ফুটবলের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে কোনোকালেই পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটিতে বড় বড় তারকার অভাব ঘটেনি। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ক্লাব ফুটবলে আজ যেসকল দল পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত, তারা সকলেই পরাশক্তি হয়েছে সে যুগের সেরা খেলোয়াড়দের কল্যাণেই। তারকাদের মিলনমেলা শূন্য হয়ে যাওয়ায় নক্ষত্র পতনের মতো পরাশক্তির ঝিমিয়ে পড়াও দেখেছে বিশ্ব। তবে সাফল্যের জন্য সর্বদা বড় মুখই প্রয়োজন, এ কথাটি ভুল প্রমাণিত করেছে সদ্যই ট্রেবল জয় করা বায়ার্ন মিউনিখ। এ যুগের সবচেয়ে বড় তারকাদের কেউই নেই এ দলে। তথাপি দলীয় পারফরম্যান্সে তারকাঠাসা ক্লাবদেরও নাকানিচুবানি খাইয়ে এসেছে ক্লাবটি। তবুও, বরাবরই বড় তারকাদের নিয়ে দল সাজানো ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনা থেকে কিছু একটায় যেন ঢের পিছিয়ে জার্মানির এ ক্লাবটি। সেটি কী?
দলে তারকা খেলোয়াড় থাকলে কেবল সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে, এমনটি নয়। বরং যেকোনো ফুটবল ক্লাবের টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি বস্তু তথা সমর্থন বাড়ে বড় তারকাদের ব্যক্তিগত তারকাখ্যাতির জন্যই। উদাহরণস্বরূপ ২ সিজন পূর্বে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানোর কথা বলা যেতে পারে। রোনালদো জুভেন্টাসে যোগ দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাত্র ২৪ ঘন্টার মাঝে রিয়াল মাদ্রিদ টুইটারে ফলোয়ার হারিয়েছিল ১ মিলিয়নের বেশি। অন্যদিকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে একদিনেই জুভেন্টাসের ফলোয়ার বেড়ে যায় ৬ মিলিয়ন, যা ১ সপ্তাহের মাথায় ২০ মিলিয়নে ঠেকে! একবার ভেবে দেখুন, এ কালের সেরা তিন খেলোয়াড় রোনালদো, মেসি আর নেইমার যদি একই দলে যোগ দেন, তাহলে সে দলের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা আর ব্র্যান্ড ভ্যালু কোথায় গিয়ে ঠেকবে? সময়ের সেরাদের নিয়ে এরকম অভাবনীয় এক দর্শকপ্রিয় গ্ল্যামারাস দল করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। গ্যালাকটিকোস নামে পরিচিতি পাওয়া সেই দলের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তৎকালীন এবং বর্তমান ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।
গ্যালাকটিকোস শব্দটির প্রচলন স্প্যানিশ শব্দ ‘গ্যালাকটিক’ থেকে, যার অর্থ সুপারস্টার বা মহাতারকা। আকাশের তারা যেমন অমাবস্যার জমাট অন্ধকার ভেদ করে নিজেদের জ্বলজ্বলে অস্তিত্ব জানান দেয়, গ্যালাকটিকো বলতে মূলত সেসব ফুটবলারদেরই বোঝানো হয় যারা আপন প্রতিভায় এতটাই উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন যে সমসাময়িকদের মাঝে তারা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান। তবে এরকম প্রতিভার সম্মিলন কিন্তু পেরেজই প্রথম ঘটাননি।
রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, সাবেক ক্লাব প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো বার্নাব্যুই প্রথম দেখিয়েছিলেন গ্যালাকটিকো কী। স্টেফানো, পুসকাস, জেন্টো, সান্তামারিয়ার মতো তারকাদের নিয়ে তিনি গড়েছিলেন এক অপ্রতিরোধ্য দল, যে দলটি ৫০-এর দশকে গড়ে দিয়েছিল শতাব্দীর সেরা ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিপ্রস্তর। সাফল্য, প্রতিভা আর আধিপত্যের বিচারে এ দলটি ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা দল হিসেবে নাম লিখিয়েছে। তবু কেন গ্যালাকটিকো হিসেবে এর পরিচয় নেই? সহজ উত্তর হতে পারে তখন ফুটবলে অর্থের ঝনঝনানি আর বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি ছিল না।
