ক্ষিপ্র গতিতে ফুটবল নিয়ে অসাধারণ ড্রিবলিং করে প্রতিপক্ষের অর্ধে বল নিয়ে গোলবারের কাছাকাছি চলে এসেছে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়টি, গোলরক্ষকও নিখুঁত ভঙ্গিমায় তৈরি গোলবার আগলে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। উৎসুক দর্শক মুখিয়ে রয়েছে চূড়ান্ত মুহূর্তের অপেক্ষায়। আক্রমণে থাকা খেলোয়াড়টি হঠাৎ করে ফুটবলটি পা দিয়ে আলতো করে চিপ করে হাতে তুলে নিলো, তারপরই আবার বলটি মাটিতে ছেড়ে দিয়ে ভলিতে বুলেট গতির শট! গোল!
না, রেফারি হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজাননি, প্রতিপক্ষ কিংবা সমর্থকরাও কোনোরকমের আপত্তি তোলেনি এমন কর্মকাণ্ডে। অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে ভাবছেন, ফুটবলে এমন হয় নাকি! এ আবার কেমন ফুটবল খেলা! গোলের মুহূর্তের ছোট বর্ণনাটি আসলে আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুপ্রাচীন খেলাগুলোর মধ্যে একটি, গেইলিক ফুটবল। গেইলিক ফুটবল আসলে ফুটবল ও হ্যান্ডবল খেলার একটি অসাধারণ ও অনন্য সংমিশ্রণ। ফুটবল এবং হ্যান্ডবল ছাড়াও খেলাটিতে রাগবি ও বাস্কেটবলের আমেজও রয়েছে। সবমিলিয়ে খেলাটি অনেকটা জটিল মনে হলেও, একবার পুরো ব্যাপারটি ধরতে পারলে আপনিও হয়তো গেইলিক ফুটবলের ভক্ত হয়ে উঠতে পারেন।
গেইলিক ফুটবলের উৎপত্তি
আইরিশ এই খেলাটি নব উদ্ভাবিত কোনো খেলা নয়। চৌদ্দ শতকের দিকে আয়ারল্যান্ডে আইরিশ বা গেইলিক ফুটবল প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। তখন খেলাটিতে খোলা মাঠে প্রায় শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু এত লোক একসাথে অংশ নেওয়ায় এবং খেলায় নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকায় খেলাটি একইসাথে যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগলো, তেমনি অনেকক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক ও বিপদজনক হয়ে উঠেছিলো। শাসক শ্রেণী তখন ভয় পেয়ে খেলাটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয়। ১৫২৭ সালের দিকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং ক্রমেই খেলাটি আয়ারল্যান্ড সমাজ, সংস্কৃতি ও উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলো। সেই সময়ে প্রতিবছর মেলার মতো উৎসবের আয়োজন করা হতো আয়ারল্যান্ডে, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাবেচা ছাড়াও গেইলিক খেলাগুলো অন্যতম আকর্ষণ ছিলো।
গেইলিক ফুটবলের স্বীকৃত যে ম্যাচটির কথা জানা যায় সেটিও প্রায় চারশো বছরেরও বেশি সময়কাল পূর্বে, ১৬৭০ সালে মেথ কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বল হাত দিয়ে ধরা ও পা দিয়ে শট করার নিয়ম ছিলো। ১৬৯৫ সালে ‘সানডে অবসারভেনস অ্যাক্ট’ জারি করা হলে, খেলাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জন্য জরিমানার আরোপ করা হয়। আরোপিত আইন অমান্য করা হচ্ছে কিনা এবং খেলাটির ব্যাপারে তেমন একটা নজরদারি করার অবস্থা কখনোই ছিলো না। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, কাউন্টিভিত্তিক গেইলিক ফুটবল খেলা অব্যাহত ছিলো এবং ১৭১২ সালে মেথ ও লাউথ কাউন্টির মধ্যে একটি ম্যাচের কথা জানা যায়।
