Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বেন স্টোকস: ঘরের বাইরে বেঁধেছি ঘর

১.

ওপেনাররা দ্রুত বিদায় নিয়েছেন, টপ-অর্ডারের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরাও দলের বিপর্যয় সামাল দিতে ব্যর্থ। এমন অবস্থায় দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। বেন স্টোকস আছেন। শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে হবে, স্টোকস ব্যাট-প্যাড নিয়ে তৈরি। স্পেশালিস্ট বোলারদের বিশ্রাম দরকার, হাত ঘুরানোর জন্য স্টোকস তৈরি। উইকেটে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান যখন সাজঘরের পথ ভুলতে চলেছেন, তখন তাকে পথ দেখানোর জন্যও স্টোকস আছেন। স্লিপে পাখির মতো উড়াল দিয়ে বল তালুবন্দী করতে হবে, তখনও দেখা মিলছে স্টোকসের। যখনই দল কঠিন সময় পার করে, তখনই জাদুকর হিসাবে হাজির হন স্টোকস। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং – তিন ডিপার্টমেন্টেই দলের জয়ে অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি।

দলের মধ্যমণি বেন স্টোকস ; Image Source: Getty Images

ক্যারিয়ারের শেষ ১২ মাস স্বপ্নের মতো কাটানো বেন স্টোকস ২০১৯ সালের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। এই পুরস্কার তারই প্রাপ্য। বিশ্বকাপের প্রথম ১১টি আসরে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ডকে শিরোপা ঘরে রাখতে সাহায্য করেন তিনি। বিশ্বকাপের ফাইনালে দলের বিপর্যয়ের মুখে অপরাজিত ৮৪ রান করে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচানোর পর সুপার ওভারে তিন বলে আট রান করেছিলেন স্টোকস, যার ফলে সুপার ওভারও টাই হয়। বাউন্ডারি সংখ্যায় এগিয়ে থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। অ্যাশেজেও ছিলেন দুর্দান্ত। লর্ডসে ম্যাচ বাঁচানো শতক হাঁকানোর পর হেডিংলিতে অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে এক উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দিয়েছিলেন। 

২.

ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ হয়েছে ঠিকই। তবে বেন স্টোকসের ধারাবাহিক নৈপুণ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০১৯ সালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২০ সালের প্রথম ম্যাচেই ম্যাচ জেতানো নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমে ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩৫ ও ১৪ রানের ইনিংস খেলেন স্টোকস। তার ব্যাটে রান নেই, তাই মিডল-অর্ডারেও অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা হাল ধরতে পারেনি। সিরিজের দ্বিতীয় এবং বছরের প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে দলের হয়ে অবদান রাখেন তিনি, যার ফলে সিরিজে সমতায় ফিরে সফরকারীরা।

কেপটাউনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৭ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ বলে ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ বাঁচানোর জন্য মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও দিনের শেষ সময়ে তিন উইকেট শিকার করে দলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন স্টোকস।

দক্ষিণ আফ্রিকায় আরও একটি শতক হাঁকানোর পর অসুস্থ বাবাকে উৎসর্গ  করেছেন স্টোকস ; Image Source: Ashley Vlotman/Gallo Images/Getty Images

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে সমানভাবে অবদান রেখে সিরিজসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন স্টোকস। সিরিজে ব্যাট হাতে ৪৫.৪২ ব্যাটিং গড়ে ৩১৮ রান করার পাশাপাশি ২২.০০ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন দশ উইকেট, ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন ১২টি। যার দরুন প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পরও ৩-১ ব্যাবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। অলরাউন্ডার হিসাবে তার নিখুঁত পারফরমেন্সের কারণে সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সহজেই সিরিজ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই নিয়ে ৮ম বার কোনো অলরাউন্ডার এক সিরিজে ব্যাট হাতে তিন শতাধিক রান করার পাশাপাশি দশের অধিক উইকেট ও ক্যাচ ধরার কীর্তি গড়েছেন। সবচেয়ে বেশি তিনবার এই কীর্তি গড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার গ্যারি সোবার্স। ইয়ান বোথাম করেছেন ১৯৮১ সালের অ্যাশেজে। এই অ্যাশেজকেই ‘বোথামের অ্যাশেজ’ বলা হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম এমন কীর্তি গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক গ্রেগরি। তিনি ১৯২০ সালের অ্যাশেজে পাঁচ ম্যাচে ৭৩.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৪৪২ রান। ২৪.১৭ ব্যাটিং গড়ে ২৩ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ১৫টি ক্যাচ ধরেছেন।

৩.