গ্যালাকটিকো-১
৮০’র দশকের সমাপ্তিটা দুর্দান্তভাবেই টেনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। হুগো সানচেজের নৈপুণ্যে ভর করে টানা ৫টি ঘরোয়া লিগ জয় করে দলটি। কিন্তু দলটির নাম যখন রিয়াল মাদ্রিদ, কেবল লিগ ট্রফি জয় তখন সাদামাটা সাফল্যই। কেননা, প্রতিবছরই এ দলের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। আর সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত সেই ট্রফির স্বাদ থেকেই কি না দুই দশক ধরে বঞ্চিত রিয়াল মাদ্রিদ! মাদ্রিদের ঐতিহ্যের সাথে বড্ড বেমানান এই তথ্য পরিবর্তন হলো না সানচেজের হাত ধরেও। কিন্তু ৯০’র দশকে যখন ঘরোয়া লিগে ইয়োহান ক্রুইফের হাত ধরে বার্সেলোনার দাপুটে উত্থান হলো, তখন ঠিকই দুটি ইউসিএল জিতে নিয়েছিল দলটি। তবে তাতেও যে সন্তুষ্টি এলো না রিয়ালের কর্তাদের মনে।
দীর্ঘকালের কাঙ্ক্ষিত ট্রফি ঘরে তুলেও মাদ্রিদের অসন্তুষ্টির কারণটা ছিল স্পষ্ট- প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার পুনরুত্থান ও জনপ্রিয়তা। ৯০’র দশকে রোমারিও, গার্দিওলা, স্টোইচকভ, লুড্রপ আর কোমানদের নিয়ে গড়া ক্রুইফের ‘ড্রিম টিম’ বিশ্বজুড়েই খ্যাতি কুড়িয়েছিল সুন্দর ফুটবলের জন্য। ক্রুইফ দল ছাড়ার পরও এর রেশ থেকে যায় লুই ভ্যান হালের ঘরোয়া আধিপত্যের মাঝে। এমতাবস্থায় কেবল ইউরোপীয় ট্রফি জয় রিয়ালকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। রিয়ালের প্রয়োজন ছিল অনুরূপ একটি ‘ড্রিম টিম’ কিংবা স্টেফানো-পুসকাসদের মতো তারকাসমৃদ্ধ দলের মতো একটি দল।
১৯৯৮-২০০০ সাল, ৩ বছরে ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেও রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট পদ ধরে রাখতে পারেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো সাঞ্জ। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের গ্যালাকটিকো সাইনিং, বিশেষ করে বার্সেলোনা থেকে লুই ফিগোকে মাদ্রিদে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিই তাকে নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাস বলে, ঘরের মাঠ বার্নাব্যু সর্বদাই আলো হয়েছে সময়ের সেরা সব তারকাদের প্রতিভায়। তবে চিরাচরিত সেই আলোয় পেরেজের মন ভরবার নয়। তিনি যে চেয়েছিলেন তারকাদের আলোয় প্রতিপক্ষকে একেবারে ঝলসে দিতে। আর তাই তার ট্রান্সফার পলিসি ছিল প্রতি মৌসুমেই একজন করে গ্যালাকটিকো তিনি দলে ভেড়াবেন, যার শুরুটা তিনি করেছিলেন ফিগোকে দিয়েই।
প্রেসিডেন্ট হয়েই গ্যালাকটিকো গড়ায় মনোযোগ দেন পেরেজ। রিয়ালের তৎকালীন ট্রেনিং গ্রাউন্ডটি ৪৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি করে দিয়ে ক্লাবের ধারকর্য সব চুকিয়ে দেন, পাশাপাশি সংস্থান হয়ে যায় গ্যালাকটিকো সাইনিংয়ের অর্থ। শুরুতেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ৬২ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভেড়ান তারকা মিডফিল্ডার লুই ফিগোকে। বার্সেলোনায় সফল ৫ সিজন কাটানোর পর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালে চলে যাওয়ায় দলটির সমর্থকদের ক্ষোভ ছিল দেখার মতো। রিয়ালে যাবার পর প্রথম যেবার ন্যু ক্যাম্পে খেলতে গিয়েছিলেন ফিগো, পুরো মাঠের সমবেত ব্যু-ই ছিল সে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কোনো এক দর্শক তো গ্যালারি থেকে আস্ত এক শূকরের মাথাই ছুঁড়ে দিয়েছিল ফিগোকে লক্ষ্য করে!
