রোমের দুর্ঘটনা, অ্যানফিল্ডের ট্র্যাজেডি, বা লিসবনে আট গোল হজমের লজ্জা — গত কয়েক বছর ধরে রক্ষণটাই বার্সেলোনার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। কার্লোস পুয়োল আর হাভিয়ের মাশ্চেরানোর অবসর, এরপর ক্লেমঁ লংলে আর স্যামুয়েল উমতিতি পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজে না পাওয়ায় বড় মঞ্চে বারবার কাচের দেয়ালের মতো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়েছে বার্সার রক্ষণ। ‘বুড়ো’ জেরার্ড পিকের ইনজুরি, ফর্মহীনতা আর অধারাবাহিকতা, এবং অনভিজ্ঞ এরিক গার্সিয়ার ভুল করার প্রবণতার কারণে রক্ষণে দাঁড়িয়ে ভরসা যোগানোর মতো নাম একটাই — রোনাল্ড আরাউহো।
তবে এই রক্ষণ দিয়ে নিশ্চিতভাবেই ইউরোপে নিজেদের আধিপত্য ফেরানো সম্ভব নয়। বার্সা তাই দলে ভিড়িয়েছে চেলসির ২৬ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনকে। বার্সার রক্ষণে ভরসা জোগাতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর তোলা থাকুক সময়ের হাতেই। আপাতত ক্রিস্টেনসেনের শক্তি, দুর্বলতা, আর বার্সায় খাপ খাইয়ে নিতে পারার সম্ভাব্যতাগুলো যাচাই করে নেওয়া যাক।
কোচ টমাস টুখেলের অধীনে চেলসি খেলছে ৩-৪-৩ ফরমেশনে, যেখানে তিন সেন্টারব্যাকের একজন ছিলেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। কখনো মাঝে, কখনো ডান পাশে ‘রাইট সেন্টারব্যাক’ পজিশনে খেলেছেন। থিয়াগো সিলভা থাকা অবস্থায় তার ডান পাশেই জায়গা করেছেন সাধারণত, তার অনুপস্থিতিতে থেকেছেন মাঝে। ২০২০-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে থিয়াগো ইনজুরিতে পড়ে উঠে যাওয়ার পর বদলি নেমে বাকিটা সময়ে যেভাবে চেলসির রক্ষণদুর্গ সামলেছেন, সেটাও অতুলনীয়।
বার্সেলোনায় যে ধরনের ডিফেন্ডারদের কদর বেশি, ক্রিস্টেনসেন তেমনই একজন বল-প্লেয়িং সেন্টারব্যাক। বার্সার আক্রমণগুলোর শুরুটা যেহেতু গোলরক্ষক আর সেন্টারব্যাকদের থেকেই হয়, ক্রিস্টেনসেনের তাই বার্সায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারার কথা। ক্রিস্টেনসেনের শক্তির দিকগুলো দেখা যাক।
প্রতিপক্ষের আক্রমণের ধরন আন্দাজ করার ক্ষমতা
প্রথমে নিচের ছবি দুটো দেখা যাক।
প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ড-চেলসি ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের ইয়ানসেন বল পান চেলসির বক্সের কাছাকাছি জায়গায়। ক্রিস্টেনসেন তখন অবস্থান করছেন ইয়ানসেনের সামনে, ওদিকে তার বাঁ পাশ থেকে ক্যানোস প্রস্তুতি নিচ্ছেন দৌড়ে ক্রিস্টেনসেনের পেছনে চলে যাওয়ার জন্য। চেলসির লেফট সেন্টারব্যাক মালাং সার ঠিকভাবে মার্ক করতে পারেননি ক্যানোসকে।
