সম্পদের উপর নিজের কর্তৃত্বমূলক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ মানুষের মধ্যে প্রবল। সাধারণের সম্পদের উপর কর্তৃত্বমূলক নিয়ন্ত্রণ মানুষ তিনভাবে অর্জন করতে পারে। মানুষ রাজনৈতিক কর্তৃত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে, দায়িত্বশীলদের অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে সহিংসতা তৈরির মাধ্যমেও। সাধারণভাবে, যেসব দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান ভালো, সেসব দেশে সামষ্টিক সম্পদগুলোর কর্তৃত্ব নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে, সংঘাতের মাধ্যমে সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির দেশগুলোতে।
মানবসভ্যতার সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত শাসনতন্ত্র রাজতন্ত্র, একজন ব্যক্তি তার আশেপাশে থাকা অভিজাতদের নিয়ে শাসনতন্ত্র পরিচালনা করতেন, রক্ষা করতেন এই অভিজাত শ্রেণির রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থ। এই ধরনের রাষ্ট্রকাঠামোগুলো সাধারণভাবে সংঘাত তৈরিতে পারদর্শী হতো, সংঘাত তৈরিতে পারদর্শীদের সামরিক আর বেসামরিক আমলাতন্ত্রে নিয়োগ দেওয়া হতো। ফলে, রাষ্ট্র সংঘাত তৈরিতে মনোপলি উপভোগ করত, সংঘাতের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে রাজস্ব আদায় করত, অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করত অভিজাত শ্রেণি। প্রজাদের নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগও ছিলো সীমিত। গত দুই শতাব্দীতে পৃথিবীতে শাসনতন্ত্র হিসেবে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে, শুরু হয়েছে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা।
কিন্তু, সব জায়গাতে গণতন্ত্র একভাবে কাজ করে না। প্রতিটি দেশেরই গণতান্ত্রিক কাঠামোর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে, আছে অনন্য ক্ষমতার কাঠামো। রাজতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আসলেও অনেক দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান সংকীর্ণ, রাজতন্ত্রের মতোই রয়ে গেছে অভিজাততন্ত্রের উপস্থিতি, রয়ে গেছে সংঘাতের ব্যবহার। সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অভিজাত শ্রেণি সংঘাত তৈরিতে জাতিগত পরিচয় ব্যবহার করে, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক কাঠামোকে কাজে লাগায়, নৃগোষ্ঠীর পরিচয় কাজে লাগায়, কাজে লাগায় ধর্মীয় পরিচয়ও। অর্থনৈতিক স্বার্থের জায়গা থেকে তৈরি হওয়া সংঘাতগুলো তখন বাইরে রাজনৈতিক সংঘাতের রূপ ধারণ করে, জাতিগত উন্মাদনায় উদ্ধুদ্ধ করে সাধারণ মানুষদের।
গত কয়েক দশকের মধ্যেই পৃথিবির বিভিন্ন জায়গাতে এই ধরনের জাতিগত সংঘাত দেখা গেছে। রুয়ান্ডাতে সংখ্যালঘু তুতসিদের উপর জাতিগত হামলা চালায় সংখ্যাগুরু হুতুরা, ১০০ দিনের মধ্যে তারা হত্যা করে প্রায় আট লাখ তুতসিকে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত বিভাজন শুরু হয় রুয়ান্ডাতে বেলজিয়ামের উপনিবেশ শাসনের সময়, তুতসিরা উপনিবেশদের কাছ থেকে দীর্ঘসময় ধরে পেয়েছিল বিশেষ রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সুবিধা, আমলাতন্ত্রে ছিল তাদের প্রাধান্য, তুতসিদের প্রাধান্য ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতেও। স্বার্থের এই দ্বন্দ্ব স্বাভাবিকভাবেই তাই বিভাজন তৈরি করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে, এই বিভাজন সময়ের সাথে স্থায়ী রূপ নেয়। স্বাধীনতার পর হুতুরা বঞ্চিত করতে শুরু করে তুতসিদের, বিভিন্ন সময়ে চালায় রাজনৈতিক নিপীড়ন। এরকমই এক প্রেক্ষাপটে খুন হন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট জুভেলান হাবিয়ারিমানা, যিনি উঠে এসেছিলেন হুতু সম্প্রদায় থেকে। প্রেসিডেন্টের হত্যা কে করেছে এই পরিষ্কার না হলেও, জাতিগত সংঘাতে মেতে ওঠে হুতুরা, পরবর্তী দিনগুলোতে তুতসিদের উপর চলে শতাব্দীর বর্বরতম এক গণহত্যা।
একই ধরনের চিত্র দেখা যাবে যুগোশ্লোভ প্রজাতন্ত্র ভাঙার ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলেও। ১৯৯১ সালে যুগোশ্লোভ প্রজাতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া আর মেসিডোনিয়া। ১৯৯২ সালের এপ্রিলে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসনিয়ার মুসলমানরা। উগ্র জাতীয়তাবাদী সার্বরা বৃহত্তর সার্বিয়া গঠন করতে জাতিগত নৃশংসতা চালায় বসনিয়ার মুসলমানদের উপর, হত্যা করে এক লাখেরও বেশি মানুষকে।
আমাদের দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার জাতিগত সংঘাতের এক আদর্শ দৃষ্টান্ত। সুদূর অতীত থেকে এই অঞ্চলের জাতিগুলোর মধ্যে সম্পদ আর জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে জাতিগত সংঘাত, চলছে সাম্প্রদায়িক উগ্রতার প্রকাশও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই মায়ানমারে চলছে গৃহযুদ্ধ, জাতিগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই গৃহযুদ্ধ চলছে সাত দশকের বেশি সময় ধরে।
