২০১৯ সাল হলো বিশ্বকাপের বছর; ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তবে শুধু বিশ্বকাপ নয়, বছর জুড়ে থাকছে আরও অনেক আকর্ষণীয় ক্রিকেট আয়োজন ও ঘটনা। আর সেগুলোরই গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দেখার চেষ্টা করেছি আমরা।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ
সন্দেহাতীতভাবে ২০১৯ সালের ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডারের সেরা আকর্ষণ হতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। কয়েকটি আসর পর এবার আবার ফরম্যাট বদলে দুনিয়ার সামনে হাজির হচ্ছে ক্রিকেটের এই সবচেয়ে ঝলমলে আসর।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবার নামিয়ে আনা হয়েছে ১০ দলে। এটা অবশ্যই অন্য যেকোনো আসরের চেয়ে ছোট হতে যাচ্ছে। আর এ নিয়ে ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিযোগেরও শেষ নেই। কেন তুলনামূলক ছোট দলগুলো এরকম একটা টুর্নামেন্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে- এ নিয়ে অনেক দলের আফসোস ও অভিযোগ আছে। তারপরও এটা যে বেশ আকর্ষণীয় আসরে পরিণত হতে যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।
এবারের আসরের প্রথম পর্বে প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। এটি একটি বড় আকর্ষণীয় দিক। দশ দলের এই লাইন আপ ঠিক হয়েছে র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলকে নিয়ে। বাছাইপর্ব থেকে উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই করে এখানে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান।
এবারের বিশ্বকাপকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশটির ১০টি শহরের ১১টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে খেলা। ইসিবি এই সারা দেশে ছড়ানো আয়োজনের সুবাদে ক্রিকেটকে আবারও ইংল্যান্ডকে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত করতে চায়।
ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের ৭ লাখ টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যার বড় অংশ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে।
মে মাসের ৩০ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ১৪ তারিখ অবধি অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অস্ট্রেলিয়া তাদের রেকর্ডকে আরও সমৃদ্ধ করে ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে আসবে এবার। অন্যদিকে, আসরের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে থাকছে ইংল্যান্ড ও ভারত।
এবারের বিশ্বকাপ কয়েকজন বড় তারকার শেষ আসর হতে যাচ্ছে। ভারতকে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতানো মহেন্দ্র সিং ধোনির নিশ্চিতভাবেই শেষ বিশ্বকাপ হচ্ছে এটি। সেই সাথে ক্রিস গেইল, ডেল স্টেইন, লাসিথ মালিঙ্গা, হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসিস, ইমরান তাহির, শোয়েব মালিক ও মারলন স্যামুয়েলসকেও এবারের পরে আর বিশ্বকাপে দেখা যাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের জন্যও বিশ্বকাপটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই আসর থেকেই বিদায় নিতে পারেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
স্মিথ-ওয়ার্নারের ফেরা
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এমনিতেই এক ক্রান্তিকাল চলছিলো। সেই সময়টাকে দুঃসময় বানিয়ে দিয়েছে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি। গত বছর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপ টাউন টেস্টে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন তৎকালীন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। দলের সেরা এই খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি দলকে একেবারে সাধারণ মানে নামিয়ে এনেছে। এটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য যেমন, সারা বিশ্বের জন্যই তেমন এক দুঃখের সময়। অবশেষে এই নিষেধাজ্ঞা শেষ করে এই বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কথা এই দুই অস্ট্রেলিয়ানের।
যদিও বিশ্বকাপের আগে এই দুই ব্যাটসম্যান ফেরার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খুব একটা সময় পাচ্ছেন না। কিন্তু যত দূর বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বকাপে তাদের রেখেই দল ঘোষণা করতে চায় অস্ট্রেলিয়া। এই দুই ক্রিকেটারও সারা বিশ্বে যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে নিজেদের প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছেন। এই মিশনে বর্তমানে এই দুজন আসছেন বাংলাদেশে; বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে।
ভারতের বাইরে আইপিএল?
