Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রতিদিন জীবাণুর সমুদ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! সমাধান কী?

এসেছে নতুন শিশু। হাসপাতালের ডেলিভারি রুমের চারপাশে আত্মীয়-স্বজনদের ভীড়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুযোগ এলো নতুন মানুষটিকে কোলে নেবার। সতর্কতা হিসাবে আগেই হাত ধুয়ে নিয়েছেন অনেকে। বাতাসে ঘুরে বেড়ানো ধুলাবালি আর জীবাণু থেকে বাঁচার ব্যাপারে আজকের যুগে শহরের মানুষ অনেক বেশি সচেতন। যা-ই হোক, ধোয়ার পর পকেট থেকে পরিস্কার রুমাল বের করে হাত মুছে নিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিতে গেলেন বাবা।

নবজাতকের উপর আপনার হাত হোক নিরাপদ; Image Source: Masterfile

তারা আনন্দ করুক, শিশুর চোখে নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখুক; আমরা আলাপ করি এই আনন্দমেলায় ঘটে যাওয়া ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে।

সতর্কতার কথা চিন্তা করে ওখানে সবাই যে হাত ধুয়ে পরিস্কার রুমালে কিংবা ওড়নার আঁচলে কিংবা এক টুকরো কাপড়ে হাত মুছে নিলেন, তারা সবাই যে আবার সেই রোগ-জীবাণুই মাখিয়ে নিলেন হাতে, সেটা কি একবারও টের পেয়েছেন? এই পরিস্কার রুমাল কিংবা কাপড়ের টুকরোগুলো আসলে কতটুকু ‘পরিস্কার’? দেখতে হয়তো ঝকঝকে, কিন্তু প্রতিদিনের ব্যবহার আর পকেট কিংবা ব্যাগে থাকার কারণে এর গায়ে যেসব জীবাণু লেগে যাচ্ছে, সেগুলো তো অদৃশ্য! আর এগুলোই তো হাত থেকে গিয়ে লাগছে নবজাতকের নরম শরীরে। শত সতর্কতার পরেও কি এদেরকে ঠেকানো যাবে না তাহলে? এখন উপায়? অদৃশ্য কোনোকিছুকে মোকাবেলা করবেন কীভাবে?

আপনার পরিস্কার রুমালটি আসলে কতটুকু ‘পরিস্কার’? Image Source: Boku no Kimono – Blogger

উপায় খুব সহজ। সেটি জানার আগে চীনাদের একবার স্যালুট ঠুকে নিন। মানব সভ্যতার আজকের পর্যায়ে আসতে অসংখ্য অবদান রয়েছে এই জাতিটির। তাদের অভাবনীয় উদ্ভাবনগুলোর মাঝে একটি হচ্ছে কাগজ। আর সেই কাগজের ক্রমবিবর্তনে আমরা পেয়েছি টিস্যু পেপার, যেটির উদ্ভাবকও চীনারাই। এই টিস্যু পেপারই হলো আজকের সময়ে আপনার হাতকে জীবাণুমুক্ত রাখার সেই সহজ উপায়টি। কখন, কোথায়, কীভাবে টিস্যু পেপার আপনার জীবনকে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যময় করে দিতে পারে, সেটি নিয়ে কথা বলার আগে চলুন এক পলকে দেখে আসি এর ইতিহাসটা।

টিস্যু পেপারের ইতিহাস বলতে গেলে শুরু করতে হবে কাগজের উদ্ভাবন থেকে। আমাদের সবারই জানা, কাগজের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘পেপার’ এসেছে প্যাপিরাস থেকে, সাইপেরাস প্যাপিরাস নামের একটি উদ্ভিদের নাম অনুসারে। এই উদ্ভিদ ব্যবহার করে তৈরি প্যাপিরাস নামের কাগজ সদৃশ জিনিসটিই নানা কাজে ব্যবহৃত হতো প্রাচীন মিশর ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে।

খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীতে প্যাপিরাসের উপর লেখা; Image Source: Wikimedia Commons

সাই লুন নামক এক চীনা ব্যক্তিকে অনেকেই আধুনিক কাগজের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেন। তার কাগজ উদ্ভাবনকাল ছিল ১০৫ খ্রিস্টাব্দ। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কিন্তু এর অনেক অনেক আগের সময়ে কাগজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। চীনের গানসু প্রদেশের ফ্যাংমাতান নামক জায়গায় তারা খুঁজে পেয়েছেন কাগজের নমুনা, যার আনুমানিক অস্তিত্ব ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯ সাল থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৪১ সালের মধ্যে। চীনের ডানহুয়াং-এ খ্রিস্টপূর্ব ৬৫ সাল এবং ইউমেন-এ খ্রিস্টপূর্ব ৮ সালের কাগজের নমুনা পাওয়া যায়। সেই কাগজ থেকে বিবর্তিত হতে হতে একেবারে হালকা একটি ধরন তৈরি হয় একসময়, সেটি হলো টিস্যু পেপার।

