Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ব্যাটারির বিপক্ষে অ্যালান বোর্ডারের প্রতিরোধ

১.

গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ক্রিকেট বিশ্বে একক আধিপত্য চালিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিদ্যুৎ গতির বেশ কিছু পেসারদের পাশাপাশি দুর্দান্ত সব ব্যাটসম্যান দিয়ে সাজানো ছিল তাদের রাজত্ব। ক্রিকেটের ইতিহাসে ভয়ংকরতম দলগুলোর মধ্যে আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল অন্যতম। তারা সেই সময় একটানা ১৮বছর ঘরের মাঠে কোনো সিরিজ পরাজিত হয়নি। এমন অপরাজেয় দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ১৯৮৪ সালে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে সফর করে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার তিন কিংবদন্তী ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি এবং রড মার্শের অবসরের পর এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সিরিজ ছিল। 

অস্ট্রেলিয়ার তিন কিংবদন্তি ক্রিকেটার; Image Credit: Getty Images

দলের সেরা তিন ক্রিকেটারের অবসরের পাশাপাশি নবনিযুক্ত অধিনায়ক কিম হিউজেসের নেতৃত্বগুণ নিয়েও চারদিক থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আন-অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট খেলার জন্য প্রলোভন দেখিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হওয়া ডিন জোন্সও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার আলি বাখেরের কাছ থেকে ট্যাক্স ফ্রি ২,০০,০০০ ডলারের প্রস্তাব পান। পরে তিনি প্রস্তাব গ্রহণ না করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকের প্রহর গুণতে থাকেন। তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও অনেকেই ঐ আন-অফিসিয়াল ট্যুর খেলতে সম্মতি প্রকাশ করেছিল। 

কথায় কথায় অনেক কথার পর পুনরায় ফিরে আসা যাক মূল বিষয়ে। অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। যে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডারের অনবদ্য নৈপুণ্যে ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। 

২.

অ্যালান বোর্ডার; Image Credit: Marc Fallander

১৯৮৪ সালের ১৬ মার্চ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। একদিকে পায়ের নিচে মাটি খোঁজায় ব্যস্ত অস্ট্রেলিয়া, অপরদিকে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পোর্ট অব স্পেনে নিজেদের শক্তিশালী পেস অ্যাটাকের উপর আস্থা রেখে টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক ভিভ রিচার্ডস। ম্যাচের দিনে বৃষ্টি এবং সবুজ পিচে নিজের পেসারদের লেলিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি রিচার্ডসকে। তার সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে সময় নেননি জোয়েল গার্নার। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনের খেলায় অস্ট্রেলিয়া চার উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫৫ রান সংগ্রহ করেছিল। চার উইকেটের সবকটি গার্নারের ঝুলিতে জমা হয়। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের প্রথম উইকেটও তার দখলে যায়, যাতে করে অস্ট্রেলিয়া ৮৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে।

অভিষেক ইনিংসে ৪৮ রান করেছিলেন জোন্স; Image Credit: David Cannon

দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে অভিষিক্ত ডিন জোন্সকে সাথে নিয়ে জুটি বাঁধেন অ্যালান বোর্ডার। তারা ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ঠিক ১০০ রান যোগ করেছিলেন। দলীয় ১৮৫ রানে সাজঘরে ফেরার আগে জোন্স খেলেছিলেন ১০৪ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২ টেস্টে ১১টি শতক এবং ১৪টি অর্ধশতক হাঁকানো জোন্স ক্যারিয়ার শেষে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস হিসাবে অভিষেক ইনিংসে খেলা এই ৪৮ রানের ইনিংসটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। 

জোন্সের বিদায়ের পর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন বোর্ডার। শেষপর্যন্ত সঙ্গীর অভাবে শতক থেকে বঞ্চিত হওয়া বোর্ডার খেলেছিলেন অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংস। শতক হাঁকানোর যথেষ্ট সুযোগ অবশ্য পেয়েছিলেন তিনি। শেষ দুই উইকেটের পতন ঘটার আগে ৯৮ রানে থাকা অবস্থায় ১২টি বল মোকাবেলা করেছিলেন। বোর্ডারের অপরাজিত ৯৮ রান এবং জোন্সের ৪৮ রানের ইনিংসের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২৫৫ রান সংগ্রহ করেছিল। 

জোয়েল গার্নারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া ; Image Credit: Getty Images

৩.

ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ১২৯ রানে চার উইকেট হারালেও ভিভ রিচার্ডস, গুস লগি এবং জেফ ডুজনের ব্যাটে চড়ে প্রথম ইনিংসে ২১৩ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে। অধিনায়ক রিচার্ডস প্রতিপক্ষকে অল আউট করার জন্য তার বোলারদের চতুর্থ দিনের শেষ দেড় ঘন্টা এবং পঞ্চম দিনের পুরোটা সময় দেন। চতুর্থ দিনের বাকিটা সময় অস্ট্রেলিয়া ৫৫ রান তুলতে তিন উইকেট হারালে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিনের শুরুতে কিম হিউজেস ও টম হগান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালালেও মার্শাল, গোমেজদের সামনে তা যথেষ্ট ছিল না। 

প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকাতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে শতক পূর্ণ করেছিলেন অ্যালান বোর্ডার; Image Credit: Getty Images

দলীয় ১১৪ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটলে ক্রিজে আসেন অ্যালান বোর্ডার। এরপর একের পর এক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলেও তিনি একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ১৬২ রানে সপ্তম উইকেটের পতন ঘটলে ইনিংস পরাজয়ের শংকা তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে জিওফ লসন, রডনি মার্শ এবং টেরি অ্যাল্ডারম্যানকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বোর্ডার। তিনি শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে ১৬০ মিনিট ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার নবম উইকেট যখন পড়েছিল তখন তাদের সংগ্রহ ছিল ২৩৮ রান। মাত্র ২৫ রানে এগিয়ে ছিল তারা। ম্যাচের তখনও দেড় ঘন্টার বেশি সময় বাকি ছিল। তখন নিশ্চিত হারের মুখ থেকে এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান টেরি অ্যাল্ডারম্যানকে সাথে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৬১ রান যোগ করে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের মতো ড্রয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে চার হাঁকিয়ে শতক পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে তার অসাধারণ ইনিংস পূর্ণতা লাভ করে।

৪.

