
‘ক্যান্সার’- শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। দেহকোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনই ক্যান্সারের কারণ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, বরং বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধান এবং একে সারিয়ে তোলার জন্য কম চেষ্টা করে যাচ্ছেন না। তা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত এর কোনো কার্যকরী নিরাময় আবিষ্কৃত হয়নি। কেমোথেরাপির যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায় পার করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না অনেকের। নানান রকম ক্যানসারের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত, যার একটি লিউকেমিয়া। লিউকেমিয়া এমন একটি ক্যান্সার যার জন্য রক্তের শ্বেতরক্তকণিকা সমূহের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনই দায়ী।
ছড়াবার গতি ও স্থানের উপর নির্ভর করে লিউকেমিয়াকে প্রধানত চার প্রকারে ভাগ করা যায় যার মধ্যে একটি ‘ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া’। এর উত্পত্তিস্থল মূলত অস্থিমজ্জা এবং যেখান থেকে রক্ত তৈরি হয় সেসব স্থান। রক্ত ও অস্থিমজ্জার এই ক্যান্সারের নামই বলে দেয় এটি ছড়াবার গতি বেশ শ্লথ। তবে ছড়াতে ছড়াতে রক্ত ও অস্থিমজ্জার গন্ডি অতিক্রম করে এটি চলে যেতে পারে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে, এমনকি ছেয়ে যেতে পারে পুরো শরীরে।
লিউকেমিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও একটি জিনিস একে আলাদা করেছে। আর সেটি হল এই লিউকেমিয়াটি সৃষ্টির পেছনে দায়ী একপ্রকার অস্বাভাবিক ক্রোমোজম। মিউটেশন বা জীনগত পরিবর্তন এর দরুণ সৃষ্ট এই অস্বাভাবিক ক্রোমোজমটির নামই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম। ফিলাডেলফিয়াতে এটি সর্বপ্রথম খুঁজে পাওয়া যায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
আমরা জানি, মানবদেহের গঠনের একক হলো কোষ এবং এই কোষের অভ্যন্তরীণ নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজম, যেখানে বংশগতির ধারক ও বাহক ডিএনএ থাকে। ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম প্রকৃতির এক অদ্ভুত খামখেয়ালিপনার ফল, যেখানে দেহের দুটি স্বাভাবিক ক্রোমোজমের অস্বাভাবিক সমন্বয়ে উত্পত্তি হয় পরিবর্তিত দুটি ক্রোমোজমের, যার একটি এই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম। এছাড়াও একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (এএলএল) রোগের একটি ধরনেও ভূমিকা রাখে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম।
কী এই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম আর কীভাবেই বা এর উত্পত্তি?
এ কথা আমরা অনেকেই জানি যে, মানবদেহে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজম আছে এবং এই ক্রোমোজমে থাকা ডিএনএ হলো বংশগতির ধারক ও বাহক। এই ২৩ জোড়া ক্রোমোজমে থাকা ডিএনএ-ই নির্ধারণ করে দেয় দেহের কোষকলাসমূহ কীভাবে কোন কাজটি করবে। এই ক্রোমোজম কিংবা ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন এলে তা দেহে নিয়ে আসতে পারে বড়সড় কোনো পরিবর্তন- ঠিক যেমনটি ঘটেছে এই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজমের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় আবিষ্কৃত এই ক্রোমোজমটির উদ্ভব হয় যখন মানবকোষের নিউক্লিয়াসে থাকা ৯ ও ২২ নং ক্রোমোজমের কিছু অংশ ভেঙ্গে পরষ্পর স্থান বিনিময় করে। এর ফলে অস্বাভাবিক খাটো আকৃতির ২২ নং ক্রোমোজম উদ্ভূত হয়। এই অস্বাভাবিক এবং খাটো ২২ নং ক্রোমোজমের নাম ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম যা কিনা ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া এবং একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার মতো সর্বনাশা ক্যান্সার বয়ে আনার জন্য দায়ী।
