Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কীভাবে স্নিফার কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?

স্নিফার কুকুরকে বাংলায় ‘গন্ধশোঁকা কুকুর’ বলা যেতে পারে। সরাসরি যদি না-ও দেখে থাকেন, তবে টেলিভিশনে বিভিন্ন সিনেমা, নাটক বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে স্নিফার কুকুরদের ঠিকই দেখে থাকবেন। যেগুলোকে সাধারণত বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সদস্য যেমন পুলিশ, সিআইডি, মাদক বিরোধী স্পেশাল দল, SWAT টিম, কাস্টমস অফিসার ইত্যাদির ‘ডগস্কোয়াড’ দলের সাথে দেখা যায়। এসব স্নিফার কুকুরদের প্রধানত লুকিয়ে রাখা মাদক খুঁজে পেতে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, বোমা, টাকা ইত্যাদি খুঁজে পেতেও বিভিন্ন অভিযানে ব্যবহার করা হয়।

স্নিফার কুকুর; Source: syrianwarreport.com

এমনকি কিছু ‘পর্ন স্নিফিং’ কুকুরও রয়েছে যাদেরকে শুধু প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়েছে লুকায়িত যত মেমোরি কার্ড, হার্ড ড্রাইভ এবং এ ধরনের যন্ত্রাংশ খুঁজে পাওয়ার জন্য। এ ধরনের কুকুরকে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন হ্যাকারদের খোঁজে চালানো অভিযানে এবং সেই সব সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক পর্নোগ্রাফির সাথে যুক্ত। এরকম একটি স্নিফার কুকুরের নাম হচ্ছে ‘বেয়ার‘ যাকে জারেড ফোগল নামের এক ব্যক্তির বাসা থেকে একটি লুকায়িত ফ্লাশ-ড্রাইভ খুঁজে বের করার কাজে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। অথচ ফ্লাশ-ড্রাইভটি এর আগে তার বাসায় কেউই খুঁজে পায়নি।

স্নিফার কুকুরগুলো গন্ধ শোঁকার মাধ্যমে এ ধরনের জিনিসপত্র খুঁজে পেতে সাহায্য করে। কুকুরদের প্রকৃতিগতভাবেই রয়েছে প্রখর ঘ্রাণশক্তি। আবার কুকুরদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কয়েকটির রয়েছে অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি ঘ্রাণশক্তি। এরকম প্রজাতির কুকুরদেরকেই মূলত স্নিফার কুকুর হিসেবে বাছাই করা হয়। পাশাপাশি কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রজাতির কুকুরের মধ্যে বাচ্চা উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে অতি উচ্চ ঘ্রাণশক্তি সম্পন্ন কুকুরের সংকর জাতও তৈরি করা হয়ে থাকে। তারপর এসব কুকুরকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ‘স্নিফার কুকুর’ হিসেবে গড়ে তুলতে। আসুন আজকে জানা যাক কিভাবে এই কুকুরগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

জার্মান শেফার্ড; Source: ibtimes.com

স্নিফার কুকুরদের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ-সরল। চাইলে শুধু একটু ধৈর্য ধরে লেগে থাকার মাধ্যমে যে কেউই তা করতে পারবে। স্নিফার কুকুর তৈরি করতে আপনার সর্বপ্রথম যা লাগবে তা হলো- অবশ্যই একটি কুকুর। যেকোনো কুকুরকেই আপনি প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন, তবে কিছু বিশেষ প্রজাতির কুকুর রয়েছে যাদের অন্যান্য সাধারণ কুকুরদের তুলনায় রয়েছে উন্নত ঘ্রাণশক্তি। যেমন- সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন দলকে প্রায়ই রিট্রাইভার পরিবারের কুকুর, জার্মান শেফার্ড এবং বিগল কুকুরদের ব্যবহার করতে দেখা যায়, যেগুলোর রয়েছে তুলনামূলকভাবে প্রখর ঘ্রাণশক্তি।

