গত ১৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলন পপটেক এক্সপেরিয়েন্স, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিল অ্যালিস। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিশ্বসেরা উদ্যোক্তাদের সামনে নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের অসাধারণ গৌরব অর্জন করেছে অ্যালিস। এর মাধ্যমে তারা আরও এক ধাপ এগিয়েছে গেছে এশিয়ার অন্যতম সেরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পথেও।
প্রতি বছরই পপটেক আয়োজিত হয় বিসিজির পৃষ্ঠপোষকতায়। বিসিজি হলো বিশ্বের প্রধানতম কনসাল্টিং ফার্মগুলোর একটি, যারা সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে যন্ত্র ও মানুষের সক্ষমতার সহযোগে ব্যবসায়িক অঙ্গনে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টির নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিজি কর্তৃক গৃহীত পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনার সুবাদেই তাদের বেশ কয়েকটি ক্লায়েন্ট বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ৫০০ কর্পোরেশনের তালিকায়।
১৯৬৩ সালে ব্রুস হেন্ডারসনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বিসিজির বর্তমানে রয়েছে বিশ্বের ৫০-র অধিক দেশের ৯০+ শহরে নিজস্ব অফিস। ১৮,৫০০ কর্মীর কর্মসংস্থানের সু্যোগ সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি জগতে এই মুহূর্তে দারুণ সব উদ্ভাবন করে চলা অ্যালিস মূলত একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিচালিত কনভার্সেশনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্ল্যাটফর্ম এবং চ্যাটবট বিল্ডার, যেটি ইন-ডেপথ অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়েবসাইটের সাথে তাদের গ্রাহকদের সহজে সংযুক্ত করে থাকে।
বাংলাদেশে স্টার সিনেপ্লেক্সে, গো জায়ান, পারমিদা ডটকম নর বাংলাদেশ এবং ক্লোজআপ বাংলাদেশের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তো বটেই, মেবিলাইন নিউইয়র্ক, গিওর্দানো, ইউনিলিভার ও উবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিজস্ব চ্যাটবট পরিচালনায় আস্থা রেখেছে অ্যালিসেই। ইতিমধ্যে ২০-এর অধিক প্রতিষ্ঠানের ৫০+ চ্যাটবট সংযুক্ত রয়েছে অ্যালিসের অমনি-চ্যানেল কাস্টমার সার্ভিসের সাথে এবং প্রতি মাসে লক্ষাধিক কথোপকথন সম্পন্ন হচ্ছে এর মাধ্যমে।
বর্তমানে পাঁচটি দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে অ্যালিসের কার্যক্রম। ইন্দোনেশি, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারে রয়েছে এর অফিস। আরেকটি অফিসের অবস্থান আমাদের রাজধানী ঢাকার বনানীতে।
গত কয়েক বছরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা অ্যালিসের ২০১৮ সালে অর্জনের মধ্যে আছে গুয়ানজুর অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ও বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি পপটেক এক্সপেরিয়েন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অ্যালিসের মুকুটে যোগ হয়েছে এক নতুন পালক।
এ বছরের পপটেক এক্সপেরিয়েন্সের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মানবিক আচরণ’। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন্ডাস্ট্রির বাঘা বাঘা সব নাম, যাদের মধ্যে ছিলেন মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাহী কর্মকর্তারাও।
প্রতি বছর পপটেকের এ ধরনের সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্বসেরা সব কোম্পানি। সেই সাথে এক ছাদের তলায় জড়ো হন বিশ্বের খ্যাতনামা সব বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ডিজাইনার, শিল্পী, উদ্ভাবক, কর্পোরেট অফিসার, শিক্ষাবিদ, সরকারি নেতাসহ আরও অনেকে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তারা তাদের নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও ধারণা পরস্পরের সাথে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ যেমন পান, তেমনই সংযুক্ত হতে পারে বিসিজি’র কনসাল্টিং টিমগুলোর সাথেও। এভাবেই উন্মোচিত হয় নতুন আরও অনেক সম্ভাবনার দ্বার।
১৯ সেপ্টেম্বরের এ আয়োজনে একত্র হয়েছিল আট শতাধিক বিসিজি পার্টনার, প্রজেক্ট লিড, প্রিন্সিপাল, এবং ফ্রন্ট-লাইন ক্লায়েন্ট টিম। তারা মেতে উঠেছিল কর্মক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব এবং মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়তার বিষয়ক প্রাণবন্ত আলোচনায়। এই আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নতুন ও বৈচিত্র্যময় নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ, যা নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে সকল অংশগ্রহণকারীর জ্ঞানের ভাণ্ডারকে।