আগেই বলেছি, টিস্যু পেপার ব্যবহারের শুরুও কিন্তু চীনাদের হাত ধরে। চৌদ্দ শতকে চীনের সম্রাটরা প্রথম ব্যবহার করেন টয়লেট টিস্যু। তখন টয়লেট টিস্যু ছিল শুধুমাত্র রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য নির্ধারিত বিলাস সামগ্রী! ছয় বর্গফুট আকারের কাগজের শিটে তৈরি হতো সেই রাজকীয় টিস্যু। সেসময় বছরে সাত লাখেরও বেশি টিস্যু শিট তৈরি করা হতো চীনে। মজার ব্যাপার হলো, তখন থেকে সাত শতক পর আজকে এসে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত টিস্যু পেপারের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে চীনেই!

টিস্যু পেপার ব্যবহারের শুরুও কিন্তু চীনাদের হাত ধরে! Image Source: Wikimedia Commons

যা-ই হোক, সেই থেকে কাগজ আর টিস্যু দুটোরই নিত্য-নতুন ক্রমবিবর্তন চলতে লাগল। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে সমস্যা, পর্যাপ্ত পানির অভাব আর দৈনন্দিন জীবন সহজ করার জন্য মানুষের আগ্রহ থেকেই টিস্যু পেপারের চাহিদা বাড়ছিল প্রতিনিয়ত। নিত্যপণ্য হিসাবে টিস্যু পেপার মানুষের বাজার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে অবশ্য সময় লেগেছে। টয়লেট টিস্যুর বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম কৃতিত্ব হলো জোসেফ গয়েত্তি নামক এক মার্কিন ভদ্রলোকের। ১৮৫৭ সালে তিনি বাজারে যে টিস্যু নিয়ে আসেন, তার ব্র্যান্ডিং করা হতো ‘সময়ের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন’ হিসাবে!

আজকে আমরা যে রোল করা টয়লেট পেপার দেখি, সেটি প্রথম পেটেন্ট করেন জেথ হুইলার, ১৮৭১ সালে। ঠিক তার পরের বছরই প্রতিষ্ঠিত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিস্যু পেপার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিম্বার্লি ক্লার্ক কর্পোরেশন। আর আমরা যে টিস্যু পেপার বক্স ব্যবহার করি, সেটি কখন এলো? ১৮৮০ সালে প্রথমবারের মতো চারকোণা বক্সের প্রচলন করে ব্রিটিশ পার্ফোরেটেড পেপার কোম্পানি। ওদিকে ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুল শিক্ষক আর্থার স্কটের একটি গবেষণার পথ ধরে উদ্ভাবিত হয় পেপার টাওয়েল।

রোল করা টয়লেট পেপার প্রথম পেটেন্ট করেন জেথ হুইলার; Image Source: Business Insider

নর্দার্ন টিস্যু নামক কোম্পানিটি ১৯৩৫ সালে আরও আরামদায়ক ‘স্প্লিন্টার ফ্রি’ টিস্যু উদ্ভাবন করে। দুই ভাঁজ করা টিস্যু প্রথম আসে ১৯৪২ সালে ইংল্যান্ডে, সেইন্ট অ্যান্ড্রুস পেপার মিলের উদ্যোগে। ময়েশ্চারযুক্ত টিস্যু পেপারের প্রথম উদ্যোক্তাও কিন্তু এই কোম্পানিটি। ১৯৯০ সালে যখন তারা ইংল্যান্ডে এই ধরনের টিস্যু নিয়ে আসে, তখন তাদের নাম অবশ্য পাল্টে হয়ে গিয়েছিল অ্যান্ড্রেক্স।

ঠিক এই সময়টাতেই কিন্তু বাংলাদেশ টিস্যু পেপারের ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। রীতিমতো বিরাট কারখানা বসিয়ে নিজেরাই সেসময় টিস্যু পেপার উৎপাদনে নেমে পড়েছিলেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। প্রচণ্ড গরমে বাসে দরদর করে ঘামছেন, স্বস্তির পরশ নিয়ে আসছে পকেট টিস্যু- এই চিত্রটি আজকের বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়। ঘরে-বাইরে নানান কাজে কিংবা ছোট-বড় রেস্টুরেন্টেও টিস্যু পেপার ব্যবহৃত হচ্ছে হরদম। এই দৃশ্যগুলোর পেছনের কারিগর হিসাবে কিন্তু জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংবা কল্লোলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের টিস্যু নিয়ে আসে কল্লোল গ্রুপ। তবে টিস্যুর জন্য একেবারে দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরির সাহসটি দেখায় বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের প্রথম বেসিক টিস্যু পেপার উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব কিন্তু তাদের। ১৯৯৫ সালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে এই কারখানাটি তৈরি করে বসুন্ধরা। ১৯৯১ এর ডিসেম্বরে একটি জার্মান কোম্পানির সাথে ফ্রেইশমিথ নামক টিস্যু বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছিল বসুন্ধরা। তারা উৎপাদনে আসে ’৯৮ সালে, আর বাজারজাতকরণ শুরু করে ’৯৯ সাল থেকে।