একটি নির্দিষ্ট কুকুর বাছাইয়ের পর প্রথমে যে কাজটি করা হয় তা হলো- কুকুরটির জন্য একটি খেলনা বাছাই করা হয়। যে খেলনাটি হয়ে উঠবে কুকুরটির বিনোদনের অন্যতম উৎস এবং তার সময় ব্যয় করার অন্যতম মাধ্যম। স্নিফার কুকুরদের প্রশিক্ষকগণ অধিকাংশ সময়েই কুকুরদের জন্য যে খেলনাটি বাছাই করেন তা হলো একটি ছোট সাদা তোয়ালে। কারণ কুকুর এ ধরনের বস্তু খুব সহজেই চিনতে পারে। পাশাপাশি এটি খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়, যাতে তোয়ালের নিজস্ব গন্ধ কমিয়ে ফেলা যায়। আর দেখা যায় স্বভাবতই কুকুররা তোয়ালের মতো জিনিসের সাথে কামড়াকামড়ি ও মারামারি করতে খুব ভালোবাসে।

কাপড়ের সাথে মারামারি করতে কুকুররা পছন্দ করে; Source: evcilkopekler.com

বাছাইকৃত কুকুরটি যখন খেলাধুলা ও মজা করার মাধ্যমে খেলনাটির সাথে একদম পরিচিত হয়ে যায় তখন প্রশিক্ষকগণ ধীরে ধীরে খেলনাটির সাথে নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর গন্ধ মেশাতে থাকেন। তবে অনেক সময় তারা খেলনাটিতে গন্ধ না মিশিয়ে বরং যেখানে খেলনাটি রাখা হয় তার আশেপাশে নিষিদ্ধ বস্তু বা এদের গন্ধ সম্বলিত বস্তুটি রেখে দেন। এই নিষিদ্ধ বস্তুটি খোঁজার কাজেই কুকুরটিকে পরবর্তীতে ব্যবহার করা হবে।

এরপর যা হয় তা হলো কুকুরটি তার প্রিয় খেলনাটি খোঁজার সাথে সাথে নিষিদ্ধ বস্তুটির গন্ধের সাথেও পরিচিত হয়ে যায়। ফলে তারপর থেকে কুকুরটি ঠিক সেই জায়গাতেই তার খেলনাটি খুঁজতে যায় যেখানে সে সেই নির্দিষ্ট নিষিদ্ধ বস্তুটির গন্ধ পায়। কারণ সে জানে গন্ধটি যেখান থেকে আসছে ঠিক সেখানেই রয়েছে তার প্রিয় খেলনাটি।

মাদকের সন্ধানে স্নিফার কুকুর; Source: zarayef.com

তাহলে স্নিফার কুকুরদের প্রশিক্ষণে কি সত্যি সত্যি মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হয়? এর উত্তর হলো- হ্যাঁ। তবে খুব অল্প পরিমাণে মাদকই ব্যবহার করা হয়। কারণ কুকুরদের ঘ্রাণশক্তি এমনিতেই প্রখর হয়। তাই বেশি পরিমাণে মাদক ব্যবহারের আসলে প্রয়োজনই পড়ে না যা কুকুরদের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সত্যিকারের অভিযানে কুকুরদের জন্য একপ্রকারের ঝুঁকি থেকেই যায়, কারণ আসল অভিযানে কী পরিমাণ মাদক লুকায়িত থাকতে পারে তা বলা সম্ভব নয়।

এমন অনেক অভিযানে দেখা গিয়েছে স্নিফার কুকুরগুলো অনেক বড় ধরনের মাদকদ্রব্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে যেগুলোর কাছে যাওয়াটাও তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আফিম হলো এ ধরনের একটি মাদকদ্রব্য। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে কুকুরদের বাহককে সবসময় কড়া নজর রাখতে হয়। আগে থেকে যদি বোঝা যায় কোথাও মাদকদ্রব্য রয়েছে সেক্ষেত্রে কুকুরগুলোকে অভিযানে অংশ নিতেই দেওয়া হয় না। তবে কোথাও মাদকের উপস্থিতি বোঝা না গেলে সেক্ষেত্রে কুকুরগুলোকে ব্যবহার করতেই হয়। এরকম পরিস্থিতিতে কুকুরদের জন্য যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সাথে করে ন্যালোক্সোনের মতো রাসায়নিক পদার্থ রাখা হয়, যা মূলত আফিমের প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করে।

