Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিয়াওয়াকি পদ্ধতি: ছোট পরিসরের জঙ্গল তৈরির অভিনব প্রক্রিয়া

দিন দিন অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেই চলেছে। আর এর বিরূপ প্রভাবও আমাদের সকলের কাছে স্পষ্ট। তবে কৃত্রিমভাবে একটি বনাঞ্চল তৈরি করা সহজ নয়। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে এর পরিচর্যা এবং বৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন ও সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, কৃত্রিমভাবে কোনো বন বা জঙ্গল তৈরি করা একটি জটিল বিষয় বটে। তবে জাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি একটি পদ্ধতির প্রবর্তন করেন যার মাধ্যমে খুব দ্রুতই ঘন জঙ্গল বা বন তৈরি করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় বড় জায়গার প্রয়োজন হয় না। আর তিন বছর পর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নেওয়ার দরকার হয় না। অভিনব এই পদ্ধতির নাম ‘মিয়াওয়াকি’।

সত্তরের দশকে ড. মিয়াওয়াকি জাপানের পতিত জমিতে বনায়নের উদ্দেশ্যে মিয়াওয়াকি পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন; Image source: aranyaka.org.in

মাত্র ৩০ বর্গ ফুট জায়গাতেও মিয়াওয়াকি পদ্ধতির মাধ্যমে জঙ্গল বানানো সম্ভব। সত্তরের দশকে ড. মিয়াওয়াকি জাপানের পতিত জমিতে বনায়নের উদ্দেশ্যে এই প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতিতে মিয়াওয়াকি মূলত স্থানীয় প্রজাতির গাছ বাছাইয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এতে গাছগুলো সহজেই স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং যে বন সৃষ্টি হয় তা টেকসই হয়। মিয়াওয়াকি জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১,০০০ এরও অধিক ছোট জঙ্গল বা বন তৈরি করেন। বর্তমানে তার এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নেদারল্যান্ড, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ মিয়াওয়াকি ফরেস্ট তৈরি করছে।

কীভাবে মিয়াওয়াকি পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় সেটা বলার আগে একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন কেন এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ এই অভিনব পদ্ধতির ইতিবাচক দিকগুলো কী কী কিংবা প্রচলিত গাছ লাগানোর পদ্ধতিগুলো থেকে এটি ব্যতিক্রম কেন?

 

মিয়াওয়াকি পদ্ধতি কেন দরকার?

প্রতি বছর গড়ে সাধারণ গাছের তুলনায় মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা গাছগুলো ১০ গুণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়। বছরে অন্তত ১ মিটার বৃদ্ধির নিশ্চয়তা থাকে। এতে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ২০-৩০ বছরের মধ্যেই গভীর বনভূমি তৈরি করা সম্ভব, যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতে কয়েকশো বছর লেগে যায়। তাছাড়া প্রক্রিয়াটি শুরু করার ২-৩ বছর পর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার কোনো ঝামেলা থাকে না। এসব গাছ নিজেরাই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কোনো দরকার হয় না।

মিয়াওয়াকি পদ্ধতির গাছগুলো প্রায় ৩০ গুণ বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে থাকে। অর্থাৎ পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এসব গাছ অত্যন্ত উপকারী। শহরে বনাঞ্চল বৃদ্ধি করতে, পরিবেশ দূষণ কমাতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে মিয়াওয়াকি বনাঞ্চল। এ ধরনের বনায়নের ফলে যেসব অঞ্চলের গাছপালা প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেসকল এলাকায় পুনর্বনায়ন করা সম্ভবপর হয়। খরা এবং সুনামির ক্ষয়ক্ষতি রোধে এসকল বনভূমিও প্রাকৃতিক বনভূমির মতো সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রচলিত বৃক্ষরোপণের তুলনায় এই প্রক্রিয়ায় একই জায়গায় ৩০ বা ততোধিক ধরনের গাছ লাগানো যায়।

মিয়াওয়াকি জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১,০০০ এরও অধিক ছোট জঙ্গল বা বন তৈরি করেন; Image source: reforestaction.com

