ধাঁধা বা হেঁয়ালি কে না পছন্দ করে? আর যদি সেটা হয় গাণিতিক সমস্যার ধাঁধা? ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায় সময়ই বিভিন্ন গাণিতিক ধাঁধা দেখা যায়, যেগুলো দেখতে খুবই সহজ মনে হয়, কিন্তু অনেকেই সেগুলোর উত্তর ভুল করে বসে। আর সে কারণেই ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধুদের সাথে এই ধাঁধাগুলো শেয়ার করে, দেখার জন্য যে তাদের বন্ধুদের মধ্যে কয়জন সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারছে। আর এভাবেই এই ধাঁধাগুলো এক সময় ভাইরাল হয়ে যায়। চলুন দেখে নিই এরকম কিছু গাণিতিক বা যুক্তিভিত্তিক ধাঁধা এবং তাদের সমাধান। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনি যদি গণিতে দক্ষ না হন, তাহলেও সমস্যা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো সমাধানের জন্য সত্যিকার গাণিতিক দক্ষতার চেয়ে বরং উপস্থিত বুদ্ধি এবং ভিন্নভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাই গুরুত্বপূর্ণ।
দুইটি সমাধান বিশিষ্ট গাণিতিক ধাঁধা
good luck to somebody
Posted by Tomasina DiMatteo on 13 जुलै 2017
এই গাণিতিক ধাঁধাটি তৈরি করেন Go Tumble নামে একজন ব্যবহারকারী, যিনি এটি প্রথমে Wikr-এ শেয়ার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় এবং লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী তা শেয়ার করতে থাকে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলিমেইলও এই ধাঁধাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং এর সমাধান উল্লেখ করে। ধাঁধাটির প্রস্তুতকারকরা শুরুতেই বলে দিয়েছেন, প্রচলিত গাণিতিক পদ্ধতিতে এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর জন্য ‘আউট অফ দ্য বক্স’ চিন্তা করতে হবে। ধাঁধাটির দুটি সমাধান আছে। যদিও প্রস্তুতকারকেরা দাবি করেছেন, প্রতি হাজারে মাত্র একজন এই ধাঁধাটির দুটি উত্তরই সমাধান করতে পারে, কিন্তু আপনার জন্য গাণিতিক ধাঁধা নিয়ে নাড়াচাড়া করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই এর সমাধান বের করতে পারবেন।
প্রথম পদ্ধতিতে আপনাকে প্রতিটি সমীকরণের প্রকৃত যোগফলের সাথে পূর্ববর্তী সমীকরণের উত্তরটি যোগ করতে হবে। যেমন, দ্বিতীয় সমীকারণের প্রকৃত উত্তর ২+৫=৭, কিন্তু এর সাথে পূর্ববর্তী সমীকরণের উত্তর ৫ যোগ করলে হয় ৭+৫=১২। তাই এর উত্তর ১২। এ পদ্ধতিতে ৮+১১=১৯, এর সাথে পূর্ববর্তী ২১ যোগ করে চূড়ান্ত উত্তর পাওয়া যাবে ১৯+২১=৪০।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, প্রথমে সমীকরণের দ্বিতীয় রাশিটিকে প্রথম রাশি দ্বারা গুণ করে, এরপর সংখ্যা দুটিকে যোগ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে প্রথম সমীকরণটি হবে ১+(১×৪)=৫। একইভাবে দ্বিতীয় সমীকরণটি হবে ২+(২×৫)=১২। সুতরাং এই পদ্ধতিতে চূড়ান্ত উত্তর হবে, ৮+(৮×১১)=৯৬।
সবচেয়ে জটিল ‘সরল’ অংক
এটি কোনো ধাঁধা না, এটি সত্যি সত্যিই একটি গাণিতিক সমস্যা। সরল অংক করার সময় আমরা ছোটবেলায় সবাই এই ধরনের সমস্যায় পড়েছি। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, অংকটির সঠিক উত্তর ১। কারণ এখানে ৬ কে ভাগ চিহ্নের ডানে অবস্থিত ২×(১+২) = ৬ দ্বারা ভাগ করলে ১ই হওয়ার কথা। কিন্তু সরল অংকের প্রকৃত নিয়ম (BODMAS) অনুযায়ী, ভাগের কাজ গুণের আগে করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রথমে বন্ধনীর (১+২)=৩ বের করার পর ৬ কে ২ দিয়ে ভাগ করতে হবে। এরপর প্রাপ্ত ভাগফল ৩ কে পূর্ববর্তী (১+২) = ৩ দ্বারা গুণ করলেই সঠিক উত্তর ৯ পাওয়া যাবে।