যা-ই হোক, গ্যালাকটিকো সাইনিং প্রক্রিয়ায় একে একে জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, ডেভিড বেকহাম, রবিনহো, সার্জিও রামোসদের মতো পরিণত আর প্রতিভাবান উঠতি তারকাদের বার্ন্যাব্যুতে নিয়ে এলো রিয়াল মাদ্রিদ। আর দলে পূর্বে থেকেই উপস্থিত ক্যাসিয়াস, রবার্তো কার্লোস আর রাউল গঞ্জালেসরা এ দলের শোভাই বাড়াচ্ছিলেন কেবল।
বড় বড় নামের ভিড়ে যে নামটি খুব একটা শোনা যেত না, সেটি হলো ক্লদ মেকলেলে। ফরাসি এই মিডফিল্ডার ছিলেন গ্যালাকটিকো-১ এর প্রাথমিক সাফল্যের পর্দার আড়ালের কারিগর। দেল বস্কের কোচিংয়ে গ্যালাকটিকো সত্যিকার অর্থেই গ্যালাকটিকোর মতো পারফর্ম করতে শুরু করে। ৩ বছরে দুটি লিগ আর একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করার পরও অবিশ্বাস্যভাবে দেল বস্ককে বরখাস্ত করে রিয়াল মাদ্রিদ। সেখান থেকেই শুরু এক দীর্ঘ ছন্দপতনের, যে ছন্দ ফিরে পেতে গ্যালাকটিকো-২ গড়তে হয়েছিল পেরেজকে। দেল বস্কের পর হিয়েরো, ম্যাকমানামও দল ছাড়েন, বেচে দেয়া হয় মেকলেলেকে। ২০০৩ সালের পর দ্বিতীয় গ্যালাকটিকো গড়ার পূর্ব পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ দুটি লিগ জিততে সমর্থ হলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলই পার করতে পারেনি একবারও!
সাফল্য আর ব্যর্থতার দোলাচলে গ্যালাকটিকো-১
পেরেজ যখন গ্যালাকটিকো নির্মাণ করছেন, রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউটে তখন রিয়ালের সাবেক খেলোয়াড় দেল বস্ক। কাস্তিয়ার দায়িত্ব সামাল দেবার পর টানা কয়েক সিজন রিয়ালের সিনিয়র দলের কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করে সাবেক এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার কোচ হিসেবেও ততদিনে পরিপূর্ণ। ফলে বড় বড় খেলোয়াড়ের তারকা খ্যাতি তার কোচিংয়ে বাধ সাধতে পারেনি মোটেও। ২০০০-০১ মৌসুমের ট্রান্সফার উইন্ডোতে মাদ্রিদের ছয়টি সাইনিংয়ের মাঝে সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাইনিং ফিগো হলেও আদতে সবচেয়ে কার্যকর সাইনিং ছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার ম্যাকলেলে।
প্রথম সিজনের অধিকাংশ ম্যাচেই ৪-৪-২ ডায়মন্ড ফরমেশনে দল সাজালেন দেল বস্ক। রাউল আর মরিয়েন্তেস কিংবা গুতিকে ফরোয়ার্ড হিসেবে রেখে মিডফিল্ড সাজালেন ম্যাকলেলে, হেলগুয়েরা, ম্যাকমানামান আর ফিগোকে নিয়ে। তবে খেলা চলাকালে রাউল বাঁ-দিকে সরে গিয়ে উইং পজিশনে আর ফিগো ডান দিকে উইং পজিশনে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতেন। আর মাঝমাঠ দখলে রাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি একাই পালন করতেন ম্যাকলেলে। হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে দলের রক্ষণে অবদান রাখার পাশাপাশি দুজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ম্যাকমানামান আর হেলগুয়েরাকে এক সুতোয় বেঁধেও রাখতেন তিনি। অন্যদিকে রবার্তো কার্লোস আক্রমণে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরও হিয়েরো আর আইতোরদের দক্ষতায় রক্ষণ নিয়েও খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়নি রিয়ালের। ফলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে না পারলেও প্রতিপক্ষ বার্সার চেয়ে ১৭ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে সহজেই লিগ জয় করে রিয়াল।