মিয়াওয়াকি বন বা জঙ্গল তৈরির ধাপসমূহ

মাটির ধরন পর্যবেক্ষণ করা

প্রথমেই জানা প্রয়োজন যেখানে বন তৈরি করা হবে সেখানকার মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা, পানির অনুপ্রবেশ ও বাতাস চলাচলের ক্ষমতা, জৈব বস্তুর পরিমাণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে সেই স্থানের মাটি বেলে, দোআঁশ নাকি এঁটেল- সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এজন্য একমুঠো মাটিতে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একটা গোল বল বানানোর চেষ্টা করতে হবে। মাটিতে বালি বা বেলে মাটির পরিমাণ বেশি হলে তা বল তৈরির সময়ই ভেঙে যাবে।

মাটির বল বানানোর পর সেটাকে চ্যাপ্টা ফিতার মতো করার চেষ্টা করতে হবে। ফিতা যত লম্বা হবে, মাটিতে কাদার পরিমাণও তত বেশি। দোআঁশ মাটি বৃক্ষরোপণের জন্য আদর্শ- এখানে বালি ও কাদার একটি যথাযথ সংমিশ্রণ থাকে। বেলে বা এঁটেল মাটি হলে এতে কিছু উপকরণ দিয়ে বৃক্ষরোপণের উপযোগী করে তুলতে হয়। যেমন- বেলে মাটির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানের সংযোগে এর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে।

মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য এমন কিছু জৈব বস্তু ব্যবহার করতে হবে যা মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা এবং মাটিতে বাতাস চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোকোপিট বা শুকনো আখের ছিবড়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর বাতাস চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ধান কিংবা গমের তুষ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাটিতে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদান বৃদ্ধি করার জন্য ভার্মি কম্পোস্ট কিংবা গরুর গোবর, ছাগলের বর্জ্য ইত্যাদি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

স্থানীয় প্রজাতির গাছ বাছাই করা

মিয়াওয়াকি পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জটিল একটি ধাপ হলো- অঞ্চলভেদে স্বাভাবিক বা স্থানীয় প্রজাতির গাছের তালিকা তৈরি করা। এই প্রক্রিয়া সফল করতে স্থানীয় গাছ লাগানোই শ্রেয়। যদি নির্বাচিত এলাকার আশেপাশে ৫০-১০০ মিটারের সীমানায় কোনো বন বা জঙ্গল থাকে, তাহলে সেই জায়গায় কী কী গাছ আছে সেটার তালিকা করাই ভালো। তবে আশেপাশে বনাঞ্চল না থাকলে সেই এলাকা সম্পর্কে জানা আছে এমন কোনো বিশেষজ্ঞ কিংবা অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে কাজটা করা লাগবে। এই কাজটা ক্ষেত্রবিশেষে সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সচেতনভাবে গাছ বাছাই করার পর সেসব গাছের বীজ সংগ্রহ করে নার্সারি তৈরি করতে হবে কিংবা সরাসরি ৬০-৮০ সেন্টিমিটার লম্বা চারাগাছ কিনতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এসব কোনো স্থানীয় দোকান থেকে কেনা সম্ভব হয়।

এই বনে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, অর্ধেক বৃক্ষজাতীয় গাছ লাগালে চার ভাগের এক ভাগ মাঝারি উচ্চতার গাছ এবং বাকি জায়গায় ঝোপজাতীয় গাছ লাগাতে হবে। মূলত চার ধরনের স্তর এখানে ব্যবহার করতে হবে, যেমন- স্রাব ট্রি, সাব-ট্রি, ট্রি এবং ক্যানোপি। ট্রি বলতে বোঝানো হচ্ছে বৃক্ষজাতীয় গাছকে। স্রাব ট্রি হলো বৃক্ষের তুলনায় ছোট গাছগুলো, এবং সাব-ট্রি হলো মূলত পরজীবী উদ্ভিদ। বনের ভেতরে বড় বড় গাছগুলো একত্রিত হয়ে উপরের দিকে একটি আচ্ছাদন সৃষ্টি করে, যার ফলে সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। এই আচ্ছাদনই হলো ক্যানোপি। এরকম গাছও মিয়াওয়াকি বনভূমিতে দরকার। এভাবে ৩০ বা ততোধিক প্রকারের গাছ একটি মিয়াওয়াকি বনে লাগানো যেতে পারে।

