আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দী আগেকার কথা। জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশের হার্জোগেনোরাখ শহরে তখন বাস করতেন এক দম্পতি। স্বামী ক্রিস্টোফ ভন উইলহেল্ম ড্যাজলার কাজ করতেন একটি জুতার কোম্পানিতে, আর স্ত্রী পলিনা স্পিত্তুলার ছিলো ছোট একটি লন্ড্রির দোকান। ক্রিস্টোফ ও পলিনার সেই ঘর আলো করে এসেছিলো চার সন্তান। স্বামী-স্ত্রীর আয় খুব বেশি না হলেও ফ্রিৎজ, রুডলফ, অ্যাডলফ ও মেরিকে নিয়ে সুখেই কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিনগুলো। এদের মাঝে মেরি তার মায়ের সাথে লন্ড্রিতেই কাজ করতো। আর তিন ভাই মিলে সেই কাপড়গুলো এরপর বিতরণের কাজ সারতো। এজন্য প্রতিবেশীরা তাদেরকে ‘দ্য লন্ড্রি বয়েজ’ নামেই চিনতো। চার ভাই-বোনের মাঝে রুডলফ ড্যাজলার ও অ্যাডলফ ড্যাজলারের নাম দুটো মনে রাখুন। কারণ আমাদের আজকের কাহিনী এ দু ভাইকে নিয়েই।
ছোটবেলায় অ্যাডলফ যখন কেবলই এক স্কুলছাত্র, তখন তার বড় দুই ভাই সংসারের অর্থোপার্জনে সহায়তা করতে শুরু করে দিয়েছিলো। এদের মাঝে সবার বড় ভাই ফ্রিৎজ চাকরি করতো মিউনিখের একটি ব্যাঙ্কে। অপরদিকে রুডলফ অবসর সময়ে তার বাবার কাছে জুতা তৈরির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতো। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিনগুলো।
১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ফ্রিৎজ ও রুডলফের ডাক পড়ে জার্মান সেনাবাহিনীতে। পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে অ্যাডলফও তাদের সাথে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে যোগ দেয়। সেই বছরের ১১ নভেম্বরই শেষ হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তবে ততদিনে ওলটপালট হয়ে গেছে অনেক হিসেব।
যুদ্ধ চলাকালে হার্জোগেনোরাখ শহরের অর্ধেকের বেশি জুতার ফ্যাক্টরিই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তিন ভাই-ই অক্ষত দেহে যুদ্ধ শেষে পরিবারের কাছে ফিরে আসে। তখন মানুষের আর্থিক অবস্থা হয়ে পড়েছিলো বেশ নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে লন্ড্রিতে কাপড় পরিষ্কার করতে দেয়াও ছিলো বিলাসিতারই নামান্তর। তাই পলিনার লন্ড্রির ব্যবসাতে শুরু হয় মন্দা। তবে হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র ছিলো না ছোট ভাই অ্যাডলফ।
অবশেষে ১৯২০ সালের শুরুর দিকে মায়ের ধোপাখানাতেই নিজের স্বপ্নের বীজ বুনে দেয় অ্যাডলফ, গড়ে তোলে স্বল্প পরিসরে এক জুতার ফ্যাক্টরি। মূলত খেলাধুলার জন্যই বিভিন্ন বিভিন্ন জুতা বানাতো তরুণ অ্যাডলফ। ১৯২৪ সালে মেজো ভাই রুডলফও যোগ দেয় তার সাথে। এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিলো ড্যাজলার ভ্রাতৃদ্বয়ের জুতার কারখানা Gebrüder Dassler Schuhfabrik-এর।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না। এরই মাঝে এমন একটা জুতার কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। আবার ড্যাজলার ভাইদের সেই কারখানায় কেবল খেলাধুলার জুতাই তৈরি করা হতো। তখন যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে অবসর বিনোদনের অংশ হিসেবে খেলাধুলা খুব একটা প্রচলিত ছিলো না। তবে ভাগ্য সহায় ছিলো অ্যাডলফ ও রুডলফের জন্য। কেননা অল্প কিছুদিনের মাঝেই বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের কাছে জুতার জন্য অর্ডার আসা শুরু হয়, উন্নত হতে থাকে পরিবারের আর্থিক অবস্থাও।
দুই ভাইয়ের স্বভাব-চরিত্র ছিলো আবার একেবারেই উল্টো। অ্যাডলফ ছিলেন কিছুটা শান্ত স্বভাবের। একাগ্রচিত্তে জুতার ডিজাইন থেকে শুরু করে সেগুলো বানানোতেই ছিলো তার যত মনোযোগ। ওদিকে বড় ভাই রুডলফ ছিলেন বহির্মুখী স্বভাবের। তাই অ্যাডলফের বানানো জুতাগুলো বিক্রি করা, খদ্দের সংগ্রহ করার মতো কাজগুলোর দায়িত্ব ছিলো তার ঘাড়েই। তবে একটা বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই দুই ভাইয়ের বেশ মিল ছিলো। অবসর পেলেই তারা দুজনে খেলতে বেরিয়ে যেতেন। আর সেই খেলায় সবসময়ই প্রতিপক্ষ থাকতেন দুই ভাই। কেউ কি কখনো ভাবতে পেরেছিলো দুই ভাইয়ের এই বিরোধের কাহিনী খেলাধুলার মাঠ ছাড়িয়ে ঠাঁই করে নেবে ইতিহাসের পাতায়?