পরের সিজনে দলে যোগ হলেন জিনেদিন জিদান। একাধিক পজিশনে খেলতে পারদর্শী হেলগুয়েরা মিডফিল্ডে জায়গা ছেড়ে দিয়ে সেন্টার ব্যাক হিসেবে আবির্ভূত হলেন। জিদানের সৃজনশীলতা সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে তাকে অফেন্সিভ মিডফিল্ডার (এটাকিং মিডফিল্ডার) করে ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে দল সাজালেন দেল বস্ক, যেখানে হোল্ডিং মিডফিল্ডার ও ডিসট্রিবিউটরের দায়িত্বে থাকলেন ম্যাকলেলে। ডানদিকে লুই ফিগো স্থায়ী হলেও বাম দিকে ম্যাকমানামানের সাথে পুরো সিজনেই জায়গা বদল করে খেলেছেন ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরা সোলারি। সেন্টার ফরোয়ার্ড যথারীতি রাউল আর মরিয়েন্তেস।
হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে ম্যাকলেলের নির্ভরযোগ্যতা জিদান, ফিগো আর সোলারিদের আক্রমণভাগে মনোযোগ দেয়া নিশ্চিত করে। তবে ফিগো আর জিদান ট্র্যাক ব্যাক না করায় এ মৌসুমে ডিফেন্সে ভালোই সমস্যা হয় রিয়ালের। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পাভনকে সেন্টার ব্যাক হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করে মেকলেলে আর হেলগুয়েরাকে নিয়ে ৪-২-৩-১ ডাবল পিভট ফরমেশনেও অনেক ম্যাচ খেলিয়েছেন দেল বস্ক, যাতে সাফল্যও এসেছে বেশ। বিশেষ করে লিগ হাতছাড়া হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডাবল পিভটেই সাফল্য পেয়েছে মাদ্রিদ। লিগ হাতছাড়া হবার আরেকটি কারণ জিদানের ফর্মহীনতা আর ছোট ছোট ইঞ্জুরি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সেই ঐতিহাসিক ভলিতে গোল করে লিগ হাতছাড়া হবার হতাশা দূর করেন ফরাসি মিডফিল্ড জাদুকর।
২০০২-০৩ সিজনে রিয়ালে যোগ দেন আরো একজন গ্যালাকটিকো, রোনালদো নাজারিও। পুরো সিজন জুড়েই ৪-৪-২ ডায়মন্ড ফরমেশনে খেলে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। নড়বড়ে প্রথম সিজনের পর নিজেকে ফিরে পান জিদানও। রাউল, রোনালদো, জিদান আর ফিগোর কল্যাণে রিয়ালের আক্রমণভাগ হয়ে ওঠে যেকোনো দলের জন্য ত্রাস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালে জুভেন্টাসের কাছে হেরে বাদ পড়ার আগে মনে হচ্ছিল নিজেদের দশম ইউরোপীয় শিরোপা ঘরে তুলবে রিয়াল। এ স্বপ্ন পূরণ না হলেও লিগ ঠিকই জিতে নেয় মাদ্রিদ। তিন সিজনে রিয়ালের ডাগআউটে দুটি ঘরোয়া লিগ আর একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এনে দিয়েও অবিশ্বাস্যভাবে চাকরি হারান দেল বস্ক, যা মাদ্রিদের সমর্থক তো বটেই, পুরো ফুটবল বিশ্বকেই চমকে দিয়েছিল। সেখান থেকেই শুরু গ্যালাকটিকোর ছন্দপতন, পেরেজের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান।