যা-ই হোক, সতেরো শতকের পর খেলাটির পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। জনপ্রিয়তায় এবার নতুন মাত্রা পায় খেলাটি, কারণ এবারে বিরোধিতা করার বদলে অভিজাত শ্রেণীরা খেলাটির পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছিলো। এই সময়েই খেলাটি অনেকটা নিয়মের মধ্যে চলে আসতে শুরু করে। ধনীদের মধ্যে দলভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হতো, যেখানে প্রতি দলে ২০ বা আরও বেশি খেলোয়াড় থাকতো। অনেকক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের জন্য ১০০ গিনিস (পুরনো মুদ্রার একক) পর্যন্তও বেতনের ব্যবস্থা থাকতো।
১৮৪০ সালে আয়ারল্যান্ডে আলুর মহামারী দেখা দিলে অন্য প্রায় সবকিছুর সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গেইলিক ফুটবলও। মহামারীতে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যু বরণ করে এবং আরও ২ মিলিয়ন কিংবা তারও বেশি মানুষ অন্যত্র পাড়ি জমায়। মহামারীর সময়কালে জীবন বাঁচানোই মুখ্য ছিলো, খেলাধুলার মতো চিত্তবিনোদনের দিকে নজর দেওয়ার মতো অবস্থা একেবারেই ছিলো না। আইরিশ মহামারীর পর দেশটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও গেইলিক ফুটবল মুখোমুখি হয় নতুন চ্যালেঞ্জের। রাগবি, ফুটবল এবং ক্রিকেটের আগ্রাসনে একরকম হারিয়ে যেতে বসে আইরিশদের একান্ত নিজস্ব ঐতিহ্য গেইলিক ফুটবল। ১৮৬০ সালের দিকে প্রায় প্রতিটির শহরে নিজস্ব ক্রিকেট ক্লাব গড়ে ওঠে এবং গেইলিক ফুটবলের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল এই ইংলিশ খেলাটি।
স্থানীয় শাসক ও অভিজাতদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্রিকেট যতটা জনপ্রিয়তা পেতে থাকলো, ঠিক ততটাই প্রাণ হারাতে শুরু করেছিলো গেইলিক ফুটবল। ইংলিশ খেলাগুলোর প্রবল জনপ্রিয়তার আগ্রাসনে গেইলিক ফুটবলসহ আরও অন্যান্য স্থানীয় আইরিশ খেলাগুলোর জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়তে শুরু করে।
সাধারণ আইরিশরা মনের গভীরে তখন দুটি প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতো; ব্রিটিশ শাসন থেকে বের হয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করা এবং ইংলিশ খেলাধুলার আগ্রাসন থেকে বের হয়ে নিজস্ব খেলাগুলোকে জনপ্রিয় করে তোলা। আইরিশ রিপাবলিকান ব্রাদারহুড (IRB), যারা যুদ্ধ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিলো তাদের মূল মন্ত্র ছিলো- “Sooner or Never”। এই একই কথায় বিশ্বাসী ছিলো আরও দুজন ব্যক্তি, যারা চাইছিলো আইরিশ খেলাগুলোকে ইংলিশদের ছায়াতল থেকে বের করে আইরিশ ঐতিহ্য ও প্রাণ ফিরিয়ে আনা। সেই সময়ে আইরিশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন নিয়ন্ত্রণ করতো আইরিশ খেলাধুলার নিয়মনীতি এবং যারা মূলত ইংলিশ ঘরানার নিয়মনীতিই মেনে চলতো। আইরিশদের প্রয়োজন ছিলো নিখাদ ‘আইরিশ’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যারা কিনা আইরিশ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী এবং নিজস্ব খেলাগুলোকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। মাইকেল কুজাক এবং মরিস ডেভিনসহ আরও পাঁচজন সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৮৮৪ সালে গড়ে ওঠে গেইলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন (GAA)।
এই ধরনের সংস্থা গঠনের প্রতি পূর্ণ সমর্থক ছিলো আইরিশ রিপাবলিকান ব্রাদারহুডের এবং উল্লেখ্য, গেইলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সাতজনের মধ্যে চারজনই ছিলো আইআরবির সদস্য। গেইলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা পায় আইরিশ খেলাগুলো। এই সংস্থা গেইলিক ফুটবলসহ ছাড়াও জনপ্রিয় হারলিং, ক্যামোগি, রাউন্ডার্স ও হ্যান্ডবল খেলার অভিভাবক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। শত শত বছর ধরে গেইলিক ফুটবল খেলা হয়েছে বিভিন্ন নিয়মে, অন্য সব খেলার মতোই এতেও এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। কিন্তু আধুনিক গেইলিক ফুটবল একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো এবং রূপ পেয়েছে গেইলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে।
