কালচারড মিট। প্রাকৃতিক উপায়ে কোনো পশু বা পাখি থেকে নয়, বরং ল্যাবে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হয় এই মাংস। এই মাংসের জন্য প্রয়োজন পড়ে না প্রাণী হত্যার। ডিএনএ-র সাহায্যে সহজেই মাংস উৎপাদিত হয় ল্যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে এই কালচারড মিট নিয়ে কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই প্রয়াসেরই একটি অংশ হিসেবে এ বছরের মার্চে প্রাচীন ম্যামথের ডিএনএ থেকে মাংস নয়, পুরো একটা বিশাল মিটবল বানিয়ে ফেলেছেন তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে নেদারল্যান্ডসে। অস্ট্রেলিয়ান কালচারড মিট কোম্পানি ভাউ হুইচ অনেকদিন ধরে প্রাকৃতিক মাংসের একটা অন্য উৎস মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছিল। তবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সাধারণ মাংস থেকে বেরিয়ে এসে একদম অন্য কিছু যে প্রয়োজন সেটাও জানা ছিল কোম্পানিটির। বিজ্ঞানীদের মতে, ম্যামথ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। তাই জলবায়ুকে ঠিক রাখার ব্যাপারটি প্রাধান্য দিয়ে ম্যামথের একক জিন মায়োগ্লোবিন ব্যবহার করে মিটবলটি বানিয়েছে তারা। সেটি প্রদর্শনও করা হয়েছে জনসম্মুখে নেদারল্যান্ডের একটি বিজ্ঞান জাদুঘরে।
ভাউ হুইচের প্রতিষ্ঠাতা টিম নোকেস্মিথ ও প্রধান বিজ্ঞানী জেমস রায়াল জানান, মায়োগ্লোবিন মাংসের স্বাদ, রঙ আর গন্ধ নির্ধারণ করে দেয়। তাই আসল ম্যামথের চেয়ে কৃত্রিম ম্যামথের মিটবলের স্বাদ আলাদা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে ম্যামথের ডিএনএ স্যাম্পলে কিছু ফাঁকফোকর থাকায় সেটা পূরণ করতে এই প্রকল্পে আফ্রিকান হাতির ডিএনএ ব্যবহার করেছে তারা। সাধারণত, কালচারড মিট তৈরিতে প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা হয়। তবে ম্যামথ মিটবলের বেলায় কোনো প্রাণীহত্যারই করার প্রয়োজন পড়েনি। কেন ব্যবহার করা হয়নি তার কারণটাও আমাদের সবারই জানা।
কুমিরের মাংসের গন্ধসহ ম্যামথ মিটবলটি অবশ্য এখনই খাওয়া যাবে না। তার আগে প্রয়োজন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার।
“প্রোটিনটি একদম প্রায় ৪,০০০ বছর পুরনো। অনেকগুলো দিন আমরা জিনিসটাকে দেখিইনি। তাই এই মাংসকে বাজারজাত করার আগে আরো অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।” বলেন নোকেস্মিথ।
তবে একবার কালচারড মিট গ্রহণের চলন শুরু হলে সেটা যে পুরো ইউরোপের মার্কেটে সাড়া ফেলবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত এই উদ্যোক্তা। কী ভাবছেন আপনি? যদি আসলেই বাজারে কৃত্রিম এই মাংস পাওয়া যায়, খাবার পাতে সেটাকে রাখার কথা ভাববেন কি?