Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনা: সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতার গল্প

বর্তমান সফল ক্লাবগুলোর ভেতর বার্সেলোনার নাম তালিকার শীর্ষের দিকে থাকবে। গত ১০ বছরের এমন কোনো ক্লাব শিরোপা নেই, যা কাতালানরা জেতেনি। সাম্প্রতিক সময়ে লিগে তো তাদের অনেকটা একক রাজত্ব। গত ১০ বছরে তারা লিগ জিতেছে ৬ বার। ট্রেবল জেতার নমুনা আছে ২ বার, এমনকি এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬টি শিরোপা জিতেছে তারা। কোপা দেল রে, উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ছাড়াও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ তারা জিতেছে ৩ বার।

কিন্তু এই ১০ বছরে সাফল্যের ভিড়ে এই দলের বেশ কিছু দুর্বিষহ স্মৃতি ও ভুলে যাওয়ার মতো ম্যাচ আছে, যার স্মৃতি আজও বার্সেলোনা সমর্থকদের পীড়া দেয়। বার্সেলোনা যদি সেই ম্যাচগুলোতে জয় নিশ্চিত করতে পারতো, তাহলে তাদের অর্জনের তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারতো। বার্সেলোনার সেসব ম্যাচের ঘটনা নিয়েই আজকের এ আয়োজন।

লা লিগার শিরোপা দৌড় (১৩/১৪ মৌসুম)

কেমন শোনাবে, যদি ২৪ সপ্তাহ কোনো একটি দল লিগের টেবিলের শীর্ষে থাকার পরও লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়! ২০১৩/২০১৪ মৌসুমে বার্সেলোনাকে এমন ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়েছিলো। লিগ জেতার দৌড়ে প্রথমে থেকেও পঁচা শামুকে হোঁচট খেয়ে বার্সেলোনা একরকম লা লিগা টাইটেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হাতে তুলে দিয়েছিলো।

পেপ গার্দিওলার বিদায়ের পর টিটো ভিলানোভা কোচের দায়িত্বে আসলেও বার্সেলোনার সময় ভালো যাচ্ছিলো না। ভিলানোভা অসুস্থতার কারণে এক মৌসুম পরেই বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিলেন। সেখানে জেরার্ড মার্টিনো কোচ হয়ে আসলেও বার্সেলোনার ভালো সময় ফেরেনি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে কোপা ডেল রে ফাইনালে হেরেছিলো তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালেই। তাই সেখানে একমাত্র আশা ছিলো লিগ জেতা।

টিটো ভিলানোভা, বার্সেলোনার প্রয়াত কোচ; Getty Image

২৪ সপ্তাহ টেবিলের শীর্ষে থাকার পর বার্সেলোনা ছন্দপতন হয় আনোয়েতা স্টেডিয়ামে রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে হেরে। একইভাবে রিয়াল ভ্যালাদোলিদ ও গ্রানাডার কাছে হেরে এবং গেটাফে ও এলচের সাথে ড্র করে বার্সেলোনা গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট নষ্ট করে। ফলে কয়েক ম্যাচের ব্যবধানে ১০ পয়েন্ট হারানোর জন্য বার্সেলোনার সমতায় চলে আসে পিছিয়ে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল মাদ্রিদ।

২০১৩/২০১৪ মৌসুমে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে ম্যাচের একটি দৃশ্য; Image Source: BOLA.NET

তবুও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে লিগের দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতে লিগ শিরোপার মুকুট মাথায় তোলার একটা সুযোগ এসেছিলো বার্সেলোনার। কিন্তু ঐ মৌসুমে যে ভাগ্যই বার্সেলোনার সহায় ছিলো না! প্রথমার্ধে অ্যালেক্সিস সানচেজের গোলে এগিয়ে থাকলেও বার্সেলোনা ম্যাচটি জিততে পারেনি। ১-১ গোলে সমতায় ফেরা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদই স্পেনের চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে নেয়। আর ২৪ সপ্তাহ লিগের শীর্ষে থাকার পর বার্সেলোনা পার করে ভুলে যাবার মতো একটি শিরোপাহীন মৌসুম।