গেইলিক ফুটবল খেলার সাধারণ কাঠামো
আগেই বলা হয়েছে যে গেইলিক ফুটবল সাধারণত ফুটবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল এবং অনেকটা রাগবি খেলার অদ্ভুতুড়ে ও মজাদার সংমিশ্রণ। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল মাঠের মতোই আয়তাকার মাঠে, মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন ১৩০ মিটার ও সর্বোচ্চ ১৪০ মিটার এবং প্রস্থ ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ মিটার পর্যন্ত হয়। মাঠের দুই প্রান্তের ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে গোলপোস্ট বিদ্যমান, কিন্তু তা ফুটবল ও রাগবি পোষ্টের সমন্বয়ে গঠিত।
গোলপোস্টের ক্রসবারটি মাটি থেকে ২.৫ মিটার উপরে, বারের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব সাধারণত ৬.৫ মিটার এবং বার দুটি ক্রস বারের উপরে আরও অনেকটা উপরে উঠে শেষ হয়। খেলাটির বল অনেকটা ফুটবলের মতো, কিন্তু আকারে কিছুটা ছোট। বলের পরিধি ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৪৫০-৪৮৫ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। ক্রসবারের ৬.৫ মিটার পর্যন্ত জাল জড়ানো থাকে। খেলাটিতে দু’ভাবে গোল দেওয়া যায়। বল জালে জড়ালে এক গোল বা তিন পয়েন্ট এবং বল যদি ক্রস বারের উপর দিয়ে গোল পোষ্টের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে তাহলে তা থেকে পাওয়া যাবে এক পয়েন্ট।
৩০ মিনিট করে দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ৬০ মিনিটের খেলা হয়, খেলা শেষে যে দলের পয়েন্ট বেশি থাকে তারাই বিজয়ী দল। গোল করতে হয় পা দিয়ে শট করে, বর্তমানে হাত দিয়ে শট করে বল জালে জড়ানোর নিয়ম নেই। একটি গেইলিক ফুটবল দলের স্কোর ৫-১৫ বলতে বোঝায় ৫ গোল এবং ১৫ পয়েন্ট অর্থাৎ মোট ৩০ পয়েন্ট।
গেইলিক ফুটবলে প্রতিটি দল গঠিত হয় ১৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে। গেইলিক ফুটবলের একটি দল সাধারণত একজন গোলরক্ষক, ছয়জন ডিফেন্ডার, দুজন মিডফিল্ডার এবং পাঁচজন ফরোয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
সর্বোচ্চ তিনজন খেলোয়াড় বদলি করা যায় একটি ম্যাচে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি, দুজন লাইন্সম্যান এবং চারজন আম্পায়ার থাকে। আম্পায়ারদের কাজ হলো যে, গোল হলে তা পতাকা উঁচিয়ে রেফারিকে জানানো। গোলপোস্টের ডান পাশে থাকা আম্পায়ার গোল হলে সবুজ পতাকা উত্তোলন করে এবং বাম পাশে থাকা আম্পায়ার সাদা পতাকা উড়িয়ে এক পয়েন্টের গোলের বার্তা দেয়।
খেলায় বল দখলের জন্য বা প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে বাধা প্রদানের জন্য কাঁধ দিয়ে কাঁধে ধাক্কা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। খেলাটির জন্য ফুটবলের স্কিলের পাশাপাশি দরকার হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবলের দক্ষতা এবং রাগবি খেলার মতো শক্তি। গেইলিক ফুটবল অনেকটা শক্তিনির্ভর হলেও বর্তমানে সময়ের সাথে অন্য খেলাগুলোর মতো এটিও পরিণত হচ্ছে কৌশল ও দক্ষতার খেলায়। ফাউলের শাস্তিস্বরূপ রয়েছে হলুদ কার্ড, লাল কার্ড এবং কালো কার্ড। হলুদ কার্ড সতর্কতামূলক, রেফারি কালো কার্ড দেখালে ঐ খেলোয়াড়কে মাঠ ছাড়তে হবে কিন্তু তার বদলি হিসেবে আরেকজন মাঠে নামতে পারবে এবং লাল কার্ডে কোনো বদলি খেলোয়াড় ছাড়াই মাঠ ছাড়তে হবে।