দেল বস্ককে বরখাস্ত করার মূল কারণ ডিফেন্ডারদের বেতন নিয়ে পেরেজের সাথে ঝামেলা। রেকর্ড সাইনিং করে ফরোয়ার্ড কিংবা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দলে ভেড়ানো আর তাদের বড় অঙ্কের বেতন দিতে পারলেও ডিফেন্ডারদের ক্ষেত্রে পেরেজ যেন ভীষণ কৃপণ। বিশেষত সে সময়কার সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যাকলেলের বেতন মূল একাদশের সবার চেয়ে কম ছিল। নিশ্চিত না হলেও অনেকেই বলে থাকেন ম্যাকলেলে কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় তার বেতন বৃদ্ধিতে এত অনীহা ছিল পেরেজের।
এই তত্ত্বের পালে হাওয়া মেলে রোনালদিনহোকে ‘কুৎসিত’ চেহারার জন্য দলে না ভেড়ানো থেকেও। যা-ই হোক, ম্যাকলেলের বেতন সংক্রান্ত ঝামেলায় দেল বস্ককে সমর্থন দেন ম্যাকমানামান, হিয়েরো আর মরিয়েন্তেসও যারা প্রত্যেকেই দেল বস্ক দল ছাড়ার পর একে একে রিয়াল থেকে চলে যান। পরে দু’বছরে ডেভিড বেকহাম, সার্জিও রামোস, রবিনহো আর মাইকেল ওয়েনদের দলে ভেড়ালেও গ্যালাকটিকোর আর ট্রফি জেতা হয়ে ওঠেনি।
দেল বস্কের স্থলাভিষিক্ত হন অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কুইরোজ। দেল বস্ক যেভাবে নিজের চিরচেনা ড্রেসিংরুমে তারকাদের সামলেছেন, কুইরোজের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। খেলোয়াড়দের ফর্ম কিংবা মাঠের ট্যাকটিক্স নয়, বরং তারকাখ্যাতি দেখেই দল সাজাতে হয়েছে তাকে। উপরন্তু, দলে ফিগোর মতো বিশ্বসেরা রাইট ফুটেড উইংগার থাকতেও বেকহামের সংযোজনে দুজনের একজনকে সবসময়ই কামফোর্ট জোনের বাইরে খেলতে হয়েছে। কখনো বেকহাম খেলেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে, কখনো বা ফিগো চলে গিয়েছেন বামদিকে। আর ম্যাকলেলের অনুপস্থিতিতে পুরো মিডেই ছিল তথৈবচ অবস্থা। জিদানের মতো জাদুকরের উপস্থিতিও খুব একটা কাজে আসেনি।
গ্যালাকটিকো-১ নিয়ে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের উচ্চাভিলাষ মূলত মাঠের সাফল্যের সাথে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড নির্মাণ করবার। প্রকৃতপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ তখন বিজ্ঞাপনদাতাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নাম হয়ে ওঠে। মিডিয়া কাভারেজ আর ভরপুর গ্ল্যামারে ফুটবলটাই যেন ঢাকা পড়তে থাকে। বিশেষ করে বেকহামের অপ্রয়োজনীয় সাইনিং ছিল সম্পূর্ণই বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার জন্য।
২০০৪-০৫ মৌসুম ট্রফিবিহীন কাটানোর পর দল ছাড়েন ফিগো। পরের বছর শেষ ষোলতে আর্সেনালের কাছে হেরে রিয়ালের বিদায় হলে পদত্যাগ করেন পেরেজ। সেই বছর অবসরে যান জিদান আর দল ছাড়েন রোনালদো। গ্যালাকটিকো-১ এর ইতি ঘটে সেখানেই। তবে ২০০৭ সালে বেকহামের বিদায়কেই গ্যালাকটিকোর প্রথম যুগের শেষ বলা হয়ে থাকে।
গ্যালাকটিকো-২
