‘কোচিং বাণিজ্য’। সাম্প্রতিক সময়ে পত্রিকা, টেলিভিশনের টক শো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবখানেই এই একটি বিষয় নিয়ে চলেছে তুমুল আলাপ। স্কুল-কলেজগামী কিংবা কোনো মেডিক্যাল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রত্যাশী এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে এদেশে, যে কিনা তার জীবনের কোনো এক পর্যায়ে কোচিং করেনি, হোক সেটা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে, কিংবা কোনো শিক্ষক বা সিনিয়র ভাই-বোনের কাছে। মোদ্দা কথা, প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও নিয়মিতই হয়ে চলেছে অতিরিক্ত শিক্ষার জন্য অর্থের লেনদেন। সেটা আসলে কতোটা ভালো, কিংবা কতোটা খারাপ? এমন অবস্থা কি কেবল বাংলাদেশেই? কোচিং ব্যাপারখানা বিশ্বের নানা প্রান্তে কীভাবে চলছে, কেন চলছে, আর এ বিষয়ে ইউনেস্কো’র মতো শিক্ষা বিষয়ক সুপরিচিত সংস্থার কী বলবার আছে- এ নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের আলোচনা।
কোচিং আসলে কী? শব্দটি থেকেই বোঝা যায়, এখানে একজন কোচ থাকবেন যিনি অন্য একজনকে কিছু শেখাবেন। আভিধানিক অর্থ মূলত এটাই, আর সেটা পড়া হোক কিংবা খেলা হোক, যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রেই হতে পারে। পড়ালেখার বিষয়ে কোচিং আসলে বেশ কয়েক রকম হতে পারে। আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিষয়ে পারদর্শী একজন অন্যজনকে ব্যক্তিগতভাবে শেখাতে পারেন, সেটা একজনকে শেখানো হতে পারে, একাধিকজনকেও হতে পারে। এটি মূলত প্রাইভেট টিউশন বা ব্যাচ টিউশনের কাতারে পড়ে। হতে পারে স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরাই এর সাথে জড়িত, কিংবা জড়িত আদৌ কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষকতা পেশার সাথে নেই এমন কেউ। আর অন্য যে গোত্রটি আছে, সেটি হলো আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কোচিং এর জন্য, যেটি নিয়ে এখন কথা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে কোনোই সন্দেহ নেই যে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার খরচের চাইতে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ে খরচ ঢের বেশি। এ বিষয়ে প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে জরিপ চালিয়েছিল সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপটি করা হয় সারাদেশের ৬,১২০টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সাতটি বিভাগের প্রায় ২৭ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে, আর এর সহযোগিতায় ছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
কী পাওয়া যায় সে জরিপের ফলাফল হিসেবে? একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পেছনে বাৎসরিক যে খরচটুকু, তার ৩০ শতাংশ ব্যয় হয় কোচিং আর প্রাইভেট টিউশনে (শহরের ক্ষেত্রে সেটি ৩৩ শতাংশ আর গ্রামের দিকে কম, ২৬ শতাংশ)। আর ১৮ শতাংশ ব্যয় হয় পড়াশোনার উপকরণাদি কেনার পেছনে। ভর্তি, সেশন ফি, পরীক্ষা ফি বাবদ যায় ১৭ শতাংশ খরচ। যাতায়াত ও টিফিন বাবদ খরচ হয় ১৬ শতাংশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি’তে ১০ শতাংশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম কেনায় ৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়।
