Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাঘ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

বড় বিড়াল বা বাঘকে বলা হয় ‘জঙ্গলের শাসক’। বাঘই হচ্ছে এমন বন্যপ্রাণী, যাকে নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়, যাকে নিয়ে বিস্ময়ের ও প্রশংসারও শেষ নেই। বাঘ এমন একটি প্রাণী, যাকে ভালোও বাসা হয়, আবার যমের মতো ভয়ও পাওয়া হয়। তবে মূলত বাঘ তাদের বন্য ও হিংস্র রূপের জন্যই বেশি পরিচিত। বিশ্বে প্রায় বিভিন্ন ধরনের বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। সবচাইতে বিখ্যাত হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার; আরো রয়েছে সাইবেরিয়ান টাইগার, মালায়ান টাইগার ইত্যাদি। পাশাপাশি এই ভয়ংকর-সুন্দর প্রাণীটি কিন্তু একটি-দুটি দেশের জাতীয় পশু নয়; মোট ৬টি দেশের জাতীয় পশু হিসেবে বাঘ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার এবং সাইবেরিয়া। চলুন আজ বাঘ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক, যেগুলো হয়তো অনেকেরই অজানা।

বাঘের চামড়াও ডোরাকাটা হয়

বাঘের গায়ের পশমে স্বতন্ত্র ও শোভামণ্ডিত ডোরাকাটা দাগ থাকে। কিন্তু এই ডোরাকাটা দাগ শুধু তাদের গায়ের লোমেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তা পশমের নিচের দেহেও দেখতে পাওয়া যায়। দেহের চামড়ায় এই ডোরাকাটা দাগটি হলো আসলে তাদের চামড়ার স্বাভাবিক রঙ। তাই বাঘের দেহের পশম চেঁছে ফেললে তাদের চামড়াতেও ডোরাকাটা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। তবে পশমের তুলনায় তাদের চামড়ায় অপেক্ষাকৃত কম দাগ থাকে।

বাঘের চামড়াও ডোরাকাটা; Source: lh3.googleusercontent.com

প্রত্যেকটি মানুষের যেমন স্বতন্ত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকে তেমনি প্রত্যেকটি বাঘের ডোরাকাটা দাগেও রয়েছে ভিন্নতা। একই প্যাটার্নের ডোরাকাটা দাগের বাঘ প্রাণীজগতে দুটি নেই। যার ফলে বাঘেরা খুব সহজেই একে অপরকে শনাক্ত করতে পারে।

বাঘের জিহ্বা প্রচণ্ড ধারালো ও রুক্ষ হয়

একটি বাঘের জিহ্বা এতোটাই রুক্ষ বা অমসৃণ হয় যে তারা খুব সহজেই যেকোনো হাড়ে লেগে থাকা মাংস চেটে তুলে আনতে পারে। বাঘের জিহ্বায় ধারালো এবং ছোট ছোট কাঁটার মত তন্ত্রী থাকে, যেগুলোকে ‘প্যাপিলা‘ বলা হয়। শুধু জিহ্বার অগ্রভাগই নয়, বাঘের পুরো জিভ জুড়েই এই ক্ষুদ্রাকার, শক্ত এবং হুকের মত প্যাপিলাগুলো থাকে।

বাঘের জিহ্বার প্যাপিলা; Source: quebracabecas.com.br

এই প্যাপিলাগুলো বাঘের জিহ্বাকে এতোটাই রুক্ষ ও কর্কশ করে যে, যদি একটি বাঘ কয়েকবার কোনো মানুষের চামড়া চেটে দেয়, তাহলে সেই চামড়া ছিলে রক্ত বের হয়ে আসবে। এগুলো বাঘকে তার শিকারের মাংস ছিঁড়তে এবং শিকারের শরীরে পালক থেকে থাকলে সেগুলো তুলে ফেলতেও সাহায্য করে।

