Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইরান ক্যাবল (৬): ইরাকে ইরানের আমেরিকাপন্থী নীতি

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার গোপন ইরানি ডকুমেন্টের উপর সংবাদ মাধ্যম ইন্টারসেপ্ট পাঁচ পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে ইরাকে ইরানের রহস্যময় ভূমিকার অনেক গোপন তথ্য। ইন্টারসেপ্টের এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমাদের এই ইরান ক্যাবল সিরিজ

আজ পড়ুন সিরিজের পঞ্চম পর্ব। পূর্ববর্তী পর্বগুলো পড়ুন এখান থেকে: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব৩য় পর্ব৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব

ইরান যখন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তখন ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক, তারা এমন নীতি অনুসরণ করছিল, যা ছিল হুবহু ইরাকে আমেরিকানদের গৃহীত নীতির মতোই। প্রায় এক দশক পূর্বে আমেরিকা ইরাকে আইসিসের পূর্বসূরি আল-কায়েদা ইন ইরাককে পরাজিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে সুন্নি গোত্রগুলোর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মাধ্যমে। এই গোত্রভিত্তিক বিদ্রোহ, যা “সাহওয়া” তথা “দ্য অ্যাওয়েকেনিং” নামে পরিচিত ছিল, সেটাই মূলত আল-কায়েদার সাথে অন্যান্য সুন্নি আরব মিলিশিয়াগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে মার্কিন দখলদারিত্বের শেষ বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল।

আল-কায়েদার মতোই ইসলামিক স্টেটও শুরুর দিকে ছিল অনেকগুলো সুন্নি আরব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত, যাদের আদর্শ ছিল ভিন্ন, কিন্তু যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, ইরানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সাম্প্রদায়িক চরিত্রের ইরাকি সরকারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ ছিল। আইসিসের সাথে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু মূলত আইসিস না, এরকম সুন্নি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল নব্য বাথিস্ট আদর্শের অনুসারীরা, যারা ইরাককে ২০০৩ সালের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী ছিল।

শুরুর দিকে এই গ্রুপগুলো একসাথে কাজ করছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের গ্রীষ্মকালে আইসিসের সাথে অন্যান্য সুন্নি মিলিশিয়াদের ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়, যারা সহিংস কার্যক্রমে আইসিসের নেতৃত্ব মেনে নিতে রাজি ছিল না। তাদের মধ্যে এই বিভাজনের সুযোগ গ্রহণ করার জন্য ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। ২০১৪ সালের শেষের দিকে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি, MOIS আইসিসের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে এই আশায় যে, তাদের সাথে ইরাকি সরকারের মীমাংসা করিয়ে তাদেরকে আইসিসবিরোধী যুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।

কিন্তু সম্প্রতি ফাঁস হওয়া MOIS-এর বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে দেখা যায়, এই সুন্নি মিলিশিয়ারা সব সময় বিশ্বস্ত ছিল না। তাদের অনেকে সুযোগ বুঝে পরবর্তীতে ইরানের সাথে প্রতারণা করেছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে MOIS-এর গোয়েন্দারা এরকম কিছু জঙ্গির সাথে তাদের অনুসারীদের যোগাযোগের সময় আড়ি পেতে জানতে পারে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কথাবার্তা বলছে এবং ইরাক সরকারের বিমান হামলার সাময়িক বিরতির সুযোগ গ্রহণ করে তাদের সৈন্যদেরকে বিদ্রোহ শুরু করার নির্দেশ দিচ্ছে!

ইন্টারসেপ্টের ওয়েবসাইটে লিক হওয়া ডকুমেন্টগুলো নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন; Image Source: https://theintercept.com/

ইরানি কর্মকর্তারা আইসিসবিরোধী যুদ্ধের সময় সুন্নি আরবদের সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টার উপর গভীরভাবে নজরদারি করছিল। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সুন্নি আরব নেতারা ইরাকি কুর্দিস্তানের রাজধানী এরবিলের শেরাটন এবং রোটানা হোটেলে একাধিক বৈঠক করে। ইরান সেসব বৈঠকে নিজেদের গুপ্তচরদেরকে প্রেরণ করে। সেপ্টেম্বর মাসে শেরাটন হোটেলের একটা বৈঠকে অংশগ্রহণের পর এরকম একজন গুপ্তচর তার রিপোর্টে জানায়, সেখানে আমেরিকা থেকে এক সাবেক বাথ পার্টি মেম্বার এসে যোগ দিয়েছিল। আমেরিকানদের কাছ থেকে সে একটা বার্তা নিয়ে এসেছিল যে, যুদ্ধ শেষ হলে আমেরিকা ইরাকের সুন্নিপ্রধান অঞ্চলগুলোর স্বায়ত্তশাসনের দাবি সমর্থন করতে রাজি আছে। ডকুমেন্টগুলো থেকে জানা যায়, এই রিপোর্ট MOIS-কে বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তারা ইরাককে বিভক্ত করতে রাজি ছিল না।

