বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের সূচনা ঘটে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তুরস্ককে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সংস্কার করেন। আতাতুর্ক তুরস্ককে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে অটোমান আমল থেকে সরাসরি পশ্চিমা ভাবধারায় নিয়ে যান। তার সংস্কারগুলো যেমন প্রশংসিত তেমনি কিছু কিছু সংস্কার চরম বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আতাতুর্ক কী কী সংস্কার করেছিলেন? সরাসরি সংস্কারগুলোতে যাওয়ার আগে ইতিহাসে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া জরুরি।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তুরস্কে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং পরাজিত হয়। এর আগে বলকান যুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য বড় ধরনের ধাক্কা খায়। জার্মানির পক্ষে যে সমস্ত রাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বিপক্ষে যোগদান করে, মিত্রপক্ষ (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া) তাদের সাথে পৃথক পৃথক চুক্তি সম্পাদন করে। মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির সাথে ভার্সাই চুক্তি করে জার্মানিকে একপ্রকার পঙ্গু করে দেয়।
তুরস্ক তথা অটোমান সাম্রাজ্যের সাথেও চুক্তি করে অটোমান সাম্রাজ্যকে খণ্ড বিখণ্ড করার পরিকল্পনা করা হয়। এর রেশ ধরেই ১৯২০ সালে সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদ সেভ্রেস চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। সেভ্রেস চুক্তির মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্য বিশাল সাম্রাজ্য থেকে ছোট একটা অঞ্চলে পরিণত হয়। সেভ্রেস চুক্তি স্বাধীনতাকামী ও স্বদেশপ্রমী তুর্কীদের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চুক্তির মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দখল করে নেয়। হেজাজ, প্যালেস্টাইন ও মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সিরিয়া ফরাসি ম্যান্ডেটভুক্ত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তুরস্কে মোস্তফা কামাল পাশা নামক একজন জাতীয়তাবাদী নেতা ও সেনানায়কের আবির্ভাব ঘটে যিনি পতনোন্মুখ তুরস্ককে বৈদেশিক আগ্রাসন থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। তার সামরিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পদক্ষেপ তুরস্ককে ধ্বংস থেকে রক্ষা করে। তুরস্কের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরবর্তীতে তাকে আতাতুর্ক (তুর্কী জাতির পিতা) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯২০ সালের ঘৃণিত সেভ্রেস চুক্তির পর থেকে ১৯২৩ সালের ল্যুজান চুক্তির মধ্যবর্তী সময়ে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ পার করেছে। বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্ক যখন মিত্রপক্ষের ঘৃণিত চক্রান্তের মুখোমুখি হয় আতাতুর্ক তখন আনাতোলিয়ায় তুরস্ককে রক্ষার নকশা করছিলেন। তুরস্কের পশ্চিম প্রান্তে ইস্তাম্বুলে অটোমান সাম্রাজ্য যখন ঘৃণিত চুক্তির ফলে ধিকৃত হচ্ছিল তখন পূর্বাঞ্চলে আনাতোলিয়ায় মোস্তফা কামাল বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার অবস্থান দৃঢ় করতে থাকেন।
এ সময় আনাতোলিয়ায় মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠন সৃষ্টি হয়। এই সময় কামালের রাজনৈতিক আদর্শ ও চিন্তাভাবনা আনাতোলিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯১৯ সালে সংগঠনের একটি অধিবেশনে কামালকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯২০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী কামালিষ্ট দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিছুদিন পর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির সভায় কামালকে স্পিকার নির্বাচিত করা হয়।