আগেও একবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে আইপিএল ভারতের বাইরে আয়োজন করেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এবারও সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের সাথে সময় মিলে যাচ্ছে আইপিএলের। আইপিএলের পেছানোর খুব একটা সুযোগ নেই। কারণ, আইপিএলের সম্ভাব্য ফাইনালের ১৫ দিন পরই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ।
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ওপর নির্ভর করছে আইপিএল পুরোটাই দেশের বাইরে হবে, নাকি অংশবিশেষ। তবে এখন অবধি যা অবস্থা, তাতে আইপিএলের প্রথম অংশ ভারতেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। এরপর বাকিটা নিয়ে বিসিসিআই চলে যাবে আরব আমিরাতে।
লোধা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী- আইপিএল ও ভারতের পরবর্তী আন্তর্জাতিক খেলার মধ্যে ১৫ দিনের বিরতি থাকতে হবে। সেই হিসেবে আইপিএল আয়োজন করতে হবে ২৯ মার্চ থেকে ১৯ মে’র মধ্যে। এর সাথে আরেকটি বিড়ম্বনা পোহাতে হতে পারে ভারতকে। অনেক দেশ বিশ্বকাপের এই আগমুহূর্তে তাদের খেলোয়াড়দের একটু বিশ্রামে রাখতে চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে আইপিএল শেষ দিকে তারকা আকর্ষণ হারাতে পারে।
অ্যাশেজ
ইংল্যান্ডের জন্য বছরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতার চ্যালেঞ্জ। আর এরপরই আসবে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালের অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তাদের কাছে ৪-০ ব্যবধানে হেরে এসেছে ইংল্যান্ড। ফলে এবার অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ছাইদানিটা রেখে দিতে চাইবে তারা।
এবারের অ্যাশেজ খুব উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে বলে আগে থেকে অনুমান করা যায়। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া দলে সে সময় থাকবেন স্মিথ ও ওয়ার্নার। আর এই দুজনকে লক্ষ্য করে ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মি যে ভয়াবহ সব আক্রমণাত্মক গান তৈরি করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শেষ অ্যাশেজ তো বটেই, শেষ সিরিজও হতে পারে এবারের অ্যাশেজ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
অনেকদিন ধরেই আইসিসি একটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথা বলছে। অবশেষে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে শীর্ষ নয়টিকে নিয়ে দুই বছর ধরে অনুষ্ঠিত হবে এই চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা, এবং জুনের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।
আইসিসি আপাতত ঠিক করেছে- ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডে। তবে এই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে আইসিসির বর্তমান র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ৯ দল- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সময়কালে প্রতিটি দল তিনটি করে হোম ও তিনটি করে অ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। প্রতিটি সিরিজে কমপক্ষে দুটি এবং সর্বোচ্চ ৫টি টেস্ট থাকতে পারে।
দুই বছরের বৃত্তে মোট ২৭টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি ম্যাচের জন্য আলাদা করে পয়েন্ট দেওয়া হবে; সিরিজের জন্য কোনো পয়েন্ট থাকছে না।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বড় দুর্বলতা হলো, এখানে ভারত-পাকিস্তানের কোনো দ্বিপাক্ষিক লড়াই থাকছে না। অন্তত প্রথম বৃত্তে তো নয়ই।
২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি
২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ হচ্ছে। পরের বছরই অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০১৯ সালটা তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য।
আইসিসির বর্ষশেষ র্যাংকিং অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সরাসরি অংশ নেওয়া দলগুলোর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও র্যাংকিংয়ে সেরা ৭ দল খেলবে সরাসরি ‘সুপার ১২’ পর্ব থেকে। আর র্যাংকিংয়ের নয় ও দশে থাকা শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে খেলতে হবে গ্রুপপর্ব নামের একটি বাছাইপর্ব। ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। আগামী বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। সেজন্য র্যাংকিং বিবেচনার শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। সেই দিনের র্যাংকিং অনুযায়ী সরাসরি ‘সুপার ১২’ পর্বে খেলবে পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান। সেরা দশে থাকা বাকি দুই দল অংশ নেবে প্রথম পর্বে। এই প্রথম পর্বে যোগ দেবে প্রাথমিক বাছাই পর্ব পার করে আসা আরও ছয় দল।
ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়ে নিন এই বইগুলো
১) শচীন রূপকথা
২) নায়ক
৩) সাকিব আল হাসান – আপন চোখে ভিন্ন চোখে