এর তিন মাস পর, ডিসেম্বরে ইরাকি রাজনীতিবিদদের একটা দল ইরানে যায় উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। এই দলের মধ্যে ইরাকি পার্লামেন্টের সুন্নি স্পিকার সালিম আল-জাবুরও ছিলেন। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট অনুযায়ী মিটিং ভালোভাবেই শেষ হয়েছিল, কিন্তু একপর্যায়ে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি, আলি শামখানি অতিথিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে বসেন, ইরাকের সুন্নিরা যতটুকু প্রাপ্য তার চেয়েও অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে। তাদেরকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পার্লামেন্টে আসন দেওয়া হয়েছে, একটা বড় মিলিশিয়ার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি অতিথিদেরকে বলেন, “আপনারা যদি নাও চান, তার পরেও ইরান আইসিসের হাত থেকে ইরাককে মুক্ত করবে।” ডকুমেন্টগুলো থেকে জানা যায়, তার এই বক্তব্য ইরাকি প্রতিনিধিদেরকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছিল।

আইসিসবিরোধী যুদ্ধে সাফল্যের লক্ষ্যে নুরি আল-মালিকির সরকার শুরুর দিকে মৌখিকভাবে আইসিসের প্রতি অনুগত কিছু সুন্নি গোত্রকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড রকমের অজনপ্রিয় মালিকি সরকারের এই প্রচেষ্টা খুব একটা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। পরবর্তীতে মালিকির অপসারণের পর নতুন নেতৃত্বের উদ্যোগে এবং একইসাথে আইসিসের কঠোর শাসনব্যবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে সুন্নি গোত্রগুলো পক্ষ পরিবর্তন এবং বিদ্রোহ করতে শুরু করে। ২০১৫ সালের দিকে রিপোর্ট আসতে থাকে, ইরাকের নতুন সরকার কাতারে এবং তাঞ্জানিয়ায় আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মধ্যস্থতায় আইসিসবিরোধী সুন্নি বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনা শুরু করেছে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে কিরকুকের কাছাকাছি আইএসবিরোধী যুদ্ধে মোহাম্মদ হাজি মাহমুদ (মাঝে) এবং তার ছেলে আতা (সর্বডানে); Image Source: Archives Hama Haji Mahmoud/The PhotoLibrary of Kurdistan

ইরাকের কুর্দিদের উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ইরান কুর্দিশ রেজিওনাল গভর্নমেন্টের পাশাপাশি ছোটো ছোটো কুর্দি গ্রুপগুলোর সাথেও যোগাযোগ শুরু করে, যাদের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এরকমই একটা গ্রুপ ছিল হালাবজা শহরের কুর্দিস্তান সোশ্যালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কেএসডিপি। দলটির নেতা মোহাম্মদ হাজি মাহমুদ, যিনি “কাকা হামা” নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তী কুর্দি জাতীয়তাবাদী। কয়েক দশকজুড়ে তিনি পাহাড়ে থেকে সাদ্দাম হুসেনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আইসিস যখন কুর্দিস্তানে আক্রমণ করে, মাহমুদ ছিলেন তখন সবার আগে আইসিসবিরোধী যুদ্ধে যোগ দেওয়া যোদ্ধাদের মধ্যে একজন।

সে বছরের নভেম্বর মাসে কিরকুক শহরের কাছে আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মাহমুদের ছেলে নিহত হয়। দশ দিন পর, ডিসেম্বরের ৭ তারিখে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, MOIS-এর গোয়েন্দারা হাজির হয় কেএসডিপির হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত মাহমুদের অফিসে। তারা তার শহিদ ছেলের বীরত্বের প্রশংসা করে, তার জন্য দোয়া করে এবং মাহমুদকে ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়।

দেড় মাস পর, জানুয়ারির শেষের দিকে MOIS-এর কর্মকর্তারা পুনরায় সাক্ষাৎ করে মাহমুদের সাথে। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের বিবরণ থেকে দেখা যায়, মাহমুদ এবার ইরানি কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানান তার অধীনস্থ পেশমার্গা বাহিনীর ৩০জন সদস্যকে “স্পেশাল মিলিটারি এবং সিকিউরিটি ট্রেনিং” দেওয়ানোর জন্য। রিপোর্ট অনুযায়ী এই ট্রেনিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল মাহমুদের ছেলের সম্মানে। ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা মাখমুর শহরের ফ্রন্টলাইনে গিয়ে কুর্দি যোদ্ধাদেরকে ট্রেনিং দিয়েছিল। তাদের এই প্রশিক্ষণ মাখমুরে আইসিসকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

২০১৪ সালের নভেম্বরে কিরকুকের কাছাকাছি আইএসবিরোধী যুদ্ধে মোহাম্মদ হাজি মাহমুদ; Image Source: Archives Hama Haji Mahmoud/The PhotoLibrary of Kurdistan