এদিকে দুই দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক দূরত্ব আর বাজার পরিস্থিতি নতুন করে ভাবায় বসুন্ধরাকে। সম্পূর্ণভাবে দেশীয় উদ্যোগে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি তাদের। ২০০২ সালে বসুন্ধরা টিস্যু হিসাবে স্বনামে আত্মপ্রকাশ করে তারা। তাদের উদ্যোগে সাদা টিস্যুর উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালেই। আর আমরা এখন পকেটে রেখে ঘোরাফেরা করি যেটি নিয়ে, সেই ফেসিয়াল টিস্যুর শুরুটা সেই ২০০০ সালে। হ্যান্ড টাওয়েলের উৎপাদনও শুরু হয় একই বছরে। সেই থেকে গত ১৮ বছর ধরে ভালোবাসা, কোমলতা আর যত্ন নিয়ে জীবনের বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য প্রায় সবরকম টিস্যুই বাজারজাত করেছে বসুন্ধরা টিস্যু।

এদেশে ফেসিয়াল টিস্যুর শুরুটা সেই ২০০০ সালে; Image Source: bashundharatissue.com

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে টিস্যুর ব্যবহারটা বড় আকারে শুরু হয়েছিল মসজিদের মধ্য দিয়ে। মসজিদের মুসল্লীরা পবিত্রতার জন্য কম খরচে স্বাস্থ্যসম্মত উপায় হিসাবে গ্রহণ করেন টিস্যু পেপারকে। ধীরে ধীরে বাসা-বাড়ি আর রেস্টুরেন্টে এর ব্যবহার শুরু হয়, টিস্যু উঠে আসে দেশের মানুষের নিত্যপণ্যের তালিকায়।

একদম শুরুতে বলছিলাম হাত মুছবার জন্য টিস্যু ব্যবহারের কথা। এটা তো সামান্য, আরও কত অজস্র কাজে টিস্যু ব্যবহৃত হতে পারে তার ইয়ত্তা নেই। আমাদের মুখের ত্বক কিন্তু খুবই সংবেদনশীল, তাই মুখমণ্ডলে ব্যবহারের জন্য আছে ফেসিয়াল টিস্যু আর ওয়েট টিস্যু। বাসা-বাড়ি, অফিস, স্কুল হতে শুরু করে যেকোনো জায়গায় পরিচ্ছন্নতার জন্য আছে হরেক রকমের পেপার ন্যাপকিন। রান্নাঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র পরিস্কার করে মুছে রাখার জন্য আছে কিচেন টাওয়েল। রেস্টুরেন্টে ব্যবহারের জন্য ন্যাপকিনের পাশাপাশি আছে হ্যান্ড টাওয়েল। এমনকি হাসপাতালের জন্যও আছে খুব সহজে ব্যবহার করার মতো বড় আকারের টিস্যু, যার নাম ক্লিনিকাল বেডশিট। এগুলোর পাশাপাশি বহুল ব্যবহৃত এবং দারুণ জনপ্রিয় টয়লেট টিস্যু আর পেপার টাওয়েল তো আছেই।

ঘরে-বাইরে সবজায়গায় যেকোনো সময়ের জন্য আছে বসুন্ধরা টিস্যু; Image Source: bashundharatissue.com

ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায়, যেকোনো প্রয়োজনে এখনও অনেক মানুষ কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। আবার কেউ কেউ তো ধুলা-ময়লার পরিস্কারের ধারই ধারেন না। সচেতনতার অভাব, সেই সাথে খরচের কথা চিন্তা করে অনেকে এই কাজগুলো করেন। অথচ একটু খেয়াল করে দেখুন, সারাদিনের পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ টিস্যু দরকার; টাকার অঙ্কে তার মূল্য খুবই সামান্য এর উপকারিতার তুলনায়। সেই সাথে এটিও মাথায় রাখতে পারেন, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি চলতে-ফিরতে সবসময় টিস্যু ব্যবহার করতে শুরু করেন, তাহলে এর উৎপাদনও হবে বিপুল পরিমাণ, স্বাভাবিকভাবেই দামটাও তখন আরও কমে আসবে।