বডমাসের এই সহজ নিয়মটি যে এখনও অনেকের কাছেই জটিল মনে হয়, তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টের নিচে মানুষের হাজার হাজার কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়। এটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এই সহজ অংকটির একটি ভিডিও ইউটিউবেও পাঁচ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছিল।
বিকল্প সঠিক উত্তর
একটি গাণিতিক সমস্যা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু অনেক শিক্ষক আছেন, যারা হুবহু নিজের শেখানো নিয়মের মতো না হলে উত্তর কেটে দেন। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এই উত্তরপত্রটি আসলে কোনো স্কুলের, নাকি শুধু মজা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এটি নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের এই ধরনের মানসিকতার সবচেয়ে পরিষ্কার উদাহরণ।
এখানে প্রথম প্রশ্নে ৫×৩ কে যোগের মাধ্যমে সমাধান করতে বলা হয়েছে। প্রশ্নটির উত্তরে ৫-কে তিনবার, অথবা ৩কে পাঁচবার যোগ করা যেতে পারে। দুটোই এক্ষেত্রে সঠিক সমাধান। কিন্তু ছাত্রটি ৫-কে তিনবার যোগ করায় শিক্ষক তা কেটে দিয়েছেন এবং ৩-কে পাঁচবার যোগ করে সেটাকে সঠিক উত্তর হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও অনরূপ একটি প্রশ্ন। বিজনেস ইনসাইডার ম্যাগাজিনে দুটো সমস্যা এবং তাদের সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের পঞ্চম শ্রেণীর গাণিতিক সমস্যা
এই যুক্তিভিত্তিক ধাঁধাটি প্রথম ফেসবুকে শেয়ার করেন সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন উপস্থাপক কেনেথ কং। তার পোস্টটি সে সময় অন্তত ৬,০০০ বার শেয়ার হয়েছিল, এবং পরে অন্যান্য অ্যাকাউন্ট থেকেও তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কেনেথ অবশ্য পরে তার পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। ধাঁধাটি এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, কেনেথ অত্যন্ত জটিল এই ধাঁধাটিকে সিঙ্গাপুরের পঞ্চম শ্রেণীর গণিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যদিও বাস্তবে এটি ছিল ‘সিঙ্গাপুর এশিয়ান স্কুলস ম্যাথ অলিম্পিয়াড’ এর একটি প্রশ্ন।
ধাঁধাটিতে শেরিল তার বন্ধু আলবার্ট এবং বার্নার্ডকে তার জন্মদিন সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন সূত্র দেয়। সে আলবার্টকে শুধু মাসের নাম, আর বার্নার্ডকে শুধু তারিখ এবং উভয়কেই সম্ভাব্য ১০টি সমন্বয় সম্পর্কে অবহিত করে। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটি এই সমস্যাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে, নির্মূল পদ্ধতিতে শেরিলের জন্মদিন বের হয় ১৬ জুলাই।
দ্বিতীয় শ্রেণীর জটিল যোগ-বিয়োগ
