সভ্যতার সময়কালে মানুষ একটু একটু করে এগিয়েছে। অতীতের দিকে তাকালে এমন কিছু ঘটনা, স্থাপনা বা আবিষ্কারের নিদর্শন পাওয়া যায় যা নিজের অস্তিত্বের মাধ্যমে জানান দেয়, ঠিক এই সময়ে মানবজাতি কতটুকু উন্নত হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যখন নিল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদে পা রাখেন, তা শুধু সেই সময়ের বিচারে অন্য অনেক ঘটনার মতো সাধারণ একটি সাফল্যের খবর ছিল না। আজ থেকে শতবর্ষ পরেও ১৯৬৯ সালের এই ঘটনা ভবিষ্যতের মানুষকে জানান দিয়ে যাবে যে তা মানবসভ্যতার অগ্রসর হওয়ার কত বড় এক দৃশ্যমান চিহ্ন।
কোনো এক অজানা কারণে মাধ্যাকর্ষণকে হার মানানোর নেশা মানুষের মধ্যে মজ্জাগত। সদা উদ্ধত মানবের কাছে বরাবরের মতোই মাধ্যাকর্ষণ এক কঠিন সীমাবদ্ধতার নাম। এ যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেয়, প্রকৃতির খেয়ালের সামনে মানুষের প্রয়াস কতটা দুর্বল, কতটা ঠুনকো। উড়োজাহাজ উদ্ভাবন কিংবা এই চাঁদে বা মঙ্গলে যাওয়া কেন সবার মাঝে এতো আনন্দের সঞ্চার করে? কেন আধুনিক যুগের লৌহমানব ইলন মাস্কের ‘ফ্যালকন ৯’ সফলভাবে ঊর্ধ্বাকাশে যেতে পারলো কিনা তা দেখার জন্যে উৎসুক আমজনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান থাকে? কারণ একটাই- মানবের কাছে মাধ্যাকর্ষণের এই পরাজয় দেখার আনন্দের কাছে অন্য কোনো আনন্দের তুলনা হয় না।
বাতাসের বাঁধা
আজ থেকে মাত্র একশো বছর আগেও কেউ এক হাজার ফুট উচ্চতায় (প্রায় ১০০ তলা দালানের সমান) ঘর সংসার পেতে নিয়মিতভাবে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারতো না। তবে এখন পারে। মানুষের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নই এ অসম্ভবকে বাস্তবে রূপ দান করেছে। শত তলা বা তার চেয়ে বেশি উঁচু আজকের সুউচ্চ, আকাশছোঁয়া স্কাইস্ক্র্যাপারগুলো একদিকে যেমন মাধ্যাকর্ষণকে হার মানানোর ‘এক-চোখে-দেখা-যায়’ এমন নিদর্শন, তেমনি একইসাথে তা সভ্যতার অগ্রসর হবার একেকটি ফ্ল্যাগপোস্ট।
তবে মানুষ যতই একটু একটু করে মাটি থেকে আকাশের দিকে উঠেছে, মাধ্যাকর্ষণ বাদেও অন্য এক শত্রুর সাথে তার পরিচয় ঘটেছে, আর তা হলো বাতাস (Wind)। মাধ্যাকর্ষণ যেখানে ভারকে সবসময় নিচের দিকে টানে, বাতাস ভারকে ডানে বামে তথা পার্শ্বীয়ভাবে ধাক্কা দেয়। এ ধাক্কাটি মাটির সাথে সমান্তরাল এবং দালানের উপর চারপাশ থেকে প্রযুক্ত হয়। মাটি থেকে যতই উপরে উঠা যায়, বাতাসের বাঁধা ততই বাড়তে থাকে। ইতিহাসে দালানের উচ্চতা যখন যখন বৃদ্ধি পেয়েছে, বাতাসের বাঁধা এক্ষেত্রে ক্রমাগত অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় মুখ্য হয়ে উঠেছে।
লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে ১৬০ মিটার উঁচু (৩৭ তলা) এক দালান রয়েছে যাকে তার আকৃতির জন্য ‘ওয়াকি টকি’ নামে ডাকা হয়, বেশ বিখ্যাত এক বাণিজ্যিক ভবন। ২০১৫ সালের দিকে সিটি অব লন্ডন কর্পোরেশানের কাছে অভিযোগ আসে, এই দালানের আশপাশের সড়ক দিয়ে হাঁটাচলার সময় বাতাসের কারণে ব্যাপক সমস্যা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ৩৭ তলা উঁচু একটি দালানের নিচে এত শক্ত বাতাস তৈরি হবে? তার মানে কি যেকোনো উঁচু দালানের নিচভাগের আশেপাশে যেসব সড়ক রয়েছে, তাতে এরকম বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে? যদি হয়েই থাকে, একে মোকাবিলা করার জন্য কোনো পদক্ষেপ কি দালান নকশা করবার সময় নেয়া হয় না? শুধু লন্ডনেই নয়, ইংল্যান্ডের আরেক শহর লিডসের ৩২ তলা উঁচু ব্রিজওয়াটার প্লেস দালানের নিচেও একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সেখানে প্রচণ্ড বাতাসের ধাক্কায় রাস্তায় দাঁড়ানো লরি পর্যন্ত উল্টে গেছে এবং এতে একজন মানুষ মারা যান।
উঁচু দালানে যখন বাতাস চারপাশ থেকে এসে ধাক্কা দেয় তখন দালানের গায়ে বাঁধা পাওয়ার পর বাতাসের আর সামনে এগুনোর পথ থাকে না। কোনো পথ না পেয়ে বাতাস তখন দালানের গা বেয়ে নিচে নেমে এসে উল্টো ঘুরে দালানের সন্নিকটে যেসব সড়ক অবস্থিত সেখানে সঞ্চালিত হওয়া শুরু করে। অর্থাৎ স্বাভাবিক নিয়ম মতো এমন নয় যে বাতাস যেই মাত্র দালানের গায়ে ধাক্কা খেল, ঠিক তখনই ঐ বিন্দুতে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে পথ উল্টে ফেলবে। বাতাস প্রথমে দালানের গা বেয়ে নিচে নামবে এবং তারপরই কেবল উল্টো দিকে যাওয়া শুরু করবে। কিছু বাতাস আবার দালানের গা বেয়ে উপরেও উঠে যায় এবং তার পর দিক পরিবর্তন করে। সব মিলিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় দালানের নিচে অবস্থিত রাস্তাসমূহের। বাতাসের কারণে সৃষ্ট এরূপ ঘটনাকে বলা হয় বাতাসের ‘ডাউনড্রট প্রভাব’ (Downdraught Effect)। সাধারণত চতুর্ভুজাকৃতির দালানের কোণার জায়গাগুলোতে এ প্রভাব বেশি হতে দেখা যায়, গোলাকৃতির ভবনে খুব বেশি দেখা যায় না।
বাতাসের ডাউনড্রট প্রভাবের কারণে বেশ কিছু অদ্ভুত ঘটনাও ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রায় ৮৭ মিটার উঁচু এক দালান রয়েছে যার নাম ‘ফ্ল্যাটিরন ভবন’। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই ভবনের নিচের সড়কে ও তার আশেপাশে প্রচুর লোক (পুরুষ) ভিড় করতো। ভিড়ের মাত্রা এতোই বেশি হতো যে শেষমেশ পুলিশকে এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে হতো। একটি দালানের নিচে এত লোকের একসাথে জড়ো হবার কারণ কী হতে পারে? ঘটনা হলো, অন্য সব উঁচু দালানের মতো ফ্ল্যাটিরন ভবনেও ডাউনড্রট প্রভাব বিদ্যমান ছিল। ফলাফল- এর নিচের সড়কগুলোতেও প্রচুর বাতাসের প্রবাহ তৈরি হতো।
তৎকালে সেখানকার নারীরা বেশিরভাগ সময় এমন চলের পোশাক পরতো যাতে তাদের সমস্ত শরীর আবৃত হয়ে থাকে। কোমর থেকে দেহের নিচের বাকি অংশ ঢাকার জন্য তারা ঢোলা স্কার্ট পরিধান করতেন। কিংবা আলাদা স্কার্ট না পরলেও তাদের পোশাকের নিচের অংশটি ফাঁপা হতো। যখন ফ্ল্যাটিরন ভবনের নিচে প্রচণ্ড বাতাস বইতে থাকতো, বাতাসের জোরে ঢোলা পোশাক উড়তে শুরু করতো। এই আগ্রহে সেখানকায় লোকেরা ভিড় জমাতো।
সেসময়ের অনেক পোস্টকার্ডে এ ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে এখানে একটি প্রশ্ন থাকে। যদি ব্যাপারটা এমনই হয়ে থাকে তাহলে ডাউনড্রট প্রভাব পড়া সব উঁচু দালানের নিচেই তো লোকেদের সমাগম হবার কথা ছিল। কেন বিশেষভাবে নিউইয়র্কের ফ্ল্যাটিরন ভবনের নিচেই এমনটা হতো? হয়তোবা শুধুমাত্র বাতাসের প্রভাব ছাড়াও আরো কিছু বিষয় এর সাথে জড়িত ছিল।
