্যারামাউন্ট চিফ রাটু উইলিয়ামে কাটোনিভেরের মতে,
প্রবালপ্রাচীর আমার জনপদের জন্য টিকে থাকারই নামান্তর।
আল জাজিরাকে দেয়া তার বক্তব্যানুযায়ী, যখন প্রবালপ্রাচীর ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন,
সকলের জন্য ভোগান্তি বয়ে আনে। জেলেদের জীবিকার জন্য এখন সাগরে পূর্বাপেক্ষা বেশি দূরবর্তী স্থানে যেতে হচ্ছে, সেখানে যেতেও সময় অনেক বেশি লাগছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে তাদের সেখান থেকে ফিরে আসার সংখ্যাটি। যদি প্রবালপ্রাচীরই না থাকে, মাছেরা যাবে কোথায়? যদি কোনো প্রবালপ্রাচীরই না থাকে, সম্ভবত পৃথিবী ধ্বংসের সেটাই শুরু তথা প্রলয়কাল।
কেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রবালপ্রাচীর?
প্রবালপ্রাচীরগুলো আমাদের এই প্রিয় গ্রহে স্থান করে নিয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে। তবে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই শতাব্দী শেষ হতে হতে প্রবালগুলোও শেষ হয়ে যাবে বা বহুলাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। ২০১৫ সালে WWF এর করা প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত ৩০ বছরে নিরক্ষীয় প্রবালপ্রাচীরগুলোর অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যাক প্রাচীরগঠনকারী প্রবাল ধ্বংস হয়ে গেছে।
নানা কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রবালপ্রাচীর।
১. প্লাস্টিক দূষণ
সাম্প্রতিক এক গবেষণালব্ধ তথ্যানুযায়ী, আকারে ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশি এমন ১১ বিলিয়নেরও বেশি টুকরো প্লাস্টিক এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকার প্রবালপ্রাচীরগুলোতে আবর্জনা হিসেবে জমা হচ্ছে। এই পরিমাণ প্লাস্টিক দিয়ে পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত দূরত্ব পূর্ণ করার পরও ফিরতি পথের দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেকটা পর্যন্ত পূরণ করা সম্ভব! ‘সায়েন্স’ নামক গবেষণাপত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাটি পরিচালনাকারী গবেষকগণ বিশ্বাস করেন যে, আগামী সাত বছরে প্রবালপ্রাচীরে জমতে থাকা প্লাস্টিক-বর্জ্যগুলোর পরিমাণ আরো শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যেই, বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, প্লাস্টিকে মোড়াবস্থায় প্রবালের রোগাক্রান্ত হবার হার শতকরা চার ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ৮৯ ভাগে দাঁড়ায়। যেসব কারণে প্রবাল ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে তার মধ্যে প্লাস্টিকদূষণ একটি।
২. জলবায়ুর পরিবর্তন
জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্টাল প্রোগ্রামের প্রধান এরিক সোলহেইমের মতে,
বৈশ্বিকভাবে আমরা খুবই দ্রুততার সাথে প্রবাল হারাচ্ছি। অবশ্যই আবহাওয়াগত পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে এটি একটি। এর ফলে সরাসরি আর্থিক কিংবা অন্যান্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবালপ্রাচীর নিকটবর্তী বাসিন্দারা, আদতে যাদের এই জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে কোনো ভূমিকাই নেই!
