সাধারণ মানুষের কাছে ফুটবল মানেই হলো গোলের খেলা। আর যারা পাঁড় ভক্ত, তাদের কাছে ফুটবল শুধু একটি খেলাই নয়, এটি জীবনেরই অংশ। তবে কখনো কখনো ফুটবল সক্ষম হয় দুই শ্রেণীর মানুষকেই সন্তুষ্ট করতে। কোনো একটি ম্যাচে হয়তো একাধারে বয়ে যায় গোলের বন্যা, ঠিক তেমনই আবার প্রতি মুহূর্তের নাটকীয়তা, ঘটনা প্রবাহের ক্রমাগত বাঁক বদল এবং শেষ মিনিট অব্দি অনিশ্চয়তা মানবজীবনেরই প্রতিফলন ঘটায়। তখন দুই বিপরীত মোহনা এসে একসাথে মিলিত হয়। আর ঐ ম্যাচটি পেয়ে যায় ধ্রুপদী লড়াইয়ের খেতাব।
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে টটেনহাম ও ম্যানচেস্টার সিটির দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটিকে সেরকম ধ্রুপদী লড়াইয়ের কাতারেই ফেলা যায়। কী ছিল না ম্যাচটিতে! গোল চান আপনি? প্রথম ২১ মিনিটেই হয়ে গিয়েছিল পাঁচটি গোল। আর পুরো ম্যাচে সাতটি। নাটকীয়তা চান? সেক্ষেত্রে ছিল ভিএআরের ফলে গোল বাতিল হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত। জম্পেশ থ্রিলারের মতো টুইস্ট চান? ছিল কিছুক্ষণ পরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তিত হওয়া, ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা। আর অনিশ্চয়তা? শেষ বাঁশি বাজার আগপর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছিল না শেষ হাসি হাসবে কারা।
জীবনের রঙ্গমঞ্চে যেমন হাসির পরেই থাকে কান্না, উত্থানের খানিক বাদেই থাকে পতন, সাফল্যের বিপরীতে থাকে ব্যর্থতা- এই ম্যাচের চিত্রনাট্যও ছিল সেই সকল উপাদানে টইটুম্বুর। অতিরিক্ত সময়ে রহিম স্টার্লিংয়ের ‘জয়সূচক’ গোলে উৎসবে ফেটে পড়েছিল ইতিহাদ স্টেডিয়ামসহ ম্যানচেস্টারের পুরো নীল অংশটি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই যখন জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে অফ সাইডের কারণে গোলটি বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্ত, মুহূর্তেই মধ্যেই স্তম্ভিত হয়ে যায় সবাই। আর খানিক আগেও সব শেষ দেখে ফেলা টটেনহাম শিবিরের আশার পালে লাগে নতুন হাওয়া। শেষ পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ ড্র হলেও, অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে সেমিফাইনালের টিকিটও পেয়ে যায় লন্ডনের ক্লাবটিই।
এই ম্যাচটিকে ইংলিশ গণমাধ্যম ইতিমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে মডার্ন ডে ক্লাসিকের খেতাব। এছাড়াও ম্যাচটির ভাগ্যে জুটছে অসাধারণ, অভূতপূর্ব, অভাবনীয় এমন বিভিন্ন বিশেষণ। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের মৌসুমের সেরা ম্যাচ এটিই। কিন্তু টুর্নামেন্ট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ম্যাচ হওয়ার যোগ্যতা কি রাখে এই ম্যাচটি? সম্ভবত না। কারণ ইতিপূর্বে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরো বেশ কিছু ম্যাচ আমরা দেখেছি, যেগুলো অনিশ্চয়তা ও অসাধারণত্বে ম্যানচেস্টার সিটি বনাম টটেনহামের এই ম্যাচটির সমকক্ষ ছিল, কিংবা এর থেকে এগিয়ে ছিল।
চলুন, জেনে নিই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বকালের সেরা সেসব ম্যাচের ব্যাপারে।
লিভারপুল ৩-৩ এসি মিলান, ২০০৫ ফাইনাল
নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা ইউরোপিয়ান ফাইনাল এটি। ম্যাচের শুরু থেকেই এসি মিলানকে ফেবারিট বিবেচনা করা হচ্ছিল। এবং প্রথমার্ধেই লিভারপুলের জালে তিনবার বল জড়ানোর মাধ্যমে সেই দাবির যথার্থতাও তারা বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করে বসে। ম্যাচের শুরুতেই পাওলো মালদিনির গোলের পর, জোড়া গোল আসে হারনান ক্রেসপোর পা থেকে। তাই জয় একপ্রকার নিশ্চিত জেনেই হাফ-টাইমে গিয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে লিভারপুল। ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক স্টিভেন জেরার্ড এক গোল শোধ করে জানান দেন, লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এরপর ভ্লাদিমির স্মিকার ও জাবি আলোনসোর গোলে ম্যাচে সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে অতিরিক্ত সময়েও কোনো মীমাংসা না হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে সারজিনহো ও আন্দ্রে পিরলোর মিসের পর, লিভারপুল গোলরক্ষক জার্জি দুদেক আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দিলে, অবিশ্বাস্য এক জয় পায় লিভারপুল।
দেপোর্তিভো লা করুনা ৪-০ এসি মিলান, ২০০৪ কোয়ার্টার ফাইনাল
আবারও একটি ম্যাচ, যেখানে মিলানকে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হতে হয়েছিল। সান সিরোতে প্রথম লেগে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের সুবাদে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই স্পেনে গিয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। কিন্তু দেপোর্তিভো এত সহজেই হাল ছেড়ে দেয়নি।
ওয়াল্টার পান্দিয়ানি, হুয়ান কার্লোস ভ্যালেরন ও আলবার্ট লুকের গোলে প্রথমার্ধেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্প্যানিশরা। অ্যাওয়ে গোল থাকায় অ্যাগ্রিগেটে তারাই এগিয়ে ছিল, অর্থাৎ ম্যাচ ঐ স্কোরেই শেষ হলেও সেমিফাইনালে উঠত তারাই। তবে সমীকরণ আরো সহজ হয়ে যায় দ্বিতীয়ার্ধে ফ্র্যানের পা থেকে চতুর্থ গোলটি এলে।
দেপোর্তিভোর জয়টিই ২০০৩-০৪ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একমাত্র অঘটন ছিল না। সবাইকে চমকে দিয়ে সেবার শিরোপা জিতে নিয়েছিল হোসে মরিনহোর এফসি পোর্তো। আর ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবেও ছিল মোনাকোর মতো একটি দল।
বার্সেলোনা ৩-১ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ২০১১ ফাইনাল
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তী ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতে, এই বার্সেলোনাই ছিল তার জীবনের সেরা দল। এবং ফাইনালটি যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আপনিও এ কথা মেনে নিতে বাধ্য।
লিওনেল মেসি এ ম্যাচে ছিলেন তার সম্ভাব্য সেরা ফর্মে। সেদিন যে খেলাটি তিনি উপহার দিয়েছিলেন, ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচে তা বিরল। তবে মেসি একাই এদিন রেড ডেভিলদের তছনছ করে দেননি। তাকে সাহায্য করার জন্য মাঝমাঠে ছিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সার্জিও বুস্কেটস আর জাভিও।
ওয়েইন রুনিও কিন্তু সে ম্যাচে খারাপ খেলেননি। ৩৪তম মিনিটে অসাধারণ একটি গোল এসেছিল তার পা থেকে। কিন্তু পেদ্রো, মেসি ও ডেভিড ভিয়ার গোলের সুবাদে ফার্গুসনের দলকে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জিতে নিয়েছিল বার্সেলোনা।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-৩ রিয়াল মাদ্রিদ, কোয়ার্টার ফাইনাল ২০০৩
রেড ডেভিলরা হয়তো এই ম্যাচটি জিতেছিল, কিন্তু সব আলো কেড়ে নিয়েছিল বিজিত দল রিয়াল মাদ্রিদ, কিংবা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে রোনালদোর দুর্দান্ত ফিনিশিং।
স্পেনের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগে রিয়াল ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল। আর দ্বিতীয় লেগেও ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের হ্যাটট্রিকের সুবাদে লস ব্লাংকোসরা ৬-৫ অ্যাগ্রিগেটে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালের টিকিট পায়।
সেই ম্যাচে রোনালদো এতটাই ভালো খেলেছিলেন যে, ম্যাচের শেষদিকে তিনি যখন বদলী হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, ইউনাইটেড ভক্তরা “ও ফেনোমেনো”কে স্ট্যান্ডিং অভেশন পর্যন্ত দিয়েছিল!