এটা তো গেল একটি দালানের ক্ষেত্রে ডাউনড্রট প্রভাবের কথা। যদি অনেকগুলো উঁচু দালান পাশাপাশি অবস্থিত থাকে তাহলে এদের প্রতিটির উপরেই পৃথক পৃথকভাবে ডাউনড্রট প্রভাব পড়ে এবং সব মিলিয়ে এক বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয় যাকে ‘চ্যানেলিং প্রভাব’ বলে। এর কারণে একটি সরু পথের মধ্য দিয়ে প্রচুর পরিমাণ বাতাস সজোরে সঞ্চালিত হয়। এটিকে এক ধরনের ‘ভেঞ্চুরি প্রভাব’* ও বলা যায়। (*অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীর ইতালীয় বিজ্ঞানী জোভানি বাতিস্তা ভেঞ্চুরির নামানুসারে এ প্রভাবের নাম ‘ভেঞ্চুরি প্রভাব’ রাখা হয়। ভেঞ্চুরির মূল গবেষণার বিষয় ছিল শব্দ ও রঙ, তবে জলবিদ্যার উপর তাঁর কাজও বেশ গুরুত্বপূর্ণ)। উঁচু দালানের নিচে ও আশেপাশে অবস্থিত সরু রাস্তাগুলো ভেঞ্চুরি প্রভাবের জন্য সরু পথ হিসেবে কাজ করে থাকে, ফলে প্রচণ্ড বাতাস সৃষ্টি হয়।
এ তো গেল দালানের চারপাশের অবস্থার উপর বাতাসের প্রভাব। খোদ দালানের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতার উপরও বাতাসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। অভিকর্ষ বল বা ওজন থেকে বাতাসের প্রভাবের বৈপরীত্য হলো এটি মাটির সাথে সমান্তরালভাবে কাজ করে, যেখানে ওজন কাজ করে মাটির সাথে উল্লম্বভাবে। গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হলো, একটি দালানে কতো জোরে বাতাস এসে আঘাত করতে পারে? এটি বের করে ফেলতে পারলে এই গতির বাতাস ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়াও সহজ হবে। কিন্তু এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ সবসময় ও সব জায়গায় সমান থাকে না।
২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় যে বাতাস কোলকাতায় ঘন্টায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিলো তা ঢাকায় আঘাত হানে ঘন্টায় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে। স্বাভাবিকভাবেই একটি খোলা জায়গায় দালান করলে, যেখানে আশেপাশে অন্য কোনো দালান বা ঘরবাড়ি নেই, সেখানে প্রচণ্ড জোরে বাতাস আঘাত করবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একসাথে গাদাগাদি করে বানানো অনেকগুলো দালানে বাতাস খোলা জায়গার তুলনায় কম বেগে আঘাত করবে। জায়গার ভিত্তিতে চট্টগ্রামে ঢাকার তুলনায় বাতাস বেশি হবে। কিছু বাতাস আছে যা প্রতি ১০০ বছরে হয়তো ১ বার আসবে, কিছু বাতাস প্রতি ৫০ বছরে ১ বার।
যদি ১০০ বছরে মাত্র ১ বার আসা বাতাসকে দালানের নকশার জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে দালানের খরচ অনেক বেড়ে যাবে কারণ প্রতি ১০০ বছরে ১ বার আসে এমন বাতাসের গতিবেগ অনেক বেশি হয়। এতোসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রকৌশলীরা কোন বাতাসকে বা বাতাসের গতিবেগকে দালানের নকশার জন্য বিবেচনা করে থাকেন? এবং সেটা কীভাবে করে থাকেন?