ক্রিস্টেনসেনের তখন দোলাচলে ভোগাটা স্বাভবিক, কেননা যদি তিনি ইয়ানসেনকে মার্ক করতে যান, সেক্ষেত্রে আনমার্কড ক্যানোস একা পেয়ে যেতে পারেন গোলরক্ষক মেন্ডিকে, যেহেতু লেফট সেন্টারব্যাক মালাং সার ক্যানোসকে ধরতে পারার মতো অবস্থানে নেই। আবার যদি ক্রিস্টেনসেন ক্যানোসকে মার্ক করতে যান, সেক্ষেত্রে ইয়ানসেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেক সময় পেয়ে যাবেন। ক্রিস্টেনসেন এর কোনোটাই করলেন না। তিনি ইয়ানসেনের পাসটা আন্দাজ করে নিলেন, বুঝেশুনে নিজের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে থাকলেন, এবং ব্রেন্টফোর্ডের আক্রমণটা থামিয়ে দিলেন।
আরো একটা উদাহরণের জন্য পরের তিনটা ছবি দেখা যাক।
ক্লাব বিশ্বকাপে আল হিলালের বিপক্ষে রাইট সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন ক্রিস্টেনসেন। ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, হাইলাইন রাখার কারণে চেলসির রক্ষণের পেছনে অনেকটা জায়গা রয়েছে এবং কাউন্টার অ্যাটাকে আল হিলাল সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, ক্রিস্টেনসেনের পেছনে অনেক জায়গা ছিল; আল হিলাল দলের লেফট উইঙ্গার এই জায়গাটা কাজে লাগাতে পারলে বিপদে পড়তে হতো চেলসিকে। তবে ক্রিস্টেনসেন এক্ষেত্রে ঐ জায়গা পূরণের জন্য দৌড়াননি, বরং চেষ্টা করেছেন বলের দিকে মনোযোগ দিতে। পরিস্থিতি বুঝে বলের দখল নিয়ে আপাতত চিন্তামুক্ত করেছেন চেলসিকে।
তবে বলের দখল নেওয়ার সাথে সাথেই ক্রিস্টেনসেনের দিকে ছুটে এসেছেন আল হিলালের মিডফিল্ডার আল শাহরানি। প্রেসের মুখে বল হারালে বিপদে পড়তে পারতো চেলসি, তবে ক্রিস্টেনসেন আবারও মাথা ঠাণ্ডা রেখে, টেকনিক্যাল ক্ষমতা প্রয়োগ করে ডান পাশে পাস দিয়েছেন সিজার আজপিলিকেতাকে। বিপদে পড়ার বদলে চেলসি আবার উঠেছে আক্রমণে।
লাইন ব্রেকিং পাস ও প্রোগ্রেসিভ পাস
ক্রিস্টেনসেন লাইনব্রেকিং পাস দিতে পারেন, প্রতিপক্ষের প্রেসের একটি বা দু’টি লাইন ভেঙে মিডফিল্ড বল পৌঁছে দিতে পারেন তিনি। দিতে পারেন ফরোয়ার্ড আর প্রোগ্রেসিভ পাসও।
উপরের ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, লিভারপুল-চেলসি ম্যাচে লিভারপুলের ফরোয়ার্ড আর মিডফিল্ডাররা দুটো সরলরেখা তৈরি করেছেন। কিন্তু সেন্টারব্যাক ক্রিস্টেনসেন একটা পাসে ভেঙেছেন দুটো লাইনই, বল পৌঁছে দিয়েছেন মধ্যমাঠে।
একই ঘটনা দেখা যায় চেলসি-এভারটন ম্যাচে। এভারটনের ফরোয়ার্ড আর মিডফিল্ডারদের তৈরি করা দুটো লাইনের মাঝ দিয়ে ক্রিস্টেনসেনের পাস পৌঁছে যায় চেলসির ফরোয়ার্ড টিমো ভের্নারের কাছে।
এবার তিনটা লেখচিত্র দেখা যাক।
প্রথম লেখচিত্রটা বলছে, প্রতি নব্বই মিনিটে ফরোয়ার্ড পাস এবং সঠিক ফরোয়ার্ড পাসের শতকরা হার — দুটো ক্ষেত্রেই প্রিমিয়ার লিগের বেশির ভাগ সেন্টারব্যাকের তুলনায় এগিয়ে আছেন ক্রিস্টেনসেন।
আর হিসাবটা যখন চেলসির আক্রমণভাগে বল পাস দেওয়ার সংখ্যা এবং শতকরা হার, আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের অবস্থান তখন ‘সেরাদের সেরা’র কাতারে।
প্রতি নব্বই মিনিটে প্রোগ্রেসিভ পাস এবং সঠিক প্রোগ্রেসিভ পাসের হার — এই দুটো ক্ষেত্রেও ক্রিস্টেনসেনের অবস্থান সন্তোষজনক।