জাতিগত মেলবন্ধনের ধারণা
আধুনিক যুগে জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে একক জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে। একক জাতীয়তাবাদের মধ্যে আবার সম্মিলন ঘটেছে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীর। বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় উপনিবেশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গড়ে ওঠা আফ্রিকা মহাদেশের জাতিরাষ্ট্রগুলোতে আবার রয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপস্থিতি, বিভিন্ন জাতীয়তাবাদের মানুষের পাশাপাশি গোষ্ঠীতন্ত্রের উপস্থিতি রয়েছে আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতেও। সময়ের সাথে এই বিভাজনগুলো বিভিন্নভাবে সংঘাতে জড়িয়েছে, যেমনটি ঘটেছে রুয়ান্ডা, মায়ানমারের মতো দেশগুলোতে। প্রতিটি সংঘাতই বয়ে নিয়ে আসে হতাহতের ঘটনা, নিয়ে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ।
সংঘাতের ঘটনা ঘটালেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বসনিয়ার মতো স্বাধীনতা অর্জন করে নতুন জাতিরাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হয় না। রুয়ান্ডাতে যেমন এখনও একসাথেই বসবাস করতে হচ্ছে হুতু আর তুতসিদের, মায়ানমারের ভঙ্গুর ফেডারেল কাঠামো থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনি কারেন আর শানরা, বের হতে পারেনি আরাকানের নাগরিকরাও। একই রাষ্ট্রে বাস করতে হওয়ায়, সংঘাত থেমে যাওয়ার পরবর্তীতে তাই প্রয়োজন হয় জাতিগত মেলবন্ধনের (Reconciliation)।
জাতিগত মেলবন্ধন বলতে সংঘাতে লিপ্ত থাকা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সঠিক সম্পর্ক তৈরির প্রক্রিয়াকে বোঝায়, বিভাজিত সমাজে একক পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে আবার একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়ার এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অপ্রয়োজনীয় সংঘাতগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থগ্রুপ মেলবন্ধনকে উৎসাহিত করে, উৎসাহ আসে সংঘাত থেকে দূরে থাকতে চাওয়া সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে থেকেও।
জাতিগত মেলবন্ধনের তাত্ত্বিক কাঠামো
সংঘাত-উত্তর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে চলে জাতিগত মেলবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়া। যেমন, গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর রুয়ান্ডাতে শুরু হয় হুতু আর তুতসিদের মধ্যে জাতিগত মেলবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়া, একই প্রক্রিয়া একসময় চলেছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী নাইজেরিয়াতেও। আবার, মায়ানমারে যদি চলমান গৃহযুদ্ধের কোনো রাজনৈতিক সমাধান আসে, সমাপ্ত হয় গৃহযুদ্ধ, তাহলে সেখানেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু করতে হবে জাতিগত মেলবন্ধনের প্রক্রিয়া। অনেকগুলো তাত্ত্বিক কাঠামো সামনে রেখে নীতি নির্ধারণ করতে হয় জাতিগত মেলবন্ধনের প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে, নিতে হয় ব্যবহারিক উদ্যোগ।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
প্রতিটি সংঘাতই বয়ে আনে সীমাহীন দুর্ভোগ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিটি পক্ষই। সংঘাত পরবর্তী সময়ে জাতিগত মেলবন্ধন তৈরিতে তাই প্রয়োজন সংঘাতকালীন সময়ে বিপরীত গোষ্ঠীর মানুষেরা কোন ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন সেগুলো জানা, পারস্পরিক অভিজ্ঞতাগুলো শোনা। এর মাধ্যমে বিপরীত গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সহমর্মিতা তৈরি হয়, আসে মানবিক সমঝোতা। এই মানবিক সম্পর্ক তৈরির জন্য প্রয়োজন একজন আরেকজনের সংস্পর্শে আসা, সহাবস্থানের মতো পরিবেশ তৈরি হওয়া।
যদিও শুধুমাত্র সহাবস্থানের মাধ্যমেই জাতিগত মেলবন্ধন অর্জন করা সম্ভব না, সম্ভব না কেবল অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাতকে রুখে দেওয়া, তবে পারস্পরিক জানাশোনা আর বোঝাপড়া রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তনে কাজ করে, আবার বাড়ে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সংঘাত সমাধানের সুযোগ। তবে সহাবস্থানের দোহাই দিয়ে অনেক সময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সংখ্যাগুরুদের দ্বারা। জিম্বাবুয়েতে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে পরিচালিত ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ এরকমই একটি অবস্থার তৈরি করেছিল, ইউরোপীয় আর আফ্রিকানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ বাড়িয়েছিল জমির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে।
প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো
স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রগুলোতে সাধারণত অধিকাংশ জাতিগত সংঘাতের সূচনা হয় রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যকে কেন্দ্র করে। একজন নাগরিক তার সকল পরিচয়ের উর্ধ্বে রাষ্ট্রকাঠামোতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার রাখেন, নাগরিক অধিকার উপভোগের নিশ্চয়তা আর আইনের ন্যায্য আশ্রয় চাইতে পারেন। সাধারণভাবে, জাতিগত সংঘাতপ্রবণ রাষ্ট্রগুলোতে সাধারণত একজন নাগরিক তার বর্ণ, জন্মস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থান, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে বৈষম্যের স্বীকার হন, বৈষম্যের স্বীকার হতে পারেন জাতিগত পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা ঐতিহাসিক শত্রুতাকে কেন্দ্র করেও। রুয়ান্ডাতে হুতু আর তুতসিদের সংঘাত যেমন গড়ে উঠেছে বেলজিয়ামের উপনিবেশ শাসনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যকে কেন্দ্র করে, তুতসিদের আনুগত্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পাওয়াকে কেন্দ্র করে।
জাতিগত সংঘাত পরবর্তী মেলবন্ধন প্রক্রিয়ায় তাই প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের অবসানের ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক নাগরিককে সমান রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে, দিতে হবে নাগরিক অধিকার। চাকরির প্রতিযোগিতায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বন্ধ করতে হবে যেকোনো ধরনের বৈষম্যের চর্চার। শিক্ষার সমান সুযোগ দিতে হবে, রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সুবিধাতে আনতে হবে সাম্যতা, নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক ন্যায়বিচার।
পারস্পরিক বিশ্বাস তৈরি
অনেক সময়ই দেখা যায়, সংঘাত পরবর্তী সময়ে জাতিগত মেলবন্ধনের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও, পরবর্তী সংঘাতের আশঙ্কায় অনেকেই অস্ত্র আর সংঘাত তৈরির অন্যান্য উপাদান জমা দিতে চান না বা নষ্ট করে ফেলতে চান না। এই কাজ সংঘাতপ্রবণ গোষ্ঠীর মানুষেরা সাধারণত অপর পক্ষের প্রতি অবিশ্বাসের জায়গা থেকে করেন। যেমন, রুয়ান্ডাতে গণহত্যা পরবর্তী সময়ে হুতুদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছে তুতসিরা, শুরু হয়েছিল জাতিগত মেলবন্ধনের প্রক্রিয়া। কিন্তু, ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কায় তুতসিরা অস্ত্র এখনও নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছে, জমা দেয়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে।
তবে, এভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের উপস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে থাকলে, পরবর্তীতে তা সংঘাতের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংঘাত দ্রুত বড় আকার ধারণ করে।
পারস্পরিক স্বীকৃতি
প্রায় প্রতিটি জাতিগত সংঘাতেই মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে, আধুনিককালের সভ্য মানুষের মুখোশ খুলে বেরিয়ে আসে মানুষের আদিম বর্বর রূপ। প্রতিটি জাতিগত সংঘাতেই ঘোটে হতাহতের ঘটনা, বেসামরিক নাগরিকের উপর নিপীড়ন আর হত্যার ঘটনা, নারী নির্যাতনের ঘটনা। সংঘাতে প্রিয়জন হারায় বহু মানুষ, হারায় জীবন আর জীবিকার অবলম্বন।
সংঘাত পরবর্তী সময়ে জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জাতিগত মেলবন্ধন তৈরির জন্য তাই প্রয়োজন পরস্পরের অভিজ্ঞতা আর নিজের ভুলের স্বীকৃতি দেওয়া, সংঘাতের মধ্যে নিজেদের করা ভুলগুলোর দায় নেয়া।
একক জাতীয়তাবাদ
সাধারণভাবে যেকোনো গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নাগরিকেরা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক গ্রুপ তৈরি করতে পারেন, একই রাজনৈতিক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে পারেন রাজনৈতিক দল। কিন্তু, যখন এই রাজনৈতিক গ্রুপের পরিচয় বা রাজনৈতিক দলের আদর্শ রাষ্ট্রীয় পরিচয়কে ছাপিয়ে যায়, তখনই সাধারণত বিরাজমান অন্যান্য গ্রুপের সাথে সংঘাত তৈরি হয়, তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। সংঘাত পরবর্তী সময়ে তাই জাতিগত মেলবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি কাজ হলো, এসব রাজনৈতিক গ্রুপ বা দলের সদস্যদের আবার একই রাজনৈতিক পরিচয়ের মধ্যে নিয়ে আসা, রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদকে মুখ্য করে তোলা।
সম্প্রতি সংঘাত চলছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়াতে, ওরোমিয়া জাতিগোষ্ঠীর সাথে টাইগ্রে জনগোষ্ঠীর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছে জাতিগত সংঘাতে। টাইগ্রেদের আবার জাতিগত মেলবন্ধনের মাধ্যমে মূলধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে হলে, ইথিওপিয়ান জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ফিরতে হবে।