অনেক ক্রিকেটার ঘরের মাঠে ভালো খেললেও অ্যাওয়ে ম্যাচে তুলনামূলক সফলতা পান না। কিন্তু বেন স্টোকস ঘরের মাঠের তুলনায় বাইরের দেশে বেশি সফল। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় তার সফলতা আকাশচুম্বী। ২০১৬ সালের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্যারিয়ারসেরা ২৫৮ রানের ইনিংসসহ ১২ ইনিংসে ৫৮.৫৮ ব্যাটিং গড়ে ৭০৩ রান সংগ্রহ করেছেন। বল হাতে ২৪.৭১ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন ২১ উইকেট।

বল হাতেও দলের প্রয়োজনে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট ; Image Source: Christiaan Kotze/AFP via Getty

বেন স্টোকস ইতঃমধ্যে নিজের নামের পাশে ‘স্পেশাল’ ট্যাগ বসিয়ে ফেলেছেন। তিন ফরম্যাটের তিন ডিপার্টমেন্টে সমানভাবে অবদান রাখার পাশাপাশি সব পরিবেশেই তিনি পারফর্ম করে যাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কার ধুলো উড়ানো পিচে পারফর্ম করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের পেসবান্ধব উইকেটেও পারফর্ম করে যাচ্ছেন। অলরাউন্ডার হওয়াতে তাকে দুই দিকে নজর দিতে হয়, ব্যাটিং ও বোলিং। তাই তার দায়িত্বটা একটু কঠিনই। এই কঠিন দায়িত্বই তিনি সফলতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। 

২০১৬ সাল থেকে বেন স্টোকস ঘরের বাইরে ২৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২৪ ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে তিনটি শতক এবং নয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪১.৭৯ ব্যাটিং গড়ে ১,৭৯৭ রান করেছেন। বল হাতে ২৬.৩৮ বোলিং গড়ে ৫৭ উইকেট শিকার করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে কমপক্ষে দশটি অ্যাওয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় নবম সর্বোচ্চ এবং বোলিং গড়ের দিক দিয়ে তার অবস্থান পঞ্চম স্থানে। এই একই সময়ে ঘরের মাঠে তার ব্যাটিং গড় ৩৯.৪০ এবং বোলিং গড় ৩২.৪৭।

৪.

অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ তালুবন্দী করতেও তিনি অনন্য ; Image Credit: Stu Forster

ঘরের বাইরে ২০১৬ সাল থেকে স্টোকসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তার ব্যাটিং গড় ৪০-এর বেশি হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দু’টি সিরিজ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বশেষ দুই সিরিজে রান করেছেন ৫৮.৫৮ ব্যাটিং গড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর কোনো দেশের মাটিতেই তার ব্যাটিং ৪০-এর অধিক ছিল না। এমনকি তার ব্যাটিং গড় কোন দেশের ৩০-এর কমও ছিল না। সবচেয়ে কম ৩১.১৬ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে। এই সময়ে তিনি যেসব দেশে টেস্ট খেলেছেন, সব দেশেই কমপক্ষে একটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।

দেশের বাইরে স্টোকসের বোলিং গড়ও দুর্দান্ত। ২০১৬ সাল থেকে দেশের মাটিতে ৩২.৪৭ গড়ে ৪৪ উইকেট এবং বাইরের দেশে ২৬.৩৮ গড়ে ৫৭ উইকেট শিকার করেছেন। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় তার বোলিং গড় ২৫-এর কম। শুধুমাত্র নিউ জিল্যান্ডে ৯৩.৫০ এবং ভারতে ৪৪.৬২ বোলিং গড় ছাড়া সব দেশেই তার বোলিং গড় সেরাদের কাতারে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঘরের বাইরে শুধুমাত্র ভারতেই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। তারপরও সেখানে তার সফলতা উল্লেখযোগ্য নয়। কারণ, ২০১৬ সালে ভারতের পিচগুলোতে পেসারদের জন্য তেমন কোনো সুবিধাই ছিল না।

Image Credits: Ryan Pierse

বোলার হিসাবে তার সফলতার বিচার শুধু উইকেট শিকার দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ, এক্ষেত্রে তার লম্বা স্পেলগুলো সম্পর্কে কোনো বর্ণনা নেই। তার লম্বা স্পেলগুলোর কল্যাণে ইংল্যান্ড বেশ কয়েকটি টেস্টে কামব্যাক করে জয় তুলে নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টেও তা পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়া অ্যাশেজ এবং শ্রীলঙ্কায়ও লম্বা স্পেলে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে, ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে, এমনকি অন-দ্য-ফিল্ড সব জায়গাতেই সেরাদের কাতারে স্টোকস। দলের বিপর্যয়ে, দ্রুত রান তোলায়, লম্বা স্পেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক-থ্রু এনে দিতে ইংল্যান্ডের আস্থার প্রতীক তিনি। সাদা পোশাকে অথবা রঙিন, সব রঙেই উজ্জ্বল চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার বেন স্টোকস। তাই তো বর্ষসেরা, সিরিজসেরা, টুর্নামেন্টসেরা এইসব অ্যাওয়ার্ড তার হাতেই বেশি শোভা পায়! 

This article is in Bangla language. Benjamin Andrew Stokes is an English international cricketer and current vice-captain of the England Test team. Stokes was part of the England squad that won the 2019 Cricket World Cup. It is about his away performance in the recent past. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: KIRSTY O'CONNOR

Related Articles