Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জোফরা আর্চার: ইংল্যান্ডজয়ী এক ক্যারিবীয়

জোফরা আর্চার কে?

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক। ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ ড্র করার অন্যতম রূপকার। গত কয়েক বছর ধরে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সবচেয়ে উন্মাদনা তৈরি করা ফাস্ট বোলার।

অনেক পরিচয় দেওয়া যেতে পারে জোফরা আর্চারের। কিন্তু তার আসল পরিচয় এসবের মধ্যে লুকানোই রইলো। তিনি আসলে একজন ক্যারিবীয় যোদ্ধা, যিনি জীবন যুদ্ধে হার মানতে চান না বলে জন্মভূমি ছেড়ে এসে জয় করেছেন ইংল্যান্ড।

সাসেক্সে খেলা আর্চার; Image Source: Jofra Archer/ITV

হ্যাঁ, ইংল্যান্ডজয়ী আর্চার সম্প্রতি বিশ্বজয়ী হয়ে উঠেছেন। পেয়েছেন স্বপ্নের ইংল্যান্ডের জার্সি পরার সুযোগ। পেয়েছেন এই দলটির হয়ে বিশ্বকাপ, অ্যাশেজ খেলার সুযোগ। সর্বশেষ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) টেস্ট ও সীমিত ওভারের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেই ঠাই পেয়ে গেছেন।

এটা অন্তত পরিষ্কার যে, আর্চার আর দশজন ইংলিশ মিডিয়ার তৈরি কাগজের বাঘ নন। তিনি সত্যিই এই ক্রিকেট ভূমিতে এসেছেন গর্জন করে টিকে থাকতে।

আর্চারের জন্ম বারবাডোজে। তার বাবা ফ্রাঙ্ক আর্চার একজন ব্রিটিশ নাগরিক। আর মা একজন বাজান; বারবাডোজের আফ্রিকান প্রভাবযুক্ত ইংলিশ ভাষাভাষীদের বাজান বলা হয়।

শৈশব থেকেই আর দশজন বাজানের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন আর্চার। ক্রাইস্ট চার্চ ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়াশোনা করতেন এবং সেখানেই ক্রিকেট খেলার শুরু। কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার জোয়েল গার্নার ছিলেন এই স্কুলেরই ছাত্র। তার স্কুল শিক্ষকরা স্বাক্ষ্য দেন যে, ১০-১১ বছর বয়স থেকেই আর্চার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। ভয়ানক গতি ছিলো তার সেই বয়সেই।

ওই স্কুলের শিক্ষক ও ক্রিকেট কোচ ব্রুস কোজেন বিবিসিকে বলেছেন, আর্চার সেই সময় ব্যাটিং ওপেন করতেন এবং কখনো কখনো বোলিংও ওপেন করতেন। মজার ব্যাপার হলো, তখন ওই স্কুলে এত বেশি ফাস্ট বোলার ছিলো যে, নিজেকে টিকিয়ে রাখতে আর্চার লেগস্পিনারও হয়ে গিয়েছিলেন!

সেই সময়ের আর্চারকে নিয়ে বলতে গিয়ে কোজেন বলছিলেন,

‘সে স্কুলের হয়ে ব্যাটিং ওপেন করতো এবং কখনো কখনো বোলিংও ওপেন করতো। আবার কখনো প্রথম বা দ্বিতীয় বদলী হিসেবে আক্রমনে আসতো। কারণ সে সময় আমাদের স্কুলে অনেক সত্যিকারের ফাস্ট বোলার ছিলো। তার সে সময় দারুণ পেস ছিলো; এমনকি খুব কম বয়সেও। কিন্তু একটা সময় অনেক পেসার থাকার কারণে ও লেগস্পিন করতে শুরু করলো এবং সেটাও ভালো করছিলো। তার যখন বয়স ১৫ বা ১৬, তখন সে আবার পেস বোলিংয়ে ফিরে আসলো। সে তখন আরও শক্তিশালী, বড় হয়েছে এবং অসাধারণ বল করতে শুরু করেছে।’