এই সময় তুরস্ককে রক্ষায় সালতানাতের নীরবতা ও মোস্তফা কামালের বলিষ্ঠ ভূমিকা তুরস্কের জনগণের কাছে সালতানাত ও খিলাফতের পরিবর্তে মোস্তফা কামাল ও গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি আস্থাশীল ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রমেই বিশ্বব্যাপী ইস্তাম্বুলকেন্দ্রিক সালতানাতের পরিবর্তে আনাতোলিয়ার আঙ্কারাকেন্দ্রিক গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি তুরস্ককে প্রতিনিধিত্ব করতে থাকে। এভাবে ক্রমশ সমগ্র তুরস্কে মোস্তফা কামাল ও গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯২৩ সালে ল্যুজান চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিতে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি তুরস্কের প্রতিনিধিত্ব করে। ইতোমধ্যে ১৯২২ সালে সালতানাতের পতন ঘটে, যদিও তখনো খিলাফতের অস্তিত্ব ছিল। ল্যুজান চুক্তি সেভ্রেস চুক্তি থেকে তুরস্ককে কিছুটা নিষ্কৃতি দেয়। এই চুক্তির ফলে বর্তমান তুরস্কের সমস্ত অঞ্চলে তুরস্কের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ১৯২৩ সালে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি তুরস্ককে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে তুরস্ক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কামাল আতাতুর্ক ও প্রধানমন্ত্রী হন ইসমত ইনোনু। অটোমান পরবর্তী তুরস্ককে তিনি নিম্নোক্ত সংস্কারগুলোর মাধ্যমে একটি পশ্চিমা রাষ্ট্রে পরিণত করেন।
১. সালতানাতের বিলুপ্তি
১৯২২ সালে যখন তুরস্ক একটি রাজনৈতিক অস্তিতিশীল অবস্থা পার করছিল তখন তুরস্কে একই সময়ে দ্বৈত প্রশাসন প্রচলিত ছিল। এ সময় ইস্তাম্বুলে সুলতানের রাজকীয় সরকার ও আনাতোলিয়ার আঙ্কারায় গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। তবে আঙ্কারায় অবস্থিত আতাতুর্কের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সরকার ছিল বেশি ক্ষমতাধর ও জনপ্রিয়।
অটোমান সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষায় সালতানাতের ব্যর্থতা ও পরবর্তীতে গ্রিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতায় সালতানাতের উপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি সমস্ত তুরস্কে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে আনাতোলিয়ায় কামালিস্টরা সালতানাতবিরোধী মতবাদ জনপ্রিয় করতে থাকে। মোস্তফা কামাল ও তার অনুসারীরা প্রচার করতে থাকে যে দেশের অখণ্ডতা রুখতে জরাজীর্ণ খিলাফত ও সালতানাতের কেন্দ্রীয় কাঠামো ভেঙে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২২ সালের ১লা নভেম্বর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির অধিবেশনে দ্বৈত প্রশাসন নিয়ে দীর্ঘ ও উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা হয়। গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলিতে ইসলামপন্থী ও খিলাফতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল অনেক সদস্যও ছিল। তারা সালতানাতের বিলুপ্তির পক্ষে থাকলেও খিলাফত বিলুপ্তির বিপক্ষে ছিলেন না। উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে দ্বৈত প্রশাসনের অবসানকল্পে সালতানাতের উচ্ছেদ করতে হবে। তবে খিলাফতপন্থীদের তৎপরতায় খিলাফত বলবৎ থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে খিলাফত বলবৎ থাকলেও তা তুর্কী প্রজাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হবে অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক বা ক্ষমতাহীন নামমাত্র খলিফা থাকবেন। নতুন নিয়মানুযায়ী খলিফার ধর্মীয় ক্ষমতা ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক ও সামরিক ক্ষমতা ছিল না। ১৯২২ সালে ১লা নভেম্বর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদকে পদচ্যুত করে।
এরপর ১৯২২ সালের ১৭ নভেম্বর পদচ্যুত সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদ বৃটিশ নৌবহরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এভাবে ৬২৩ বছরের (১২৯৯ থেকে ১৯২২) অটোমান সালতানাতের সমাপ্তি ঘটিয়ে ষষ্ঠ মোহাম্মদের ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল মজিদকে নামমাত্র খলিফা করা হয়।
২. খিলাফতের বিলুপ্তি
১৯২২ সালে সালতানাতের পতনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পর কামালের সামনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলো বাধা ছিল। তার মধ্যে সর্ববৃহৎ বাধা ছিল প্রায় তেরোশো বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক খিলাফতের উচ্ছেদ করা। ১৯২৪ সালে যখন কামাল খিলাফত বিলুপ্তির প্রস্তাব উত্থাপন করেন তখন তিনি বিরোধীদের থেকে তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির অনেক সদস্যই নিয়মতান্ত্রিক খিলাফতের পক্ষে ছিল।