পোর্ট অব স্পেনে অ্যালান বোর্ডার প্রথম ইনিংসে ৩১৪ বলে অপরাজিত ৯৮ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৯ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ম্যাচে মোট ৫৮৩ বল খেলে ১৯৮ রান করেন। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার বাকি সব ব্যাটসম্যান ৬৫৬ বল মোকাবেলা করে ৩০৭ রান তোলে। অন্য ব্যাটসম্যানরা গড়ে ১৬.১৬ রান করেন এবং প্রতি ৩৪.৫ বলে নিজেদের উইকেট হারান। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বল মোকাবেলা করেছিলেন এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান অ্যাল্ডারম্যান। তিনি ৬৯ বল মোকাবেলা করেন। এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের সামনে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যালান বোর্ডার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৫৮৩ বল মোকাবেলা করেছিলেন বোর্ডার ; Image Credit: Getty Images

১৯৭৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের স্বর্ণযুগ ছিল। এইসময়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই তাদের দলে একাধিক বিধ্বংসী পেসার খেলতো। যার ফলে এই সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের সফলতার হার বেশ ভারি ছিল। নিজেদের মাঠে ২৩টি সিরিজের মধ্যে ২০টিতে জয়লাভ করেছিল তারা। তখন তাদের মাঠে সফরকারী ব্যাটসম্যানদের নিজেদের উইকেট বাঁচাতে কঠিন পরীক্ষা দিতে হতো। বোর্ডার দুই ইনিংসে অপরাজিত থেকে সেই পরীক্ষা পাস করেন। তিনি ম্যাচে মোট ৫৮৩ বল মোকাবেলা করেন। ১৯৭৬-২০০০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যান এক টেস্টে এত বেশি বল মোকাবেলা করতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪০ বল মোকাবেলা করেছিলেন অ্যালেক স্টুয়ার্ট; ১৯৯৪ সালে।

অ্যালান বোর্ডারের ৫৮৩ বল মোকাবেলা করার ম্যাচটি কোনো ব্যাটসম্যানের এক টেস্টের দুই ইনিংসে অপরাজিত থেকে সবচেয়ে বেশি বল মোকাবেলা করার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে। প্রথম স্থানে থাকা স্টিফেন ফ্লেমিং ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে অপরাজিত থেকে ৭১০ বল মোকাবেলা করেন। এছাড়া তৃতীয় স্থানে থাকা শচীন টেন্ডুলকার ২০০৪ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসে আউট না হয়ে ৫২৫ বল মোকাবেলা করেন।

অ্যালান বোর্ডার; Image Credit: Getty Images

অ্যালান বোর্ডারকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পোর্ট অব স্পেনের শেষ ঘন্টা তার ক্যারিয়ার সেরা ঘণ্টা ছিল কি না। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “More Like My Finest 10 Hours.

প্রথম ইনিংসে মাত্র দুই রানের জন্য শতক মিস করা বোর্ডার দ্বিতীয় ইনিংসেও সঙ্গীর অভাবে পড়েন। তখন শতক হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচও হাতছাড়া হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল। সেখান থেকে যোগ্য সমর্থন যুগিয়েছিলেন এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান টেরি অ্যাল্ডারম্যান। এই ইনিংসের আগে তার ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১২ রানে। সেই তিনি ৬৯ বল মোকাবেলা করে খেলেছিলেন অপরাজিত ২১ রানের ইনিংস। এর মধ্য দিয়ে তিনিও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন। টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ইনিংসে পরাজিত না হওয়া ম্যাচে এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি বল মোকাবেলা করা রেকর্ডের তালিকায় তার অবস্থান অষ্টমে। সবার উপরে থাকা ড্যানি মরিসন ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৩ বল মোকাবেলা করেন।

এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান টেরি অ্যাল্ডারম্যানকে নিয়ে ম্যাচ বাঁচিয়েছিলেন বোর্ডার; Image Credit: Adrian Murrell

পোর্ট অব স্পেনে অ্যালান বোর্ডারের ইনিংসটি ২০১৬ সালে ক্রিকেট মান্থলির প্রকাশিত গত ৫০ বছরের সেরা টেস্ট পারফরমেন্সের তালিকায় ১২তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার এমন পারফরমেন্সে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত অস্ট্রেলিয়া ড্র করতে সক্ষম হয়। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কতটা এগিয়ে ছিল তা সিরিজের পরবর্তী তিন ম্যাচের ফলাফল দেখলেই অনুমান করা যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের তিন টেস্টে যথাক্রমে ১০ উইকেট, ইনিংস ও ৩৬ রানের ব্যবধানে এবং ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভ করে।

This article is in Bangla language. It is about the allan border's greatest batting performance in west indies at 1984. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Adrian Murrell

Related Articles