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে এবং এখনো বেড়েই চলেছে। হঠাৎ করে আসা এই তাপমাত্রাগত পরিবর্তনে প্রবালপ্রাচীরগুলো খাপ খাইয়ে উঠতে না পারায় ক্রমাগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবধানে প্রবালগুলোতে দেখা যাচ্ছে বড় পরিসরের ‘ব্লিচিং’ (প্রবালের শৈবালশূন্য হয়ে সাদা হয়ে যাওয়া) এর মতো ঘটনা। প্রবালের এই ব্লিচিং একধরনের দুর্গতি প্রতিক্রিয়া (stress response)। যখন পানির তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, প্রবালের কোষকলায় থাকা আণুবীক্ষণিক রঙিন শৈবালগুলো প্রবাল থেকে বিতাড়িত ও নির্গত হয়ে যায়। এই শৈবালগুলোই ছিল প্রবালের পুষ্টির যোগানদাতা, তাই এগুলোকে ছাড়া খুব বেশিদিন থাকলে প্রবাল অনাহারে মারা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ এর প্রায় অর্ধেক প্রবাল এই ব্লিচিং এর ফলেই মৃত্যুবরণ করেছে বলে মনে করা হয়।
‘সায়েন্স’ গবেষণা পত্রিকাটিতে থাকা অপর এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে বিশালায়তনে ব্লিচিংয়ের হার পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পূর্বের প্রতি ২৫-৩০ বছরে একবার ঘটার ঘটনা থেকে বেড়ে বর্তমানে প্রতি ৬ বছরে একবারে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ একবার ব্লিচিংয়ের শিকার হবার পর পুনরায় আঘাতের মধ্যবর্তী সময়টি প্রবালের নিজেকে সারিয়ে তুলবার পক্ষে যথেষ্ট নয়।
ইউনেস্কো ইতোমধ্যেই সতর্কবাণী দিয়েছে যে, ২০৪০ সাল নাগাদ ইউনেস্কোর ২৯টি বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী প্রবালপ্রাচীরগুলোর প্রায় সবগুলো প্রচণ্ডভাবে ব্লিচিংয়ের শিকার হবে আর তা ঘটবে প্রতি দশ বছরে দুবার করে। ২১০০ সাল নাগাদ সকল ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত প্রবালপ্রাচীরগুলো মৃত হয়ে যাবে।
৩. মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য সমস্যাদি
জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্লাস্টিক দূষণের পাশাপাশি অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যাবলী প্রবালপ্রাচীরগুলোর উপরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। বায়ুতে থাকা কার্বনডাইঅক্সাইড (CO2) সাগরের পানিতে মিশে মহাসাগরের পানিতে অম্লতার উদ্রেক করছে, যার ফলে স্লথ হচ্ছে প্রবালের বৃদ্ধি পাবার গতি। এছাড়াও মাছ ধরবার ধ্বংসাত্মক পন্থাগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহারও প্রবালের জন্য বয়ে আনছে দুর্গতি- ডিনামাইট ব্যবহার করে মাছ ধরা এবং মাত্রাতিরিক্ত মাছ শিকার যার মধ্যে অন্যতম। এগুলোর ফলে ধ্বংস হয় প্রবালপ্রাচীর কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের সেরে ওঠার ক্ষমতা।
প্রবাল ধ্বংসের সকল কর্মযজ্ঞ যে পানিকেন্দ্রিক তা-ও কিন্তু নয়, স্থলভাগে করা কিছু কাজও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে প্রবালপ্রাচীরে। স্থাপনা নির্মাণকালীন ভূমিক্ষয়, খনিজ উত্তোলন, গাছ কাটা এবং চাষাবাদের ফলে সাগরে জমা হওয়া মাটি প্রবালের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা বয়ে আনতে পারে।
খুব দেরি হয়ে গেছে কি?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীগণ যে পূর্বাভাস দিয়েছেন তা সুখকর নয় মোটেও। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুসারে, প্যারিস চুক্তির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য- ‘বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দেওয়া’কে যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে পৃথিবীর প্রবালপ্রাচীরগুলোকে বাঁচাবার একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে।
‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ এ ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণানুসারে, প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রী পর্যন্তই বাড়তে দেয়ার যে সীমারেখা অঙ্কন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা মাত্র ১%। তবে তার মানে এই নয় যে, শুধু ধ্বংস আর হতাশাই এই গল্পের অংশ। কিছু আশার দেখাও পাওয়া গেছে।
