Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিফার সংস্কার প্রস্তাব এবং আফ্রিকান ফুটবলের ভবিষ্যৎ

আফ্রিকান ফুটবলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপিয়ান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিতভাবে লেখালেখি হয়। মাঠের ফুটবল ছাড়াও কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (সিএএফ)-এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির শত শত অভিযোগ জমা পড়েছিল ফিফার সদর দপ্তরে। ফলশ্রুতিতে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি অবধি একজন নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের মধ্য দিয়ে আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সকল নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফিফা। ৬ মাসের জন্য প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফাতমা সামৌরা দায়িত্ব ছেড়েছেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশের ফুটবলের উপর ফিফার নজরদারি যেমন অব্যাহত রয়েছে, তেমনি দিন দিন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

প্রধান নির্বাহীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় সকল পর্যায়ে সংশোধনের প্রস্তাব দেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ইতঃমধ্যেই সিএএফের জন্য পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। সভাপতি ইনফান্তিনো মাঠের ফুটবলের দিকে নজর দিয়ে পরিবর্তনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি পেশাদার রেফারিদের জন্য জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ সৃষ্টি, একটি আফ্রিকান লিগ আয়োজন, নারী এবং যুব ফুটবলের উন্নয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে আফ্রিকান নেশনস কাপ যাতে খুব কম সময়ের ব্যবধানে বেশিসংখ্যকবার আয়োজন করা না হয়, সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দিয়েছেন ফিফা সভাপতি।

সিএএফ-এর সদরদপ্তর; Image Source: : Reuters

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। ফিফার সংস্কার প্রস্তাবের সবক’টি শর্ত এবং নির্দেশনা এখন অবধি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি সিএএফ। এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় আফ্রিকান সংবাদমাধ্যমে ফিফার হস্তক্ষেপ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। বাস্তবিক এই হস্তক্ষেপ এবং সংস্কার প্রস্তাব আফ্রিকান ফুটবলের উন্নয়নে কত দূর ভূমিকা পালন করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ফিফার বিভিন্ন আঞ্চলিক সভায়। কারণ, আইন অনুযায়ী সিএএফ-এর পরিচালনায় ফিফা কর্তাদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। তবুও শেষবার যেহেতু সংশোধন এবং সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে সবকিছু এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেহেতু আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। তবে সমালোচনার বিষয়টি আরো একটু ভিন্ন বলা যায়।

কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবলের বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের পর সংস্কার প্রস্তাব করে পরবর্তীতে আবার তাকেই সংশোধিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ায় ফিফার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংবাদমাধ্যমে। যা-ই হোক, ফিফার আরোপিত প্রস্তাবগুলো কাগজে-কলমে এখন অবধি ঠিকঠাকই রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে আফ্রিকান ফুটবলের উন্নয়নের বদলে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় পার করবে, এটি নির্দ্বিধায় বলা যায়। চলুন জানা যাক, কোন কোন কারণে আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাজে ফিফা হস্তক্ষেপ করেছে সে সম্পর্কে। এছাড়াও ভবিষ্যতে ঐ অঞ্চলের ফুটবল কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা উপকৃত হবে, সে বিষয়েও আলোচনা করা যাক।

যে কারণে এই হস্তক্ষেপ

গত বছর ফিফার হস্তক্ষেপের পূর্বে দুর্নীতির একাধিক মামলায় আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা প্রশ্নবিদ্ধ হন। আর সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে সিএএফ-এর সভাপতি আহমাদ আহমাদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের মধ্যে বর্তমান কমিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সদস্যদের বরখাস্ত করা, পরিচালনায় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ব্যক্তিগত জীবনের একাধিক মামলা, যৌন হয়রানির মতো বিষয়গুলো ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের অভিযোগেও অভিযুক্ত হন সভাপতি আহমাদ।

সিএএফ সভাপতি; Image Source: Cristina Aldehuela/Agence France-Presse — Getty Images

আহমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ প্রথমবার জনসম্মুখে আসে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে। আহমাদ এবং বর্তমান কমিটিতে তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ফিফার সদরদপ্তরে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগের নথি পাঠান সিএএফের বরখাস্তকৃত সাধারণ সম্পাদক আমর ফাহমি। পরবর্তীতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিশ্চিত করে, ফাহমি গত বছরের ৩১ মার্চ তারিখে সভাপতি আহমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে নথিপত্র ফিফার নিকট পাঠিয়েছিলেন। রয়টার্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আহমাদের বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ। ফাহমির প্রথম অভিযোগটি ছিল বিভিন্ন দেশের ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান কর্তাদের ঘুষ প্রদান প্রসঙ্গে। রয়টার্সের উল্লেখিত সংবাদে জানানো হয়, আহমাদ তার সেক্রেটারি জেনারেলকে দিয়ে আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দেশগুলোর সভাপতিদের ২০,০০০ ডলার ঘুষ প্রদান করেছেন।

এছাড়াও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের সময় ফরাসি প্রতিষ্ঠান ট্যাকটিক্যাল স্টিলকে ৮,৩০,০০০ ডলার অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করার অভিযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় নথিতে। এটিকে অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে বার্ষিক সভায় উল্লেখ করলেও এখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করেন অভিযোগকারী সাবেক এই সেক্রেটারি জেনারেল। তৃতীয় অভিযোগটি ছিল যৌন হয়রানির। সিএএফ সভাপতি আহমাদ চারজন নারী সহকর্মীকে হয়রানি করেছেন বলেও নথিতে অভিযোগ করা হয়। এছাড়াও কমিটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি ছাড়াও বাড়তি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। নথি অনুযায়ী তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করে মরক্কোর প্রতিনিধি বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ফাহমি।

আমর ফাহমি; Image Source: BBC/GettyImage

ফাহমির শেষ অভিযোগটি ছিল মিশর এবং মাদাগাস্কারে গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৪,০০,০০০ ডলার ব্যয় হয়েছে এমনটা উল্লেখ করে। তার দাবি সেখানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পুরোটাই দুর্নীতি এবং একটি স্যাটেলাইট অফিস নির্মাণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি আহমাদ। সিএএফের কাছ থেকে বিবৃতি চেয়ে যোগাযোগ করা হলে রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে সংস্থাটির দায়িত্ব নেয়া মাদাগাস্কারের আহমাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগে নথি প্রদান করার পরিপ্রেক্ষিতেই আমর ফাহমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও সভাপতি আহমাদ বরাবরই এই বিষয়ে বিবৃতি না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। ফাহমিকে বরখাস্ত করে তার জায়গায় মরক্কোর মওদ হাজ্জীকে নিয়োগ দেয় আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ফাহমি।

গত বছরের মার্চের শেষদিন নথি পেলেও ফিফা তদন্ত শুরু করে মে মাসের শেষদিকে। তদন্তের অংশ হিসেবে ফরাসি পুলিশ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সভাপতি আহমাদকে গ্রেফতার করে। তবে বেশিদিন তাকে আটক রাখা হয়নি, বরঞ্চ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। সেই সাথে ফিফা নির্বাহী নিয়োগের মধ্য দিয়ে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান নির্বাহী হিসেবে ৬ মাস আফ্রিকান ফুটবলকে নেতৃত্ব দেয়া ফাতমা সামৌরা সেখানে আমন্ত্রিত না হলেও মোটামুটি ঐ অঞ্চলের ফুটবল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সামগ্রিক কাঠামোকে বড়সড় নাড়া দিয়েছেন। একদিকে এটি বিশ্ব ফুটবলে ফিফার কর্তৃত্ব এবং সক্ষমতা বুঝিয়েছিল, অন্যদিকে আফ্রিকান ফুটবল কর্তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল। ফাতমা সামৌরা দায়িত্ব শেষে সিএএফকে ফিফা সভাপতি স্বাক্ষরিত একটি সংস্কার ও সংশোধনী প্রস্তাব প্রদান করেন। অন্যদিকে, এত এত অভিযোগের পরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান সভাপতি আহমাদ আহমাদ।

ফাতমা সামৌরা; Image Source: Hannah Peters/FIFA, via Getty Images

সংস্কারে সমস্যা কেন?