বাংলাদেশে যে সব ধরনের কোচিং ব্যবসাই রমরমাভাবে চলছে সেটা কারও অজানা নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বক্তব্য কী? কেবল আমাদের দেশকে নিয়ে না ভেবে বৈশ্বিক চোখ দিয়ে চলুন তাকিয়ে দেখা যাক।
আন্তর্জাতিকভাবে কেতাবি ভাষায় কোচিং প্রথাকে ‘শ্যাডো এডুকেশন’ বা ছায়াশিক্ষা’ হিসেবে ডাকা হয়। তবে কথা আছে, আমাদের দেশের সব ধরনের কোচিংই এই ‘শ্যাডো এডুকেশন’ এর আওতায় পড়বে না। ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল প্ল্যানিং থেকে গোটা একটি ডকুমেন্টই প্রকাশ করা হয়েছিল এ বিষয়ে, যা কিনা আকারে বেশ বড়, ১০২ পাতার! ভয় পাবার কারণ নেই, এত বড় লেখনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো আমরা আজ তুলে ধরছি। ডকুমেন্টের নাম ‘The Shadow Education System: Private Tutoring & its Implication for Planners’ (প্যারিস)। ১৯৯৯ সালে প্রথম সংস্করণ আর ২০০৭ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এর রচয়িতা হংকং ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এমেরিটাস মার্ক ব্রে (Mark Bray)। একটু আগে ইউনেস্কোর যে ইনস্টিটিউটের কথা বলা হচ্ছিল, সেটির পরিচালক ছিলেন তিনি ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত, কাজ করেছেন পৃথিবীর প্রায় ৬০টিরও বেশি দেশে।
শ্যাডো এডুকেশনের সংজ্ঞা হিসেবে ইউনেস্কো বলছে, “ছায়াশিক্ষা হলো এমন কিছু শিক্ষাগত কার্যক্রম, যা প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে অনুষ্ঠিত হয়, আর এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর প্রথাগত শিক্ষা কার্যক্রমকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া (বা, আরও উন্নত করা)।”
এই শ্যাডো এডুকেশনের চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
১) আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিই মূলত ছায়াশিক্ষার উপস্থিতি আর প্রয়োজনীয়তার কারণ।
২) আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো মূল প্রথা, প্রাইভেট টিউশন এর ছায়া বা শ্যাডো।
৩) সিংহভাগ গুরুত্ব আনুষ্ঠানিক শিক্ষাতেই থাকতে হবে।
৪) ছায়াশিক্ষা মূলত আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কঠোর নিয়মকানুন ও কাঠামোবদ্ধ থাকে না।
ইউনেস্কোর বক্তব্যে এটাও আসছে যে, কখনো কখনো এমনটা হয়ে থাকতে পারে, শ্যাডো এডুকেশন প্রথাগত শিক্ষাকে ছাপিয়ে বেশি গুরুত্বের দাবিদার হয়ে উঠেছে। মার্ক ব্রে’র মতে, “বিশেষ করে প্রধান পরীক্ষাগুলো যত নিকটে এগুতে থাকে, কিছু কিছু দেশে তখন শিক্ষার্থীদের কাছে এমনটা প্রতীয়মান হতে পারে যে স্কুলের পড়াশোনা তাদের উপযোগিতা মেটাতে পারছে না।” লেখার গোড়াতেই (পৃষ্ঠা ১৬) তিনি বলেছেন, “বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর জন্য স্কুলের ঘণ্টা বাজার সাথে সাথেই আসলে পড়াশোনার ইতি টানা হয় না। এরপর চলে প্রাইভেট টিউশন। অনেক সময় তো এমনও হয় যে, তারা স্কুল ত্যাগই করছে না, এখানেই কোচিং চালিয়ে যাচ্ছে, কখনও কখনও একই শিক্ষকদের কাছেই, যাদের কাছে একটু আগেই ক্লাসের পড়া পড়েছে! শুধু স্কুলের দিনগুলো নয়, ছুটির দিনেও চলতে থাকে প্রাইভেট টিউশন। সাম্প্রতিককালে, এই প্রাইভেট টিউশন নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল উদ্যোগ। এ ব্যবসায়ে এখন কাজ করে হাজার হাজার বেতনভুক্ত মানুষ।”