২২ ও ৯ নং ক্রোমোজমের কিয়দংশ এভাবে স্থান বিনিময় করার সময় ২২ নং ক্রোমোজমে অবস্থিত BCR (Breakpoint Cluster Region) এবং ৯ নং ক্রোমোজমে থাকা ABL-1 জীন এর অংশও পরস্পর স্থান বিনিময় করে এবং সৃষ্টি হয় ABL-BCR যুক্ত অপেক্ষাকৃত লম্বা ৯ নং ক্রোমোজম এবং BCR-ABL সম্বলিত পূর্বাপেক্ষা খাটো ২২ নং ক্রোমোজমের। এই BCR-ABL জীনমিশেলযুক্ত পূর্বাপেক্ষা খাটো হয়ে যাওয়া ২২ নং ক্রোমোজোমই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম।

যেভাবে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম সৃষ্টি হয়; source: cancer.gov
স্বাভাবিক ABL-1 জীন একপ্রকার কোষীয় মেমব্রেন সংস্থিত টাইরোসিন কাইনেজ উত্পাদনে ভূমিকা রাখে, যা কিনা কোষের নানান অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চালু ও বন্ধে ভূমিকা রাখে। ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজমের ফলে যে BCR-ABL জীনের উত্পত্তি হয়, তা থেকে উদ্ভূত প্রোটিন হলো সেই পূর্বেরই টাইরোসিন কাইনেজ এনজাইম যা ABL জীন দ্বারা তৈরি হতো, কিন্তু একই হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৈরি এই এনজাইমটি লাগাতার সক্রিয় থাকে। এই সদা সক্রিয় টাইরোসিন কাইনেজ মাইলয়েড শ্বেতরক্তকণিকাসমূহের অস্বাভাবিক বিভাজনের সূচনা করে, যার ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় লিউকেমিয়া তথা ক্যান্সার।
রক্ত তৈরির সময় স্টেমসেল থেকে তৈরি হয় দুই ধরনের কোষ- লিম্ফয়েড স্টেমসেল এবং মাইলয়েড স্টেমসেল। লিম্ফয়েড স্টেমসেল থেকে লিম্ফোব্লাস্ট নামক কোষ তৈরি হয়, তা থেকে পরবর্তীতে রক্তের লিম্ফোসাইট নামক শ্বেতরক্তকণিকাসমূহ তৈরি হয়। অপরপক্ষে, মাইলয়েড স্টেমসেল থেকে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা এবং মায়েলোব্লাস্ট কোষ তৈরি হয়। এই মায়েলোব্লাস্ট কোষ থেকে তৈরি হয় গ্র্যানুলোসাইট শ্বেতরক্তকণিকা। ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া গ্র্যানুলোসাইট শ্বেতরক্তকণিকার একপ্রকার ক্যান্সার এবং একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া লিম্ফোসাইট শ্বেতরক্তকণিকাসমূহের ক্যান্সার।

যেভাবে রক্তকণিকাসমূহ তৈরি হয়; source: Terese Winslow, 2007
ক্রনিক মায়েলোজেনাস/মাইলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল)
ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া (Chronic Myelogenous Leukemia) বা সিএমএল (CML) রক্ত ও অস্থিমজ্জার রোগ, যেখানে অস্বাভাবিক হারে রক্তের গ্র্যানুলোসাইট শ্বেত রক্তকণিকাসমূহ তৈরি হয়। তাই একে ক্রনিক গ্র্যানুলোসাইটিক লিউকেমিয়াও বলা হয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই ক্যান্সারটির জন্য দায়ী ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম। ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজমের কারণে শরীরে তৈরি হওয়া স্বাভাবিক টাইরোসিন কাইনেজ নামক এনজাইমের পরিবর্তে তৈরি হয় অস্বাভাবিক টাইরোসিন কাইনেজ। ফলে দেহের গ্র্যানুলোসাইট উত্পাদনের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে তৈরি হয় অসংখ্য অস্বাভাবিক গ্র্যানুলোসাইট, যেগুলো অস্থিমজ্জাকে ধীরে ধীরে ছেয়ে ফেলে। এই কোষগুলোকে বলা হয় ব্লাস্ট কোষ বা লিউকেমিক ব্লাস্ট। লিউকেমিক ব্লাস্টগুলো অস্থিমজ্জার উপরের অনেকটা অংশ দখল করে ফেলায় সেখানে স্বাভাবিক রক্তকণিকাসমূহ আর তৈরি হতে পারে না। উপরন্তু, ব্লাস্টকোষগুলো স্বাভাবিক রক্তকণিকার মতো নয় এবং সেভাবে মরেও না, ফলে ধীরে ধীরে এদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় স্বাভাবিক শ্বেতরক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকে। ফলত দেখা দিতে পারে রক্তাল্পতা, সংক্রমণ কিংবা অল্পতেই রক্তপাতের মতো লক্ষণ।