মূলত চার ধরনের স্তর এখানে ব্যবহার করতে হবে, যেমন- স্রাব ট্রি, সাব-ট্রি, ট্রি এবং ক্যানোপি; Image source: richmond-news.com

বনের অবস্থান ও গঠন

যে জায়গায় বন তৈরি করা হবে সেটা প্রস্থে অন্তত ৩ মিটার হতে হবে। তবে চার মিটার বা এর অধিক এলাকা নেয়াই শ্রেয়। পানির পাইপলাইনের নকশা করার ক্ষেত্রে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন কাউকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। প্রথম দুই থেকে তিন বছর গাছগুলোকে নিয়মিত পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সময়ের পরে অবশ্য বনটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, চারাগাছ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখার জন্য গুদামঘর, সাইট অফিস এবং শ্রমিকদের বিশ্রাম নেওয়ার জায়গাও প্রজেক্টটি শুরু হওয়ার আগেই ঠিক করে নিতে হবে। ফলে প্রক্রিয়াটি শুরু করার পরে এসব কারণে মাঝপথে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হবে না। সাধারণত বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যেকোনো সময়ে এই প্রক্রিয়ায় গাছ লাগানো শুরু করা যেতে পারে।

বনের জন্য অঞ্চল নির্ধারণ করা

যে এলাকা বা অঞ্চল এই কাজের জন্য নির্ধারণ করা হবে, সেখানে যেন দিনের ৮-৯ ঘণ্টা সূর্যালোক থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। আর এই স্থানের কাছাকাছি যেন ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো জায়গা না থাকে। স্থানটিতে আগাছা এবং ময়লা থাকলে প্রথমেই তা ভালোমতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। বড় বড় পাথর থাকলে সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে। আর এই এলাকাতে যদি গৃহপালিত পশুর আনাগোনা থাকে তাহলে অবশ্যই অঞ্চলটি ঘিরে বেড়া দিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া অপ্রয়োজনে এই প্রক্রিয়া চলাকালীন মানুষজন যেন চলাচল না করে বা ময়লা না ফেলে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু প্রথম ২-৩ বছর নিয়মিত পানি ছিটানো প্রয়োজন হয়, সেজন্য হোস পাইপের ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজের জন্য ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিংকলার ব্যবহার করা যাবে না। একদিনে প্রতি বর্গ ফুটে সাধারণত ৫ লিটারের মতো পানির প্রয়োজন হয়। 

এই এলাকাতে যদি গৃহপালিত পশুর আনাগোনা থাকে তাহলে অবশ্যই অঞ্চলটি ঘিরে বেড়া দিয়ে দিতে হবে; Image source: hindustantimes.com

গাছ লাগানো

গাছ লাগানোর জন্য প্রথমেই আর্থ মুভার মেশিন বা জেসিবি জাতীয় যন্ত্র দিয়ে ঐ এলাকার মাটি ১ মিটার গভীর খনন করে নিতে হবে। খনন করার পূর্বে অবশ্যই মাটির উর্বরতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এখন অর্ধেক মাটি আবার সেই গর্তেই দিতে হবে। গর্তে মাটি দেওয়ার সময় ভালো করে ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে করে মাটির মধ্যে পানি এবং বাতাস ঢোকার সুযোগ পাবে।

প্রচলিত নিয়মে সাধারণত প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা আলাদা করে গর্ত খনন করে নিতে হয়। কিন্তু মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে পুরো অঞ্চল একবারে খনন করে নিলেই হয়। এরপর গাছের চারাগুলো গর্তে বসাতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন একই ধরনের দুটি গাছ পাশাপাশি না থাকে। অর্থাৎ দুটি বৃক্ষ কিংবা দুটি স্রাব-ট্রি যেন পাশাপাশি অবস্থান না করে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি পুরো এলাকা বৃক্ষরোপণের পূর্বে একাধিক স্কয়ারে বা বক্সে ভাগ করে নেওয়া হয় এবং প্রতিটি বক্স এলাকায় যেন চার ধরনের গাছ থাকে সেটা নিশ্চিত করা। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি গাছের মাঝে যেন দেড় থেকে দুই ফুটের দূরত্ব থাকে।

 
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি গাছের মাঝে যেন দেড় থেকে দুই ফুটের দূরত্ব থাকে; Image source: ensia.com

