ইন্টারনেটের কল্যাণে লেবাননের বৈরুত বিস্ফোরণের চিত্র দেখেননি এমন মানুষ কমই আছে। ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
কিন্তু এত বড় বিস্ফোরণ ঘটলো কীভাবে? দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই এ বিস্ফোরণের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দায়ী করেছেন। বৈরুত বন্দরে অনিরাপদভাবে মজুদ করে রাখা ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন লেগেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা। বিস্ফোরণের এ ঘটনার পর দেশব্যাপী আন্দোলনে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবকে পদত্যাগও করতে হয়েছে।
এত বড় একটি বিস্ফোরণের জন্য দায়ী অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী, কেন এটি এত বিস্ফোরক ক্ষমতাসম্পন্ন, কীভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত আর এ ধরনের বিস্ফোরণের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য করণীয়ই বা কী সে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা থাকবে এ লেখায়।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী?
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হচ্ছে একটি রাসায়নিক পদার্থ যার সংকেত NH₄NO₃। অত্যন্ত দ্রবণীয় একটি পদার্থ। ১৬৫৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ জোহান রুডল্ফ গ্লবার (১৬০৪-৬৮) প্রথম কৃত্রিমভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তৈরি করেন। অ্যামোনিয়ার সাথে নাইট্রিক এসিড যোগ করে এটি তৈরি করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাস এবং নাইট্রিক এসিডের জলীয় দ্রবণ পাইপের ভেতর দিয়ে চালনা করে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট প্রস্তুত করা হয়। এক্ষেত্রে যে বিক্রিয়া ঘটে সেটি হচ্ছে-
NH3 + HNO3 → NH4NO3
বিক্রিয়া চলাকালে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয়। এজন্য পাইপসহ অন্যান্য উপকরণ অনেক শক্তিশালী হতে হয়।
সাধারণত কৃষিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বিস্ফোরক হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু শুরুর দিকে এটি বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার হতো না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একে প্রথম বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। যুদ্ধের সময় টিএনটি ডিনামাইটের সাথে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মিশিয়ে সৈনিকেরা সস্তায় বোমা তৈরি করতো, যা ডিনামাইটের চেয়ে অনেক বড় বিস্ফোরণ ঘটাতো।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে নিজে জ্বলতে পারে না। কিন্তু এই যৌগটি বিস্ফোরণে অবদান রাখতে পারে, কারণ এটি এমন একটি রাসায়নিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যা অক্সিডাইজার (জারক) হিসেবে পরিচিত। যখন কোনো কিছু জ্বলে তখন তার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে অক্সিজেন সরবরাহ না হয়। কিন্তু অক্সিডাইজার এর বিপারীত কাজ করে। এগুলো জ্বলন্ত বস্তু এবং এর আশেপাশে অক্সিজেনের অণুর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে অন্য পদার্থগুলোও আরো অগ্নিদাহ্য হয়ে ওঠে।
রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ জিমি অক্সলি বলেন, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে নিজে জ্বলে না। এটি তখনই বিস্ফোরিত হবে যখন এর তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে উঠবে।
এটি বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণ হিসেবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আন্দ্রেয়া সেলা বলেন, একদিকে অ্যামোনিয়ামের মধ্যে হাইড্রোজেন রয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে অক্সিজেন। সেই সাথে আছে নাইট্রোজেন। যখন এই উপাদানগুলোকে কোনোভাবে একত্রিত হতে বাধ্য করা হয়, তখন এ থেকে বিপুল পরিমাণে গ্যাস এবং তাপ উৎপন্ন হয়।
যেকোনো কার্বনসমৃদ্ধ জ্বালানী, যেমন- কাগজ, কার্ডবোর্ড, এমনকি চিনি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সাথে জুড়ে গেলে এটি বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। বৈরুতের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট যদি কাঠের বা কার্ডবোর্ডের পাত্রে সংরক্ষণ করা হতো তবে এটি পদার্থটিকে অবিশ্বাস্যরূপে দাহ্য করে তুলতো। বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এক জায়গায় স্তুপ করে রাখলে তা থেকে বড় বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কোনো আগুনে অক্সিডাইজার যোগ করা মানে তাকে আরো বেশি ভয়ংকর করে তোলা। এই কাজটিই ঘটেছে বৈরুত বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে। ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট স্তুপ করে রাখা ছিলো বৈরুতের ওই গুদামে। ফলে এর এক জায়গায় আগুন লাগা মানেই বড় বোমা বিস্ফোরণ।
পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার স্টিফেন বুডুয়া বলেন, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হলে এটি খুব দ্রুত প্রচুর শক্তি ছাড়তে পারে। এটি সেই জ্বালানিকে খুব দ্রুত জারিত করে প্রচুর গ্যাস এবং তাপ তৈরি করে। ফলে বড় আকারে শকওয়েভ তৈরি হয়। বৈরুত বিস্ফোরণে যে শকওয়েভ তৈরি হয়েছিলে তার গতি শব্দের গতির চেয়েও বেশি ছিলো।