প্রতিপক্ষকে ‘টেক অন’ করা
সামনে পাস দেওয়ার মতো অপশন না থাকলে বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা সতীর্থদের মার্ক করে রাখলে, ক্রিস্টেনসেন নিজেই বল নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন।
ওয়েস্টহ্যামের বিপক্ষে ক্রিস্টেনসেনের অবস্থান ছিল রাইট সেন্টারব্যাক। ক্রিস্টেনসেন বল পাওয়া মাত্রই প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ড অ্যান্টোনিও তাকে প্রেস করছিলেন।
এখানে অ্যান্টোনিওর প্রেসের মুখে ক্রিস্টেনসেন তার টেকনিক্যাল দক্ষতা প্রদর্শন করেন এবং বল নিয়ে মিডফিল্ড অবধি পৌঁছে যান, যেখানে তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেন টমাস সৌচেক আর পাবলো ফোরনালস।
এ অবস্থায় ক্রিস্টেনসেন তাদের চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে ওয়েস্টহ্যামের রক্ষণের সামনে পৌঁছে যান এবং বাঁয়ে হাডসন-ওডোয়কে পাস দিয়ে ওয়েস্টহ্যামের রাইটব্যাককে ওয়ান ভার্সেস ওয়ান অবস্থায় ফেলে দেন।
প্রেস রেসিস্টেন্স
লিভারপুল-চেলসি ম্যাচের এই ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সাদিও মানে ছুটে এসে প্রেস করতে চাইছেন জর্জিনহোর কাছ থেকে বল পাওয়া ক্রিস্টেনসেনকে। লেফটব্যাক অ্যান্ড্রু রবার্টসনও প্রেস করতে এগিয়ে আসছেন।
ক্রিস্টেনসেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে ডান পাশে সিজার আজপিলিকেতাকে পাস দিয়ে দিলেন, আজপিলিকেতার সামনেও তখন ফাঁকায় দাঁড়ানো জর্জিনহোকে পাস দেওয়ার সুযোগ চলে এলো, চেলসির রক্ষণও চাপমুক্ত হয়ে গেল।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে দেখা যায়, আজপিলিকেতার ব্যাকপাস যখন ক্রিস্টেনসেনকে খুঁজে নিল, তিনি তখন ছয়গজি বক্সে দাঁড়ানো। মাথা ঠাণ্ডা না রাখলে ক্রিস্টেনসেন বিপদে পড়তে পারতেন, ইউনাইটেডের দু’জন খেলোয়াড় তাকে প্রেস করছিলেন। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রেখে ক্রিস্টেনসেন বলটা উঁচু করে বাড়িয়ে দিলেন রাইটব্যাক অবস্থানে দাঁড়ানো হাডসন-ওডোয়কে।
লং রেঞ্জ পাসিং
রক্ষণভাগ থেকে সরাসরি ফরোয়ার্ড অবধি, অথবা কোনো উইংয়ে লম্বা পাস দিতে পারেন ক্রিস্টেনসেন। এক্ষেত্রে তার সাফল্যের হারও বেশ ভালো। বার্সেলোনায় এই কাজটা সাধারণত করে থাকেন জেরার্ড পিকে, পিকের অনুপস্থিতিতে ক্রিস্টেনসেনকেই হয়তো এই দায়িত্ব নিতে দেখা যাবে।
উল্লেখ্য, গত মৌসুমে চেলসির হয়ে ক্রিস্টেনসেনের নেওয়া লং পাসের ৮২.৯ শতাংশই ছিল সঠিক। বার্সার তিন নিয়মিত সেন্টারব্যাক রোনাল্ড আরাউহো, এরিক গার্সিয়া, আর জেরার্ড পিকের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, গার্সিয়াই (৮৭.৯ শতাংশ) শুধু ক্রিস্টেনসেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন, পিকে (৮০.৫ শতাংশ) বা আরাউহো (৭৩.৫ শতাংশ) একটু পিছিয়েই আছেন এদিক দিয়ে।
