পাবলিক ওয়াইফাইয়ে সুরক্ষিত থাকবেন যেভাবে

আমরা কিন্তু ইন্টারনেট অনেকদিন আগে থেকে ব্যবহার করে আসছি, তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সুবিধা নিচ্ছি। এর আগে আমাদের ইথারনেট ক্যাবল ব্যবহার করতে হতো, যার কারণে অনেক অসুবিধাও পোহাতে হতো। কিন্তু এখন ওয়াইফাই থাকাতে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার অনেক সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে, একসঙ্গে এখন অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে।

তবে প্রত্যেকটি প্রযুক্তির কিছু ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। অর্থাৎ আমরা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে এখন যেকোনো স্থানে বসে যে কারো ওয়াইফাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি। কিন্তু সেই ওয়াইফাই যদি পাবলিক হয়, তাহলে আমরা পড়তে পারি অনেক বড় সমস্যায়। কী ধরনের সমস্যা? সেই ব্যাপারে বুঝতে আমদের জানতে হবে ওয়াইফাই কীভাবে কাজ করে।

১. সংযোগ যাচাই করুন

কোনো ওয়াইফাই পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে সেটাই সঠিক ওয়াইফাই পয়েন্ট কিনা তা যাচাই করতে হবে। কেননা হ্যাকাররা অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়া ওয়াইফাই পয়েন্ট বানিয়ে থাকে। আপনি যদি ভুলে সেখানে যুক্ত হয়ে যান, তাহলে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে, এবং আপনার সব তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।

কোনো ওয়াইফাই পয়েন্ট আমরা যাচাই করতে পারি সেটা পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত কিনা তা দেখে। কারণ, সাধারণত হ্যাকারদের তৈরি করা পয়েন্টে পাসওয়ার্ড থাকে না, যেন সবাই সহজেই যুক্ত হতে পারে। কিন্তু কোনো রেস্তোরা বা ক্যাফের ক্ষেত্রে এটা হয় না। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত করে রাখে। তবে কখনো এই বিষয়ে সংশয় দেখায় দেয়। সেক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে সেখানে প্রবেশ করতে হবে। ঢুকে যদি দেখা যায় যে কিছু একটা ভুল আছে, তাহলে সেখান কানেক্ট না হয়ে আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সঠিক পয়েন্ট যাচাই করে নেয়া যেতে পারে।

এক নামের দুটি ওয়াই-ফাই পয়েন্ট; Courtesy: CNET

২. এনক্রিপ্টেড/সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করুন

এনক্রিপ্টেড বা সিকিউরড সংযোগের অর্থ হলো এমন সংযোগ যেটা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সকল তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয়ে আরেক প্রান্তে পৌঁছাবে। মাঝে যদি কেউ সেই তথ্য হাতিয়েও নেয়, তাহলে সে সেটা ডিকোড করতে পারবে না।

আমরা সাধারণত যেসব ওয়েবসাইট বেশি ব্যবহার করি, সেসবে আগে থেকেই সুরক্ষিত সংযোগ ব্যবহার করা থাকে।  কোনো ওয়েবসাইট সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করছে কিনা সেটা যাচাই করতে আপনার শুধু সেই ওয়েবসাইটের ইউ.আর.এল-এর দিকে নজর দিতে হবে। সেখানে বাম পাশে যদি ‘সিকিউরড’ বা তালা চিহ্ন দেখায়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করছে। সেখানে যদি ‘নট সিকিউরড’ লেখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে সেই ওয়েবসাইট কোনো সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করছে না।

সুরক্ষিত এবং অসুরক্ষিত ইউ.আর.এল-এর মধ্যকার পার্থক্য; Courtesy: wpengine.net

তবে এরকম যদি কোনো ওয়েবসাইটে আপনার প্রবেশ করতে হয় তাহলে আপনার একটা ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ব্যবহার করতে পারেন যেটার নাম ‘HTTPS Everywhere’। এই এক্সটেনশনের কাজ হচ্ছে কোনো ওয়েবসাইটের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগকে এনক্রিপ্টেড সংযোগে পরিণত করে।

৩. ভিপিএন বা টর ব্রাউজার ব্যবহার করুন

ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংক্ষেপে ভিপিএন বলা হয়। এর কাজ হচ্ছে আপনি যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন তখন আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস অন্যদের থেকে লুকিয়ে একটি প্রাইভেট ইন্টারনেট টানেল হয়ে গন্তব্য স্থলে নিয়ে যাওয়া। আর টর ব্রাউজারও ঠিক এভাবেই কাজ করে। শুধু পার্থক্য হলো যে একটা ভিপিএন আপনার আইপি অ্যাড্রেস একবার বদলাবে, কিন্তু টর ব্রাউজার আপনার আইপি অ্যাড্রেস বেশ কয়েকবার রদবদল করবে।  

ভিপিন যেভাবে কাজ করে; Courtesy: wpbeginner

তাই কোনো পাবলিক ওয়াইফাইয়ে যুক্ত থাকা অবস্থায় ভিপিএন ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ, পাবলিক ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে হ্যাকার শুধু পাসওয়ার্ড এবং ব্যাংকের তথ্য নয়, সে চাইলে ফোনে থাকা তথ্যও চুরি করে নিতে পারে। অথবা ভিক্টিমের ডিভাইসে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। এটা বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেননা পিসিতে অনেক রকম সুবিধা থাকে নিজের সুরক্ষাবর্ম নিজের মতো করে বানিয়ে নেয়ার। কিন্তু মোবাইলের ক্ষেত্রে এটা অনেকটাই সীমাবদ্ধ, যেমন ‘Https Everywhere’ এক্সটেনশন মোবাইলে পাওয়া যায় না। তাই মোবাইলের জন্য এটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. গোপন তথ্য আদান-প্রদান নয়