যা-ই হোক, সময় গড়াতে থাকলো। সেই সাথে এগোতে থাকলো অ্যাডলফ-রুডলফ ভ্রাতৃদ্বয়ের স্বপ্নের জুতার কারখানাও। ১৯২৮ সালে ফ্রিডল নামে এক নারীকে নিজের জীবনসঙ্গিনীরুপে বেছে নেন রুডলফ। পরবর্তীতে এ দম্পতির ঘরে আরমিন ও জার্ড নামে দু’সন্তানের জন্ম হয়।
১৯৩৩ সালে জার্মানির ক্ষমতা চলে যায় হিটলারের হাতে। নাৎসি পার্টি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রতি বেশ জোর দেয়ায় ব্যবসায়ে উন্নতির মুখ দেখতে শুরু করেন দুই ভাই। একই বছরের মে মাসে তারা নাৎসি পার্টিতে যোগদান করেন। কেবলমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তাদের এ যোগদান থাকলেও পরবর্তীতে এজন্য তাদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো। সেই ইতিহাসে পরে আসছি।
বড় ভাইয়ের ছয় বছর পর অ্যাডলফও নিজের জীবনকে স্থিতিশীল করতে চাইলেন। তাই ১৯৩৪ সালে তিনিও বিয়ে করে নেন। পাত্রী কেথ ছিলো জুতা প্রস্তুতের জন্য আরেক বিখ্যাত শহর প্রিমাসেন্সের অধিবাসী।
ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছিলো অ্যাডলফ-রুডলফের প্রতিষ্ঠিত Gebrüder Dassler Schuhfabrik কোম্পানির জুতার চাহিদা। কিছুদিনের মাঝেই এ জুতার ব্যবসা তাদেরকে শহরের সবচেয়ে ধনী পরিবারের মর্যাদা এনে দেয়। শুরুর দিকে দুই পরিবারের মাঝে সম্পর্কও ছিলো বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ।
একসময় ফ্যাক্টরির পরিসর বাড়ানো আবশ্যক হয়ে পড়ে, সেই সাথে দরকার পড়ে বাড়তি লোকবলেরও। দুই বউই তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করতেন এ ব্যবসায়। ফ্রিডল কাজ করতেন শনি ও রবিবারে। মূলত হিসাবনিকাশের দেখাশোনা করাই ছিলো তার কাজ। সন্তান গর্ভে আসার পর অ্যাডলফের স্ত্রী কেথ কিছুদিনের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন কাজ থেকে। সবাই তখন সেটা মেনেও নিয়েছিলো। অবশেষে অ্যাডলফ-কেথ দম্পতির প্রথম সন্তান হর্স্ট ভূমিষ্ঠ হবার পর সবাই ভেবেছিলো যে, এবার হয়তো কাজে মন দিবেন কেথ। কিন্তু উচ্চাভিলাষী কেথের চিন্তা-ভাবনা পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিবাদের কারণ হতে শুরু করে।
এমন ঘোলাটে পরিস্থিতির মাঝেই দুই পরিবার ফ্যাক্টরির সামনে বিশাল বড় এক বাড়িতে গিয়ে থাকা শুরু করে। বাড়ির নিচতলায় অ্যাডলফ আর দোতলায় রুডলফ তার পরিবার নিয়ে থাকতেন। তবে দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের মাঝে সম্পর্ক দিন দিন খারাপই হতে থাকে।