বার্নড শুস্টারের কোচিংয়ে নিস্টারলয়, রাউল, ক্যানাভারোদের মতো তারকাদের নিয়েও ২০০৮-০৯ সিজনে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল ম্লান। টানা পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল থেকে বিদায় আর কোপা দেল রে-তে থার্ড টায়ার দল রিয়াল ইউনিয়নের কাছে হেরে বিদায়ে শুস্টার বরখাস্ত হন সিজন শেষ হবার আগেই। অন্যদিকে পেপ গার্দিওলার অধীনে জাভি, ইনিয়েস্তা, পুয়োল আর আলভেজদের নিয়ে ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দলগুলোর একটি গঠন করে বার্সেলোনা, যে দলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটি লিওনেল মেসি। বার্সার এই সর্বজয়ী দলের কাছে ৬-২ গোলে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সিজন শেষ করে রিয়াল, পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট ক্যালদেরন। আর বিধ্বস্ত মাদ্রিদের পুনর্জাগরণের মন্ত্র নিয়ে আরো একবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাজির হন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার ডিফেন্স-অফেন্স দু’দিকেই মনোযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন জিতে নেন তিনি। শুরু হয় গ্যালাকটিকো-২ গড়ার কাজ।
নিঃসন্দেহে গ্যালাকটিকো-২ এর সবচেয়ে বড় নামটি হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, যার সংযোজন চলতি শতাব্দীতে রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলো এনে দিয়েছে। এছাড়াও গ্যালাকটিকো-২ যুগের প্রথমভাগের বড় মুখগুলো হলো কাকা, জাবি আলোনসো, মেসুত ওজিল, আনহেল ডি মারিয়া, করিম বেনজেমা আর লুকা মদ্রিচ। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সিজনেও দলের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য না এলে পেল্লেগ্রিনিকে বরখাস্ত করে ডাগআউটে নিয়ে আসেন জোসে মরিনহোকে, যিনি সদ্যই ইন্টার মিলানকে ট্রেবল জিতিয়েছেন। কোচদের বাজারে মরিনহো তখন এক বিশাল নাম তার কৌশলগত দক্ষতা ও সাফল্যের কারণে। বলা বাহুল্য, গ্যালাকটিকো-২ এর প্রথমভাগের একজন গ্যালাকটিকো তিনিও বটে।
একটি কোপা দেল রে এবং একটি ঘরোয়া লিগ শিরোপা, মরিনহোর ৩ সিজনে এই ছিল রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য। তথাপি মৌরিনহোকে মাদ্রিদের ডাগআউটে ব্যর্থ বলা যাবে না কোনোভাবেই। গার্দিওলার বার্সার টিকিটাকায় দিশেহারা রিয়াল মাদ্রিদ জবাব খুঁজে পেয়েছিল মরিনহোর হাত ধরেই। অপ্রতিরোধ্য সেই বার্সেলোনাকে তিন সিজন পর ন্যু ক্যাম্পে হারাতে পারা, কোপা দেল রের ফাইনালে হারানো আর ১২১ গোল করে ১০০ পয়েন্টের রেকর্ড নিয়ে লিগ শিরোপা উদ্ধার করাই বলে দেয় মরিনহোর অবদানের কথা।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেই বার্সেলোনাকে রুখে দিতে মরিনহো ৪-২-৩-১ ফরমেশন বেছে নেন। এ ফরমেশন ডিফেন্ড করার সময় মূলত ৪-৪-২ হয়ে প্রতিপক্ষকে প্রেস করতো রিয়াল। মরিনহোর নীতি ছিল, ডিফেন্ডিংয়ের সময় দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বলের পেছনে থাকতে হবে। কেবল বল নিজেদের পেনাল্টি এরিয়ায় পৌঁছে গেলে রোনালদো ও বেনজেমা বাইরে অপেক্ষায় থাকতেন কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য, বাকি সবাইকেই ট্র্যাক ব্যাক করে বলের পেছনে থাকতে হতো। এছাড়াও, জোনাল ডিফেন্ডিং প্রক্রিয়া, অর্থাৎ প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নির্দিষ্ট জোনে বল প্রবেশ করলে প্রতিপক্ষকে প্রেস করবেন- রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগকে করেছিল দুর্গ।