বাঘের গর্জনেই শিকার মাঝেমাঝে প্যারালাইজড হয়ে যায়

একটি বাঘের গর্জন প্রায় বজ্রধ্বনির সমতুল্য। শিকারকে সাময়িক অসাড় এবং নিষ্ফল করে দিতে বাঘের কয়েকটি গর্জনই যথেষ্ট। এই বড় বিড়ালদের স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ডের নিচে একধরনের ‘ভোকাল ফোল্ড‘ থাকে। এই ভোকাল ফোল্ডের কম্পনজাত ধ্বনিই মূলত বাঘের গগনবিদারী গর্জনের মূল কারণ।

বাঘেরা প্রধানত দু’ধরনের গর্জনের সৃষ্টি করে। এক ধরনের গর্জন মানুষ শুনতে পায়, অপরটি মানুষ শুনতে পায় না। স্বল্প মাত্রা ও কম্পাংকের গর্জন মানুষ সাধারণত শুনতে পায় না। আর এ ধরনের গর্জনই অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে, যেগুলো বিভিন্ন ভবন, ঘন বন, পাহাড়-পর্বত, এমনকি হাড় ভেদ করেও চলে যায়। শিকারের দেহের অভ্যন্তর দিয়ে ভ্রমণের সময় এই গর্জন একধরনের হিম বা শীতলতার সৃষ্টি করে, যা শিকারকে জমিয়ে ফেলা বা অসাড় করে ফেলার মতোও ক্ষমতা রাখে। আর ঠিক এভাবেই বাঘ তার স্বল্প দৈর্ঘ্যের এবং কম্পাংকের গর্জন ব্যবহার করে শিকার অবশ করে ফেলে।

একটি বাঘের ওজন একটি সিংহের থেকে ১০০ কেজিরও বেশি হয়ে থাকে

বাইরে থেকে পর্যালোচনা করলে মনে হয়, শারীরিক দিক দিয়ে একটি বাঘ ও একটি সিংহ প্রায় একই আকারের এবং ভাবা হয় তারা সমান শক্তিশালী। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সিংহের থেকে বাঘ বেশি হিংস্র হয়ে থাকে। গড়ে একটি বাঘের ওজন হয়ে থাকে ৩৬০ কেজি, যেখানে একটি আফ্রিকান সিংহের ওজন হয় ২৫০ কেজির কাছাকাছি। পাশাপাশি পেশিবহুল এবং চর্বিহীন দেহ থাকার কারণে বাঘেরা সিংহদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। চর্বিযুক্ত দেহ হওয়ায় দেখা গেছে, সিংহরা প্রায় সবসময়ই বাঘেদের সাথে লড়াইয়ে হেরে গেছে। একবার তো এমনও দেখা গেছে, বাঘ শুধু একটি থাবা মেরেই সিংহের ঘাড় মটকে দিয়েছে।

বাঘ বনাম সিংহ; Source: aldoricci.files.wordpress.com

তবে বাঘ ও সিংহের লড়াইয়ের ধরন একরকম নয়। বাঘেরা সুপরিচিত তাদের যথাযথ ও দ্রুতগতির আক্রমণের জন্য। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে হত্যা করার। অন্যদিকে সিংহরা আক্রমণের থেকে তর্জন গর্জন এবং শিকারকে তাড়িয়ে ও খুঁচিয়ে মারতেই বেশি পছন্দ করে।

বাঘেরা রাতে মানুষের তুলনায় ৬ গুণ বেশি স্পষ্ট দেখে

বাঘেদের রয়েছে অনেক শক্তিশালী নাইট-ভিশন। অধিকাংশ প্রাণীরই রাতে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। যার ফলে বাঘ খুব সহজেই সেসব প্রাণীদের রাতে শিকার করে থাকে। তাদের চোখে তুলনামূলকভাবে বেশি ‘রড কোষ’ (Rod, যা রাতে দেখতে পারার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে) রয়েছে কিন্তু অপরদিকে অল্প ‘কোন কোষ’ (Cone, যা দিনের বেলা বা উজ্জ্বল আলোয় দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে এবং রঙিন বস্তু দেখতে সাহায্য করে) আছে। যার ফলে একটি বাঘ রাতে স্পষ্ট দেখতে পেলেও দিনের বেলা মানুষের তুলনায় চোখে কম দেখে।