খিলাফত একটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এর বিলুপ্তির প্রভাব শুধু তুরস্কে নয় সমস্ত সুন্নি বিশ্বে পরিলিক্ষত হয়। যখন খিলাফত বিলুপ্তির কথা হচ্ছিল তখন সুন্নি বিশ্বের অনেক দেশেই খিলাফত রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এমনকি ভারতবর্ষে খিলাফত রক্ষায় খিলাফত আন্দোলন হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারকে খিলাফত রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য খিলাফত আন্দোলনের নেতারা আহ্বান জানান।
এই সময় মোস্তফা কামাল ও খিলাফতবিরোধীরা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়ে। সমস্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাঁধা অতিক্রম করে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদকে পদচ্যুত করে খিলাফতের অবসান ঘটায়।
সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ বিতাড়িত হলে ৬৩২ সাল থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তেরোশো বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান খিলাফতের অবসান ঘটে। খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটালেও কামাল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার ঘোষণা দেন যদিও পরবর্তীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করা হয়েছিল।
সালতানাতের বিলুপ্তির পর অনেক তুর্কী মর্মাহত হয়, সমস্ত বিশ্বের সুন্নি মুসলিমরাও মর্মাহত হয়। খিলাফতের বিলুপ্তির পর অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমানের সমস্ত বংশধরদের তুরস্ক থেকে বিতাড়িত করা হয়।
৩. ইসলামী আইনের বিলুপ্তি
সালতানাত ও খিলাফতের বিলুপ্তির পর পশ্চিমা ধারা অব্যাহত রাখতে কামাল আইন ব্যবস্থার সংস্কার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি ধর্মীয় আইনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। কামালবাদের ধর্মনিরপক্ষেতার মানে পার্থিব ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী থেকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে পৃথকীকরণ।
তিনি ইসলামি আইনের স্থলে সুইস বেসামরিক আইন ও ইটালিয়ান ও জার্মান দণ্ডবিধি চালু করেন। প্রাচীন তুর্কী আইন পরিবর্তন করে বিশেষ করে পারিবারিক আইন বাতিল করে ১৯২৬ সালে সুইস সিভিল কোর্টের অনুসরণে নতুন আইন সংসদে পাশ হয়। সুইস আইন প্রবর্তনের ফলে শরিয়তের আইন বিলুপ্ত হয়। বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধনের ফলে উলামারা অকেজো হয়ে পড়ে। এর আগে বিচার সংক্রান্ত ও আইন সংক্রান্ত বিষয়ে উলেমাদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।
অটোমান আমলে বিচার কাজের জন্য নিজামী আদালত ও শরীয়ত কোর্ট ছিল। নতুন ব্যবস্থায় পূর্বের নিজামী আদালত ও শরীয়ত আদালত বাতিল ঘোষিত হয়। নতুন ব্যবস্থার ফলে স্বাভাবিকভাবেই একমাত্র যারা পশ্চিমা আইন অধ্যয়ন করেছে তারাই আইন ও বিচার সংক্রান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারতেন। এসময় ইসলামী আইন শিক্ষার সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ উল ইসলামের পদও বিলুপ্ত করা হয়। পূর্বেকার শরীয়ত ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং তার পরিবর্তে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। ১৯২৪ সালে খিলাফতের বিলুপ্তির সময় আতাতুর্ক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার যে প্রতিশ্রুতি দেন তা কয়েক বছর পর বাতিল করা হয়।
৪. নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও পর্দাপ্রথার বিলুপ্তি
কামাল আতাতুর্ককে তুর্কী নারী জাগরণের পুরোধা বলা হয়। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পায়। বিচার, চিকিৎসা, শিক্ষা, রাজনীতি এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই সময় উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য তুর্কী নারীদের পশ্চিমা দেশগুলোতেও প্রেরণ করা হতো। এ সময় নারী অধিকার রক্ষা সমিতিও গঠিত হয়।
