Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গুবরে পোকা কীভাবে১২ কিলোমিটার দূর থেকেই আগুন বুঝতে পারে?

Milanophila জাতের একধরনের গুবরে পোকা আছে। আকারে বেশ ছোট। এর অদ্ভুত এক স্বভাব আছে যেটা তাক লাগানোর মতো। কোনো জায়গায় যদি দাবদাহ অর্থাৎ বনে গাছপালা যদি পুড়তে থাকে তখন এই গুবরে পোকাগুলো সেই জায়গায় উড়ে যায় এবং এর কাছাকছি গিয়ে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয়। সেখান থেকে মেয়ে গুবরে পোকাগুলো পোড়া স্থানে যায়। মেয়ে গুবরে সেই পুড়ে যাওয়া গাছের বাকলগুলোর নিচে ডিম রেখে দেয়। এই পরিবেশটি গুবরে জাতীয় পোকার বংশবৃদ্ধির জন্য একদম অনুকূল একটি পরিবেশ। এরকম পরিবেশ ডিম থেকে বের হওয়া লার্ভার বৃদ্ধির জন্যও ভালো। তাছাড়া লার্ভার বৃদ্ধির উপর গাছপালার প্রভাবও পড়ে কম। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, গাছপালার উপর লার্ভা থাকলে সেগুলো গাছপালা থেকে নির্গত রেজিন বা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এসে আর বাড়তে পারে না। তাই গুবরেদের জন্য এটি একদম উপযুক্ত পরিবেশ [১]।

গাছপালায় আগুন লাগার পরবর্তী পরিবেশ গুবরে পোকার জন্য দরকারি; Source: bugguide.net

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গুবরেগুলো যদি বন-বাদাড়ের আশেপাশে থাকে তাহলে খুব সহজেই বনে আগুন লেগে গেলে তা বুঝতে পারবে। কিন্তু এরা ১২ কিলোমিটার বা তার থেকে বেশী দূরত্ব থেকেও আগুন লাগা বুঝে ফেলতে পারে এবং বুঝে নিয়ে সেদিকে ছুটে চলে। কীভাবে এরকমটি সম্ভব? একটি কথা এখানে আরও আশ্চর্যের বিষয়। তা হচ্ছে, এত দূরত্বে থাকা অবস্থায় কখনই কোনো গুবরে শুধুমাত্র দেখে কিংবা গন্ধ শুঁকে সেখানে যেতে পারে না, তাহলে কীভাবে এরা দূর থেকেও আগুনের তাপ বুঝে উঠতে পারে? আজকের লেখায় এই সমস্যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া হবে।

(A) তে Melanophila এর অঙ্কন চিত্র দেখানো হয়েছে। তীর চিহ্ন দিয়ে (B) তে যেটা দেখানো হয়েছে তা হচ্ছে অবলোহিত রশ্মি সনাক্তকারী অঙ্গ (এখানে বড় করে দেখানো হয়েছে)। এর ভিতরটি মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে ভরা থাকে। এগুলোকে সরিয়ে দিলে সেখানে প্রায় সত্তরটি নবের মতো সেন্সর দেখা যায় (Epical indentation)। (C) তে দেখা যাচ্ছে সেন্সরি অঙ্গটির ভিতরের চিত্র। যে Interior sphere টি দেখা যাচ্ছে সেটার ভিতর যখন অবলোহিত রশ্মি এসে পড়ে তখন এটা প্রসারিত হতে থাকে এবং প্রসারিত হতে হতে Dendritic tip কে বিচ্যুত করে ফেলে। এই প্রসারনের ফলেই উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। Source: Journal of Comparative Physiology A [২], Figure No: 1।

আমরা জানি, প্রকৃতি প্রাণীদের ভিতরে বিভিন্ন রকমের স্নায়বিক অঙ্গ দিয়ে দিয়েছে। একেকটি প্রাণীর স্নায়বিক উদ্দীপনা একেক রকম। মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণী কথা বলতে পারে না। কিংবা হয়তো পারে, কিন্তু আমরা বুঝি না। তবুও মানুষের থেকে এসব প্রাণী উন্নত না হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রাণী তাদের নিজের স্নায়ু বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকে। এই স্নায়বিক উদ্দীপনা তাদেরকে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে সাহায্য করে। গুবরে পোকাগুলোর মধ্যেও এমন কিছু স্নায়ুতন্ত্র আছে যেগুলো খুব ভালো মতো প্রকৃতির ইশারায় কাজ করে [২]।

একেকটি প্রাণীর স্নায়বিক উদ্দীপনা একেক রকম; Source: bigbughunt.com

একটি গুবরের শরীরের দুই পাশেই একজোড়া করে অবলোহিত রশ্মি বা বিকিরণ শনাক্ত করার অঙ্গ রয়েছে। এই অঙ্গের প্রত্যেকটি সত্তরটি করে সেন্সর দিয়ে গঠিত যেগুলো দেখতে অনেকটা পিণ্ডের মতো। এই সেন্সরের ভিতরে গোলকের মতো করে একটি জিনিস থাকে যেটা আশেপাশে কোথাও আগুন লাগলে সেই আগুনের থেকে আসা অবলোহিত রশ্মি শুষে নেয় এবং একটু একটু করে প্রসারিত হতে থাকে। এই অঙ্গটির নাম হচ্ছে লেমেলা (Lemella)। এই প্রসারণ ক্ষমতার কারণেই গুবরের ভিতরের স্নায়বিক উদ্দীপকগুলো চালু হয়ে যায় এবং আশেপাশে কোথাও আগুন লাগলে সেটা ঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে [৩]।