গড় বায়ুবেগ (Basic Wind Speed)
দালানের নকশার জন্যে প্রকৌশলীরা একটি নির্দিষ্ট স্থানের জন্য একটি নির্দিষ্ট বায়ুবেগ ব্যবহার করে থাকেন, যাকে বলে গড় বায়ুবেগ। এটি নির্ধারণ করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ যেহেতু প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই এখানে বাতাসের গতিবেগের একটি গড় মানকে ব্যবহার করাই জুতসই হবে। তবে সেটা কত সময়ের বিবেচনায় গড় করতে হবে তা একটি মৌলিক প্রশ্ন- প্রকৌশলী কি ২৪ ঘন্টা সময়ের বাতাসের গতিবেগের গড় নেবেন? ১২ ঘন্টার নেবেন? নাকি ১ ঘন্টার বা ১ মিনিটের বাতাসের গড় গতিবেগকে বিবেচনায় আনবেন?
ছোট সময়ে গড় নেওয়ার সুবিধা হলো এতে খুব সূক্ষ্মভাবে গতিবেগ মাপা যায়, অসুবিধা হলো এটা মাপা বেজায় কষ্ট। খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২৪ ঘন্টার বাতাসের গড় মাপা যেমন সহজ একটা ব্যাপার, এই ২৪ ঘন্টার ভিতরে প্রতিটি মিনিটের গড় বায়ুবেগ মাপা ততটা সহজ নয়। বিএনবিসি, ২০২০ অনুযায়ী বাতাসের গতিবেগের গড় নেয়া হয় প্রতি তিন সেকেন্ডের, যাকে প্রকৌশলের পরিভাষায় Three Second Gust* বলে। (ইংরেজি Gust শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় হঠাত আসা একটি শক্তিশালী বাতাসের ঝাপটা। বাংলাদেশের বিএনবিসি ছাড়াও ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড (বিএস) এবং অ্যামেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স (এএসসিই) অনুযায়ী থ্রি সেকেন্ড গাস্টকে গড় বায়ুবেগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়)।
কোনো স্থানের গড় বায়ুবেগ ৬৫.৬ মিটার/সেকেন্ড বলতে বোঝায় প্রতি তিন সেকেন্ড অন্তর ঐ স্থানে বাতাসের গড় গতিবেগ সর্বোচ্চ ৬৫.৬ মিটার/সেকেন্ড ওঠে। প্রশ্ন থেকে যায়, একটি দালানের গোড়া থেকে একদম সর্বোচ্চ উচ্চতা পর্যন্ত সব জায়গায় বাতাসের গতিবেগ সমান থাকে না, বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন রকম থাকে। যত উঁচুতে ওঠা যায় ততই বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। তাহলে কোন উচ্চতার বাতাসকে দালানের নকশার জন্য বিবেচনা করা হবে? এক্ষেত্রে দালানের ভূমি থেকে ১০ মিটার (প্রায় ৩৩ ফিট) উচ্চতায় আসা বাতাসকে আদর্শ মান হিসেবে ধরা হয়। আর সময়ের হিসেবে প্রতি ৫০ বছরে ১ বার আসা বাতাসকে গড় বায়ুবেগের হিসেবে ধরা হয়। পুরোটা একসাথে বললে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দালানে ভূমি থেকে ১০ মিটার উচ্চতায় প্রতি ৫০ বছরে ১ বার আসা বাতাসের প্রতি তিন সেকেন্ড অন্তর গড় গতিবেগকেই গড় বায়ুবেগ বলে।
এখানে আরও দুইটি ধারণার সাথে পরিচিত হওয়া দরকার, আর তা হলো- এক্সপোজার (Exposure) এবং সারফেস রাফনেস (Surface Roughness), সহজ ভাষায় বললে একটি দালান কতটা উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। কোনো স্থানে দালান নির্মাণের সময় ভূমির উপর বেশ কিছু প্রতিবন্ধক থাকে, যেমন- ভূমির উপর থাকা লম্বা গাছ একটি প্রতিবন্ধক, অন্য দালানকোঠা প্রতিবন্ধক হতে পারে, লম্বা লম্বা যেসব টাওয়ার আছে, এরকম আরো অনেক প্রতিবন্ধক থাকতে পারে। প্রতিবন্ধকের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে স্থানভিত্তিক কিছু শ্রেণিবিভাগ করা হয়।
