আপনার সারাক্ষণের সঙ্গী যে প্রাণীটি, সেই বন্ধু কুকুরটির বয়স জানেন তো? এই তো সেদিন জন্ম হলো। নিশ্চয়ই পাঁচ বছর আগে জন্ম নেওয়া কুকুরের বয়স পাঁচই হবে, তাই না? ব্যাপারটা কিন্তু এত সহজ নয়। মানুষের চেয়ে কুকুরের বয়স অনেক দ্রুত বাড়ে। সেই অনুযায়ী তার আচরণ, খাওয়ার চাহিদাও বদলে যায়। তাই, কুকুরের বয়স পরিমাপ করার পদ্ধতি বের করেছিলেন গবেষকেরা।
এই পরিমাপ অনুসারে, আপনি আপনার দশ বছর বয়সী কুকুরটিকে যে অবস্থায় দেখছেন, সেটা মূলত একজন মানুষের ৭০ বছর বয়সকালীন অবস্থা। সহজ কথায়, একজন মানুষের বয়সের এক বছর এবং একজন কুকুরের বয়সের সাত বছর সমান। তবে সম্প্রতি গবেষকেরা জানিয়েছেন, কুকুরের বয়স বের করার এই পদ্ধতিটি এত সহজ নয়। তাহলে কীভাবে আপনার পোষা কুকুরের বয়স বের করবেন আপনি? চলুন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক!
পূর্ববর্তী গবেষণা নিয়ে গবেষকদের বক্তব্য কী?
কুকুরের বয়স বের করার নতুন পদ্ধতি খোঁজার পেছনে রয়েছে পুরনো পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়া। পূর্ববর্তী পদ্ধতিতে কোন সমস্যাটি বিদ্যমান ছিলো? সমস্যা ছিল গণনায়। মূলত, একজন মানুষের বয়সের এক বছরের সাথে কুকুরের বয়সের সাত বছর মিলিয়ে নেওয়ার মূল কারণই ছিল এই যে, একটি কুকুর যৌনগত দিক দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় ৬-১২ বছর বয়সের মধ্যেই, যেটি তুলনামূলকভাবে একজন মানুষের এক বছরের সমান। কিন্তু বর্তমানে গবেষকদের তোলা বক্তব্যের ভিত্তিতে দেখতে গেলে বলতে হয়, একটি কুকুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও আরও বছর দশেক বেঁচে থাকে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে তাকে অনেক বয়স্কই বলা যায়, যেটা গবেষকদের কাছে মোটেও যুক্তিযুক্ত কিছু বলে মনে হয়নি।
কোন কুকুর কোন প্রজাতির সেটার উপরেও এই ব্যাপারটি নির্ভর করে। দেখা যায়, বড় আকৃতির কুকুরের প্রজাতি ছোট আকৃতির কুকুরের প্রজাতির চেয়ে কম বছর বাঁচে। তাই বলে দেওয়া যায়, ছোট আকৃতির কুকুরদের বয়স ধীরে ধীরে বাড়ে। এখানে সবচেয়ে যে বড় প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো- আমাদের কাছে বয়স ব্যাপারটি আসলে কী? সাধারণত, আমরা যখন জন্মেছি তারপর থেকে সময়ের হিসেবে বয়স নির্ধারণ করি। তবে এছাড়াও জৈবিক বয়সের ব্যাপারটাও অনেকে গণনা করেন। এক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির শরীরের উন্নয়ন কীভাবে হয়েছে এবং কতটা হয়েছে তার উপরে ভিত্তি করে তার বয়স হিসেব করা হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য একজন ব্যক্তির শারীরিক কার্যক্রম, মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি পরীক্ষা করে গবেষণার আওতায় আনা হয়।
এছাড়াও বয়স নির্ধারণ করার জন্য একজন ব্যক্তির জিন কতটা ব্যপ্তি পেয়েছে, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কতটা এগুলোও গবেষণার আওতায় আনা যায়। এই যেমন- আপনার বয়স ৪০ বছর হলেও জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে আপনার শরীরের বয়স ৬০ বছর হয়ে যেতে পারে।
কুকুরের ক্ষেত্রে বয়সের হিসাবটা কেমন হবে?