প্রকৃতি একটি অস্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়েছে এই ছোট্ট গুবরেগুলোর মধ্যে; Source: Northern Pecans

গুবরেপোকার এই উদ্দীপক অঙ্গ, যেখানে অবলোহিতও রশ্মি প্রবেশ করে, সেটা চারদিক থেকে আটকানো থাকে এবং ভিতরটা হয় বায়ুরোধী। এই অঙ্গের চারপাশের দেয়াল মোটা পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে। আগুন থেকে আসা যে অবলোহিত রশ্মি শোষণ করা হয় সেটা গুবরের ভিতরের কাইটিনাস লেমেলার মাধ্যমে শোষিত হয়। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য করা যায়। সেটা হচ্ছে, গুবরে পোকা যেভাবে অবলোহিতও রশ্মির উপস্থিতি টের পায় তার সাথে কোনো প্রাণীর তাপমাত্রা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মিল পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, গুবরের আগুন টের পাওয়ার ব্যাপারটি একটি নতুন ধরনের স্নায়বিক উদ্দীপনার ধারণা দিচ্ছে [৩]।

গুবরে পোকার কোথাও আগুন টের পাওয়ার ব্যাপারটি একটি নতুন স্নায়বিক উদ্দীপনা ; Source: heame.ru

এখান থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেটা হচ্ছে অবলোহিতও রশ্মি শনাক্ত করার পর এই রশ্মিটি পুরো অঙ্গকে একটি চালক যন্ত্রে পরিণত করে ফেলছে। এর মানে হচ্ছে অবলোহিত আলোক রশ্মি এখানে আলো থেকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। যখনই কোথাও আগুন লাগে তখন অসম্ভব সংবেদনশীল গুবরে পোকার চারটি উদ্দীপক অঙ্গ সেই অবলোহিত রশ্মি শনাক্ত করতে পারে এবং যেদিক থেকে এই সংকেত পাওয়া যাচ্ছে সেদিকে ছুটে যেতে থাকে। যতই পোকাগুলো আগুনের দিকে যেতে থাকে ততই অঙ্গগুলোর ভিতর একধরনের বাড়তি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। শুধুমাত্র সেন্সর বা উদ্দীপনাযুক্ত এই অঙ্গের কারণেই এরা আগুন লাগার জায়গা ঠিকঠাকভাবে শনাক্ত করতে পারে।

উদ্দীপক না থাকলে গুবরেগুলো জায়গা শনাক্ত করতে পারতো না; Source: Naturally North Idaho

যদিও এখানে সেন্সর বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনই গুবরের এই অংশকে সেন্সর বলতে চাচ্ছে না। আসলে এখানে যেটা হয় যে অবলোহিত রশ্মিগুলো থেকে আসা তরঙ্গ গুবরে পোকার এন্টেনাকে স্পন্দিত করে তোলে। এই স্পন্দনের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হয়ত ২.৫ থেকে ৪ মাইক্রোমিটারের মধ্যে। একটি বনে আগুন লাগলে সেখান থেকে যে তরঙ্গ প্রবাহিত হবে সেটার তীব্রতা মোটামুটি ০.০৬ মিটার-ওয়াট/বর্গ সেন্টিমিটারের মতো হয়ে থাকে যা স্পন্দন তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। বিজ্ঞানীরা ব্যবহারিক পরীক্ষা করে এই বিষয়গুলো বের করেছেন এবং এরকমটি হয় বলে অনেক সময় মনে করা হয় যে গুবরে পোকার ভিতর সেন্সর যুক্ত কোনো অঙ্গ রয়েছে [৪]।

ছোট্ট একটি প্রাণী গুবরে পোকার এরকম গুণ প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য দান বলতে হবে। নিজের বংশবৃদ্ধির জন্যও তাদের শরীরের ভিতর এই ধরনের প্রক্রিয়ার দরকার ছিল। এরকমটি না হলে হয়তো এরা ক্রমাগমনের নিয়ম অনুযায়ী বিলুপ্ত হয়ে যেত। এর  সবচেয়ে আশ্চর্য ক্ষমতা হচ্ছে এত ছোট্ট একটি প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও এরা এত দূর থেকে আগুনের তাপ টের পায় এবং ছোট প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও এর শরীরের ভিতরে কত জটিল সব কর্মকাণ্ড হয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র:

[১] Walker, J. (2007). Flying Circus of Physics. John Wiley & Sons, Inc.

[২] Schmitz, H., and H. Bleckmann. (1998) The photomechanic infrared receptor for the detection of forest fires in the beetle Melanophila acuminate (Coleoptera: Buprestidae),” Journal of Comparative Physiology A, 182, 647-657

[৩] Schmitz, H., H. Bleckmann, and M. Murtz (1997). Infrared detection in a beetle, Nature, 386, No. 6627, 773-774

[৪] Evans, W. G. (২০০৫) Infrared radiation sensors of Melanophila acuminate (Coleoptera: Buprestidae): a thermopneumatic model,” Annals of the Entomological Society of America, 98, No. 5, 738-746

ফিচার ইমেজ সোর্স:  Englishfor2day.com

Related Articles