কোনো পাবলিক ওয়াইফাইয়ে বসে নিজের কোনো গোপন বা সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান করা জীবনের বড় ভুলের একটি হতে পারে। কেননা সেই তথ্য যেকোনো মানুষের হস্তগত হতে পারে। সেটার জন্য কোনো দক্ষ হ্যাকারের দরকার পড়বে না। যদি কেউ পাবলিক ওয়াইফাইয়ে বসে কোনো কাজ করতে থাকেন, তাহলে এটা আপনার বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যেন সংবেদনশীল তথ্য সেই পাবলিক ওয়াইফাইয়ে থাকা অবস্থায় কোথাও ইনডেক্স (কোথাও কোনো তথ্য প্রদান করা) না করা হয়। তাছাড়া, বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো সাইটের পাসওয়ার্ড সেই পাবলিক ওয়াইফাইয়ের সাথে কানেক্টেড থাকা অবস্থায় ইনডেক্স না করা হয়। যদিও অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট, যেমন- ফেসবুক বা গুগলে সিকিউরড সংযোগ থাকে। কিন্তু তারপরও কোনো সংবেদনশীল তথ্য পাবলিক ওয়াইফাইয়ে আদান-প্রদান না করাই ভাল, সেটা যত সিকিউরড সংযোগই হোক না।

৫. ফাইল শেয়ারিং সীমিত রাখুন

ফাইল শেয়ারিং সীমিত রাখুন; Courtesy: Howtofix.com

পাবলিক ওয়াইফাইয়ে  যুক্ত থাকাকালীন কোনো ফাইল শেয়ারিং এপ্লিকেশন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আমরা আগেই জেনেছি, যেহেতু একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকি আমরা, তাই হ্যাকার আমাদের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া, ফাইল শেয়ারিং অপশন ব্যবহার করে হ্যাকার আপনার ল্যাপটপে ম্যালিশাস ফাইল প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি কেউ ল্যাপটপ ব্যবহার করে, তাহলে ‘Network and Sharing Centre’-এ গিয়ে ‘Turn off File and Printer Sharing’ অপশনটি ক্লিক করে ল্যাপটপের ফাইল শেয়ারিং অপশনটি অফ করতে হবে। যদি আপনি ম্যাক ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে ‘Air Drop’-এ গিয়ে ‘Allow Me to be Discovered by: No One’ অপশনটি ক্লিক করে ফাইল শেয়ারিং অপশনটি অফ করুন। তাহলে আর ল্যাপটপে কেউ ফাইল শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে তথ্য চুরি করতে পারবে না।

৬. কানেক্ট হওয়ার আগে শর্তাবলী খেয়াল করুন

আমরা অনেকেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যাই, ঠিকভাবে কখনও শর্তাবলী পড়ে দেখি না। তবে পাবলিক ওয়াইফাইয়ে কানেক্ট হওয়ার আগে, বিশেষ করে যখন আমাদের কোনো ক্যাপটিভ পোর্টালে সাইন আপ করতে হচ্ছে। তখন শর্তাবলীর দিকে একটু নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ থাকবে। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই শর্তাবলীতে অনেক আপত্তিকর বিষয়েও তারা অনুমতি নিয়ে থাকে। তাই সেই শর্তাবলী যদি একটু পড়ে নেয়া যায়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই কোনো আপত্তিকর শর্ত থাকলে সেই ব্যাপারে সর্তক হওয়া সম্ভব।

কানেক্ট হওয়ার আগে শর্তাবলী খেয়াল করুন; Courtesy: Photo by Markus Winkler on Unsplash

এখানে যে ক’টি সুরক্ষাপদ্ধতি বলা হয়েছে, সবগুলোই একটি আরেকটির পরিপূরক। কেননা, প্রত্যেকটি পদ্ধতির নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই একটি পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা পূরণ করতে আরেকটি পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়েছে। যদিও এতগুলো সুরক্ষা ধাপ মেনে চলা কঠিন হতে পারে অনেকের জন্য, তবে কেউ যদি কোনো ক্যাফেতে বসে সেই ক্যাফের ওয়াইফাই-ই ব্যবহার করতে চায়, সাথে সুরক্ষা নিয়েও চিন্তিত থাকে, তাহলে তার এসব ধাপ মেনে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

This article is written in Bangla language and has the information about how someone can be safe while using public wifi. All the necessary sources has been hyperlinked and rest can be found below.

Feature Image: addictivetips.com

References:
1. Simple Steps to Protect Yourself on Public Wi-Fi - Wired
2. 5 Tips for Staying Safe on Public Wi-Fi Networks - Global Sign
3. Public Wifi Security - Kaspersky
4. 5 Tips for Staying Safe on Public WiFi Networks - readwrite.com
5. How hackers use Wi-Fi to steal your passwords - Dell Technologies

Related Articles

Exit mobile version