ইরাকের কুর্দিদের সাথে ইরানের এই মিত্রতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কুর্দিদের সাথে তাদের সম্পর্কের এই পরিণতি ছিল পার্শ্ববর্তী সিরিয়াতে আমেরিকানদের সাথে কুর্দিদের সম্পর্কের পরিণতির মতোই। ২০১৭ সালে ইরাকের কুর্দিরা যখন স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে এবং নিরুঙ্কুশভাবে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়, তখন ইরান এবং আশেপাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতার পরিবর্তে কুর্দিদের গণভোট তাদের জন্য আরো দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। তাদের স্বাধীনতার দাবি দমন করার জন্য ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। এবং ইরানও আইসিসবিরোধী যুদ্ধের সময়ের মিত্রতার কথা ভুলে গিয়ে কুর্দিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কুর্দি পেশমার্গারা আবারও মাখমুর শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায়। তবে এবার আইসিসের হাতে না, ইরান সমর্থিত ইরাকি সরকারের হাতে।

জেনারেল বাহরাম আরিফ ইয়াসিন ছিলেন ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আইসিসবিরোধী যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী পেশমার্গা কমান্ডারদের একজন। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বের পক্ষ থেকে আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর আমরা আশা করেছিলাম সবার সমর্থন পাব। কিন্তু  কুর্দি জনগণের মতামতের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রত্যেকে আমাদের বিরোধিতা করেছে।” তার কণ্ঠে ইরানের ভূমিকার প্রতি হতাশা ছিল লক্ষণীয়, “যখন আমরা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছি, তখন এমনকি তুর্কিও আমাদের সাথে সীমান্ত বন্ধ করেনি, কিন্তু ইরান করেছে।”

মাখমুর শহরে ব্ল্যাক টাইগার মিলিশিয়াদের দ্বারা আটককৃত আইএসদের ব্যবহৃত সামরিক যান; Image Source: Murtaza Hussain/The Intercept

কুর্দি পেশমার্গারা এখনও নিকটবর্তী “কারা চোখ” পর্বতে লুকিয়ে থাকা আইসিস সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তাদের এই যুদ্ধে সাহায্য করছে আমেরিকা, যারা মাঝে মাঝেই আইসিসের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা পরিচালনা করছে। মাখমুরের যুদ্ধে আইসিসের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করা কুর্দি কমান্ডাররা এখনও আমেরিকাকেই তাদের প্রধান মিত্র মনে করে। যুদ্ধের শুরুতে ২০১৪ সালে ইরান তাদেরকে যে সাহায্যটুকু করেছিল, সেটা তাদের কাছে এখন দূরের স্মৃতি, যে স্মৃতি মলিন হয়ে গেছে মাখমুরকে তাদের হাত থেকে পাল্টা দখল করার জন্য ইরাকি সেনাবাহিনীর অভিযানে ইরানের সমর্থনের কারণে।

ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, MOIS শুরুতেই আশঙ্কা করেছিল, কুর্দিদের সাথে তাদের এই সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটা রিপোর্টে MOIS আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, আমেরিকার সাথে ইরানের সম্পর্কের দূরত্ব এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বিচ্ছিন্ন অবস্থান হয়তো যুদ্ধ শেষে কুর্দিদেরকে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করতে পারে এবং ইরানকে হয়তো আবারও তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।

শেষপর্যন্ত তাদের আশঙ্কাই সত্য হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ওবামার সময় করা নিউক্লিয়ার ডিল বাতিল করার পর ইরান আবারও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কুর্দিদের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতির পেছনে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ইরানের নিজেদেরই কুর্দিবিরোধী অবস্থান। আইসিসবিরোধী যুদ্ধের সময় কুর্দিদেরকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে তারা কুর্দিদের কাছ থেকে যে সমর্থন এবং শ্রদ্ধা আদায় করেছিল, পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা সে সমর্থন হারিয়েছে।

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ইরানের, কুর্দিদের এবং আমেরিকার জয়ও শেষপর্যন্ত ক্ষণস্থায়ী বলে প্রমাণিত হতে পারে। আইসিসের নেতৃত্ব ধ্বংস হয়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইরাকে তাদের আবারও পুনর্গঠিত হওয়ার প্রচেষ্টার সংবাদ আসছে। যদি তারা আবারও ফিরে আসে, তাহলে হয়তো আরো একবার ইরাকের মাটিতে দুই শত্রুরাষ্ট্র আমেরিকা এবং ইরানকে একত্রে কাজ করতে হতে পারে এমন সব সংকট মোকাবেলা করার জন্য, যে সংকট সৃষ্টির পেছনে তাদের উভয়েরই দায় আছে, কিন্তু যে সংকট সমাধান করার ক্ষমতা সম্ভবত তাদের কারোই নেই।

মূল প্রতিবেদক: মুর্তজা হুসাইন

প্রকাশের তারিখ: ‌১৮ নভেম্বর, ২০১৯

আগামী পর্বে থাকছে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের গোপন একটি মিটিংয়ের পরিকল্পনার কথা।

সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব৩য় পর্ব৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ পর্ব

বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is in Bangla language. It's based on the series called "The Iran Cables", published by The Intercept and The New York Times.

Pool/Press Office of Iranian Supreme Leader/Anadolu Agency/Getty Images

Related Articles