Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি ভয়ঙ্কর প্রাণী

পৃথিবীর প্রায় সকল মহাদেশেই বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর প্রাণী রয়েছে। এগুলো হতে পারে দেখতে সুন্দর কিংবা কুৎসিত। কিন্তু মিল পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে। ভয়ঙ্করতার দিক থেকে বিবেচনা করলে প্রাণীগুলোর কোনোটিই কোনোটার চেয়ে কম পারদর্শী হবে না। ভয়ঙ্কর প্রাণীর তালিকায় এশিয়া মহাদেশও পিছিয়ে নেই। এই মহাদেশেও অনেক ভয়ঙ্কর প্রাণী বিচরণ করছে। যারা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এখন আমরা জানাবো সেই সকল ভয়ঙ্কর প্রাণীর কথা।

সাপ

যদিও অস্ট্রেলিয়াকে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত সাপের আবাসস্থল হিসেবে ধরা হয়, তবুও সেখানে অল্প পরিমাণ লোকই সাপের ছোবলে মারা যায়। এশিয়ায় আবার এই চিত্র ভিন্ন। এখানে প্রতি বছর আনুমানিক ১৫-৬০ হাজার লোক সাপের কামড়ে মারা যায়! এই মৃতের সংখ্যা আবার শ্রীলঙ্কা এবং ভারতেই বেশি।

কিং কোবরা © Dr. Anand Titus and Geeta N Pereira

এশিয়া মহাদেশের ভয়ঙ্কর সাপের তালিকায় রয়েছে রাসেল’স ভাইপার, করাতে আঁশ ভাইপার, ভারতীয় কোবরা এবং কমন ক্রেইট বা পাতি কাল কেউটে। এগুলোর মধ্যে কোবরা উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় প্রাপ্ত রাজ গোখরো বা কিং কোবরা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষাক্ত সাপ। এই সাপ ছোবল দিয়ে হাতিকেও মারতে সক্ষম। এতটা ভয়ঙ্কর হলেও এই সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলতে চায়। তবে মিশরীয় কোবরা কিছুটা ব্যতিক্রম। এটি খুবই আক্রমণাত্মক এবং শক্তিশালী বিষের অধিকারী। থাইল্যান্ডে সাপের কামড়ে যতজন মারা যায় তার অধিকাংশই ঘটে মনোক্লেড কোবরার দ্বারা।

জুতা, ব্যাগ, বিছানায় লুকিয়ে থাকা একটি সাপ হচ্ছে ক্রেইট বা কেউটে। সাপটি শুধুমাত্র এশিয়াতেই পাওয়া যায়। এর বিষও খুবই মারাত্মক। ছোবল দেয়ার চার ঘন্টার মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে!

অজগর সাপ; Source: Youtube

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সাপটিও পাওয়া যায় এশিয়ায়। সাপটি হচ্ছে রেটিকুলেটেড পাইথন বা জালিকাকার ডোরাযুক্ত অজগর সাপ। ২০ ফুট দীর্ঘ সাপটির বিষ না থাকলেও বন্য ও বন্দী উভয় দশায় অনেক লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ী। যদিও এই সাপ একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু মানুষের প্রশস্ত কাঁধ থাকায় গিলে ফেলতে পারে না।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার

ভয়ঙ্কর দাঁত ও নখের সাহায্যে আক্রমণ করে এশিয়ার বনে-জঙ্গলে যে প্রাণীটি বেশি মানুষ মেরে ফেলেছে সেটি হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ। প্রাণীটি শিকারের শ্বাসনালী চেপে ধরে ও শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। এদের শিকারের তালিকায় বন্য শূকর, হরিণ থেকে শুরু করে প্রায় এক টন ওজনের মহিষও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। মানুষকেও কাছে পেলে সহজে ছাড়ার পাত্র নয় এরা। তবে প্রাণীটি হাতির কাছে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার © Claudio Gennari

মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাণীর দ্বারা সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় এই বাঘের কাছেই। সাধারণত বনের আশপাশে গড়ে ওঠা জনপদের সাথে সংঘর্ষ করতে গিয়েই এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে প্রাণীটি। বিশ শতকে এদের দ্বারা শুধু ভারতেই ১৫-২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। খাদ্যের অভাব, বাসস্থান সংকট, অবৈধ শিকারের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনের আশপাশের গ্রাম ও ব-দ্বীপ এলাকায় এরা এখনও মাঝে মাঝে মানুষকে মেরে ফেলছে। তবে বিভিন্ন কারণে প্রাণীটির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় হত্যাকাণ্ডও কমে যাচ্ছে।

স্লথ বিয়ার

স্লথ বিয়ার বা ভালুক ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও বাংলাদেশের নিম্নভূমির বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। তবে শিকার ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে নেই বললেই চলে। ভালুক প্রজাতির মধ্যে এই প্রাণীটি অনেক ব্যতিক্রম। এরা প্রধানত পিঁপড়া ও উইপোকা খায়। স্লথ বা অলস ভালুক বলা হলেও এরা মোটেও অলস নয়। খাবারের সন্ধানে সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে।