একটা বিষয় বলতেই হয়, যা কিনা ডকুমেন্টে (পৃষ্ঠা ১৯) স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যেখানে অর্থের লেনদেন নেই, এরকম টিউশন শ্যাডো এডুকেশনের আওতায় পড়বে না। যেখানে ‘লাভ করবার উদ্দেশ্য’ রয়েছে, সেটিই কেবল এর আওতাভুক্ত বলে গণ্য হবে। সেইসাথে এটি হতে হবে অ্যাকাডেমিক শিক্ষা, গান-বাজনা বা ধর্মীয় শিক্ষা এর অন্তর্গত নয়। তবে, পরীক্ষা পাশের জন্য ধর্মবই অধ্যয়ন অবশ্য ভিন্ন কথা।
আরও কথা আছে। উপমহাদেশে যা কিনা ‘প্রাইভেট পড়া’, ‘টিউশনে যাওয়া’ বা ‘কোচিং করা’ ইত্যাদি পরিভাষাতে সংজ্ঞায়িত করা হয়, ইংরেজিভাষীদের কাছে তা-ই ‘প্রাইভেট টিউটরিং’ বা ‘প্রাইভেট টিউশন’। দেশে দেশে কার্যক্রমটা একই থাকলেও ভিন্নতা রয়েছে ডাকার নামে। যেমন, জাপানের কথাই ধরা যাক। জাপানে এই কোচিংকে ডাকা হয় ‘জুকু’। সেখানে আবার ‘ইয়োবিকো’ নামে আরেক জাতের কোচিং আছে, যা আবার শ্যাডো এডুকেশন হতে পারবে না। কারণ, ইয়োবিকো-তে তারাই পড়েন, যারা স্কুল কলেজ ছেড়ে দিয়েছেন, এখন অতিরিক্ত শিক্ষাগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। শ্যাডো এডুকেশন হতে হলে অতি অবশ্যই সেটা হতে হবে স্কুল-কলেজের পড়ারই অতিরিক্ত ঝালাই।
আপনি যদি মনে করে থাকেন, কোচিং বাণিজ্যে সবচেয়ে রমরমে অবস্থায় আছে বাংলাদেশ, তবে খুবই ভুল ভাবছেন। ইউনেস্কোর ডকুমেন্টেই আমরা দেখতে পাবো, মরিশাসে হাই স্কুল ও কলেজের মোটামুটি সকলেই ছায়াশিক্ষা বা কোচিং গ্রহণ করে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি। জাপানে হাই স্কুল শেষ করার আগেই ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং করে থাকে। ১৯৭৬ সালে যে পরিমাণ কোচিং হতো জাপানে, ১৯৯৩ সালে এসে তা হয়ে যায় দ্বিগুণ। জাপানের স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৯৭ সালে নয়টি জুকু ফার্মকে (আমাদের ভাষায় ‘কোচিং সেন্টার’) তালিকাভুক্ত করা হয়, সে বছর ১৪,০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় এসেছিল এ খাতে! জাপানের জন্মহার কমলেও কোচিং হার বেড়েছে বহুগুণ! কলেজে ওঠার আগে মালয়েশিয়ার ৮৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর ভাগ্যে কোচিং এর খাতা খুলে যায়। এ শতাব্দীর শুরুর আগেই, হাই স্কুলের মোট শহুরে শিক্ষার্থীর হিসেব করলে ব্রাজিলের ৫০%, ক্যামবোডিয়ার ৩১%, মিসরের ৬০%, গিনির ১৯%, হংকং এর ৪১%, কোরিয়ার ৫৯%, মাল্টার ৮৩%, মরক্কোর ৫৩%, মিয়ানমারের ৯১%, সিংগাপুরের ৩০%, শ্রীলংকার ৮০%, তাইওয়ানের ৮১%, জিম্বাবুয়ের ৬১% শিক্ষার্থী ছিল কোচিংগামী।
ভাবছেন এখন সংখ্যাগুলো কেমন? বুঝতেই পারছেন, যে হারে কোচিং বেড়ে চলছিল তাতে বর্তমান সংখ্যাটা আরও বড় হবে। বাংলাদেশের হিসেবটা এখন বলা যাক। ২০১৬ সালের হিসেবে, দেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শিক্ষার্থী আছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায় মিলিয়ে। আর এর মাঝে ৭৭.০৯% শিক্ষার্থী যাচ্ছে কোচিং এ, যার মানে ৪ কোটি ২৪ লাখ শিক্ষার্থীই কোচিং এর আওতাভুক্ত! আমাদের হাতে ২০১৯ সালের নিখুঁত হিসেব নেই, তবে আন্দাজ করাই যায় যে, সংখ্যাটা এখন আরও বেশি। সারা দেশে রয়েছে প্রায় দু’লাখ কোচিং সেন্টার আর সেই সাতানব্বই এর জাপানের মতোই, এখানেও আয় কিন্তু বেশ! বছরে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৭ সালের তুলনা করলে, হংকং এর সেই ৪১% এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫%, কোরিয়া’র সেই ৫৯% এখন কিনা ৯০%! প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের কথাই বলা যাক, সেখানে কেবল প্রাইমারি স্কুলেরই ৬০% শিক্ষার্থী কোচিং নিয়ে থাকে বর্তমানে!
