Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বারাক ওবামার রাজনৈতিক ব্যর্থতা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় তার উদার রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য, জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে তার বক্তব্য দেওয়ার তুখোড় দক্ষতা আর শ্রোতাদের সাথে ভালো যোগাযোগ দক্ষতাও। বারাক ওবামার রাজনৈতিক উত্থানের শুরু গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে, তিনবার নির্বাচিত হন ইলিনয় রাজ্যের আইনপ্রণেতা হিসেবে। ২০০৪ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের কী-নোট স্পিকার ছিলেন ওবামা, একই বছর ইলিনয় রাজ্যের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যবধান নিয়ে সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি, পান ৭০% ভোট। 

দ্রুতই ডেমোক্রেটিক পার্টির উঠতি তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বারাক ওবামা, সময়ের সাথে বাড়ে তার জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করেন তিনি পার হন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ৫২.৯% পপুলার ভোট আর ৩৬৫ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। বিপুল জনপ্রিয়তা আর পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্ষমতায় আসা ওবামা দুই মেয়াদে আট বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, অবসরে গেছেন ৫৮ শতাংশ অ্যাপ্রুভাল রেটিং নিয়ে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবেও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন তিনি, জীবিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।

জীবিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি; Image Source: Getty Images

আট বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোতে অনেকগুলো মৌলিক পরিবর্তন এনেছেন বারাক ওবামা, জনমিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে অনুমোদন করেছেন সমলিঙ্গের বিয়ে। অর্থনৈতিকভাবেও সফল ছিলেন ওবামা, প্রায় ১১ মিলিয়ন চাকরি তৈরির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছেন ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মহামন্দা থেকে। মৌলিক পরিবর্তন এনেছেন স্বাস্থ্যখাতে, চালু করেছেন অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট, ২ কোটি আমেরিকানকে দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ। থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন আর জিমি কার্টারের পর চতুর্থ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার।

সাফল্যের মাপকাঠিতে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হলেও বেশ কিছু মৌলিক রাজনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে তার। এই লেখায় আলোচনা করা হবে সেসব ব্যর্থতা নিয়েই।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারা

যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশো বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভাজিত মতামত দিয়েছে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি, সরকার পরিচালনার ধরন বদলেছে প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের সাথে। এখনও ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি জলবায়ু মোকাবিলার ইস্যুতে বিভাজিত মতামত দিচ্ছে, বিভাজিত মতামত দিচ্ছে অস্ত্রনীতি, সামরিক ব্যয় আর শিক্ষার মতো মৌলিক ইস্যুতেও। দুই দলের ভিন্ন অবস্থান রয়েছে অভিবাসন ইস্যুতে, স্বাস্থ্যনীতি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত তারা। দুই দল বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে শ্রমিকদের মজুরির ব্যাপারে, ভিন্ন অবস্থান আছে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম আর করকাঠামোর ব্যাপারেও।

বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দলের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থান যেমন আমেরিকার গণতন্ত্রকে অর্থপূর্ণ করেছে, জনগণকেও সুযোগ করে দিয়েছে একটি গতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিজের মতামতগুলোকে তুলে ধরার। তবে দীর্ঘকাল ধরেই এই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর কিছু ব্যর্থতা রয়েছে।

আমেরিকার রাজনীতির গতিপথ এখনও নির্ধারিত হয় বড় বড় কর্পোরেশনের কর্ণধারদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে, যাতে বাড়ছে সামাজিক আর অর্থনৈতিক বৈষম্য। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের উদাহরণ আছে ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে, বৈষম্য করা হয় গায়ের বর্ণ আর অঞ্চলকে ভিত্তি করেও। আইনের দৃষ্টিতে সমানভাবে বিচার পাবার যে অধিকার, সেটিও এখনও অর্জিত হয়নি দেশটিতে। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের একই অপরাধ করে সাদা আমেরিকানদের চেয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা ৬ গুণ বেশি, গ্রেপ্তার হলে সাদা আমেরিকানের চেয়ে গড়ে ১৯.১% বেশি সাজা পান কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা। অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে যে সমান বিচার পাওয়ার মৌলিক ভিত্তি রয়েছে উদার গণতন্ত্রের, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাতে ব্যর্থ হয়েছে। একই ধরনের বিভাজন রইয়েছে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রাপ্তিতে, অশ্বেতাঙ্গদের তুলনামূলক বেশি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেও।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির তেমন কিছুই পরিবর্তন করতে পারেননি বারাক ওবামা, শক্তিশালী হয়েছে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা; Image Source: Getty Images.