কতটা বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আন্দ্রিয়া সেলার মতে, অল্প পরিমাণের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তেমন বিপজ্জনক নয়। এটি এক এক ধরণের সাদা স্ফটিক অণু যা ল্যাবরেটরির শেল্ফে বছরের পর বছর রাখলেও কোনো বিস্ফোরণ হবে না। তবে বিস্ফোরণ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করলে এ থেকে বিস্ফোরণ হবে। সময়ের সাথে সাথে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট যদি শক্ত হয়ে যায় এবং কোনো আগুন বা তাপের সংস্পর্শে আসে তবে তা ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে নিজে জ্বলতে বা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তবে এর তাপমাত্রা যদি খুব দ্রুত ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছে যায় তাহলে এটি নিজে নিজেই জ্বলতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে এটি তেমন বিপজ্জনক নয়, কিন্তু আগুন বা কোনো জ্বালানির সংস্পর্শে আসলে এটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। তবে অল্প পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বড় বিস্ফোরণ ঘটে না। যত বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তত বৃহৎ বিস্ফোরণ।
পূর্বেও ঘটেছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে বেশ কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে। ১৯২১ সালের কথা । জার্মানির অপাও শহরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করে রাখা ছিলো। শীতকালে তা শক্ত হতে থাকে। পরে সেই শক্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ভাঙার জন্য শ্রমিকেরা ডিনামাইট ব্যবহার করে। এর ফলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে ৭০০ জনের মতো নিহত হয়।
১৯৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে। এসএস গ্র্যান্ডক্যাম্প তখন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, জ্বালানি এবং গোলাবারুদ বহন করছিলো। হাস্টন এলাকার বন্দরে পৌঁছালে সেখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে জাহাজ এবং ফেরিঘাটের সবাইসহ ৬০০ জনের মতো নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৫ হাজার জন। বিস্ফোরণে ৫০০ এর মতো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং কয়েকদিন যাবত ধোয়া উড়তে দেখা যায়।
১৯৯৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটি ফেডারেল ভবনে ট্রাক-বোমা হামলায়ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল। আমেরিকান সন্ত্রাসী টিমোথি ম্যাকভেই এবং টেরি নিকলস দুই টনের মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করেছিল সে হামলায়। এতে ১৬৮ জনের মতো মানুষ নিহত হয়।
২০১৫ সালে চীনের তিয়ানজিন শহরের একটি গুদামে ৮০০ টনের মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১৭৩ জন নিহত হয়।
২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি সার কারখানায় আগুন লেগেছিলো। এর কারণ হিসেবে অ্যামোনিয়ান নাইট্রেট দায়ী ছিলে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা। সে দুর্ঘটনায় ১৫ জন প্রাণ হারান।
বৈরুত বিস্ফোরণের মাত্রা
১৯৪০ এর দশকে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ বিশ্লেষণের জন্য গণিতকে ব্যবহার শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা। একটি বিস্ফোরণ কতটা শক্তি উৎপাদন করেছে এবং কতটা পদার্থ উড়িয়ে দিয়েছে তা ভিডিও বিশ্লেষণ করেও বোঝা যায়।
বিস্ফোরণের আরেকটি নিকটবর্তী ভবনের সাথে তুলনা করে বৈরুত বিস্ফোরণের ভিডিওতে দেখা যায় বিস্ফোরণটি ঘটার আট সেকেন্ড পর এর গোলাকার শকওয়েভ/প্রেশারওয়েভ প্রায় ৮০০ ফুট প্রশস্ত হয়। তবে শকওয়েভটির শক্তি এতটাই ছিলো যে সেটির ধাক্কায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল ভবনের জানলার কাচও ভেঙে যায়। আর বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই জোরালো ছিলো যে ২০০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাস থেকেও তা শোনা যায়। শুধু তা-ই নয়, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো রিক্টার স্কেলে ৩.৩।
মিডলবারি ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস অনুমান করে জানান, বৈরুতের বিস্ফোরণটি ছিলো প্রায় ৪০০ টন টিএনটির সমান। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমাতে যে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিলো তার ক্ষমতা ছিল ১৩ হাজার টন টিএনটি।
বৈরুত বিস্ফোরণের ঘটনার পেছনে
লেবাননের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই দাবি করেছেন বৈরুত বিমানবন্দরে ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অনিরাপদভাবে মজুদ করে রাখা ছিল। সেখান থেকেই আগুন লেগে বিস্ফোরণটি ঘটেছে।
তবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কিন্তু নিজে নিজে জ্বলতে বা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। এর তাপমাত্রা যদি খুব দ্রুত ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাটে পৌঁছে যায় তাহলেই কেবল এটি নিজে নিজেই জ্বলতে পারে। অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটলেও প্রথমদিকের আগুনের সূত্রপাতটা কীভাবে হলো সেটি তদন্তের বিষয়।