এরই মাঝে দেখতে দেখতে চলে আসলো ১৯৩৬ সাল, শুরু হয়ে গেলো অলিম্পিক। সারা বিশ্বের নজর তখন বার্লিনে অনুষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ এ আসরের দিকে। এমন একটা বড় মঞ্চ পেয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কথা ভুলে ব্যবসায় মনোযোগী হলেন অ্যাডলফ ও রুডলফ। সেইবার অ্যাথলেটদের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার জেসি ওয়েন্সও ছিলেন। এক স্যুটকেস ভর্তি জুতা নিয়ে অ্যাডলফ ড্যাজলার সোজা চলে গেলেন অলিম্পিক ভিলেজে, দেখা করলেন জেসি ওয়েন্সের সাথে। অ্যাডলফের জুতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে পছন্দ হয়ে গেলো জেসির। তাই অন্যান্য অনেক কোম্পানির এজেন্টকে হতাশ করে তিনি বেছে নিলেন অ্যাডলফ-রুডলফ ভাইদের কোম্পানির সেই জুতাকেই।
অলিম্পিকের সেই আসরে মোট চারটি স্বর্ণপদক নিজের ঝুলিতে পুরেছিলেন জেসি ওয়েন্স। জেসির সাথে সাথে বিশ্ব সেই আসরে পরিচিত হয়েছিলো অখ্যাত দুই ভাইয়ের নতুন জুতার ব্র্যান্ডের সাথেও। এ ব্যাপারটিই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো তাদের ব্যবসার। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য তারা এ মোক্ষম সুযোগটিকেই কাজে লাগালেন।
১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে গেলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আবারো শনির দশা ভর করলো Gebrüder Dassler Schuhfabrik কোম্পানির ব্যবসায়। দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হলো দুই ভাইকেই। তবে কিছুদিন পরই দায়িত্ব থেকে মুক্তি মেলে অ্যাডলফের। তাকে ফ্যাক্টরিতে ফিরে গিয়ে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়। ওদিকে রুডলফকে নিয়মিতভাবেই তার কাজকর্মের উপর রিপোর্ট করতে হচ্ছিলো। এভাবে আস্তে আস্তে দু’ভাইয়ের মাঝে তৈরি হতে থাকে দূরত্ব।
একসময় মিত্র বাহিনীর বোমাবর্ষণ শুরু হলো হার্জোগেনোরাখ শহরে। রুডলফ তার স্ত্রী ফ্রিডল, ছেলে আরমিন ও স্ত্রীর বোন বেটিকে নিয়ে উঠেছিলেন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। এই বোমাবর্ষণই যেন চুড়ান্ত ভাঙন ধরিয়ে দেয় দুই ভাইয়ের সম্পর্কের মাঝে! কীভাবে?
সেদিন সেই আশ্রয়কেন্দ্রে একেবারে শেষে নিজের স্ত্রী ও ছেলে হর্স্টকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অ্যাডলফ। সেখানে এসেই তিনি বলে বসেন, “The dirty bastards are back again”। অ্যাডলফ কথাগুলো বলেছিলেন মিত্রবাহিনীর প্লেনগুলোকে উদ্দেশ্য করেই। কিন্তু ভাইদের সাম্প্রতিক খারাপ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে রুডলফ ভেবে নিলেন যে, কথাগুলো তার পরিবারের উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে!