সাধারণ কিছু নিয়মাবলী
- বল হাতে নিয়ে দৌড়ানো যাবে, কিন্তু তা চার ধাপ বা কদমের বেশি নয়। এরপর বল মাটিতে বাউন্স করাতে হবে বা বল পায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে পা দিয়ে চিপ করে বা লাথি দিয়ে আবার হাতে নিতে হবে।
- বল মাটিতে বাউন্স করানো যাবে মাত্র একবার, টানা দুবার বাউন্স করানোর নিয়ম নেই।
- বল মাটি থেকে সরাসরি হাত দিয়ে তোলা যাবে না, মাটি থেকে তুলতে পা ব্যবহার করতে হবে। নিজের সীমানায় শুধুমাত্র গোলরক্ষক বল হাত দিয়ে মাটি থেকে তুলতে পারবে।
- গোলে শট শুধুমাত্র পা দিয়েই নিতে হবে, গোল বক্সের বাইরে খেলোয়াড়েরা হাত দিয়েও বল ব্লক করতে পারবে।
- বল বাতাসে থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে ধরতে পারবে। বল যদি মাটিতে না থাকে, তাহলে শরীরের যেকোনো অংশ দিয়েই বল স্পর্শ করা যাবে।
- দলের খেলোয়াড়কে বল সরাসরি ছুড়ে না দিয়ে হাতের তালু বা মুষ্টি ব্যবহারের মাধ্যমে বলে মৃদু আঘাত করে ছুড়ে দিতে হবে।
- নিজেদের দল বল আউট করলে ফুটবলে প্রতিপক্ষকে কর্নার কিকের সুবিধা দেওয়া হয়। গেইলিক ফুটবলে দেওয়া হয় ফ্রি কিক এবং তা নিতে হয় ৪৫ মিটার লাইন থেকে। এই লাইনকে বলা হয় ফ্রি কিক লাইন।
ফুটবলের তুলনায় গেইলিক ফুটবল অনেক জটিল খেলা, তবে খেলাটি সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকলে দারুণ উপভোগ করতে পারবে যে কেউ। গেইলিক ফুটবলে নিয়মনীতি সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে গেইলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে, সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে প্রায় সবকিছু।
গেইলিক ফুটবল প্রতিযোগিতা
আয়ারল্যান্ডের জনপ্রিয়তম এই খেলাটির জন্য শুধুমাত্র এই দেশটিতেই রয়েছে প্রায় ২,৫০০টি ক্লাব। আয়ারল্যান্ড ছাড়াও ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপের আরও অনেক দেশেই এটি দারুণ জনপ্রিয়। প্রতিবছর আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল রুলস সিরিজ আয়োজিত হয়। এই সিরিজটি অবশ্য গেইলিক ফুটবল এবং অস্ট্রেলিয়া রুলস ফুটবলের সংমিশ্রণে খেলা হয়। তাছাড়া, আয়ারল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে অল আয়ারল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেয় ৩২টি দল। এই চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রায় ৮০,০০০ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ডও রয়েছে। কাউন্টি পর্যায়ে চারটি সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজিত হয় আয়ারল্যান্ডে, তাছাড়া বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টও আয়োজন করা হয়।
গেইলিক ফুটবল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিপুল বৈশ্বিক অর্থায়নের মাধ্যমে অন্যান্য জনপ্রিয় খেলাধুলার মতো পরিচিতি লাভ না করলেও খেলাটি আজকে আইরিশ ঐতিহ্য, একতা, জাতীয় গৌরব এবং নিজস্বতার প্রতীক হয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বে। ভিনদেশি সংস্কৃতি বা খেলাধুলার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে জাতীয় ঐতিহ্য ও নিজস্বতা ধরে রাখা যায়, তার অসাধারণ উদাহরণ আইরিশরা এবং গেইলিক ফুটবল।
ফিচার ইমেজ: gaa.ie