দুর্ঘটনার উৎসস্থল হিসেবে বৈরুত বন্দরে অবস্থান করা একটি রাশিয়ান কার্গো জাহাজের (রসাস) কথা উল্লেখ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার একটি জাহাজ ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে বৈরুত বন্দরে এসেছিলো। সেটির যাওয়ার কথা ছিল মোজাম্বিকে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট এবং রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে সেটি বৈরুত বন্দরেই থেকে যায়।
লেবাননের রাজস্ব বিভাগের প্রধান বদ্রি দাহ এবং অন্যান্যরা এটিকে ‘ভাসমান বোমা হিসেবে তুলনা করলেও সেটিকে আর সরানো হয়নি। ২০১৬ সালে একই পদে কর্মরত ছাফিক মেরহি জাহাজটিকে দ্রুত সরিয়ে নিতে চিঠিও দিয়েছিলেন।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
যেকোনো দুর্যোগেরই দীর্ঘমেয়াদী কিছু প্রভাব থাকে। বৈরুত বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। এ বিস্ফোরণে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে যা বাতাসকে দূষিত করেছে। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তি এ বাতাস গ্রহণ করলে তার শ্বাসযন্ত্রের বড় সমস্যা দেখা দিবে। তাছাড়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হলে উপজাত হিসেবে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন করে। আর এই নাইট্রোজেন অক্সাইড হলো শ্বাসকষ্টের কারণ। এছাড়াও আরো কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে ধীরে ধীরে। এই বিস্ফোরণ থেকে শুধু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটই পোড়েনি। সাথে পুড়েছে প্লাস্টিক, রঙ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ যা ধূলিকণায় পরিণত হয়েছে। এসব ধূলিকণা স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর।
কোন দেশে কী পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আছে
সারাবিশ্বে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন এবং মজুদ করা হয়। শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই সারা বিশ্বে ২০ মিলিয়ন টনেরও বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করা হয়েছিল।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করে রাশিয়া। ২০১৭ সালে দেশটি ৯.৮৬ মিলিয়ন টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করে। তালিকার পরবর্তী চারটি দেশ হলো মিশর, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড। ২০১৭ সালে মিশর উৎপাদন করেছিল ৪.২৯ মিলিয়ন টন, উজবেকিস্তান ১.৪১ মিলিয়ন টন, আমেরিকা ১.৩৬ মিলিয়ন টন এবং পোল্যান্ড ১.৩২ মিলিয়ন টন।
ভবিষ্যৎ বিস্ফোরণের আগেই সতর্কতা জরুরি
বৈরুত বিস্ফোরণ আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অবহেলায় ফেলে রাখার মতো কোনো বস্তু নয়। যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করলে যেকোনো সময় এর চেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এজন্য উৎপাদনের পাশাপাশি এর মজুদের সময়ও পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যেহেতু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে জ্বলতে পারে না, তাই একে যেকোনো উপায়েই হোক জ্বালানি উৎস থেকে দূরে রাখতে হবে। তেল, গ্যাস বা দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আনা যাবে না। মজুদের সময় যে গাড়ি বা পরিবহন ব্যবহার করা হবে তা থেকে যেন কোনো ধরনের আগুনের স্পর্শ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে স্পর্শ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রকৃতির কারণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের প্রবেশাধিকারকে সীমাবদ্ধ করা এবং সাধারণ লোকজনকে এটি কেনার জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট যেন সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায়। কারণ ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটি ফেডারেল ভবনে ট্রাক-বোমা হামলায়ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরিবহনের জন্য যে জাহাজ এবং ট্রাক ব্যবহার করা হবে সেগুলো যেন আগুন উৎপন্ন করে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে জ্বলতে সাহায্য না করে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। ২০১৪ সালে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বহনকারী ট্রাক বিস্ফোরিত হয়ে একটি সেতু পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলো। ১৯৭২ সালে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরিবহনের একটি ট্রাকে বিদ্যুতের তার পড়ে তাতে আগুন লেগে গিয়েছিলো এবং এ ঘটনায় তিনজন মারা যায়।
যেহেতু এটি কৃষকেরা সার হিসেবে ব্যবহার করেন তাই কৃষকদেরও সকর্তকতার সাথে এটি ব্যবহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন সংরক্ষণের সময় একে জ্বালানি তেল ও তাপের উৎস থেকে দূরে রাখতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারণ এ মিশ্রণের ফলে ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তৈরি হয়, যা অনেকটাই নিরাপদ।