আয়াক্স ৫-২ বায়ার্ন মিউনিখ, ১৯৯৫ সেমিফাইনাল
মিউনিখে গোলশূন্য প্রথম লেগের পর, খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিল যে দ্বিতীয় লেগে এমন গোলোৎসব হবে, আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সাক্ষী হবে চূড়ান্ত মাপের বিনোদনের।
দ্য ফ্লাইং ফিন-খ্যাত জারি লিটমানেনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আয়াক্স। কিন্তু খানিকক্ষণ বাদেই সেই গোল শোধ করে দেন মার্সেল উইতেকজেক। তবে এতে আয়াক্সের খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ প্রথমার্ধের আগেই ফিনিদি জর্জ এবং রোনাল্ড ডি বোয়েরের গোলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। বিরতির পর লিটমানেন আরো এক গোল দেন।
তবে তারপরও মেহমেত শল পেনাল্টি থেকে গোল করলে, বায়ার্নের আশার সলতেয় কিছুটা হলেও বাতি নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকে। কিন্তু ম্যাচের প্রায় অন্তিম মুহূর্তে মার্ক ওভারমার্স আরো একটি গোল দিলে, লুই ফন গালের তরুণ আয়াক্স দলটি ৫-২ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
সেবার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে মিলানকে হারিয়ে শিরোপাও জিতেছিল আয়াক্সই।
চেলসি ১-১ বায়ার্ন মিউনিখ, ২০১২ ফাইনাল
গ্রুপ পর্বেই নাপোলি ও বার্সেলোনাকে চমকে দিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিল চেলসি। ফাইনাল পর্যন্ত আসাটাও তাদের জন্য ছিল বিশাল একটি অর্জনই। তবে সবাই ধরেই নিয়েছিল, ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে তারা ঠিকই ধরাশায়ী হবে।
কিন্তু ফুটবল দেবতাদের মনে হয়তো ভিন্ন কিছু চলছিল। তারা ঠিক করেই রেখেছিলেন যে, দিদিয়ের দ্রগবাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাবেনই। তাই তো ম্যাড়মেড়ে এক ফাইনালের প্রথম ৮০ মিনিট ম্যাচ গোলশূন্য থাকলেও, ৮৩তম মিনিটে বায়ার্নকে এগিয়ে নেন থমাস মুলার। কিন্তু মিনিট পাঁচেক পরই সেই গোল শোধ করে দেন দ্রগবা। হুয়ান মাতার নেয়া কর্নার কিকে মাথা ছুঁইয়ে করেন লক্ষ্যভেদ।
ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে একবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল দ্রগবার নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হওয়ার। তিনি ডি-বক্সের ভিতর ফ্রাঙ্ক রিবেরিকে ফাউল করলে, রেফারি পেনাল্টি দেন চেলসির বিপক্ষে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে, আরিয়েন রোবেনের স্পট কিক ঠেকিয়ে দেন পেত্র চেক।
ম্যাচ এরপর টাইব্রেকারে গড়ায়। শ্যুট-আউটে চেলসির হয়ে পঞ্চম গোলটি করেন সেই দ্রগবা। আর লন্ডনের প্রথম ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নেয় চেলসি।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২-১ বায়ার্ন মিউনিখ, ১৯৯৯ ফাইনাল
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ম্যাচ যখন ইনজুরি টাইমের ৩ মিনিটে প্রবেশ করেছিল, তখনো ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। স্বয়ং রেড ডেভিল ভক্তরাও তখন হারের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। তবে মাঠে উপস্থিত ম্যান ইউর ১১ জন খেলোয়াড় তখনো হাল ছাড়েননি। মরিয়াভাবে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচে ফেরার জন্য। গোলরক্ষক পিটার স্মাইকেল জানতেন, এখন আরো একটি গোল খেয়ে গেলেও কিছু হবে না, কিন্তু কোনোভাবে যদি একটি গোল করা যায়, তাহলে ম্যাচে ফেরা যাবে। তাই ৯১তম মিনিটে কর্নার কিক পেলে, নিজ ডি-বক্স ছেড়ে তিনি চলে আসেন প্রতিপক্ষের সীমানায়। অগোছালো একটি সেট পিস থেকে, নাটকীয়ভাবে গোল পেয়ে যান টেডি শেরিংহাম।