স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনাল ২০১৫

বার্সেলোনার জন্য সর্বশেষ সফলতম বছর ২০১৫ সাল। ঐ বছরই বার্সেলোনা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছিলো। পাশাপাশি এক মৌসুমে ট্রেবল জেতার মতো খ্যাতিও অর্জন করেছিলো। হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো হেক্সা। কিন্তু সেই ছয় শিরোপা জেতার পথ রুখে দাঁড়ায় তখনকার আর্নেস্তো ভালভার্দের অধীনে থাকা অ্যাটলেটিকো বিলবাও।

স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে প্রথম ম্যাচ ছিলো অ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের মাঠে। পুরো মৌসুম অসাধারণ নৈপুণ্যে কাটানো বার্সেলোনা স্বাভাবিকভাবে ফেবারিট ছিলো সেই ম্যাচে। কিন্তু বিলবাও স্ট্রাইকার আদুরিচ সব পণ্ড করে দেন। মেসি, সুয়ারেজ এবং পেদ্রোর সামনে তিনি করেন ৩ গোল। আর প্রথম লেগে বার্সেলোনা হারে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে।

স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে মত্ত অ্যাটলেটিকো বিলবাও; Image Source: Getty Image

প্রথম লেগে এত বড় ব্যবধানের হার বার্সেলোনার জন্য আকস্মিক ধাক্কা ছিলো। ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাশক্তি থাকলেও কোনো গোল হজম না করে ৫ গোল ফেরত দেওয়াটা বার্সেলোনার জন্য প্রায় অসম্ভব ছিলো। তবে সেবারের লা লিগা জয়ী দলটি অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে হাঁটতে পারেনি। ফলাফল, ঘরের মাঠে ১-১ গোলে ড্র এবং দুই লেগে ৫-১ গোলে এগিয়ে থেকে স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতে অ্যাটলেটিকো বিলবাও।

চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল ২০১৩

আপনি যদি ২০১৫ সালের স্প্যানিশ সুপার কাপে অ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের সাথে ৫-১ ব্যবধানে হারাকে লজ্জাজনক বলেন, তাহলে বায়ার্ন মিউনিখের সাথে ৭-০ এর পরাজয়কে কী বলবেন?

২০১২/২০১৩ মৌসুমে বার্সেলোনা ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করেছিলো। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে ছিলো চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ। যদিও সেবারের সেমি ফাইনালটি একটু ব্যতিক্রমই ছিলো। কারণ সবাই চাচ্ছিলো বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদের লড়াই। কিন্তু দুই স্প্যানিশ দল সেমি ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় জার্মান দুই ক্লাবের কাছে।

৪-০ তে হারার পর হতাশাগ্রস্ত সানচেজ ও জাভি; Image Source: MIGUEL RUIZ

নিজেদের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখ তারা বার্সেলোনাকে হারায় ৪-০ গোলে। নিজেদের মাঠে প্রবল দাপটের পাশাপাশি বার্সেলোনা যেন মুখ লুকোনোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলো না। ইনজুরির কারণে মেসি সেমি ফাইনাল খেলতে পারেননি। বার্সেলোনাও ১৮০ মিনিটের ভেতর প্রতিটি মিনিটে হারে হারে টের পেয়েছে তার অনুপস্থিতি।

বায়ার্ন মিউনিখ শুধুমাত্র তাদের মাঠে ৪-০ গোলে হারিয়ে থেমে যায়নি। ক্যাম্প ন্যুতেও বার্সেলোনাকে তারা গোল করা থেকে বিরত রেখে তাদের জালে ৩ গোল করে। দুই লেগে ৭-০ গোলের এ হার ছিলো বায়ার্ন মিউনিখের বিপরীতে গত ১৫ বছরের ভেতর সবথেকে লজ্জাজনক হার।

চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়াটার ফাইনাল ২০১৭

২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়াটার ফাইনালে যখন বার্সেলোনা পিএসজির মুখোমুখি হয়েছিলো, তখনকার পিএসজি দল বর্তমান দলের মতো এতটা শক্তিশালী ছিলো না। এমবাপ্পে তখনও মোনাকোতে খেলেন, নেইমারও বার্সেলোনায়। কিন্তু ডি মারিয়া, কাভানি আর ড্রাক্সলারদের পিএসজি হয়ে উঠেছিলো ভয়ঙ্কর। বার্সেলোনায় সেই ম্যাচে ইভান রাকিটিচ ছিলেন না, কিন্তু এমএসএন ত্রয়ী তো ছিলেন। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক ত্রয়ীর সামনে কাভানিরা গুনে গুনে ৪ গোল করলেন।