প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেয়ার সাথে সাথেই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলতে শুরু করে রিয়াল। চমৎকার ভিশন আর লং বল খেলার দক্ষতার কারণে হোল্ডিং মিড জাবি আলোনসো সেন্ট্রাল মিড পজিশনে সুইচ করতেন। এক্ষেত্রে দলের ডিফেন্স দেখে রাখার দায়িত্বে থাকতেন খেদিরা। সৃজনশীল মিডফিল্ডার ওজিল অ্যাটাকিং মিডের দায়িত্ব থাকায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চিড়ে প্রচুর পাস পেত রোনালদো, বেনজেমা আর মারিয়াকে নিয়ে গড়া রিয়ালের ফ্রন্ট লাইন। রোনালদোর কাটইন করে সেন্টারের দিকে যাওয়া আর বেনজেমার সাথে প্রতিনিয়ত পজিশন ওভারল্যাপ করায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাদেরকে মার্ক করতে হিমশিম খেত। সব মিলিয়ে মরিনহোর যুগে রিয়াল মাদ্রিদে গড়ে উঠেছিল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক কাউন্টার অ্যাটাকিং সিস্টেম, যে সিস্টেম সক্ষম হয় গার্দিওলার সর্বজয়ী বার্সেলোনাকে রুখে দিতে।
গ্যালাকটিকো-২ এর প্রথমভাগের সমাপ্তি হয়ে যায় খেলোয়াড়দের সাথে বনিবনা না হবার জের ধরে মরিনহোর মাদ্রিদ ছাড়ার মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় ভাগে কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলোত্তির সাথে স্প্যানিশ জায়ান্টদের সাথে যোগ দেন তৎকালীন সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল। মাঝমাঠে রিয়ালের শ্রীবৃদ্ধি করতে দলে আনা হয় ইসকো আর টনি ক্রুসকে। প্রাথমিকভাবে ৪-৩-৩ ফরমেশন ব্যবহার করে সাফল্যও পেলেন আনচেলোত্তি। লিগে তৃতীয় হলেও এক যুগের খরা কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উঠলো রিয়ালের ঘরে। আর এ সাফল্যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রেকর্ড ১৭ গোল করে দুর্দান্ত এক সিজন কাটানো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
মাঝমাঠে মদ্রিচ আর ডি মারিয়া মূলত বল দখলে নেয়া এবং এবং তা ফুলব্যাকদের কিংবা ফ্রন্টলাইনকে ডিস্ট্রিবিউট করার কাজ করেছেন। গোল করার চেয়ে বরং রোনালদোর জন্য জায়গা বানিয়ে দেয়াই ছিল বেনজেমার প্রধান কাজ। আর রোনালদোকে প্রচলিত উইংগার না রেখে ফ্রি মুভিংয়ের স্বাধীনতা দেন কোচ। এতে রোনালদোর নিখুঁত গোল স্কোরিং দক্ষতার পাশাপাশি তার ড্রিবলিং আর স্কিলমুভ থেকেও সর্বোচ্চটা আদায় করে নিতে পেরেছে দল। বিখ্যাত বিবিসি ত্রয়ী (বেল-বেঞ্জেমা-ক্রিশ্চিয়ানো) মাদ্রিদের হয়ে ৯৭ গোল করে সিজন শেষ করে সেবার। গ্যালাকটিকো-২ এর আলোচনা আমরা এখানেই শেষ করছি।
মূল্যায়ন