টিস্যু ব্যবহারে শিশুদের সচেতন করুন এখনই; Image Source: hellosplendid.com

সেই সাথে আপনি ভাবতে পারেন চারপাশের সৌন্দর্য আর পরিবেশ নিয়েও। বসুন্ধরার টিস্যুর কথাই ধরুন। ছোট্ট একটি টিস্যুর বক্স, আপনি রাখলেন বসার ঘরের টেবিলে। এর ডিজাইনটা যেমন দারুণ, তেমনি মেহমান বা বাসার যে কারো প্রয়োজনে হাতের কাছেই থাকল সহজ সমাধান। গাড়ির পেছনেও রাখতে পারেন একটি বক্স, হুটহাট যেকোনো দরকারে কাজে লাগল, দেখেও চোখ জুড়ালো! বসুন্ধরা টিস্যুর মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত পাল্প বা মন্ডের উৎস হলো পরিবেশবান্ধব সার্টিফিকেট প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠান। উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হয় খুব সতর্কতার সাথে। তাই পরিবেশকে নিরাপদ রেখেও আপনি বসুন্ধরা টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছন্দে।

বসুন্ধরা টিস্যু ব্যবহার করে পরিবেশ নিয়ে থাকুন নিশ্চিন্ত; Image Source: bashundharatissue.com

অনেক কথা তো হলো। চলুন এবার টিস্যু নিয়ে একটা মজার ঘটনা জেনে আসি।

সময়টা তখন ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাস। আরব দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফেরে তেল সংকটে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর জের ধরে মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা বেশ করুণ। এমন একটা মুহূর্তে অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটালো মার্কিনীরা। এনবিসি টেলিভিশনের তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘টুনাইট শো’ তখন উপস্থাপনা করতেন জনি কার্সন। সেসময় একদিন তিনি শো শুরু হবার সময় কিছু একটা নিয়ে কৌতুক করতে গিয়ে বললেন, আমেরিকায় তো এখন অনেক কিছুরই সংকট চলছে, নতুন করে শুরু হয়েছে টয়লেট পেপারের সংকট! কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে নির্দোষ ঠাট্টাই করেছিলেন কার্সন। কিন্তু তার এই সামান্য কৌতুককে মাটিতে পড়তে দিল না মার্কিন জনগণ।

এরপর সত্যিই পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও প্রথমবারের মতো দেখা দিল টয়লেট পেপারের সংকট! কার্সনের কৌতুককে সত্যি বলে ধরে নিয়ে মানুষ পাগলের মতো টয়লেট পেপার কিনতে শুরু করল। একদিনের মাথায় হঠাৎ করেই গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দোকানগুলো থেকে নিমিষে নাই হয়ে গেল টয়লেট পেপার। অবস্থা এমন খারাপ হলো যে, একজন পাঁচটির বেশি পেপার রোল কিনতে পারবে না, এমন নিয়ম করে দিতে বাধ্য হলো দোকানিরা। পরের মাসে এসে কার্সন ক্ষমা চাইলেন এই কৌতুকের জন্য! সামান্য এক মুহূর্তের হাসি-ঠাট্টা থেকে যে অমন বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটে যাবে, তা কে জানত!

এই ভদ্রলোকের একটা কৌতুক তৈরি করেছিল টিস্যু পেপার সংকট! Image Source: New York Post

আজ থেকে চার দশকেরও বেশি সময় আগে সুদূর মার্কিন মুলুকের এই ঘটনাটি থেকে আমাদেরও একটি বিষয় ভাবার আছে। স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কতটুকু সচেতন? কিংবা স্বস্তি নিয়েই বা কতটুকু চিন্তিত? ছোট্ট এক পলতে টিস্যুই কিন্তু আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে ভয়ঙ্কর সব জীবাণুর সংক্রমণ থেকে, মুক্তি দিতে পারে প্রতিদিনের ধুলো-ময়লা-ঘামে মাখা চিটচিটে ত্বকের অস্বস্তি থেকে। দেশের বুকেই যখন তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের টিস্যু, তখনও কি আমরা পড়ে আছি সেই অদৃশ্য জীবাণু দিয়ে ভরা কাপড়ের টুকরো ব্যবহারের যুগে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলছি- পুরনো অভ্যাস পাল্টে ফেলুন, আধুনিক পৃথিবীর বাসিন্দা হোন। স্বাস্থ্য-পরিবেশ-স্বাচ্ছন্দ্য-সময় নিয়ে ভাবুন, বেছে নিন পরিচ্ছন্নতার সবচেয়ে সহজ সমাধান। 

ফিচার ইমেজ: wikihow.com

Related Articles