সারফেস রাফনেস এ – শহুরে বা আধা শহুরে এলাকা বা যেখানে প্রচুর গাছপালা আছে এমন এলাকা অথবা অন্যান্য জায়গা যেখানে খুব কাছাকাছি অনেকগুলো প্রতিবন্ধক একসাথে অবস্থান করে সেসব এলাকা এ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত।
সারফেস রাফনেস বি – এ ধরনের জায়গাগুলো উন্মুক্ত হয় যেখানে ৯.১ মিটারের চেয়ে কম উচ্চতার কিছু ছড়ানো ছিটানো প্রতিবন্ধক থাকে। উন্মুক্ত সমভূমি, তৃণভূমি এবং বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার জলাভূমিগুলো এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত।
সারফেস রাফনেস সি – ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার বাইরের সমতলভূমি ও অনবরুদ্ধ খালি জায়গা এবং জলাভূমি। এখানে মসৃণ কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত সমতলভূমিও অন্তর্ভুক্ত।
এখন সারফেস রাফনেসের বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে জায়গাগুলোর এক্সপোজার নির্ধারণ করা হয়। যেমন –
এক্সপোজার এ – বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী গমনপথে কমপক্ষে ৭৯২ মিটার বা দালানের উচ্চতার ২০ গুণ (দু’টোর যেটা বৃহত্তর হয়) অবধি সারফেস রাফনেস এ বজায় থাকে।
এক্সপোজার বি – এক্সপোজার এ ও সি ব্যতীত অন্য সকল জায়গায় এক্সপোজার বি প্রযোজ্য হবে।
এক্সপোজার সি – বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী গমনপথে ১,৫২৪ মিটার থেকে বৃহত্তর বা দালানের উচ্চতার ২০ গুণ (দুটোর যেটা বৃহত্তর হয়) দূরত্ব অবধি সারফেস রাফনেস সি বজায় থাকে। সারফেস রাফনেস এ ও বি এর ক্ষেত্রে বায়ুর নিম্নমুখী প্রবাহের ২০০ মিটার দূরত্ব বা দালানের উচ্চতার ২০ গুণ দূরত্ব (যেটা বৃহত্তর হয়) অবধি এক্সপোজার সি এর আওতাধীন থাকবে।
ভূমিকম্পের ধাক্কা
২৫শে এপ্রিল, ২০১৫ সাল। নেপালে ৭.৮ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে যার আঘাতে রাজধানী কাঠমান্ডুর অনেক বহুতল ভবন ধ্বসে পড়ে, প্রায় ৯,০০০ জন মানুষ নিহত ও প্রায় ২২,০০০ জন মানুষ গুরুতর আহত হন। এটি সেই অঞ্চলে গত ৮১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল। সর্বমোট প্রায় ৬ লক্ষেরও অধিক বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ২,৮৮,০০০ এরও অধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামাঞ্চলগুলো যেখানে সঠিক সময়ে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো বেশ দুরূহ ছিল।
কাঠমান্ডু উপত্যকার বেশিরভাগ বাড়ি ইটের তৈরি। সেখানে প্রচুর ইটের কাজ হওয়ায় মানুষ বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে ইটকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যদিও ইটের চেয়ে আর সি সি (রিইনফোর্সড সিমেন্ট কনক্রিট) অনেক বেশি ভূমিকম্প সহনীয়। এর ফলে সেখানে দুর্বলভাবে নির্মিত অনেক বহুতল ভবন এবং মন্দির বেশ দ্রুত ধ্বসে পড়ে। তাছাড়া আরো কিছুটা দূরে, পার্বত্য এলাকার ঘরবাড়িতে ইটও ব্যবহার করা হয়নি, সেখানে পাথরের চাই বা কাঠ একটির উপর একটি স্তর আকারে রেখে বাড়ি বানানো হয় কিংবা অনেক ক্ষেত্রে মাটি ব্যবহার করা হয়। এসব আবাসস্থল এত বড় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূমিধ্বস, হিমবাহ এবং অনবরত কম্পনের ধাক্কা