১৯২৬ সালে গৃহীত নতুন সিভিল কোডে বহুবিবাহ বাতিল কর হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মহিলাদের সমান অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। গ্রেড স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পুরো শিক্ষাব্যবস্থা সমবায়িক হয়ে ওঠে। আতাতুর্ক মুক্তি সংগ্রামে নারীদের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছিল তার প্রশংসা করেন এবং তাদের অবদানের প্রশংসা করেন। তুর্কি সমাজে বিজ্ঞান, বৃত্তি এবং সংস্কৃতিতে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সম্ভবত তারা আরও এগিয়ে গেছে। তিনি মহিলাদেরকে পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার সহ পুরুষদের মতো একই সুযোগ দিয়েছিলেন। কামাল আতাতুর্ক নারী আন্দোলন, স্বাধিকার ও নতুন জীবনাদর্শে তুর্কী নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩৪ সালে তুর্কী নারীদের ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয়। ১৯৩৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে অনেক তুর্কী নারী অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়।
সর্বক্ষেত্রে আতাতুর্কের তুরস্ক হাজার হাজার সুশিক্ষিত নারীকে জন্ম দিয়েছেন যারা চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, লেখক, প্রশাসক, নির্বাহী এবং সৃজনশীল শিল্পী হিসাবে জাতীয় জীবনে অংশ নেন। এমনকি তুরস্কে বিশ্বের প্রথম সুপ্রিম কোর্টের নারী বিচারপতি হন।
৫. পুরুষদের পোশাক পরিবর্তন
তুরস্ককে ইউরোপীয়করণের ধারাবাহিকতায় কামাল আতাতুর্ক এবার পোশাকের দিকে নজর দেন। তিনি আধুনিক তুর্কী গঠনের জন্য ইউরোপীয় পোশাক পরিধানের উপর জোর দেন। আতাতুর্ক তার পশ্চিমাকরণ কর্মসূচির মধ্যে নিজেও ইউরোপীয় পোশাক পরিধান করেন এবং তুর্কীদেরকেও ইউরোপীয় পোশাক পরিধানের পরামর্শ দেন। আরবদের পোশাকের পরিবর্তে ইউরোপীয় স্টাইলের পোশাক পরিধানে জোর দেন আতাতুর্ক।
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ‘ফেজ’ টুপি ব্যবহার প্রচলন করেন। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে ফেজ টুপি অটোমানদের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়। আতাতুর্ক সালতানাত ও খিলাফতের বাহ্যিক প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত ফেজ টুপি পরিহার করে ইউরোপীয় হ্যাট ব্যবহার প্রচলন করেন। ১৯২৫ সালে হ্যাট ল সংসদে পাস হয় ফলে ফেজ ব্যবহারের বদলে ইউরোপীয় হ্যাট পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়।
জোব্বা ও পাগড়ী কেবলমাত্র ধর্মীয় ইমাম, খতিব ও মুফতিদের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে মুফতি, ইমাম ও খতিবদের মসজিদের বাইরে জোব্বা ও পাগড়ী ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পোশাক সংস্কার করতে গিয়ে কামাল ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হন। এই সময় তুরস্কের কয়েকটি শহরে ব্যাপক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। রক্ষণশীল মুসলিমরা ইউরোপীয় পোশাককে কুফরি ও ইসলামবিরোধী হিসেবে ঘোষণা করে অপরদিকে প্রগতিশীল মুসলিমরা ইউরোপীয় পোশাক পরিধান করতে আরম্ভ করে।
৬. ইসলামি পঞ্জিকার বিলুপ্তি
তুরস্কের পশ্চিমাকরণ বা ইউরোপীয়করণের বিপ্লবে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় ইসলামী বা হিজরি পঞ্জিকার বিলুপ্তির মাধ্যমে। কামালবাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তুরস্ককে একটি পশ্চিমা রাষ্ট্রে পরিণত করা। এ কারণে কামাল পাশা ইসলামের অনেক রীতিনীতি ও অনুশাসন পরিহার করেন।
যে বছর শরিয়তের আইন বিলুপ্ত করা হয় একই বছর ইসলামী পঞ্জিকার বিলুপ্তি ঘটিয়ে পশ্চিমা গ্রেগরি পঞ্জিকা প্রচলন করা হয়। তুরস্ককে পশ্চিমাকরণের ধারাবাহিকতায় ইসলামি পঞ্জিকার স্থলে গ্রেগরি পঞ্জিকার প্রচলন হয়। বহু বছর ধরে তুর্কীরা মুসলিম হিজরি পঞ্জিকা ও পশ্চিমা গ্রেগরি পঞ্জিকা উভয়ই ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু নতুন তুরস্কে রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু গ্রেগরি পঞ্জিকা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাচ্য থেকে দূরে সরতে ও পাশ্চাত্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
৭. ভাষা সংস্কার