একই তুলনা চেলসির নিয়মিত সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা, আন্তোনিও রুডিগার আর সিজার আজপিলিকেতার সাথে করলে দেখা যায়, ক্রিস্টেনসেনের চেয়ে পিছিয়ে আছেন তারা তিনজনই। সিলভার সঠিক লং পাস ৮১.৪ শতাংশ, রুডিগারের ৭১.০ শতাংশ, আর আজপিলিকেতার ৫২.৫ শতাংশ। লং রেঞ্জ পাসিংয়ে তাই ক্রিস্টেনসেনকে ভরসা করাই যায়।
‘সুইপার’ রোলে খেলতে পারা
আগেই বলেছি, চেলসিতে তিন সেন্টারব্যাক খেলাচ্ছেন টমাস টুখেল, যেখানে তিনি অনেক ক্ষেত্রেই ডান পাশের সিজার আজপিলিকেতা আর বাঁয়ে আন্তোনিও রুডিগারকে রেখে মাঝে খেলিয়েছেন ক্রিস্টেনসেনকে। ‘সুইপার’ রোলেও ভালোই খেলেছিলেন ক্রিস্টেনসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি অবস্থান করেছেন আজপিলিকেতা আর রুডিগারের লাইনের একটু নিচে। এর মাধ্যমে তিনি রক্ষণ আর গোলরক্ষকের মাঝের ফাঁকা স্থানটা সামলেছেন, আজপিলিকেতা আর রুডিগার একটু উপরে উঠে গেলে তাদের ফেলে আসা ফাঁকা স্থান পূরণ করেছেন, আর প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের নেওয়া দৌড়গুলো আটকেছেন।
—
ক্রিস্টেনসেনের শক্তির জায়গাগুলো তো দেখা হলো, দুর্বলতার দিকগুলো দেখা যাক এবার।
ফিজিক্যালিটির অভাব
ক্রিস্টেনসেনের অন্যতম দুর্বলতার জায়গা তার ফিজিক্যালিটি। প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের সাথে বল দখলের লড়াইয়ে শারীরিক শক্তিতে তাকে প্রায়ই পরাজিত হতে দেখা যেত। সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে তাকে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে দেখা গেছে।
এরিয়াল ডুয়েলে পরাজিত হওয়া
৬ ফুট দেড় ইঞ্চির আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের অন্যতম দুর্বলতা এরিয়াল ডুয়েলে পরাজিত হওয়া। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথে বাতাসে লড়াই করে বল জেতার ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়।
গত মৌসুমে ৬৩.২ শতাংশ এরিয়াল ডুয়েলে জিতেছেন ক্রিস্টেনসেন, যেখানে তার বর্তমান সতীর্থ রোনাল্ড আরাউহো আর জেরার্ড পিকে জিতেছেন যথাক্রমে ৭২.৭ আর ৬৯ শতাংশ।
সাবেক চেলসি সতীর্থদের সাথেও ক্রিস্টেনসেনের পার্থক্যটা স্পষ্ট। রুডিগার জিতেছেন ৬৯.৬ শতাংশ এরিয়াল ডুয়েল, থিয়াগো সিলভার ক্ষেত্রে সেটা ৭১.১ শতাংশ। এই এরিয়েল ডুয়েলে ব্যর্থতাটাই ক্রিস্টেনসেনকে ভোগায় কর্নারের ক্ষেত্রে, সেন্টারব্যাক হওয়া সত্ত্বেও কর্নার থেকে নিয়মিত গোল পেতে দেখা যায় না তাকে।
গোল-অ্যাসিস্টে সাহায্য না করা
প্রথাগত সেন্টারব্যাক ক্রিস্টেনসেন দুই উইং দিয়ে তেমন আক্রমণে ওঠেন না, বাতাসে দুর্বলতার কারণে কর্নার থেকেও তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেন না। তাই তার এক্সপেক্টেড গোল আর অ্যাসিস্টও চেলসির অন্য সেন্টারব্যাকদের তুলনায় কম। তবে এটা হয়তো তেমন বড় সমস্যা নয়, একজন সেন্টারব্যাকের কাছ থেকে নিয়মিত গোল-অ্যাসিস্ট কোন দলই বা চায়!