আইপিএলের ম্যাচে আর্চার; Image Source: Getti Image

পেস বোলিংয়ে ফিরে আসা এই আর্চারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে খুব একটা সময় লাগলো না। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বারবাডোজ দলে ডাক পেয়ে গেলেন। এই সময় তার ভাগ্যটা বদলে দিলে ইংলিশ অলরাউন্ডার ক্রিস জর্ডান।

বারবাডোজে জন্ম নেওয়া এই তারকা সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসেছিলেন ‘বিদেশী’ কোটায় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে। তিনি বারবাডোজের হয়ে খেলছিলেন। আর সেখানেই নেটে সাক্ষাৎ হলো আর্চারের সাথে। সেই সাক্ষাতের ঘটনাটা জর্ডানের মুখে শুনে নেওয়াই ভালো,

‘আমি যখন বারবাডোজের হয়ে বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে গেলাম, তখন জোফরার সাথে আমার প্রথম দেখা হলো। ও আমাদের অনুশীলনে এসেছিলো। আমি ব্যাট করার জন্য প্যাড আপ করে নিলাম এবং সেই হোপ (পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা হয়েছেন) কিপিং করছিলো। জোফরা তার বোলিং মার্কের প্রান্তে ছিলো। সেই আমার কাছে ছুটে এলো। বললো, ‘এই বাচ্চাটা তুমি যা ভাবছ, তার চেয়ে অনেক জোরে বল করবে।’ আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম আমার বিশেষ কিছু মনে হলো না। বলটা ছিলো একটা বাউন্সার। আমার মাথার পাশ থেকে শিষ দিয়ে বের হয়ে গেলো। বলটা জায়গামতো লাগলে আমি ওই দিনই শেষ হয়ে যেতাম। সামান্য স্পর্শেই আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। সেই ছুটে এসে হেসে বললো, ‘আমি তোমাকে এটাই বলেছিলাম।’

এরপর আর্চারকে নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না জর্ডাসের সাথে। তিনি তার কাউন্টি দল সাসেক্সে গিয়েই কোচ মার্ক রবিসনসনের সাথে মিটিং করলেন। বললেন, তিনি বারবাডোজে একটা হীরের টুকরো দেখে এসেছেন। তার মতে, এই ভয়ানক তরুণকে যেকোনো মূল্যে দলে ভেড়ানো উচিত। রবিনসন আস্থা রাখলেন জর্ডানের কথায়। আর্চারকে ডাকা হলো সাসেক্সের নেটে। বাকিটা ইতিহাস।

আর্চার সাসেক্সের হয়ে প্রথম ২৮ ম্যাচে ২৩.৪৪ গড়ে ১৩১টি উইকেট তুলে নিলেন। তবে তার উন্মাদনা হয়ে ওঠার আরেকটু বাকি ছিলো। সেটা হলো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে।

এর আগে অবশ্য আরেকটা ঘটনা ঘটে গেলো। আর্চার ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনুর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়ে গেলেন। এই দলের হয়ে ৩টি ম্যাচও খেলে ফেললেন। কিন্তু কোনো একটা কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিনিয়র দলে সুযোগ হচ্ছিলো না। তিনি আশা করেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপের দলেই তাকে ডাকা হবে। সে সময় তার বয়সও খুব অল্প ছিলো। হয়তো ক্যারিবীয় নির্বাচকরা অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আর্চার এই ব্যাপারটা ভালোভাবে নিলেন না। তিনি ইংল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

বাবা ব্রিটিশ বলে নাগরিকত্ব পেতে তার সময় লাগলো না। কিন্তু তখনকার ইসিবির আইন অনুযায়ী আর্চার সরাসরি ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার যোগ্য হলেন না। যেহেতু তিনি ১৮ বছর বয়স অবধি ইংল্যান্ডে স্থায়ী ছিলেন না, তাই তাকে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হতো ইংল্যান্ড দলে খেলার যোগ্য হতে। কিন্তু ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসিবি জানায়, আইসিসির আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে তারা এই সময়টা তিন বছরে কমিয়ে এনেছে। ফলে দ্রুতই ইংল্যান্ডে খেলার যোগ্য হয়ে যান আর্চার।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে আর্চার; Image Source: ICC