Global Coral Reef Monitoring Network পরিচালিত একটি পরীক্ষণে জানা গেছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দীপপুঞ্জ এলাকাগুলোতে গত ২০ বছরে জীবিত প্রবালের ব্যাপ্তির স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। তাদের ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত হবার কারণে তারা মানবসৃষ্ট বিড়ম্বনাগুলো (যেমন- মাত্রাতিরিক্ত মৎসশিকার) থেকে দূরে থেকেছে। আর তাই পেয়েছে প্রাকৃতিকভাবে নিজেকে সারিয়ে তোলার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ। এছাড়াও বিজ্ঞানীগণ এমন কোনো আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন যা প্রবালপ্রাচীরের ধ্বংস প্রশমিত করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে ত্রিমাত্রিক-মুদ্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম প্রবালপ্রাচীর তৈরি করে জলজ জীবকূলের আশ্রয়স্থল তৈরি করা কিংবা প্রবাল চাষ করা, যেখানে প্রবাল খণ্ডগুলোকে বর্ধনস্থানে রেখে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় এবং এরপর তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থানে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তথাপি, বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের প্রবালপ্রাচীরগুলোকে রক্ষা করতে হলে খুব জরুরিভাবে ও দ্রুততার সাথে কাজ করতে হবে। WWF এর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার প্রতিনিধি কেসাইয়া তাবুনাকাওয়াই এর মতে,
এ সম্পর্কে আপনি যতই জানতে পারবেন, ততই হতাশ হবেন। বিশেষ করে তখন যখন আপনি দেখবেন কতটা ধীরগতিতে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তার মতে,
প্রবাল প্রাচীরের উন্নততর উপায়ে দেখভালের প্রচারণা চালানো আঞ্চলিক উদ্যোগগুলো প্রবালপ্রাচীরের ক্ষয় মন্থর করতে পারে, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ না নেয়া হলে, তা কোনো কাজেই আসবে না।
সোলহেইমের মতে,
পৃথিবীর অবস্থা ঠিক “গড়ো অথবা ভাঙ্গো” পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়ায় যখন প্রশ্নটি প্রবাল প্রাচীর রক্ষার। প্রবাল প্রাচীরগুলোকে এভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে দেওয়াকে মানুষের জন্য লজ্জাষ্কর বলে মনে করেন তিনি। “আমরাই হবো সেই প্রজন্ম যারা কি না সবচেয়ে সুন্দর, সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থানগুলোকে নষ্ট করছি।
প্রবাল প্রাচীরগুলোকে বাঁচাতে বিশ্বজুড়ে অজস্র সরকারি, বেসরকারি ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে কয়েকটি হলো কোরাল রিফ অ্যালিয়্যান্স (coral reef alliance), ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কোরাল রিফ স্টাডিজ (ISCRS), গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্ক (GCRMN), ন্যাশনাল ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশন (National Fish and Wildlife Foundation), কোরাল রেস্টোরেশন ফাউন্ডেশন (Coral Restoration Foundation), গিলি ইকো ট্রাস্ট (Gili Eco Trust), রিফ চেক (Reef Check), রিফ এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন ফাউন্ডেশন (Reef Environmental Education Foundation), রিফ গার্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল (Reef Guardian International), রিফ রিলিফ (Reef Relief), কোরাল কে কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল (Coral Cay Counterpart International), ইউ.এস. কোরাল রিফ টাস্ক ফোর্স (CRTF), ন্যাশনাল কোরাল রিফ ইন্সটিটিউট (NCRI), ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সেস ন্যাশনাল ওশেনিক আটমোসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA): কোরাল রিফ কনজার্ভেশন প্রোগ্রাম (CRCP), ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোরাল রিফ রিসার্চ (NCORE), রিফ বল (Reef Ball), সাউথইস্ট ফ্লোরিডা কোরাল রিফ ইনিশিয়েটিভ (SEFCRI), ফাউন্ডেশন অফ থে পিপলস অফ দ্য সাউথ প্যাসিফিক (Foundation of the peoples of the South Pacific), ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার (World Fish Center), কোরাল রেস্টোরেশন ফাউন্ডেশন (CRF): অ্যাডপ্ট আ কোরাল প্রভৃতি।
প্রবাল আমাদের প্রকৃতিরই এক অনবদ্য সম্পদ। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে অনন্য প্রবালপ্রাচীর শুধু প্রকৃতিগত ভারসাম্যই বজায় রাখে না, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মানুষের জীবনেও। কিন্তু মানবসৃষ্ট নানান সমস্যা ও এর প্রভাবের ফলে পৃথিবী থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এ সম্পদ। প্রবালপ্রাচীর ও এর ওপরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে গেলে মানুষকেই নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। পৃথিবীর চমৎকার কিছু প্রবালপ্রাচীর এবং প্রবাল বাঁচাতে করণীয় বিষয়াদির বিবরণ নিয়ে দেখা হবে লেখাটির আগামী পর্বে।
ফিচার ইমেজ – bbcamerica.com