বারাক ওবামা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। ২০০৪ সালের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের কী-নোট স্পিচে তিনি বলেছিলেন, “উদার আমেরিকা বা রক্ষণশীল আমেরিকা বলে কিছু থাকা উচিত না, থাকবে কেবলমাত্র ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা।” ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বারবার এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিগুলোর পরিবর্তনের কথা বলেছেন বারাক ওবামা, তার প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনের মূল ডাক ছিল ‘Change we can believe in’।

সুস্পষ্টভাবেই, বারাক ওবামার আট বছরের প্রেসিডেন্সিতে আমেরিকান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কিছুই পরিবর্তন হয়নি, বারাক ওবামাও করতে পারেননি তার প্রতিশ্রুত পরিবর্তন। বরং, তার উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কট্টর ডানপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন পুরো মেয়াদ জুড়ে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার ব্যর্থতা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন বারাক ওবামাও, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে অবসরেও কাজ করে যাওয়ার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সর্বশেষ উক্তি ছিল,

আমি আপনাদেরকে এখনো বলবো বিশ্বাস রাখতে, আমার পরিবর্তন আনার ক্ষমতার উপর নয়, আপনাদের পরিবর্তন আনার ক্ষমতার উপর। আমি পরিবর্তনে বিশ্বাস করি কারণ আমি আপনাদের বিশ্বাস করি।  

বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজন কমাতে না পারা

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত দাসব্যবসা বৈধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে, দাসব্যবসাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে গৃহযুদ্ধও। এই দাসেরা আসত আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে। আব্রাহাম লিংকনের সময়ে এই দাসব্যবসা সমাপ্তির মাধ্যমে আফ্রিকানদের সামনে সুযোগ আসে আমেরিকান নাগরিকত্ব অর্জনের, আমেরিকান হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের। সেই সময়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ আসলেও, গত দেড়শো বছরেও সমতা আসেনি কালো আর সাদাদের মধ্যে। পঞ্চম আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর আর প্রথম আফ্রিকা-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার সামনে সুযোগ ছিল একটি সমতাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরির। দুঃখজনকভাবে, বারাক ওবামা ব্যর্থ হয়েছেন সেই কাজে।

বারাক ওবামা যে বছরে প্রেসিডেন্সি ছেড়েছেন, সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট স্কুল শিক্ষার্থীর ১৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হলেও তারা একবার বহিষ্কৃত হওয়া শিক্ষার্থীর প্রায় ৩৫ শতাংশ, দুবার বহিষ্কৃত হওয়া শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ। এদের প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বুলিংয়ের শিকার হন বন্ধু বা শিক্ষকদের মাধ্যমে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে একজন শ্বেতাঙ্গের চেয়ে গড়ে নয়গুণ বেশি পুলিশি জেরার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আফ্রিকান-আমেরিকানদের, গ্রেপ্তার হওয়া আর শাস্তি পাওয়ার হারও শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি কৃষ্ণাঙ্গদের।

মৃত্যুর পূর্বে জর্জ ফ্লয়েডের শেষ বাক্য ছিলো ‘I can’t breathe’; Image Source: BBC

সাদা-কালোর এই বিভাজন আছে চিকিৎসাক্ষেত্রেও। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভালো চিকিৎসাসেবা পান, হিস্পানিক আমেরিকানদের তুলনায় পান ৩৪ শতাংশ ভালো চিকিৎসাসেবা। এই বৈষম্যের প্রভাব পড়েছে শিশুস্বাস্থ্য এবং মাতৃমৃত্যু হারেও। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দ্বিগুণ বেকারত্ব থাকে আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে, মজুরিও পায় তুলনামূলকভাবে কম।

একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে আমেরিকান সমাজের এসব অসঙ্গতি দেখেই বড় হয়েছেন বারাক ওবামা, তাকেও যেতে হয়েছে এসব বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে। বারাক ওবামা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেকটা কাঠামোর কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি, অনেক সময় তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ

যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ অর্থনীতি থেকে বের করে আনতে না পারা

গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের শুরুর কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছিল ত্রিশের দশকের বৈশ্বিক মহামন্দা থেকে। এই সময়ে বেকারত্বের হার ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি, আমেরিকার বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা ছিল সীমিত। এর মধ্যেই জাপান আক্রমণ করে পার্ল হারবারে, যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই বদলে যায় আমেরিকার অর্থনীতির চেহারা। যুদ্ধসামগ্রী তৈরিতে নতুন নতুন কারখানা তৈরি হয়, সৈন্যদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ তৈরি করতে সরকার বিপুল কর সংগ্রহের পাশাপাশি বিপুল ব্যয়ও করে সরকার। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব ১৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশে চলে আসে, কর রাজস্ব ৮.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয় ৪৫ বিলিয়ন ডলার, পাঁচ বছরের অর্থনীতির আকার ৮৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয় ১৩৪ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ অর্থনীতি থেকে বের করে আনতে পারেননি বারাক ওবামা; Image Source: Getty Images. 