বার্সেলোনার বিপক্ষে জোড়া গোল করা ডি মারিয়া; Image Source: sportsnet

সেদিন মেসিও ছিলেন অনেকটা নিষ্প্রভ। যদিও তাকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলো পিএসজির খেলোয়াড়ই। মেসিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখলেও পিএসজির মাঠে নেইমার, সুয়ারেজও কিছু করে দেখাতে পারেননি। নিজেদের মাঠে কাতালানদের সামনে পিএসজিই ৯০ মিনিট ধরে রাজত্ব করেছে।

তবে এ ম্যাচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে অন্যতম ব্যর্থতার ম্যাচ ধরা হলেও সেকেন্ড লেগে নিজেদের মাঠে বার্সেলোনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনে প্রথম লেগে ৪ গোলের হারের হতাশা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। বার্সেলোনা সমর্থকেরা নিজেদের মাঠে ৬-১ এর সুখকর স্মৃতিকেই মনে রেখেছে। তবে হার তো হারই, হেরে যাওয়াকে উপেক্ষা করলে তো চলবে না। তাই কাতালানদের সাম্প্রতিক ব্যর্থতার ম্যাচগুলোর কথা ভাবলে পিএসজির সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগে সে প্রথম লেগের ম্যাচের ঘটনা উল্লেখ থাকবে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ২০১৮

সিরি আ-তে খেলা রোমা বার্সেলোনার শক্তিমত্তা বা অর্জনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। একে তো বার্সেলোনাই সেকেন্ড লেগের জন্য ফেবারিট, তার উপর প্রথম লেগে তাদের সহজ জয়। তাই কাতালান সমর্থকেরা ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলো সেমিফাইনালের ম্যাচ নিয়ে। কিন্তু ইতালিতে রোমার মাঠে খেলতে গিয়ে বার্সেলোনা যে লজ্জার ইতিহাস রচনা করবে, তা কে ভেবেছিলো?

তবে বার্সেলোনার দুর্বলতা থেকে সেই ম্যাচে রোমার আত্মবিশ্বাসই এগিয়ে থাকবে। টানা ম্যাচ খেলায় রোমার সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে বার্সেলোনার একাদশ কিছুটা ক্লান্ত ছিলো। তার উপরে তাদের পেয়ে বসেছিলো প্রথম লেগে জয়ের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। আর এসব দিক লক্ষ্য রেখেই মাঠে নেমেছিলো রোমা। তাই তাদের কঠিন মনোবলের সামনে ক্লান্ত বার্সেলোনা ছিলো অসহায়।

বার্সেলোনার হতাশা ও রোমার উদযাপন; Image Source: vavel.com 

ক্যাম্প ন্যুতে ভালভার্দের শিষ্যরা ৪ গোলের জয় পেলেও রোমা গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাওয়ে গোল পেয়েছিলো বার্সেলোনার ছন্নছাড়া ডিফেন্সের কারণে। আর নিজেদের মাঠে ৩ গোলের পর তাদের সেমিফাইনালে পথ সুগম করে দিয়েছিলো ঐ ক্যাম্প ন্যুতে করা একমাত্র গোল। বার্সেলোনাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে গেলেও তাদের যাত্রা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। তবে তাদের ইতিহাসের সেরা স্মৃতি কিন্তু তারা পেয়ে গেছে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে ধারাবাহিক ভালো করার জন্য অবশ্যই দরকার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দল, যেখানে বেঞ্চ থেকেও ম্যাচের ফলাফল ঘুরিয়ে দেবার মতো সুবিধা থাকে। আসলে এতদিন এমনটা ছিলো না কাতালানদের জন্য। গত ৩ বছর তাদের শুধু সেরা একাদশ ছিলো, সেরা দল নয়। তবে ভালভার্দের বর্তমান দলটি অনেক পূর্ণাঙ্গ। চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকার মতো একটি দল। যদি সেমিফাইনাল জুজুতে আবার বার্সেলোনাকে পেয়ে না বসে এবং বার্সেলোনা থাকে তাদের নিজস্ব মেজাজে, তাহলে এ দলটি এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার অন্যতম দাবিদার।

ফিচার ইমেজ: Getty Image

Related Articles