প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত হওয়া লিউকেমিয়ার মধ্যে ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার হার শতকরা ২০ ভাগ। সাধারণত মধ্যবয়সী মানুষ এতে বেশি আক্রান্ত হন। তবে তুলনামূলকভাবে কম হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়ে কমবয়সীদের মধ্যেও এ রোগ দেখা যায়। কমবয়সীদের ক্ষেত্রে এ রোগের তীব্রতর প্রকার লক্ষ করা যায় যেমন- ব্লাস্ট দশা।
ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার (CML) তিনটি স্তর রয়েছে:
- Chronic বা দীর্ঘকালীন
- Accelerated তথা তীব্রতর
- ব্লাস্টিক (Blastic)
দীর্ঘমেয়াদি দশা
রোগের দীর্ঘমেয়াদি এ দশায় রক্ত এবং অস্থিমজ্জার কোষগুলোর মধ্যে ব্লাস্টকোষের সংখ্যা মাত্র ১০% এর কম থাকে।
তীব্রতর দশা
এই স্তরে রক্ত ও অস্থিমজ্জার কোষগুলোর মধ্যে শতকরা ১০-১৯ ভাগ ব্লাস্টকোষ থাকে।
ব্লাস্টিক দশা
রোগের এই দশায় রক্ত ও অস্থিমজ্জায় শতকরা ২০ ভাগ বা তার বেশি পরিমাণে ব্লাস্টকোষ থাকে। ব্লাস্টিক দশায় যখন ক্লান্তি, জ্বর এবং প্লীহা বড় হয়ে যাবার মতো ঘটনা ঘটে তখন তাকে ‘ব্লাস্ট ক্রাইসিস’ বলে।

ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার স্তরসমূহ; source: Oumar Samassekou, 2013.
লক্ষণসমূহ
এই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ হল:
- সহজেই রক্তপাত
- ক্লান্তি
- জ্বর
- কোনোরকম চেষ্টা ব্যতিরেকে ওজন কমে যাওয়া
- ক্ষুধামন্দা
- বামদিকের পাঁজরের হাড়গুলোর নিচে ভারী লাগা বা ব্যথা হওয়া
- ফ্যাকাশে ত্বক
- ঘুমের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়া
এছাড়াও এই রোগে আরো নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
সংক্রমণ – যদিও শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ করে, কিন্তু এ রোগে উত্পন্ন হওয়া রক্তকণিকাগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই এরা রোগ প্রতিরোধে অক্ষম। এছাড়া এ রোগের চিকিত্সা নেবার সময় স্বাভাবিক শ্বেতরক্তকণিকার মাত্রাও বেশ কমে যায় (neutropenia), যার ফলস্বরূপ মানুষ হতে পারে সংক্রমণের শিকার।
অতিরিক্ত রক্তপাত- রক্তে থাকা অণুচক্রিকাসমূহ রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের অণুচক্রিকাসমূহ কমে গেলে (thrombocytopenia) অল্পতেই রক্তপাতও হতে পারে, এর মধ্যে নাক থেকে ঘন ঘন বা প্রচুর রক্তপাত, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত কিংবা ত্বকে রক্তক্ষরণের ফলে ছোট ছোট লাল গুটি (petechiae) অন্যতম।
ব্যথা- অস্থিমজ্জায় ব্লাস্টকোষ বেড়ে যাবার ফলে মজ্জার আয়তন বৃদ্ধি পায় যা অস্থিসন্ধির ব্যথার উদ্রেক করে।
প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া- এ রোগে প্লীহায় অতিরিক্ত রক্তকণিকা তৈরি হয় যার ফলে প্লীহা ফুলে যায় বা বড় হয়ে যেতে পারে। এই ফুলে যাবার ফলে তা পেটে অতিরিক্ত স্থান দখল করে, যার কারণে অল্প খাবার গ্রহণের পরেই ভারি ভাব চলে আসে কিংবা বাম পাঁজরের নিচে ব্যথা হতে পারে।
মৃত্যু- সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা গেলে মৃত্যু অবধারিত।
কিছু কিছু ব্যাপার ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে-
- অধিক বয়স
- পুরুষদের বেশি ঝুঁকি থাকে
- বিকিরণের সংস্পর্শে আসা, যেমন কিনা কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপি নেয়া হলে।
পারিবারিক ইতিহাসে এ রোগের উপস্থিতি কোনো ঝুঁকির কারণ নয়। এই রোগ সৃষ্টিকারী মিউটেশনটি পিতা-মাতা থেকে সন্তানে পরিবাহিত হয় না। জন্মের পরেই মিউটেশনটির বিস্তার হয়ে থাকে।

ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার কারণ জীনগত মিউটেশন; source: Jorge Muniz, 2016.
রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষা এবং অস্থিমজ্জায় ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজমের উপস্থিতি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
CML এর জন্য এমন ঔষধ ব্যবহার করা হয় যেগুলো টাইরোসিন কাইনেজকে প্রতিহত করে যেমন- ইমাটিনিব মিসাইলেট, ডাসাটিনিব ইত্যাদি। এছাড়াও ইন্টারফেরন আলফা, ওমাসেটাক্সিন ইত্যাদিরও ব্যবহার আছে। অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপন (Allogeneic bone marrow transplantation (BMT) or stem cell transplantation) বা স্টেম সেল প্রতিস্থাপন এই রোগের একটি চিকিত্সা, একমাত্র যার দ্বারা এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের শতকরা ৩১-৪৩ ভাগ এবং আরো বেশি বয়সীদের শতকরা ১৪-২৭ ভাগের জীবন অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাঁচানো সম্ভব।
ফিলাডেলফিয়া পজিটিভ একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া
একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (acute lymphoblastic leukemia) বা ALL শিশুদের মধ্যে দেখা দেয়া রক্তের শ্বেতরক্তকণিকাসমূহের একপ্রকার ক্যান্সার। সাধারণ ALL এর সাথে ফিলাডেলফিয়া পজিটিভ ALL (Philadelphia Chromosome positive acute lymphoblastic leukemia (Ph+ALL)) এর তফাত্ এখানে যে, ফিলাডেলফিয়া পজিটিভ একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়াও জীনগত মিউটেশনের ফলেই হয় এবং এই মিউটেশনটি আর কেউ নয়, আমাদের পরিচিত ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া পজিটিভ ALL শিশুদের মধ্যে বেশ বিরল এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

ছোটদের চেয়ে বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফিলাডেলফিয়া পজিটিভ একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া। চিত্রে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত অংশ দিয়ে বোঝানো হয়েছে; source: frontiersin.org
উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ
উপসর্গ এবং লক্ষণসমূহ স্বাভাবিক ALL এর মতোই-
- প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
- লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া
- ফ্যাকাশে ভাব
- জ্বর
- কালচে হয়ে রক্ত জমাট বাঁধা
- ওজন হ্রাস পাওয়া
- হাড়ে ব্যথা
- রক্তকণিকা সংখ্যার অস্বাভাবিকতা
তবে এই সকল লক্ষণ নির্দিষ্টভাবে সুনিশ্চিত করে না এ রোগের ব্যাপারে। অন্যান্য রোগ যেমন ভাইরাল অনেক রোগের ক্ষেত্রেও এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই যথাযথ ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া সুনিশ্চিত করা সম্ভব না কী রোগ হয়েছে।
চিকিৎসা
সাধারণ কেমোথেরাপি দিয়ে এই রোগে বেঁচে যাবার হার মাত্র ৩০%, যেখানে সাধারণ একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে তা ৮৫%। বর্তমানে টাইরোসিন কাইনেজ প্রতিরোধকারী ঔষধের পাশাপাশি কেমোথেরাপি দেবার মাধ্যমে এ হার শতকরা ৭০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব।

স্বাভাবিক ও লিউকেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের তুলনামূলক চিত্র; source: isramedic.co.il
জীবজগৎ ও প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালের দরুন ঘটে নানান ঘটনা, যেগুলোর একপ্রকার নজির এই ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজম ও তত্সৃষ্ট রোগসমূহ। বিজ্ঞান অসম্ভবকে করেছে সম্ভব, অজানাকে করেছে উদঘাটিত। তাই রোগগুলোর সম্পূর্ণ নিরাময় ও সহজতর চিকিত্সার জন্য তাই বিজ্ঞানের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
ফিচার ইমেজ– Walid Al Achkar, 2010.