সংস্কার প্রস্তাবের পর প্রথম বিতর্ক কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমাদ আহমাদ নিজেই। কারণ, এত এত অভিযোগ থাকার পরেও স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি। এছাড়াও আফ্রিকান অনেক সংবাদমাধ্যম মনে করে সিএএফের উপর আরোপিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কয়েকটি নির্দেশনা দীর্ঘমেয়াদী ফুটবল বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কারণ, আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দেশগুলোর বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ নয়। আর মূল উপাদানই যখন ফুটবলের প্রান্তিক দেশসমূহ তখন উন্নতির বদল অবনতি হলে বিষয়টা আরো খারাপের দিকেই যাবে। কিন্তু দু’টোর একটিও না হয়ে যদি আফ্রিকান ফুটবলের উন্নয়ন এক জায়গায় থমকে দাঁড়ায়, তখন বিষয়টি হয়তো সেখানকার ফুটবলকে কয়েক দশকের জন্য পেছনে ফেলবে।

ফিফা সভাপতি; Image Source: Simon Holmes/Getty Images

ফিফার সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আফ্রিকান নেশনস কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজনের সময় পরিবর্তন করার বিষয়টিকে। বর্তমানে এই টুর্নামেন্ট ২ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়, তবে ফিফা এটিকে প্রতি ৪ বছরে একবার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে। আর প্রথম থেকেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছেন আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। কারণ, ফিফার অনুদান এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত আফ্রিকা অঞ্চলের ফুটবলের উন্নয়নে যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। প্রান্তিক দেশগুলোর ফুটবল ব্যবস্থা টিকে আছে সিএএফের অর্থায়নকে ঘিরে। আর সংস্থাটির অর্থনীতির চাকা ঘোরে এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থের উপর ভর করে। ২ বছরের বদলে ৪ বছর পর টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে ফিফার অনুদানের উপর নির্ভরশীল হয়ে কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হবে আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

যদিও ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ইউরো এবং বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের উদাহরণ টেনে যুক্তি দিয়েছেন। নিজের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে কম টুর্নামেন্ট আয়োজন করে অধিক অর্থ আয়ের দিকে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সেই সাথে প্রতি চার বছরে একবার করে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ফাঁকে আরও একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব বলেও মনে করে ফিফা সভাপতি। এতে করে আগের থেকেও দ্বিগুণ বেশি স্পন্সরশিপ পেয়ে অর্থ আয়ের সুযোগ দেখছেন তিনি।

কিন্তু এটি মানতে রাজি নন সিএএফ-এর কর্তারা। সেই সাথে আফ্রিকান নেশনস কাপের বিকল্প বা প্রতিযোগী অন্য কোনো টুর্নামেন্ট তারা অসম্ভব বলেই মনে করেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ এই টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা এবং এটিকে ঘিরে ঐ অঞ্চলের মানুষের উন্মাদনা।

২০১৭ সালে ক্যামেরুনের শিরোপা উদযাপন; Image Source: Reuters

তবে এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে দুই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে সদস্য দেশগুলো।

প্রথমত, ঐ অঞ্চলের যেসব ফুটবলার ইউরোপিয়ান ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলছেন, তারাও প্রতি দুই বছর পর পর একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি নেয়া থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও একজন খেলোয়াড় হিসেবে সার্বিক উন্নয়নের জন্য আরো বেশি সময় পাবেন তারা।

দ্বিতীয়ত, এতে করে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে যাবে। আর এটি নিয়েই এখন যত বিপত্তি। রাশিয়া বিশ্বকাপে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে মাত্র ৫টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। সে হিসেবে বলা যায়, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের বড় কোনো সুযোগ নেই আফ্রিকান দেশগুলোর পক্ষে। তাই বলা যায়, নেশনস কাপই তাদেরকে জাতিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে সাহায্য করে। প্রতি ৪ বছরে একবার আয়োজনের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে ম্যাচের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে কমে গিয়ে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে।

সেনেগালে ফুটবল খেলার দৃশ্য; Image Source: Jeff Atawal

নেশনস কাপ ছাড়াও ফিফা সভাপতির নতুন আরেকটি প্রস্তাব বেশ আলোচিত হয়েছে। ইনফান্তিনো ২০ কিংবা ২৪টি দলের সমন্বয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ ক্লাবভিত্তিক লিগ আয়োজনের প্রস্তাব করেছেন।

আন্তর্জাতিক ম্যাচ কমে যাওয়ার বিষয়টি ফিফা যেভাবে এড়িয়ে গেছে, ঠিক উল্টো ভূমিকাটা পালন করেছে লিগ আয়োজনের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে। যদিও এটির খারাপ দিকগুলো বেশি আলোচনায় এসেছে আফ্রিকান গণমাধ্যমে। ৫০টির অধিক সদস্য দেশের মধ্য থেকে শুধুমাত্র ২০ কিংবা ২৪টি ক্লাব বাছাই করার বিষয়টি রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে আঞ্চলিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। শক্তিশালী এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোই এই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করবে। এতে করে ফুটবলীয় সমতার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আফ্রিকা অঞ্চলে ফুটবলের ভবিষ্যৎ কী?

কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফিফার কাছ থেকে পাওয়া সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি। তবে প্রধান প্রধান প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে কথা বলেছেন আফ্রিকান ফুটবলের কয়েকজন মুখপাত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এই ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করেন এতে করে আফ্রিকা অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদী বিকাশের পথটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সাথে ইউরোপ, এশিয়ার এবং লাতিন আমেরিকান ফুটবলের চেয়ে এক দশক পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা মনে করেন, ফিফা সভাপতির প্রস্তাবিত প্রতি ৪ বছরে একবার নেশনস কাপ আয়োজনের মতো সময়ে এখনও পৌঁছায়নি আফ্রিকান ফুটবল।

ক্যামেরুনের উদযাপন; Image Source: Gettyimages

ফিফা প্রস্তাবগুলো ঘোষণা করার পর সংবাদমাধ্যমে ভবিষ্যৎ ফলাফল নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনি বাস্তবিক ইতিবাচক ফলাফলের দেখা মিলছে না। ফিফা মনে করে, প্রস্তাবিত নতুন লিগ সিএএফ এর রাজস্ব বৃদ্ধি করবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে, এটি বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক ক্লাব প্রতিযোগিতায় সরাসরি ফিফার স্বার্থ রক্ষা করবে। আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও চান ইউরোপ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বৈশ্বিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে একটি নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে, যেখানে ইউরোপ এবং এশিয়ার মতো আফ্রিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিজেরাই সরাসরি রাজস্বের দেখভাল করবে এবং ফিফার নিকট বার্ষিক আয়ব্যয়ের হিসেব উল্লেখ করবে।

অন্যদিকে, ফিফা মনে করে নতুন আফ্রিকান লিগ তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত দল নিয়ে একটি বৃহত্তর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে এবং ঐ দলগুলো ফিফা নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট নিয়মিত অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু যখন স্পন্সরশিপের প্রশ্নে ফিফার উদার নীতি সামনে আসে তখন এটির অর্থনৈতিক ভূমিকা আফ্রিকান কর্তাদের পছন্দ না হওয়াই স্বাভাবিক। ফিফা সভাপতি নিঃসন্দেহে আফ্রিকান ফুটবলের উন্নতির স্বার্থেই এই প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন। কিন্তু আফ্রিকান ফুটবল এবং অর্থনীতি এখনও পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়, এই বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, দুর্নীতির এত এত অভিযোগের ভিড়ে অন্য যে কোনো মহাদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের চেয়ে আফ্রিকায় কম বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

আফ্রিকান ফুটবল সমর্থক; Image Source: DW.news

সভাপতি ইনফান্তিনো যে আফ্রিকান ফুটবলের বৃহৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হতে পারেননি, এটি এখন প্রমাণিত। তবে একটি অভিজাত ও মর্যাদাপূর্ণ আফ্রিকান লিগ তৈরি করা গেলে অবশ্যই পরিবর্তন সম্ভব। সেই পথে পা বাড়ানোর পূর্বে সদস্য দেশগুলোর একতাবদ্ধতা প্রয়োজন। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কনফেডারেশনস অব আফ্রিকান ফুটবলের নেতৃত্বে নিরপেক্ষতা। বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেগুলোর সঠিক জবাব দিতে হবে। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে প্রান্তিক এবং সমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতি। অন্যথায়, আফ্রিকান ফুটবল কয়েক দশক পেছনে থেকে যাবে, যার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না দুর্নীতিগ্রস্ত সিএএফ।

This article written about FIFA's reform proposals for Africa. In June last year the world football governing body effectively took over the running of the African body following allegations of corruption and general implosion. Now FIFA has announced its plans for CAF. We discussed about possible good and bad things about reform plans.

Feature Image Source: Reuters

Related Articles