সইতে পারে না। ফলে নেপালের পার্বত্য গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে আরো ভয়াবহ রকমের ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন আসে, ভূমিকম্প সহনীয় ভবনের গুরুত্ব কতটুকু এবং কীভাবে একটি ভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা যেতে পারে? প্রকৃতপক্ষে ভবন নির্মাণে ভূমিকম্পকে বিবেচনায় আনার প্রথাটি পুরকৌশলীদের মাঝে মূলত জনপ্রিয় হয় ১৯০৬ সালের সান ফ্রান্সিসকো ভূমিকম্পের পর থেকে। তবে ভূকম্পবিদ্যা (Seismology) এবং দালান নির্মাণ নিয়ে বেশ আগে থেকেই চর্চা ছিল। ১৩২ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক দার্শনিক চ্যাং হেং কে প্রাচীনতম ভূকম্পন সংক্রান্ত যন্ত্র ব্যবহারের কৃতিত্ব দেয়া হয়। চীনে হ্যান রাজবংশের আমলে তিনি পৃথিবীর প্রথম ‘সিসমোস্কোপ’ নির্মাণ করেন। এটিকে বলা হতো Houfeng Didong Yi, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘এমন একটি যন্ত্র যা মৌসুমি বায়ু ও মাটির কম্পন মাপতে পারে’।
এটি ছিল প্রায় ২ মিটার ব্যাসের একটি ব্রোঞ্জের পাত্র যার মাথায় আটটি বিন্দুতে ব্রোঞ্জ নির্মিত আটটি ড্রাগনের মাথা আটটি ড্রাগন বলকে ধরে রাখতো। যখনই কোনো ভূমিকম্প হতো একটি ড্রাগনের মাথা খুলে যেত এবং তাতে ধরে রাখা ড্রাগন বলটিকে নিচে ফেলে দিতো। নিচে থাকতো মুখ হা করে থাকা ব্রোঞ্জের ব্যাঙ যাতে ড্রাগন বলটি নিচে পড়ে আঘাত করলে একটি শব্দ হতো আর এভাবেই কোনদিকে ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে তা বোঝা যেত। এ যন্ত্র দিয়ে প্রথম যে ভূমিকম্প ধরা পড়ে তা বলা হয় ‘সম্ভবত পূর্ব দিকের কোনো এক জায়গায়’। পরবর্তীতে পূর্বদিক থেকে আসা একজন অশ্বচালক উক্ত ভূমিকম্প হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। (সূত্রঃ History of the Later Han Dynasty)
তার বেশ পরে ১৬৬৭-১৬৬৮ সালের দিকে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (যিনি তার স্থিতিস্থাপকতা সংক্রান্ত কাজের জন্য বেশ বিখ্যাত) রয়্যাল সোসাইটিতে একটি সিরিজ উপস্থাপন করেন যার শিরোনাম ছিল ‘Lectures and Discourses of Earthquakes and Subterranean Eruptions’। এটি তার মৃত্যুর পরে ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝের দিকে ব্রিটিশ পুরকৌশলী রবার্ট ম্যালেট সহ আরো অনেক পুরকৌশলী ভূকম্পনমাপক যন্ত্রাংশ তৈরি এবং ভূমিকম্প সংক্রান্ত বিভিন্ন গাণিতিক ও পুরকৌশলগত পদসমূহের নামকরণ করেন (উদাহরণ: সিসমোলজি বা ভূকম্পনবিদ্যা)।
১৮৬৮ সালে জাপানি সম্রাট মেইজির আমলে জাপানে রাজতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়, একে এক কথায় ‘মেইজি প্রত্যর্পণ’ (Meiji Restoration) বলা হয়। সেই সময়ের পরে ১৮৮০ সাল থেকে যেসব ভূকম্পনমাপক যন্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তার কৃতিত্ব দেয়া হয় জন মিলনে, জেমস আলফ্রেড এউইয়িং এবং থমাস গ্রে এর দলটিকে যারা ১৮৮০-১৮৯৫ সালে জাপানে প্রবাসী সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন। (সূত্র: Stephen Cutcliffe, ON SHAKY GROUND: A HISTORY OF EARTHQUAKE RESISTANT BUILDING DESIGN CODES AND SAFETY STANDARDS IN THE UNITED STATES IN THE TWENTIETH CENTURY, Bull. Sci. Tech. Soc., Vol. 16, Nos. 5-6, pp. 311-327, 1996)