নিজের উদ্ধারকরা মাদকদ্রব্যের সাথে; Source: watson.ch

আবার প্রশিক্ষণে ফিরে আসা যাক। কুকুরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার পর তারা যখন সফলভাবে নির্দিষ্ট বস্তুটি খুঁজে পায় তখন প্রশিক্ষকগণ তাদেরকে বিভিন্ন পুরষ্কার দেওয়া শুরু করেন, যেমন- মাংস বা হাড়। তবে ধীরে ধীরে তারা পুরষ্কার দেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন কায়দা করা শুরু করেন। যেমন- শুধু গন্ধ শুঁকে বস্তুটি খুঁজে পেলেই আর কুকুরটিকে পুরষ্কার দেওয়া হয় না; বরং খুঁজে পাওয়ার পর আরো কিছু নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলেই তার কপালে পুরষ্কার মেলে। যেমন- কিছু স্নিফার কুকুরদের তখনই পুরষ্কার দেওয়া হয় যখন তারা নির্দিষ্ট বস্তুটি খুঁজে পেয়ে তার উপর পা দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তবে এই প্রক্রিয়াটা মাদকদ্রব্য অভিযানের জন্য উপযুক্ত হলেও অবশ্যই বোমা খোঁজার অভিযানে উপযুক্ত নয়। তাই বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে স্নিফার কুকুরদের দুই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘প্যাসিভ’ এবং ‘অ্যাগ্রেসিভ’।

প্যাসিভ প্রতিক্রিয়ায় নির্দিষ্ট বস্তু খুঁজে পেলে বেশিরভাগ কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় শুধু সেখানে বসে থাকতে, অথবা নাক দিয়ে নির্দেশনা দিতে বা শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে। একজন সিকিউরিটি কোম্পানির কুকুর প্রশিক্ষক বলেন,

“প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পর্যায়ে মূল লক্ষ্যবস্তুর গন্ধ যেকোনোভাবে চিনতে পারলেই কুকুরদের পুরষ্কার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে কুকুরদের যখন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় তখন তাদেরকে সেসময়েই পুরষ্কার দেওয়া হয় যখন তারা সঠিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। যেমন- বসা, দাঁড়ানো, তাকিয়ে থাকা, শুয়ে পড়া, ঘেউ ঘেউ করা ইত্যাদি।”

অ্যাগ্রেসিভ প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় কুকুরকে নিজের ইচ্ছামতো অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেমন- কোনো অস্ত্র বা মাদক বহনকারী ব্যক্তির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া, কোনো কিছুর আড়ালে লুকিয়ে রাখা মাদক বের করতে নিজেই লেগে যাওয়া ইত্যাদি। তবে অ্যাগ্রেসিভ প্রক্রিয়ায় কুকুরের জীবনের প্রতি একধরনের বড় ঝুঁকি থেকেই যায়। অনেক কুকুর এতে মারাও যায়। তাই প্যাসিভ প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াই বেশি নেওয়া হয়ে থাকে স্নিফার কুকুরদের ক্ষেত্রে।

একটি স্নিফার কুকুরের মৃত্যুকালীন সম্মাননা; Source: reuters.com

আর এভাবে প্রস্তুত হওয়া একটি স্নিফার কুকুর বেশ নির্ভুল একটি প্রাণীতে পরিণত হয়ে উঠে। তাদেরকে আরো ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে স্নিফার কুকুরদের ঠেকাতে দুর্বৃত্তদের নেওয়া বিভিন্ন কৌশলগত পন্থাও যাতে তারা এড়িয়ে চলতে পারে। যেমন- স্নিফার কুকুরদের দিকভ্রান্ত করতে দুর্বৃত্তরা কুকুরদের আকর্ষণ করে এমন সব আকর্ষণীয় খাবার রেখে দেয়। আবার মাদকের গন্ধ যাতে কুকুররা না পায় সেজন্য তারা আশেপাশে মাংসও ছড়িয়ে রাখে। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্নিফার কুকুরগুলো বেশ ভালোভাবেই দুর্বৃত্তদের এমন কৌশলগত পন্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম।

ফিচার ইমেজ: olchiolchi.com

Related Articles