অনেকেই জিদানের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সময়টাকে গ্যালাকটিকো-২ এর তৃতীয় ভাগ বললেও আদতে আনচেলত্তির পর গ্যালাকটিকো-২ সে অর্থে আর ছিল না। ডি মারিয়া, ওজিল, কাকা, আলোনসোরা দল ছেড়ে দিলে যারা তাদের স্থালে দলে জায়গা পায়, তাদের আদতে গ্ল্যামার আর জনপ্রিয়তার বিচারে গ্যালাকটিকো বলা চলে না। এসময় দলের প্রধান মুখ ছিলেন মূলত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর প্রথম গ্যালাকটিকোর অংশ সার্জিও রামোস। ব্যক্তিগত জৌলুস, প্রতিভা আর জনপ্রিয়তার বিচারে গ্যালাকটিকো-১ এর সমকক্ষ হতে পারবে না গ্যালাকটিকো-২। রিয়াল মাদ্রিদের কয়েক প্রজন্মের ভক্ত সমর্থক তৈরি হয়েছে প্রথম গ্যালাকটিকোর সেই তারকাঠাসা দলের কারণেই। ২০ শতকের সেরা ক্লাবকে বিশ্বজুড়ে ব্র্যান্ড ভ্যালু আর জনপ্রিয়তার বিচারে ২১ শতকেও সবার চেয়ে এগিয়ে দেয় এ দলটিই।
অন্যদিকে দলীয় সাফল্য বিচার করতে গেলে আপাতদৃষ্টিতে প্রথম গ্যালকটিকোর ২টি লিগ আর ১টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিপরীতে দ্বিতীয় গ্যালাকটিকোর ১টি লিগ আর ১টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে খাটো করে দেখা যাবে না কোনোভাবেই। বরং দ্বিতীয় গ্যালাকটিকোর প্রভাব রিয়াল মাদ্রিদে সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে। এই গ্যালাকটিকোই ইউরোপে রিয়ালের টানা সাফল্যের ভিত গড়ে দিয়েছে। দলে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশ্রণের প্রক্রিয়াও এ দল থেকেই শুরু। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সময়ে রিয়ালের ট্রান্সফার মার্কেটে খরচ ছিল না বললেই চলে। কেননা গ্যালাকটিকো-২ যে দলীয় সাফল্যের ভিত গড়ে দিয়ে গেছে, সেই বুনিয়াদ থেকে উর্ধ্বমুখী অবকাঠামো নির্মাণে তারকার চেয়ে তরুণ খেলোয়াড় কেনার নীতিতে স্থির হয়েছে রিয়াল। যদিও রোনালদোর দল ছাড়ায় ছন্নছাড়া মাদ্রিদকে ট্র্যাকে ফেরাতে আবারও কিছুটা খরুচে হয়েছিল রিয়াল, তথাপি দলে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার ভারসাম্য রক্ষায় এ সাইনিংগুলো প্রয়োজন ছিল বটে।
সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাকটিকোর ইতিহাস রঙিনই বলা চলে। প্রথম গ্যালাকটিকো মাঠের সাফল্যে পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বজুড়ে রিয়ালের সমর্থন বাড়িয়েছিল ব্যাপকভাবে। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্যালাকটিকোতে এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই সবচেয়ে গ্ল্যামারাস মুখ হলেও এ দলটিও বিশ্বজুড়ে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পায়। পাশাপাশি ইউরোপে টানা আধিপত্য করা দলটিও যে দ্বিতীয় গ্যালাকটিকোরই উপজাত। আর সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাবনিকাশ একপাশে রেখে বরং সময়ের সেরা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি খেলতে দেখার সুযোগ করে দেয়া রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাকটিকোদের দুটি দলই ফুটবল ভক্তদের মনে চিরস্থায়ী আসন পাবে।