বিএনবিসি, ২০২০ এ পুরো বাংলাদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগকে বলা হয় একেকটি ‘সিসমিক জোন’। প্রতিটি জোনের জন্য একটি করে জোন সহগ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যে এলাকার জোন সহগ যত বেশি সেটি তত বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
চারটি জোনের জোন সহগের মানঃ Z = ০.১২ (জোন ১), Z = ০.২০ (জোন ২), Z = ০.২৮ (জোন ৩), Z = ০.৩৬ (জোন ৪)। নগরায়নের ভিত্তিতে যেহেতু বিভাগীয় শহরগুলোতেই দালানকোঠা বেশি নির্মিত হয়, তাই বড় বড় শহরগুলোর জোন সহগ দালান নকশার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এই যেমন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হলো উত্তরপূর্ব জেলাসমূহ, যেমন- সিলেট (জোন ৪, জোন সহগ, Z=০.৩৬)। ঢাকা মধ্যম মানের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে পরে (জোন ২, জোন সহগ, Z=০.২), যেখানে চট্টগ্রাম শহর পড়েছে মারাত্মক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় (জোন ৩, জোন সহগ, Z = ০.২৮) তবে এলাকাটি সিলেটের চেয়ে কম ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাতাসের ধাক্কার বিবেচনার ক্ষেত্রে যেমন একটি সম্ভাব্য বাতাসের চাপকে আদর্শ মান হিসেবে ধরে নেয়া হয়, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও তাই। এখানে যে জোন সহগের মান নির্ধারণ করা হয়েছে তা মূলত ঐ এলাকায় কতটা মারাত্মক ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাব্যতা কতটুকু তা নির্দেশ করে। জোনগুলো নির্ধারণের সময় দেখা হয়েছে এই এলাকায় প্রতি ৫০ বছরে একবার হতে পারে এমন কোনো ভূমিকম্প হবার ২% সম্ভাবনা রয়েছে কতখানি। এই মানটিকে বলা হয় ‘বিবেচ্য সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প’ (Maximum Considered Earthquake, MCE)।
পৃথিবীর ভূত্বক সাধারণত কিছু পাতলা, অনমনীয় খণ্ড বা পাতের সমন্বয়ে গঠিত যাদের ‘ভূত্বকীয় পাত’ বা টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ পড়েছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) ভূত্বকীয় পাতের মধ্যে। এ পাতগুলো চিরজীবনের জন্য একই জায়গায় অবস্থান করে না, এগুলো সময়ে সময়ে নড়াচড়া করে, একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, আর তখনই দেখা দেয় ভূমিকম্পের। বেশ কিছুদিন যাবত (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে) ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেট দুইটি হিমালয়ের পাদদেশে আটকে পড়ে আছে। ফলে এতে প্রচুর পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে, যেকোনো সময় এ শক্তি অবমুক্ত হতে পারে যার ফলাফল হবে বেশ বড় মাত্রার কিছু ভূমিকম্পের।
বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব দিকের এলাকাসমূহ কিন্তু উক্ত ভূত্বকীয় পাতসমূহের বেশ কাছাকাছি অবস্থিত যে কারণে এখানকার জোন সহগের মান সবচেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট স্থানে দালান বানানোর সময় যেকোনো একদিক থেকে আসা ভূমিকম্পের ধাক্কার পরিমাণ বিএনবিসি ২০২০ অনুসারে কীভাবে নির্ণয় করতে হয় তা পরিশিষ্ট তে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২১ সালের মে-জুন মাসে সিলেটে প্রায় ১০ দিন যাবত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূকম্পন অনুভূত হয় যা ভবিষ্যতে কোনো বড় ভূকম্পনের আভাস বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভূকম্পনের কেন্দ্র ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম খাসি পর্বত এবং এর অস্তিত্ব ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। ৩০শে মে পর্যবেক্ষণ শেষে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক দালান ও মার্কেট ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। সিলেট এলাকাটি বিখ্যাত ডাউকি ফল্ট বা ডাউকি চ্যুতির কাছাকাছি অবস্থানে পড়েছে। ডাউকি চ্যুতিটি ভূকম্পনজনিত দিক থেকে প্রচণ্ড সক্রিয় একটি এলাকা যেখানে ২০১১-১৩ সালে প্রায় ৩০০টি কম্পন অনুভূত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্পনগুলো এতটাই মৃদু ছিল যে তা মানুষের পক্ষে অনুভব করাও সম্ভব হয়নি। তবে এ ধরনের ছোট ছোট কম্পনগুলোই ভবিষ্যতের বড় কম্পনের ইঙ্গিত দেয় যা মোটেই সুখকর কিছু নয়।
ডাউকি চ্যুতির জন্ম একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে এবং এটির উপর পৃথিবীর অন্যতম বড় একটি অ্যান্টিক্লাইন (Anticline) গঠিত হচ্ছে। অ্যান্টিক্লাইন হলো স্তরীভূত মাটিতে সৃষ্ট উটের কুজের মতো ধনুকাকৃতির উত্থিত ভাঁজ যার উত্থানের কারণে ক্ষণে ক্ষণে ঐ স্থান ও তার আশেপাশের স্থানে কম্পনের সূত্রপাত হয়।
বিগত ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হয় যা বৃহৎ ভারতীয় ভূমিকম্প (Great Indian Earthquake) নামেও পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.১। সেই সময়েই সিলেট অঞ্চলের ৫৪৫টি দালান ধ্বসে পড়েছিল এবং বিপুল পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছিল। খেয়াল রাখা দরকার, সেইসব দিনে আজকের মতো এতটা ঘনবসতি ছিল না, মানুষ কম সংখ্যায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করতো। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,২৬৫ জন মানুষ বাস করে (সূত্র: ওয়ার্ল্ডোমিটার, জুলাই, ২০২১) যেখানে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৩,২৩৪ জন মানুষ থাকে (সূত্র: ওয়ার্ল্ড পপুলেশান রিভিউ, জুলাই, ২০২১)।
‘আর্থকোয়েক ডিজাস্টার রিস্ক ইনডেক্স’ অনুসারে ভূকম্পনজনিত ঝুঁকির দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের একটি। ‘কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি)’ এর হিসেব মতে ঢাকায় যদি এখন ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় তাহলে তাতে প্রায় ৭২,৩১৬টি দালান সম্পূর্ণরূপে ধ্বসে পড়বে এবং ৫৩,১৬৬টি দালানের আংশিক ক্ষতি সাধিত হবে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯,৩২৬ কোটি টাকা)। বাংলাদেশের মাত্র একটি দালান রানা প্লাজা ধ্বসের পরে তার উদ্ধারকাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ২১ দিন। এরকম যদি অসংখ্য রানা প্লাজা একই দিনে ভূকম্পনের কারণে ধ্বসে পড়ে তাহলে কী ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ হবে তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।