কেন এই শ্যাডো এডুকেশন ব্যবস্থাটা গড়ে উঠেছে, এ প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ আসলে বেশিরভাগ স্কুল কলেজে নিম্নমানের পড়াশোনা, এটা হতে পারে অনিচ্ছাকৃত আবার অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃত। বাড়তি আয়ের সুযোগ নিতে শিক্ষকেরা স্কুলের পর শিশুদের নিজেদের কোচিংয়ে আসবার রাস্তা করে দেন ক্লাসে অসম্পূর্ণ পড়াশোনা করিয়ে, কিংবা খারাপভাবে পড়িয়ে। সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনার গণ্ডি থেকে বের না হয়ে আসা স্কুলগুলোর গতানুগতিক পরীক্ষাপদ্ধতিও আরেকটি কারণ। শিক্ষকদের কাছ থেকে পুরোপুরি সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে একটা বড় শতাংশ শিক্ষার্থী শরণাপন্ন হয় ‘ভাইয়া’/’আপু’দের কাছে, যারা পড়িয়ে থাকেন প্রাইভেটে, ব্যাচে কিংবা কোচিং-এ। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা যেটি পাওয়া যায় তা হলো, এখানে যারা পড়ান তারা হয়তো কিছুদিন আগেও নিজেরাই ভালোয় ভালোয় পেরিয়ে এসেছেন এই একই পরীক্ষাগুলো, এবং তারা জানেন কীভাবে উৎরে যাওয়া যাবে ভালো ফলাফল রেখে। কখনও সত্যিকারের ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে (যেমন ‘বেসিক উন্নত করা’) আবার কখনও কাজ সারার উদ্দেশ্য নিয়ে (‘শর্টকাট মুখস্থ’) তাদের দ্বারগ্রস্থ হয় শিক্ষার্থীরা। তবে আধুনিক যুগের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় ভালো থাকবার কারণে অনেক তরুণ প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের পরিচালিত ছায়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সচরাচর ‘কোচিং’ থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো সার্ভিস পাওয়া শিক্ষার্থীরা সহজাত কারণেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ক্লাসরুমের প্রথাগত পুরনো ধাঁচের পড়াশোনায়। ঠিক এখানটাতেই আসলে তৈরি হয় শ্যাডো এডুকেশনের উপযোগিতা।
তবে এ কথা খাটে না সকল কোচিংয়ের ক্ষেত্রে, আর অতি অবশ্যই খাটে না স্কুলে পড়া শেষ না করিয়ে, কোচিংয়ে পড়িয়ে শেষ করা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। তাদের ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই আধুনিকতার ছোঁয়া পায় না আধুনিক যুগের শিশুরা।
এদেশে সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম সিদ্ধান্ত হয়ে এসেছে কোচিং নিয়ে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হবে লেখার পরের পর্বে। একটি কাঠামোবদ্ধ নীতিমালার যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে শ্যাডো এডুকেশনের জন্য, কথা হবে সেই সাম্প্রতিক নীতিমালা নিয়েও। অনেকেই কিন্তু বলে থাকেন, দেশের সব কোচিং একদম আজকে থেকেই বন্ধ করে দিতে হবে, তাহলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হলো, এ কাজটা একবার করা হয়েছিল ১৯৮০ সালে দক্ষিণ কোরিয়াতে। এ হঠাৎ সিদ্ধান্তের ফলাফল যে কী ভয়াবহ হয়েছিল তা নিয়েও বিশদ কথা হবে পরের লেখায়।
স্কুলের বিজ্ঞান বইতে আমরা আদর্শ গ্যাসের কথা পড়ে আসি। যে গ্যাস চার্লস বয়েলের সূত্রগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে সেগুলো হলো আদর্শ গ্যাস। কিন্তু বাস্তবে কোনো গ্যাসই আদর্শ না, কিন্তু তাও আমরা আদর্শ গ্যাসের সূত্র পড়ে থাকি, আর সেই সূত্রগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি বাস্তব গ্যাসগুলোকে।
আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থার অস্তিত্বটাও এই মুহূর্তে তেমনই বলা যায়, অর্থাৎ- নেই। বাস্তবের শিক্ষাব্যবস্থা মেনে চলছে না আদর্শিক সেই চিন্তাভাবনা। চাইলেই কোচিং বন্ধ করে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায় না কাল থেকেই! যতদিন না দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আদর্শ হয়ে গড়ে উঠবে, যতদিন না স্কুল-কলেজের পড়াটা ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণভাবে শিক্ষকেরা বুঝিয়ে দেবেন, আর যতদিন না শিক্ষার্থীদের জানা-শেখার প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিকল্প কোনো উদ্যোগ গড়ে উঠবে; ততদিন পর্যন্ত এই ছায়াশিক্ষার উপযোগিতা কমবে না, বরঞ্চ বাড়তেই থাকবে, অন্তত পরিসংখ্যান কিন্তু তা-ই বলছে!