এভাবে সমতায় ফেরে ম্যান ইউ। তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচ নিশ্চিতভাবেই অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে। কিন্তু তখন পাওয়া আরেকটি কর্নার কিক থেকে, সুপার সাব হিসেবে মাঠে নামা ওলে গানার সলশেয়ার গোল দিয়ে দেন। ফলে পুরোদস্তুর অলৌকিক একটি জয় পেয়ে যায় রেড ডেভিলরা। আর ম্যাচের ৯১তম মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা বায়ার্ন কয়েক মিনিটের নাটকীয়তায় হারিয়ে ফেলে নিশ্চিত শিরোপা।
বার্সেলোনা ৬-১ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই, ২০১৭ রাউন্ড অব ১৬
এফসি বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসি গত ১৫ বছরে অসংখ্য অর্জনের ভাগিদার হয়েছেন। বিশাল লম্বা সেই তালিকায়ও এই অর্জনটি উপরের দিকেই থাকবে। কারণ এমন দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন যে সচরাচর দেখা যায় না।
প্যারিসে গিয়ে প্রথম লেগে ৪-০’তে বিধ্বস্ত হয়ে এসেছিল কাতালানরা। হজমকৃত গোলসংখ্যা আর একটি বা দুটি কম হলে, কিংবা নিজেরা অন্তত একটি অ্যাওয়ে গোল পেলেও বার্সেলোনার আশা থাকত। কিন্তু প্রথম লেগের স্কোরলাইন এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় ভক্তটিও হয়তো শতভাগ আস্থা রাখতে পারেনি দলের উপর।
তবে লুইস সুয়ারেজের গোল, লেভিন কুরজাওয়ার আত্মঘাতী গোল, এবং লিওনেল মেসির পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলের সুবাদে যখন বার্সা ৩-০’তে এগিয়ে যায়, তখন ফিরে আসাটা কিছুটা হলেও সম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের সময় ঘণ্টার কাঁটা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই এডিনসন কাভানি যখন একটি গোল শোধ করে দেন, তখন সমীকরণ আবারও বার্সার জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।
পিএসজি একটি অ্যাওয়ে গোল পেয়ে গেছে, সুতরাং বার্সাকে পরের রাউন্ডে যেতে গেলে আর কোনো গোল হজম না করেও তিনটি গোল দিতে হবে। সময় যতই এগোতে থাকে, এমন শর্ত ততটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে থাকে। তাছাড়া ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও পুরোপুরি বার্সার দখলে ছিল না। প্রায়ই দারুণ সব আক্রমণের মাধ্যমে কাতালানদের রক্ষণ কাঁপিয়ে দিচ্ছিল ফরাসি ক্লাবটি।
কিন্তু চিত্রনাট্য পাল্টে যেতে থাকে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে। ৮৮তম মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক থেকে করা গোলে আবারো কিছুটা আশা সঞ্চার হয় ব্লগরানাদের মনে। মিনিট দুয়েক পর বার্সা ম্যাচে তাদের দ্বিতীয় পেনাল্টি পায়, এবং ঠান্ডা মাথায় লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার। আর ম্যাচের একদম শেষ সময়ে নেইমারের ক্রস থেকে সার্জি রবার্তো গোল পেয়ে গেলে, অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে ন্যু ক্যাম্পে।
এই ম্যাচের আগপর্যন্ত, ১৯৫৫ থেকে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে ২১৩টি এমন ম্যাচ হয়েছিল, যেখানে প্রথম লেগে কোনো দল ৪-০ ব্যবধানে হেরেছিল। কিন্তু এমন একবারও হয়নি যে দ্বিতীয় লেগে সেই দলটি ফিরে এসে, অ্যাগ্রিগেটে জয় নিতে মাঠ ছাড়তে পেরেছিল। কোনো দলের পক্ষে হয়তো এমনটা চিন্তা করাও সম্ভব নয়। কিন্তু সেটিকেই বাস্তবে করে দেখিয়েছিলেন বার্সেলোনার মেসি, নেইমার, সুয়ারেজরা।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/