রাতের বেলা বাঘ; Source: redorbit.com

তাছাড়াও বাঘের চোখ অন্য যেকোনো বন্য প্রাণীর থেকে বেশি উজ্জ্বল। তাদের চোখে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের মেমব্রেন, যা রেটিনার মধ্যে দিয়ে অত্যাধিক পরিমাণে আলো প্রতিফলিত করে। মানুষের মতোই বাঘের চোখ দুটি তাদের মাথার অগ্রভাগে অবস্থিত, যা তাদেরকে ত্রিমাত্রিক দৃষ্টি প্রদান করে থাকে। এটি তাদেরকে শিকার করার ক্ষেত্রেও সুবিধা প্রদান করে।

ভাল্লুক শিকারের জন্যও সাইবেরিয়ান বাঘেরা বিখ্যাত

সাইবেরিয়ার বাঘেরা সাধারণত ৩ ফুট লম্বা এবং ৩৬০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। তবে ভাল্লুকরা বাঘেদের থেকেও আকারে বিশাল হয়। তারা ৪ ফুট লম্বা এবং ওজনে ৪৫০-৬০০ কেজি হয়ে থাকে। কিন্তু আকার এবং ওজনে ছোট হলেও সাইবেরিয়ার বাঘেরা সেখানকার বাদামি এবং কালো ভাল্লুক শিকারের জন্যও সুপরিচিত। যদিও উভয় প্রাণীই লড়াইয়ের সময় তাদের সর্বশক্তি ব্যবহার করে থাকে, তবুও বাঘেরা তাদের দক্ষতা এবং লড়াই কৌশলের জন্য এগিয়ে থাকে।

বাঘ বনাম ভাল্লুক; Source: telegraph.co.uk

বাঘ ও ভাল্লুকের লড়াই করার ধরন প্রায় একই। দুজনেই তাদের পেছনের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায় এবং সামনের পা দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে আঘাত করে। তবে ভাল্লুকের দেহে আঘাত হানাটা অনেকখানিই কষ্টসাধ্য ও বিপদজনক। কারণ তাদের বিশালাকৃতির দেহটা প্রায় সবধরনের শক্তিশালী আঘাতের বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ কাজ করে। কিন্তু বাঘেরা চটপটে এবং চালাক হওয়ায় একসময় ভাল্লুকদের ঠিকই নাস্তানাবুদ করে ফেলে।

বাঘেরা একা সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে

বাঘেরা একাকিত্ব পছন্দ করে। তারা মোটেই সামাজিক জীব নয়। বাঘকে মূলত দেখাই যায় তার নিজস্ব এলাকা পাহারা দিতে ও সেখানেই একা জীবন কাটাতে। এই নির্জনতাপ্রিয় হওয়ার কারণেই সিংহের কাছে বাঘ ‘বনের রাজা‘ উপাধিটা হারিয়েছে।

একাকী বাঘ; Source: pixabay

জন্মের পর বাঘের বাচ্চারা তাদের মায়ের আশ্রয়ে প্রথম ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ থাকে। এই একটা সময়েই তারা একসাথে বসবাস করে। যখন তারা নিজেরা চলাফেরা শিখে যায়, তখন তারা তাদের মাকে ছেড়ে চলে যায় এবং নিজেদের মতো করে একটা এলাকা বেছে নিয়ে বসবাস করা শুরু করে। পুরুষ বাঘেরা  নতুন এলাকার পাশাপাশি বাঘিনীর খোঁজেও বের হয়। অন্যদিকে বাঘিনীগুলো নিজেদের এলাকাতেই আজীবন কাটিয়ে দেয়।

টাইগন; Source: PROBentley Smith via flickr

কৃত্রিমভাবে বাঘ এবং সিংহীর সাথে সম্পর্কের ফলে ‘টাইগন’ এবং সিংহ এবং বাঘিনীর সাথে সম্পর্কের ফলে ‘লিগার’ নামের সংকর প্রাণীরও দেখা মিলেছে।

ফিচার ইমেজ: jubilanttravel.com

Related Articles