ছোটখাট এই প্রাণীও কিন্তু হতে পারে ভয়ঙ্কর; Source: planetdeadly.com

এই প্রাণীটি সাড়ে ৪ ফুট থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা এবং ওজন প্রায় ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এরা বাঘের সাথেও সমানতালে লড়াই করতে পারে। লম্বা নখর দিয়ে এরা মানুষসহ যেকোনো প্রাণীকে মারাত্মকভাবে জখম করতে পারে। ১৯৮০-৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতের পান্না জাতীয় উদ্যানে ৮০ জন লোককে আক্রমন করে, যার মধ্যে তিনজন মারা গিয়েছিল।

এশিয়ান জায়ান্ট হরনেট

এশিয়ান জায়ান্ট হরনেট বা এশিয়ার বৃহত্তম ভ্রমরকে চমরী গরুর ঘাতকও বলা হয়। এই ভ্রমর প্রজাতিটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ভ্রমরার প্রজাতি। এটি ২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

এটুকু ভ্রমরও মানুষকে মেরে ফেলে! © Yasunori Koide

জায়ান্ট হরনেট একবার হুল ফোটালে ৮ প্রকার রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করিয়ে দেয়। রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রভাবে টিস্যু বা কলা নষ্ট হয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এছাড়াও এই রাসায়নিকের মাধ্যমে অন্য ভ্রমরও হুল ফোটানোর জন্য আকৃষ্ট হয়। এদের হুল ০.২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। হুলে কোনো কাঁটা থাকে না। তাই একই হুল একাধিকবার ফোটাতে পারে। যদি কাউকে ১০টি বা তার অধিক ভ্রমর হুল ফোটায় তবে তাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আর যদি ৩০ এর মতো হুল ফোটায় তবে তার জন্য ভয়ঙ্কর পরিণাম অপেক্ষা করবে! জাপানে প্রতি বছর ৩০-৪০ জন লোক এই ভ্রমরের আক্রমণে মারা যায়।

কুমির

বিশ্বে যতগুলো পুরনো ও জীবন্ত সৃষ্টি রয়েছে কুমির তার মধ্যে একটি। এটি ২০০ মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে। ধারণা করা হয়, ডাইনোসোর যুগ থেকে এরা আজ পর্যন্ত টিকে আছে। এরা আফ্রিকা, এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় বাস করে।

সবচেয়ে শক্তিশালী কামড় দেয় কুমির; Source: planetdeadly.com

কুমির হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপ। জীবন্ত সকল প্রাণীর চেয়ে শক্তভাবে কামড় দিতে পারে এরাই। শিকার ধরার জন্য জলের নিচে খুবই শান্তভাবে লুকিয়ে থাকে। এরা দুইভাবে শিকারকে খাওয়ার উপযোগী করে। একটি হচ্ছে মৃত শিকারকে লুকিয়ে রেখে পঁচিয়ে তারপর সহজে টুকরো টুকরো করে খায়। অপরটি হচ্ছে শিকারকে কামড়ে ধরে ঘুরতে থাকে। এভাবে শিকারের দেহকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে খেয়ে ফেলে। ভারত ও পাকিস্তানে কুমিরের সংস্পর্শে অনেক মানুষ মারা যায়।

হাতি

এশিয়ান হাতি ১০ ফুট উঁচু ও প্রায় ৮ টন ওজনের হয়ে থাকে। এরা মানুষের ভাল বন্ধু হতে পারে। আকারে অনেক বড় হলেও এরা সহজে মানুষের সাথে ক্ষমতা দেখাতে যায় না। তবে খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যখন মাস্ত (musth) নিঃসৃত হয় অথবা বাচ্চার বিপদ দেখে।

মাস্তের অবস্থান দেখুন © wildlife/mradul

মাস্ত সাধারণত টেম্পোরাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে চোখ ও কানের মাঝামাঝি জমতে থাকে। এ সময় প্রজননের সাথে সম্পর্কিত হরমোনের কিছু পরিবর্তন ঘটে। টেম্পোরাল গ্রন্থি ফুলে ওঠে ও হাতি চোখে প্রচুর ব্যথা অনুভব করে। পুরুষ হাতির টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ৬০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সে সময় হাতি খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমনকি তখন মাহুতও কাছে যেতে পারে না। অপরদিকে বাচ্চার কোনো প্রকার বিপদ দেখলে স্ত্রী হাতিও প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

মোটা লেজী বিচ্ছু

মোটা লেজী বিচ্ছু সাধারণত আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশের উষ্ণ, শুষ্ক পরিবেশে পাওয়া যায়। লেজ মোটা হওয়ায় এদের নাম মোটা লেজী।

ভয়ঙ্কর মোটা লেজী বিচ্ছু; Source: planetdeadly.com

বিচ্ছুর বিষ থাকে লেজে। লেজের মাথায় থাকা হুল মানুষের শরীরে ফোটালে এর বিষ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিকল করে ও তার কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় মানুষ। তবে এর বিষক্রিয়া নষ্ট করার জন্য এন্টি-ভেনোম রয়েছে। এর বিষকে বলা হয় কুরটক্সিন (Kurtoxin)। এই বিষ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক গবেষণা চলছে।

Related Articles