একটি ট্রেন থেকে ১৯ জন যাত্রী নেমে গেল এবং ১৭ জন যাত্রী উঠল। যদি বর্তমান যাত্রীর সংখ্যা ৬৩ হয়, তাহলে প্রথমে ট্রেনে কতজন যাত্রী ছিল? ইংল্যান্ডের এক দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের মা এই ছবিটা প্রথমে টুইট করেছিলেন, পরবর্তীতে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় এবং হাফিংটন পোস্টও এটা নিয়ে রিপোর্ট করে। উত্তরটি খুবই সহজ। উল্টো দিক থেকে হিসেব করলেই দেখা যায় যে, ট্রেনটিতে শুরুতে (৬৩-১৭)+১৯ = ৬৫ জন যাত্রী ছিল। অবশ্য স্বীকার করতেই হবে, অংকটি দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য একটু কঠিন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট থেকে দেখা যায়, শুধু দ্বিতীয় শ্রেণী না, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ফেসবুক এবং টুইটার ব্যবহারকারীও এর উত্তর ভুল করে।
যে সমস্যা শিশুরা দ্রুত সমাধান করে
বলা হয়ে থাকে, বড়দের চেয়ে ছোটরা এই গাণিতিক সমস্যাটির সমাধান তাড়াতাড়ি করতে পারে। কারণ, বাস্তবে এটি কোনো গাণিতিক সমস্যা না, খুবই সহজ একটি ধাঁধা। বড়রা যখন সংখ্যাগুলোর ধারাবাহিকতা, মধ্যকার ব্যবধান নিয়ে জটিল হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত থাকে, ততক্ষণে ছোটদের কেউ প্রশ্নটি নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করে, প্রশ্নটিকে আসলে উল্টো দিক থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিপরীত থেকে থেকে তাকালে দেখা যায়, এটি আসলে একটি পার্কিং লট, যেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানগুলোর ক্রম ৮৬ থেকে ৯১ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই সঠিক উত্তরটি হবে ৮৭।
অবশিষ্ট ১ টাকার বিভ্রান্তি
মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি চমৎকার একটি ধাঁধা। ৯৭ টাকার একটি ব্যাগ কেনার জন্য আপনি মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা এবং বাবার কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নিলেন। ব্যাগটি কেনার পর অবশিষ্ট রইল ৩ টাকা। সেখান থেকে ১ টাকা বাবাকে এবং ১ টাকা মাকে ফেরত দেওয়ার পরে বাকি রইল আরও ১ টাকা। এবার হিসেব করুন, আপনি বাবার কাছে দেনা আছেন ৪৯ টাকা, মায়ের কাছে দেনা আছেন ৪৯ টাকা, আর আপনার কাছে আছে ১ টাকা। মোট ৪৯+৪৯+১ = ৯৮ টাকা। তাহলে বাকি এক ১ কোথায় গেল?
উত্তর হচ্ছে, এই ১ টাকা আসলে কোথাও যায়নি। এখানে প্রশ্নটাকেই ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে কার হাতে কত টাকা আছে, সেটি হিসেব করলেই দেখা যাবে কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু প্রশ্নটিতে ঋণের সাথে জমা টাকা একত্রে যোগ করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
যে ধাঁধার উত্তর অধিকাংশ মেধাবীই দিতে পারে না!
এই ধাঁধাটিও ইন্টারনেটে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে, অনেক মেধাবীরাও এর উত্তর ভুল করে। প্রশ্নটি হচ্ছে, যদি একটি ব্যাট এবং একটি বলের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা হয়, এবং ব্যাটটির দাম যদি বলটির দামের চেয়ে ১ টাকা বেশি হয়, তাহলে বলটির দাম কত? খুবই সহজ প্রশ্ন। অধিকাংশ মানুষই প্রশ্নটি শোনার সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দেয়, ১০ পয়সা। কিন্তু উত্তরটি ভুল। সঠিক উত্তরটি হচ্ছে, বলের দাম ৫ পয়সা। তাহলেই কেবল ব্যাটের দাম তার চেয়ে ১ টাকা বেশি, অর্থাৎ ১ টাকা ৫ পয়সা হলে মোট দাম ১ টাকা ১০ পয়সা হবে। যেকোনো বিষয় যত সহজ এবং নিশ্চিত বলেই মনে হোক না কেন, সে বিষয়ে কিছু বলার বা করার আগে যে একটু ভেবে নেওয়া উচিৎ, এই ধাঁধাটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
ফিচার ইমেজ- freebies.com