একসময় শেষ হলো দ্বিতীয় বিশযুদ্ধ। নাৎসি পার্টির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে ডাক পড়লো দুই ভাইয়েরই। তবে অ্যাডলফের জুতা বানানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলো আমেরিকান কর্তৃপক্ষ। আবার অলিম্পিকের সময় তার জুতা আমেরিকান অ্যাথলেটদের বেশ কাজে এসেছিলো বলেও সুনাম ছিলো তার। তাই মুক্তি পেয়ে যান তিনি।
তবে বিপদে পড়ে যান মেজো ভাই রুডলফ। নাৎসি বাহিনীর সাথে তার দীর্ঘকালীন সম্পৃক্ততা একইসাথে তার এবং তার ফ্যাক্টরির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিচার শেষে রুডলফকে আমেরিকার এক বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়।
সেখানে রুডলফকে কেউ কেউ বলে যে তাকে আসলে কাছের কেউ ফাসিয়ে দিয়েছে। রুডলফের নিজের মনেও এমন সন্দেহ কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। অন্যদের কথা শুনের তার সেই সন্দেহ আরো জোরদার হলো। তিনি সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করেছিলেন ছোট ভাই অ্যাডলফকে। দাঁড়িয়ে যাওয়া একটি ব্যবসা হাতিয়ে নেয়ার কুমতলবে ভাই এমনটা করেছে বলে ভাবতে লাগলেন তিনি। সেই সাথে ভাইয়ের সহধর্মিনী কেথকেও সন্দেহের তালিকায় রাখলেন তিনি। রুডলফ ধারণা করেছিলেন যে, উচ্চাভিলাষী কেথই হয়তো অ্যাডলফকে এমন করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন! এজন্য তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানালেন যে, তাকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে রাখা হয়েছে।
ওদিকে অ্যাডলফও কিন্তু বসে ছিলেন না। জিজ্ঞাসাবাদ থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি মন দেন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে। আমেরিকা থেকে বেসবল ও বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের জন্য জুতা তৈরির অর্ডার এসেছিলো তাদের কাছে। এ সময় কোম্পানি চালাচ্ছিলেন মূলত অ্যাডলফ ও তার স্ত্রী কেথ। অন্যদিকে রুডলফের স্ত্রী ফ্রিডল ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায় স্বামীর শেয়ার রক্ষার কাজেই।
এক বছর পর মুক্তি মেলে রুডলফের। মুক্তির পরপরই শুরু হয়ে যায় দুই ভাইয়ের যুদ্ধ। দুজনেই কোম্পানিতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বিবাদে জড়াতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে ভাইদের মাঝে দূরত্ব, সৃষ্টি হয় কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। এমতাবস্থায়ই দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পড়ে অ্যাডলফের। তখন বড় ভাই রুডলফকে আরো বেশি পরিমাণে সন্দেহ করা শুরু করেন তিনি।
পরিস্থিতি শেষে এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলো যে, দুই ভাইয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় দাঁড়িয়ে ওঠা এ কোম্পানিকে একসাথে চালানো কোনোভাবেই আর সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। একদিন তাই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীকে এক জায়গায় জড়ো করলেন রুডলফ। তারপর জানালেন যে, তাদের কোম্পানি কিছুদিনের মাঝেই দুই ভাইয়ের আলাদা অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকেও দুই ভাইয়ের যেকোনো এক পক্ষকে বেছে নিয়ে সেই পক্ষে কাজ করতে চলে যেতে হবে।
মালিকপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে গেলো শ্রমিকেরা। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে দুই ভাইয়ের মাঝে এমন কী ঘটলো যা তাদেরকে কোম্পানি ভাগ করে দেয়ার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলো। অবশেষে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক, যারা কিনা জুতা তৈরিতে দক্ষ ছিলো, গিয়ে যোগ দিলো অ্যাডলফের সাথে। অন্যদিকে বিক্রয়ের কাজে সিদ্ধহস্ত শ্রমিকেরা বেছে নিলো রুডলফের পক্ষ।
এভাবেই ভাগ হয়ে গেলো ভবিষ্যতে পৃথিবী-বিখ্যাত হতে যাওয়া দুটি জুতার কোম্পানি ‘অ্যাডিডাস’ ও ‘পুমা’! গল্প কিন্তু এখনও শেষ হয় নি। কেবল আসলাম মাঝপথে। বাকি গল্প নিয়ে আসবো পরের পর্বে যেখানে থাকবেন কিংবদন্তী ফুটবলার পেলেও! বেচারা কোনো কিছু না বুঝেও সেই বিবাদের একটি অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই সাথে থাকবে আরেকটি বিশ্বকাপের গল্পও, যাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা চমৎকারভাবে গুছিয়ে নিয়েছিলেন এক ভাই। ওদিকে এই দুই ভাইয়ের বিরোধকে কেন্দ্র করে পুরো হার্জোগেনোরাখ শহরই যে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো সেই গল্প তো থাকবেই!