প্রতি নব্বই মিনিটে ক্রিস্টেনসেনের নন-পেনাল্টি এক্সপেক্টেড গোল ০.০২, যেটা অন্য সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা (০.০৩), রুডিগার (০.০৭) ও আজপিলিকেতার (০.০৫) তুলনায় কম। নন-পেনাল্টি এক্সপেক্টেড গোল আর এক্সপেক্টেড অ্যাসিস্টের সমষ্টি হিসাব করলে থিয়াগো (০.০৫) অবশ্য ক্রিস্টেনসেনের (০.০৭) চেয়ে পিছিয়ে, তবে রুডিগার (০.১১) ও আজপিলিকেতা (০.১৩) এগিয়ে থাকবেন।
ঘন ঘন ইনজুরিতে পড়া
গত তিন মৌসুমে বিভিন্ন মেয়াদে মোট দশবার ইনজুরিতে পড়েছেন ক্রিস্টেনসেন। দীর্ঘমেয়াদী ইনজুরি না হলেও প্রতিবারই দুই-তিনটা ম্যাচ মিস করেছেন তিনি। কখনো লিগামেন্ট ইনজুরি, কখনো অ্যাকিলিস টেন্ডন ইনজুরি, কখনো পিঠের ইনজুরি, কখনো কুঁচকি, কখনো হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছেন ক্রিস্টেনসেন। তাই এই ব্যাপারটায় নিশ্চয়ই উন্নতি করতে চাইবেন তিনি।
এখন আসি বার্সার সিস্টেমে ক্রিস্টেনসেন কতটুক নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন, সেই আলোচনায়।
বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কোচেস ভয়েসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাভি বর্ণনা করেছিলেন, তার পছন্দের ফরমেশন ৩-৪-৩। এই ফরমেশনে তিনজন সেন্টারব্যাকের সাথে থাকে দুইজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, দুইজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, দুইজন টাচলাইন উইঙ্গার আর একজন নাম্বার নাইন। গত মৌসুমে বার্সেলোনাকে চিরচেনা ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলালেও এই মৌসুমে ৩-৪-৩ প্রয়োগ করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। চেলসিতে একই ফরমেশনেই খেলে এসেছেন ক্রিস্টেনসেন। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালে জাভির অধীনে নিজেকে মেলে ধরতে পারারই কথা ক্রিস্টেনসেনের।
আবার আগে যেমনটা বলা হয়েছে, ক্রিস্টেনসেন একজন বল-প্লেয়িং সেন্টারব্যাক। পাসিং অ্যাকুরেসি, লাইন ব্রেকিং পাস, প্রতিপক্ষকে ‘টেক অন’ করা, সুইপার হিসেবে খেলতে পারা, এরিয়াল ডুয়েলের ব্যাপারটা ছাড়া প্রায় সবই মিলে যায় অভিজ্ঞ জেরার্ড পিকের সাথে। পিকেরও বয়স হয়েছে, ক্যারিয়ারের সমাপ্তিরেখাটা এখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। এই অবস্থায় প্রায় একই প্রোফাইলের খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিস্টেনসেনকে পেয়ে যাওয়াটা বার্সেলোনার জন্য ভালো সংবাদই বটে। ইনজুরিমুক্ত থাকতে পারলে, আর নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করলে অনেক দিন বার্সার রক্ষণে ভরসা দিতে পারবেন ডেনমার্কের এই ডিফেন্ডার।