কামালবাদীদের বিপ্লবাত্মক সংস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তুর্কী ভাষায় আরবি বর্ণমালার স্থলে ল্যাটিন বর্ণমালার আলোকে নতুন তুর্কী বর্ণমালা প্রবর্তন। একটি ভাষার নতুন বর্ণমালা প্রবর্তন গোটা ভাষাকেই পরিবর্তন করে ফেলার নামান্তর। যেকোনো সমাজে সবচেয়ে কঠিন পরিবর্তন সম্ভবত একটি ভাষা সংস্কার। পৃথিবীর বেশিরভাগ জাতি কখনো ভাষা সংস্কারের চেষ্টা করে না, আর যারা করে তারা সাধারণত ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে। আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম এবং সবচেয়ে বিস্তৃত ভাষা সংস্কার করেছে। ১৯২৮ সালে, যখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে এক হাজার বছর ধরে তুর্কিদের ব্যবহৃত আরবি লিপিকে লাতিন বর্ণমালা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা উচিত। তিনি বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসা করলেন: এটি কতক্ষণ সময় নেবে? তাদের বেশিরভাগ জবাব দিয়েছিলেন: কমপক্ষে পাঁচ বছর। আতাতুর্ক বললেন, আমরা এটি করবো পাঁচ মাসের মধ্যে।
আরবদের দিগ্বিজয়ের সময় অধিকাংশ বিজয়ী অঞ্চলে আরবি ভাষার ব্যবহার শুরু হয় এছাড়া ধর্মীয় কারণে অনেকেই আরবির প্রতি অনুরক্ত ছিল ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক ভাষা ও বর্ণমালার বিলুপ্তি ঘটেছে। অটোমানদের আমলে তুর্কী ভাষাকে অটোমান তুর্কী বা উসমানীয় তুর্কী (আরবি ও ফার্সি মিশ্রিত ভাষা) ভাষা বলা হতো। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তুর্কী ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা ছিল কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তুর্কীরা আরবি ভাষা ও বর্ণমালা গ্রহণ করে। ফলে বহু আরবি শব্দ তুর্কী ভাষায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে আরবি ও ফার্সি ভাষার চাপে তুর্কী ভাষার নিজস্বতা বিলুপ্তি হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়।
তুর্কী ভাষাকে বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে আতাতুর্কেরও অনেক আগে ভাষা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। আঠারো ও উনিশ শতকে তুর্কী নবজাগরণের সময় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ, আব্দুল হামিদ ও আব্দুল মজিদ তুর্কী ভাষার সংস্কারের চেষ্টা করেন। ১৮৬২ সালে অটোমান সায়েন্টিফিক সোসাইটি তুর্কী ভাষা সংস্কারের কথা বলেন। পরবর্তীতে নামিক পাশা ল্যাটিন বর্ণমালায় তুর্কী ভাষা ব্যবহারের কথা বলেন। উনিশ শতকে তানজিমাত আন্দোলনের সময় ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নব্য তুর্কী আন্দোলনের সময় তুর্কী ভাষা সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়।
অবশেষে ১৯২৮ সালে কামাল পাশার নেতৃত্বে সংসদে তুর্কী ভাষা সংস্কারের বিল উত্থাপিত হয় এবং গৃহীত হয়। এর ফলে তুর্কী ভাষায় আরবি বর্ণমালা নিষিদ্ধ হয় এবং তুর্কী বর্ণমালা স্বীকৃতি লাভ করে। এছাড়া তুর্কী ভাষায় আজান দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
৮. উপাধি বিলুপ্তি
মোস্তফা কামালের সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অটোমান সাম্রাজ্য কর্তৃক প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাধি বিলুপ্ত করে পারিবারিক পদবি ব্যবহার প্রচলন করেন। অটোমান রীতি অনুযায়ী তুর্কী পুরুষদের বে, পাশা, এফেন্দি এবং তুর্কী নারীদের হানুম ইত্যাদি উপাধি দেওয়া হতো। পরবর্তীতে তারা উক্ত উপাধি দ্বারাই পরিচিত হতো।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে বংশপরম্পরায় এই উপাধিগুলো পারিবারিক পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এর ফলে সমগ্র তুরস্কে এই উপাধিপ্রাপ্ত অসংখ্য মানুষ ছিলেন। একই নামে বহু ব্যক্তি থাকায় তাদেরকে তাদের বাসস্থান অনুযায়ী চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু এ ধরনের নাম ছিল বিভ্রান্তিকর। এছাড়া আতাতুর্কের মতে বে, পাশা ইত্যাদি উপাধি ছিল জনগণবাদ নীতির বিরোধী। এই উপাধিগুলোর ফলে সকলের অধিকার সমান প্রতিষ্ঠিত হয় না।
কামালবাদিদের মতে অটোমান সাম্রাজ্যের শেষদিকে এই উপাধিগুলো মিথ্যা শ্রেণিবিভেদ সৃষ্টি করেছিল। এছাড়া পিতা প্রপিতামহের উপাধি সন্তান সন্ততিদের উপর বর্তায় না। কিন্তু সকলেই পূর্বপুরুষদের উপাধি ব্যবহার করায় পারিবারিক পদবিগুলো বিলুপ্তপ্রায় ছিল। এই অসুবিধা দূর করার জন্য প্রত্যেক তুর্কীকে পারিবারিক উপাধি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৪ সালে তুরস্কে আইন প্রণয়ন করা হয়। অনেককেই খাঁটি তুর্কী নাম গ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়। মুস্তাফা কামাল পাশা তার পাশা উপাধি ত্যাগ করেন এবং আতাতুর্ক উপাধি গ্রহণ করেন এবং একই সাথে ইসমত পাশাও তার পাশা উপাধি ত্যাগ করেন এবং তাকে ইনোনু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৯. সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তন
পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্ম ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের অভিন্ন একটি উদ্দেশ্য আছে, সপ্তাহে একদিন বিশ্রামের জন্য রাখা। ইহুদিদের শনিবার, খ্রিস্টানদের রবিবার এবং মুসলিমদের শুক্রবার বিশ্রামের দিন। মুসলিম হিসেবে তুর্কীদের বিশ্রামের দিন ছিল শুক্রবার।
পাশ্চাত্যের সবগুলো জাতির বিশ্রামের দিন ছিল রবিবার। তুর্কীদের পাশ্চাত্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষার ফলে ১৯৩৫ সালে রবিবারকে ছুটির দিন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এছাড়া শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে নিলে অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্ভাবনা দেখানো হয়। বলা হয় যে তুরস্কের অধিকাংশ ব্যবসা ইউরোপের সাথে যারা রবিবারে ব্যবসা বন্ধ রাখে। তুরস্ক যদি শুক্রবারে ছুটির দিন হিসেবে কাজ বন্ধ রাখে তবে সপ্তাহে তিনদিন ক্ষতি হয় কারণ মাঝখানে পড়ে শনিবারও বাদ যায়। তুরস্ক এই ক্ষতি থেকে বাঁচার অজুহাতে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারের বদলে রবিবার ধার্য করা হয়।
১০. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংস্কার
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। উসমানীয় আমলে মাদ্রাসা ভিত্তিতে ধর্মীয় শিক্ষার প্রচলন ছিল। সব মসজিদের সাথে সাধারণত একটি বিদ্যালয় থাকত যাকে সাধারণত মক্তব বলা হয়। মক্তবগুলোতে সাধারণত কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ ও ইসলামের বিভিন্ন রীতিনীতি পালন করার শিক্ষা দেওয়া হতো।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তানজিমাত আন্দোলনের সময় থেকে তুরস্কে ইউরোপীয় পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠে। তবে আলেম সম্প্রদায়ের বিরোধিতায় ইউরোপীয় পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তুরস্কে ইউরোপীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। তানজিমাত আন্দোলনের সময় ও নব্য তুর্কীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আধুনিক স্কুলসমূহ নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন ও অবৈতনিক হিসেবে ঘোষণা করে।
পেন্সিল বা ছক হাতে রেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্কুল কক্ষ, পার্ক এবং অন্যান্য জায়গায় বাচ্চাদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। তুরস্কে ১৯২৩ সালে যেখানে সাক্ষরতার হার ৯ শতাংশেরও কম ছিল তা ১৯৩৩ সালে ৩৩ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। নতুন তুরস্কে সাহিত্য, শিল্পকলা, সঙ্গীত, নৃত্য চর্চায়ও উন্নতি ঘটে।
এই সময় তুরস্কে প্রচুর জাদুঘর ও ভাস্কর্য গড়ে উঠে। ভাস্কর্যশিল্পে কামাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। ১৯২৩ সালে ইস্তাম্বুলে প্রথম সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তানজিমাতের সময়ই তুরস্কে সাংস্কৃতিক বিপ্লব গড়ে উঠে, কামাল আতাতুর্ক তাকে পূর্ণতা দিয়েছে। মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্ককে ইউরোপীয় করার জন্য একদিকে যেমন তুর্কী জাতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেন তেমনি পাশ্চাত্য প্রভাবে তুরস্কে ভাস্কর্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রচলন ঘটে। তুরস্ক প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার কয়েকবছর আগেই তুরস্কে চারু ও কারুকলা ইন্সটিটিউট গঠিত হয়েছিল।
মোস্তফা কামাল ১৯৩৮ সালে নিজের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তুরস্কে এরকম ছোট বড় অসংখ্য সংস্কার করে তুরস্ককে একটি পশ্চিমা রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তাকে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় এবং তাকে আতাতুর্ক (তুর্কী জাতির পিতা) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তৎকালিন তুরস্কের সার্বিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে মাত্র দেড় দশকে আতাতুর্ক তুরস্কের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তা অকল্পনীয় ছিল।