এর মধ্যে অবশ্য তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নতুন এক সেনসেশন হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। শুরুটা হয় বিগ ব্যাশ দিয়ে। ২০১৭-১৮ মৌসুমের বিলম্বিত বদলী হিসেবে হোবার্ট হারিকেন দলে ভেড়ায় আর্চারকে। মাঠে পৌঁছাতে দেরি, নিজেকে টি-টোয়েন্টির ঝড় বলে প্রমাণ করতে দেরি হলো না। ইয়র্কার, বাউন্সার, গতির সাথে শেষ দিকে নেমে লম্বা লম্বা ছক্কা মারতে পারা এবং ভয়ানক অ্যাথলেটিক ফিল্ডিং তাকে নতুন যুগের টি-টোয়েন্টি তারকা করে ফেলে।

বিগ ব্যাশের এই পারফরম্যান্স চোখ বড় করে দেয় আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর। পরের মৌসুমে তাকে নিয়ে নিলামে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। শেষাবধি রাজস্থান রয়্যালস ৮ লাখ পাউন্ড দিয়ে দলে ভেড়ায় আর্চারকে। আইপিএলেও একেবারে ঝলসাতে থাকেন তিনি।

আর এরই ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ড জুড়ে শোরগোল ওঠে, আর্চারকে দলে চাই। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেন মজার ছলে বলেন, আর্চার বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পেলে তিনি প্রধান নির্বাচকের বাসায় গিয়ে জবাব চাইবেন!

বিশ্বকাপ দলের জন্যই যাচাই করে দেখার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের জার্সি পরিয়ে দেওয়া হয় আর্চারকে। মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়ে যায় তার। এক ম্যাচেই তার ভয়ানক গতি দেখে আরও মুগ্ধ ইংলিশ মিডিয়া ও বিশ্লেষকরা। কিন্তু নির্বাচকরা আরেকটা চমক দিলেন। বিশ্বকাপের দলে ঠাই হলো না তার।

এর মধ্যে আর্চার নিজেকে প্রমাণ করতে থাকলেন। অবশেষে আর উপেক্ষা চললো না। শেষ সময়ে দলে পরিবর্তন এনে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঢোকানো হলো আর্চারকে।

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিনর জানলেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছেন চাচাতো ভাই ও ছোটবেলার বন্ধু। সেই শোক বুকে চেপেই মাঠে খেলেছেন তিনি।

অ্যাশেজে আর্চার; Image Source: Glyn KIRK/AFP

দারুণ প্রতিদান দিলেন এই ক্যারিবীয়। ২০ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক হলেন। সবচেয়ে বড় কথা- ফাইনালের সেই বিখ্যাত সুপার ওভারটিও করলেন আর্চার।

এরপর রইলো টেস্ট পরীক্ষা। কাউন্টি খেলে নিজেকে আগেই প্রমাণ করা আর্চারকে ডাকা হলো অ্যাশেজে। সেখানেও ২২ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রাখলেন সিরিজ ড্র করাতে।

শুরু হলো আর্চারের পথচলা।

আর্চারের চেয়ে ভালোভাবে বা এরকমভাবে ক্রিকেটে অনেকেরই শুরু হয়েছে। এখন আর্চারের আসল পরীক্ষার পালা। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তাকে নিয়ে এখন অনেক কাটাছেড়া হবে। এই বিশ্লেষণের যুগে তিনি নিজেকে আরও বেশি প্রমাণ করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন সময়ের হাতে তোলা রইলো।

This is the story of English fast bowler Jofra Archer

Source: BBC, espncricinfo, wikipedia, ITV

Feature Image: Glyn KIRK/AFP

Related Articles