দ্বিতীয় মেয়াদে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিউজিল্যান্ড সফরই মাশরাফি বিন মর্তুজার দেশের বাইরে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। আর ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর দেশের বাইরে আর কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে যায়নি বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড দলের চেয়ে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ। মাশরাফি নিজেও মনে করেন সফরটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। ‘আমরা গত দুই বছর বেশিরভাগ ম্যাচ নিজেদের মাটিতেই খেলেছি। এবং তার মধ্যে অনেকগুলো ম্যাচ জিতেছি। এখন আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ, আর এখানে বড় বড় দলগুলোও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া অন্য সব দেশের চেয়ে আলাদা, তবে আমাদের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের বেশকিছু সুখস্মৃতি রয়েছে।‘
নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া ভিন্ন হলেও প্রতিপক্ষ হিসাবে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের খুব চেনা। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই বাংলাওয়াশ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। পুরানো স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে জ্বলে উঠার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
সিরিজটা ব্যক্তিগতভাবেও অধিনায়ক মাশরাফির জন্য উত্তেজনাকর। মাশরাফি প্রথম যেবার অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তখন প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। কিন্তু বারবার ইনজুরির কবলে পড়া মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন। এরপর ২০১০ সালে সুস্থ হয়ে আবারো দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার পর দেশের মাটিতে নিজের প্রথম ম্যাচেই আবারো ইনজুরিতে পড়েন, যে ইনজুরির কারণে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মিস করতে হয়েছিলো মাশরাফিকে।
এই সিরিজে মাশরাফির জন্য কী অপেক্ষা করছে? নিশ্চয় মুকুটে আরেকটি মুক্তো। বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড সফরকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ দিনের ক্যাম্প করে, ক্যাম্প শেষে নিউজিল্যান্ডে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। তিনটি ওডিয়াই, তিনটি টি-টুয়েন্টি এবং দুই টেস্টের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু হবে ২৬ শে ডিসেম্বর বক্সিং ডে তে এবং শেষ হবে ২৪ শে জানুয়ারি।
২০১০ সালের পর থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ডও বেশ ভালো। এ সময়ে দুইবার বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওডিয়াই ম্যাচ জেতে দুই দলের মধ্যকার ১২ তম ম্যাচে এসে। ২০০৮ সালে ঢাকায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে কিউইদেরকে ৭ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট করে বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফির ৪ উইকেট এবং রাজ্জাকের ৩ উইকেট শিকারের দিনে মাত্র ২০১ রানে গুটিয়ে যায় কিউইরা। জবাবে ম্যাচসেরা জুনায়েদ সিদ্দিকির ৮৫ রানের উপর ভর করে ৭ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে আবারো আসে কিউইরা, এবার বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ম্যাশ। সাকিব আল হাসানের ৫৮ রান এবং শেষদিকে ম্যাশের ঝড়ো ১৫ রানের উপর ভর করে ২২৮ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ঐ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে বৃষ্টি। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭ ওভারে ২১০ রানের। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের প্রথম ওভারেই বড় ধরনের হোঁচট খায় বাংলাদেশ, দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি নিজের প্রথম ওভার করার সময় ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ত্যাগ করেন। নিজের জন্মদিনটা দিনশেষে বাংলাদেশের জয়ে সুখকর হলেও ইনজুরি তাকে অনেকদিনের জন্য মাঠের বাহিরে ঠেলে দিয়েছিলো।
মাশরাফির অনুপস্থিতিতে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাঁধে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিজ দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করেন সাকিব, ম্যাচে ৫৮ রানের সাথে ৪ কিউই ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ঐদিন।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের ২য় ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। সিরিজের ৩য় এবং ৪র্থ ম্যাচ যথাক্রমে ৭ উইকেটে এবং ৯ রানে জেতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে ওডিয়াই সিরিজ হারায় বাংলাদেশ।
সিরিজের ৫ম এবং শেষ ওডিয়াইতে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্যে মাঠে নামে বাংলাদেশ। প্রত্যাশার চাপে শুরুতেই ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। নির্ধারিত ওভারের আগেই ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ, দলের পক্ষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৩৬ রান, ইমরুল কায়েসের ৩৪ রান এবং মুশির ২৯ রান ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কেউই রান করতে পারেনি। বাংলাদেশের দেওয়া মামুলি টার্গেটে নিজেদের বাকি থাকা সম্মান রক্ষার্থে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। এবার তাদের যমদূত হিসাবে হাজির হয় রুবেল হোসেন, কিউইদের শেষ উইকেটে জয়ের জন্য মাত্র ৪ রান দরকার ছিলো তখন রুবেলের অসাধারণ এক ইয়ার্কারে বোল্ড হয়ে যায় মিলস। আর এতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরো একটি সাফল্য যোগ হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ঐ সিরিজের সব ম্যাচেই বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার ছিলেন। ৪ ম্যাচে ৭১.০০ ব্যাটিং গড়ে ২১৩ রান করার পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছিলো ১১ কিউই ব্যাটসম্যান।
২০১৩ সালে আবারো বাংলাদেশের কাছে বাংলাওয়াশ হয় কিউইরা, মুশফিকের নেতৃত্বে তিন ম্যাচ সিরিজের সবকটিতে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।
দুইদল শেষ ওডিয়াই ম্যাচ খেলেছে গত বছর বিশ্বকাপে, পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা নিউজিল্যান্ডকে কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলে দিয়েছিলো সাকিব রিয়াদরা। শেষ পর্যন্ত গাপটিলের কারণে শেষ রক্ষা হয় নিউজিল্যান্ডের।
ক্রাইস্টচার্চে ২৬ শে ডিসেম্বর বক্সিং ডে দুইদল প্রথম ওডিয়াই ম্যাচ খেলবে। গত দুই বছরে দেশের মাটিতে দুর্দান্ত খেলা মাশরাফি বাহিনীর জন্য এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। দেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩৪ টি ওডিয়াইতে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ২৩ টি তে জয় উপহার দিয়েছেন। আলাদাভাবে তার জন্যও এটি একটি চ্যালেঞ্জ, আর তার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারেন সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ টি ওডিয়াইতে ২৮ টি উইকেট শিকারের পাশাপাশি ৩৫২ রান আছে সাকিবের, এছাড়া ৯ ম্যাচে ১৭ উইকেট নেওয়া রুবেলও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ম্যাশের তুরুপের তাস হতে পারে। সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসাবে তো মুস্তাফিজুর রহমান আছেই।
বাংলাদেশকে শুভকামনা জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি, চলতি সিরিজ নিয়ে আরো আলোচনা হবে। সবাই ভালো থাকবেন।