প্রথম তিন বছরের পরিচর্যা

প্রথম তিন বছরের ক্ষেত্রে মিয়াওয়াকি বন বা জঙ্গল খুব ভালো করে পরিচর্যা করার প্রয়োজন হয়। ১-২ মাস অন্তর অন্তর বনে গাছগুলোর বৃদ্ধি কেমন হচ্ছে, কোনো ধরনের আগাছা আছে কিনা কিংবা কোনো গাছ মরে যাচ্ছে কিনা- সেগুলো খেয়াল করতে হবে। মূল উদ্দেশ্য অনুযায়ী ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে নাকি কিংবা কোনো ধরনের পরিবর্তন করে ফলাফল আরো উন্নত করা গেলে সেটা প্রথম ৮-১২ মাসের মধ্যেই করতে হবে। তাছাড়া কয়টি চারাগাছ মারা গিয়েছে এবং কোন কোন প্রজাতির গাছের বৃদ্ধি ভালো সেটার প্রতিও বিশেষ নজর রাখতে হবে।

পরিচর্যার ক্ষেত্রে প্রতিদিন হোস পাইপের মাধ্যমে পানি দিতে হবে, প্রথম ২-৩ বছর যেন কোনো ধরনের আগাছা না হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আগাছা হলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। গাছগুলো সোজাসুজিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। দরকার হলে কোনো লাঠি দিয়ে গাছ সোজা রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে। কোনো ধরনের সার ও কীটনাশক এই বনে ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো ধরনের সার ও কীটনাশক এই বনে ব্যবহার করা যাবে না; Image source: bengaluru.citizenmatters.in

মিয়াওয়াকি পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব?

কিছু কিছু পরিবেশবিদদের মতে, মিয়াওয়াকি বনভূমি প্রাকৃতিক বনভূমির বিকল্প হতে পারে না। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়- এসকল বনভূমি বা এগুলোর গাছপালায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনভূমি বা গাছগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর অনুপস্থিতি। বনভূমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এসকল বন থেকে প্রাপ্ত কিছু গাছে স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধি গুণ থাকে। তাছাড়া বন্যপ্রাণীদের জন্য বসবাস উপযোগী আবাসস্থলও হলো এসকল বনাঞ্চল। তবে এসবের কোনো উপকারিতাই মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে তৈরি বনাঞ্চল থেকে পাওয়া যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, এ ধরনের বনাঞ্চল বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে অপারগ এবং এখানে সাধারণ বনাঞ্চলের মতো ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছের বৃদ্ধি সম্ভব হয় না। মিয়াওয়াকি বনভূমিগুলো এত বেশি ঘন থাকে যে, সেখানে বন্যপ্রাণীদের বসবাস করা সম্ভব নয়। কিছু পরিবেশবিদের মতে, মিয়াওয়াকি পদ্ধতি শুধুমাত্র অল্প পরিসরের জায়গায় বা শহরের কাছাকাছি কোনো স্থানে ব্যবহার করলে তা কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়। তবে যেসকল দেশ গ্রীষ্মপ্রধান, সেখানে এই প্রক্রিয়া কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মিয়াওয়াকি বনভূমি পরিপূর্ণভাবে কখনোই প্রাকৃতিক বনভূমির বিকল্প নয়, তবে এর ইতিবাচক দিকগুলোকে একেবারেই অবহেলা করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে বনাঞ্চল কিংবা একটু সবুজের ছোঁয়াও আজ বিরল। এমন অবস্থায় মিয়াওয়াকি পদ্ধতি নিঃসন্দেহে একটি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনো আমাদের দেশে তেমন কোনো গবেষণা কিংবা পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বৃক্ষনিধন বন্ধ করার পাশাপাশি বনাঞ্চল বৃদ্ধিতেও গুরুত্বারোপ দরকার। বড় পরিসরে বন বা জঙ্গল তৈরি করা সম্ভব না হলেও কীভাবে আমাদের দেশে মিয়াওয়াকি পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে আরো কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।

This article is in Bangla language. It's about Miyawaki Method, a unique way to create mini forests. Sources have been hyperlinked in this article.
Featured image: reforestaction.com
      

Related Articles