সেই সময়ে তৈরি হওয়া এই অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও আর বের হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে গত শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র সময়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে কোরিয়ান যুদ্ধে, জড়িয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধে। অর্ধশতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে এই শতকে এসে জড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে। যুদ্ধকেন্দ্রিক অর্থনীতিকে মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশে সংঘাত তৈরিতে রাজনৈতিক ভূমিকাও থাকে যুক্তরাষ্ট্রের, এই শতাব্দীর সংঘাতগুলোতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব পক্ষের কাছেই বিক্রি করে নিজেদের কারখানায় তৈরি হওয়া অস্ত্র, বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্যের প্রায় ৩৬ শতাংশই এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে।

যুদ্ধসামগ্রী ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির চারটিই যুক্তরাষ্ট্রের, সবচেয়ে বেশি আয় করা বিশটি কোম্পানির মধ্যে তেরটিই যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হওয়া যুদ্ধ আর সংঘাত যুদ্ধরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সচল রাখে, আমেরিকানদের নিশ্চয়তা দেয় কর্মসংস্থানের। কিন্তু এসব যুদ্ধ সীমাহীন দুর্ভোগ আর সম্পদের ক্ষতি বয়ে আনে সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে, তৈরি হয় মানবিক সংকট।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে বারাক ওবামা শুরুর দিকে চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধ অর্থনীতি থেকে বের করে আনার, বিভিন্ন ফ্রন্টে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ কমানোর সাথে স্বীকার করেছে বৈশ্বিক শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা। কিন্তু মন্দা থেকে ধীরগতির ফিরে আসা বারাক ওবামাকে বাধ্য করে যুদ্ধ অর্থনীতিতে ফিরে যেতে। তার শেষ চার বছরে যুদ্ধ সামগ্রী বিক্রি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় বাড়ে ২৩ শতাংশ।

পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা 

বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মধ্যে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয় মধ্যপ্রাচ্যে। তিউনিসিয়াতে শুরু হওয়া আরব বসন্ত ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে। ওবামার সামনে সুযোগ ছিলো, একনায়কতন্ত্রের অধীনে থাকা এসব দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হওয়ার। এই প্রক্রিয়ায় শুরুতে ক্ষমতা পরিবর্তন হয় তিউনিসিয়াতে, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকও। লিবিয়াতে পতন ঘটে মুয়াম্মার গাদ্দাফির, ইয়েমেনেও ক্ষমতাচ্যুত তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা একনায়ক।

বারাক ওবামার সময়ে বড় ধরনের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের দিকে যায় মধ্যপ্রাচ্য; Image Source: Getty Images 

আরব বসন্তে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের প্রাথমিক রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা থেকে স্বৈরশাসকদের সরানো। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর কীভাবে দেশে শাসনতান্ত্রিক বিবর্তন হবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে হবে, সেসবের কোনো পরিকল্পনা বিপ্লবীদের ছিলো না। আরব বসন্তের শুরু থেকে বিপ্লবীদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া ওবামা প্রশাসনও ব্যর্থ হয় বিপ্লবীদের শাসনতান্ত্রিক বিবর্তনে পথ দেখাতে। এসব দেশে সময়ের সাথে আবার ফিরে এসেছে সামরিক বাহিনীর শাসন। 

লিবিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে একনায়ককে হটাতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে পশ্চিমা শক্তিগুলো, ওবামা প্রশাসনের সময়েই যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান চালায় সিরিয়াতেও। এই সামরিক হস্তক্ষেপগুলো গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে এই দেশগুলোকে, সিরিয়াতে বারাক ওবামার ‘রেড এলার্টের’ পরও সিরিয়ানদের উপর হয়েছে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা। মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাতের সুযোগে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গিবাদ, উত্থান ঘটেছে আইএসের মতো বর্বর জঙ্গি সংগঠনের। বারাক ওবামার মেয়াদের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য যেমন ছিলো, তার মেয়াদ শেষে মধ্যপ্রাচ্য বহুগুণে অনিরাপদ হয়েছে, বেড়েছে সংঘাত আর যুদ্ধাপরাধ। এখন পর্যন্ত চলা এই সংঘাতের দায় বারাক ওবামা এড়াতে পারেন না।

মধ্যপ্রাচ্য অনেক বেশি অনিরাপদ হয়েছে বারাক ওবামার সময়ে; Image Source: Los Angeles Times. 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা ব্যর্থ হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার আটকাতে, কোনো সমাধান দিতে পারেননি ফিলিস্তিন ইস্যুতে, ইরানের সাথে তার করা ছয় জাতির চুক্তিও দেখেনি আলোর মুখ। বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে চীনের রাজনৈতিক উত্থান ঠেকাতে।

বারাক ওবামার রাজনৈতিক লিগ্যাসি

ইতিহাসে বারাক ওবামা হয়তো আমেরিকান শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্টদের একজন হয়েই থাকবেন, অবসরের সময়েও তার জনপ্রিয়তা সেদিকেই ইঙ্গিত করে। কিন্তু এই রাজনৈতিক ব্যর্থতাগুলো বারাক ওবামার লিগ্যাসিতে প্রশ্ন হয়ে থাকবে। এই লিগ্যাসির জায়গা থেকেই তিনি প্রথা ভেঙে সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের, প্রথা ভেঙে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জো বাইডেনের পক্ষে চালিয়েছেন প্রচারণা। ওবামার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনও আসেনি আমেরিকার সমাজে, সেই পরিবর্তনের পাড়ি দিতে হবে বহু পথ।

This article was in written in Bangla, about the political failures of Barack Obama. 

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: Business Insider. 

Related Articles