আপনার ছোট্ট বন্ধুটির বয়সের ক্ষেত্রে হিসাবটা সময়ের সাথে না করে তার জৈবিক বয়সের মাধ্যমে করাটাই ভালো। বাস্তবিকভাবেই, আপনার কুকুরের বয়স এক বছর কি না সেটা খুব একটা গুরুত্ব রাখে না। বরং, সে কখন সন্তান জন্মদানের জন্য উপযোগী হয়ে উঠছে সেটা আপনাকে তার বয়স সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পারে। তবে নতুন এক গবেষণার মাধ্যমে দেওয়া তথ্যানুসারে, কোনো প্রাণীর বয়স জানার জন্য ‘এপিজেনেটিক ক্লক’ হিসাব করাটাই সবচাইতে ভালো। এক্ষেত্রে একটি প্রাণীর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার বয়স নির্ধারণ করা হয়। বিশেষ করে, মিথাইলেশন প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে খুব ভালো ফলাফল দিতে পারে, যেখানে বয়সটা ডিএনএ থেকেই সরাসরি জানা যায়। এ পদ্ধতিতে ডিএনএ’র মিথাইল গ্রুপকে দেখা হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিএনএ এই মিথাইল গ্রুপকে আকর্ষণ করতে থাকে, যেটা পরবর্তীতে ডিএনএ’র সাথেই যুক্ত থাকে। এই দলটি নিজ থেকে ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে না। এর ফলে বয়স জানাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।
একটি প্রাণীর শরীরে দাঁত ওঠা এবং অন্যান্য শারীরিক উন্নয়নগুলো নির্দিষ্ট ধাপে ধাপেই হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় গবেষকেরা কুকুরের বয়স বের করার একটি উপায় তৈরি করেছেন। আর সেটি হলো:
মানুষের সমসাময়িক বয়স = ১৬ ✕ বছর হিসেবে কুকুরের বাহ্যিক বয়স + ৩১
আর এই হিসেব করলে সহজেই দেখা যায় যে, একটি কুকুরের বয়স মানুষের তুলনায় খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। আর এই বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি তার মাঝবয়সে গিয়ে ধীরগতির হয়ে পড়ে। জীবনের বেশিরভাগ সময় একটি কুকুর মাঝবয়সী হয়ে কাটায়। আরও সহজে ব্যাপারটা বোঝাতে গেলে বলতে হবে যে, ‘ডগ ইয়ার’ এ প্রথমদিকে এক বছর মানে ৩১টি ‘হিউম্যান ইয়ার’। আর এরপর প্রতি দুই বছরের সাথে সাথে একটি কুকুর একজন মানুষের ১১ বছরের সমান বয়স অর্জন করে। এই যেমন, একটি কুকুরের বয়স ৮। তার মানে, তার জৈবিক বয়স হলো ৩১ + ৩x১১ = ৬৪।
এছাড়া, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখলেই আপনি আপনার কুকুরের বয়স নির্ণয় করতে পারবেন খুব একটা হিসেব ছাড়াই। এক্ষেত্রে আপনার সবচাইতে বড় সাহায্যকারী হলো পোষা প্রাণীটির দাঁত। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার পোষা কুকুরটির-
৮ সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো দুধ দাঁত দেখা দিবে
৭ মাসের মধ্যে সবগুলো দাঁত ভালোভাবে মুখে চলে আসবে। সেগুলো সাদা ও পরিষ্কার হবে।
১-২ বছরের মধ্যে দাঁতের সাদা ভাব কমে আসবে। মুখের পেছনের অংশের দাঁতগুলো হলদেটে হয়ে যাবে।
৩-৫ বছরের মধ্যে দাঁতে হলদেটে প্রলেপ পড়বে এবং ক্ষয় শুরু হবে।
৫-১০ বছরের মধ্যে দাঁতের ক্ষয় আরও বেড়ে যাবে। সাথে অসুখের লক্ষণও দেখতে পাওয়া যাবে।
১০-১৫ বছরের মধ্যে দাঁত অনেকটা ক্ষয়ে যাবে এবং হলুদ প্রলেপ অনেক বেড়ে যাবে। কিছু দাঁত না-ও থাকতে পারে।
এছাড়া চিকিৎসকের সাথে কথা বলার মাধ্যমে কুকুরের পেশি, হাড়, হাড়ের সংযোগস্থল, ঘোলাটে চোখ, ধূসর পশম, ঢিলেঢালা চামড়া এবং জমে যাওয়া পা দেখেও তার বয়স সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব।
উপরের যে পদ্ধতিটিই আপনি আপনার পোষা কুকুরের বয়স জানার জন্য ব্যবহার করে থাকেন না কেন, এটা ঠিক যে আপনার চেয়ে বয়সে সে অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছে। তাই, আপনার ছোট্ট বন্ধুটি যদি কয়েক বছরের মধ্যেই আর আগের মতো বল ছুড়ে দিলে নিয়ে চলে না আসে, একটু ক্লান্তি প্রকাশ করে- তাহলে অবাক, চিন্তিত বা বিরক্ত হবেন না। হয়তো বাহ্যিকভাবে নয়, তবে শারীরিকভাবে অনেকটা ধাপ পেরিয়ে এসেছে সে ইতিমধ্যেই।