Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা জুটিগুলো

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন আলোচনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বরাবরই দুর্বল অবস্থানে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচের তিনটিতেই হার। আর সর্বশেষ ১৪টি টি-টোয়েন্টির ১৩ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। গেল ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ (১৯৩) রান সংগ্রহ করেও জয় মেলেনি।

চলমান নিদাহাস ট্রফিতে দলের ব্যাটিং ব্যর্থটায় ভারতের অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলের সামনেও মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ব্যাটে গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো জুটি। তাই বলে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের বড় জুটির ইতিহাস একেবারেই নেই, এমনটা নয়। পরিসংখ্যানের পাতায় প্রমাণ আছে, এই ফরম্যাটে পাঁচবার ১০০ রানের উপরে জুটি গড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি জুটি নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।

তামিম ইকবাল-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৩২*)

বাংলাদেশের পক্ষে ২০ ওভারের ক্রিকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, এই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিং অলরাউন্ডার মারলন স্যামুয়েলসের ঝড় তোলা ৮৫ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৯৭ রান করেছিল উইন্ডিজ দল। মাত্র ৪৩ বল মোকাবেলা করে এই রান তুলেছিলেন স্যামুয়েলস। এছাড়া ড্যারেন  ব্রাভো ৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

জবাবে প্রথম উইকেটে ৪৭ রান তোলে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে ঝড় তুলতে  থাকেন ড্যারেন স্যামি-আন্দ্রে রাসেলদের উপর। সে ম্যাচে বোলিংয়ে সাকিবের অভাব ছিল, কিন্তু তার অনুপস্থিতি ব্যাটিংয়ে একেবারেই টের পেতে দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি টাইগাররা। এক উইকেটে ১৭৯ রান তুলতেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। রিয়াদ-তামিমরা পরাজিত হয় ১৮ রানের ব্যবধানে।

তামিম- মাহমুদউল্লাহর সেই জুটি এখনও শীর্ষে; Source: AP

অপরাজিত ১৩২ রানের জুটি গড়া তামিম-মাহমুদউল্লাহ যথাক্রমে ৮৮ রানে ও ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। তামিম ম্যাচে ৬১ বল খেলেছিলেন। তার ইনিংসে ছিল দশটি চার ও দুটি ছয়ের মার। ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ তিনটি বাউন্ডারি ও চারটি ছয় মেরেছিলেন। সব মিলিয়ে খেলেন ৪৮ বল। বাংলাদেশ দলের ইতিহাসে তামিমদের ওই জুটি এখনো সর্বোচ্চ হিসেবে রেকর্ড করে আছে।

সামসুর রহমান শুভ-সাকিব আল হাসান (১১৮)

১১ মে, ২০১৩। জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিলেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিচারে ম্যাচটা খুব ঝোড়ো বা খুব সাদামাটা ছিল না। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। তবে ১ রানে ১ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে, দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি বেঁধেছিল ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদসা ও অধিনায়ক টেলরের ব্যাটে। মাসাকাদজা ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। টেলর করেন ৪০ রান।

সামসুর রহমান শুভর সেই ইনিংস; Source: AFP

দল ও সামর্থ্যের বিচারে সেই ম্যাচেও এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ঘরের মাঠে সেদিন গোপন পরিকল্পনা এঁটেছিলেন তিনাসে পানিয়াঙ্গারা ও প্রসপার উতসিয়া। এ দুই জিম্বাবুইয়ান বোলারের সামনে কেবল তিনজন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান ছুঁতে পেরেছিল। তার মধ্যেই দ্বিতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসান ও সামশুর রহমান শুভ ১১৮ রানের জুটি গড়েছিলেন। ৪০ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ রানের ইনিংসে ঝড় তুলেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ওপাশে শুভ ৪৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন। তৃতীয় মুশফিকুর রহিম ১৪ বলে ২৮ রান তুলেছিলেন। সহজ জয়ের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পারেনি বাংলাদেশ। নাসির হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জিয়াউর রহমান, সোহাগ গাজী ও আব্দুর রাজ্জাক; ব্যাটের সুযোগ পাওয়া তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসে জুটির রেকর্ড গড়েও সেদিন হেরেছিল ৬ রানের ব্যবধানে।

সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম (১১২)

২০১৪ সালের এপ্রিলের ঘটনা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ১২ রানে প্রথম দুই উইকেট হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। সাকিবের ৬৬ ও মুশফিকের ৪৭ রানে চড়ে পাঁচ উইকেটে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিক ১১২ রানের জুটি গড়েন। দুজনে মিলে সেদিন খেলেছিলেন মোট ৮৮ বল। দুজনের ব্যাটে চার হয়েছিলো ১০টি এবং ছয় হয়েছিল ৪টি।

অস্ট্রেলিয়ার বুকে ভয় ধরিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান; Source: AFP

স্বাগতিকদের এমন কীর্তির দিনেও হেসেখেলে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছিল জর্জ বেইলির অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিং জুটিতেই ৯৮ রান এনে দেন ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। সর্বোচ্চ ৭১ রান করেছিলেন ফিঞ্চ। শেষ পর্যন্ত ১৭.৩ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া দল।

আফতাব আহমেদ-মোহাম্মদ আশরাফুল (১০৯)

২০০৭ সাল, টি-টোয়েন্টি জামানার সূর্যোদয়ের সময়। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। উইন্ডিজের বিপক্ষে জোহানেসবার্গে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ডেভন স্মিথের ৫১ (৫২ বলে), শিবনারায়ণ চন্দরপলের ৩৭ আর ছিল ডোয়াইন স্মিথের ৭ বলে ২৯ রানের ঝড়। সব মিলিয়ে ৮ উইকেটে ১৬৪ রান তুলেছিল রামনারেশ সারওয়ানের দল। সাকিব আল হাসান একা ৪ উইকেট নিয়েছিলেন।

উইন্ডিজের মতো শক্ত দলের সামনে সেদিন বিদেশের মাটিতে ব্যাটে তুফান তুলেছিলেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। সঙ্গে ছিলেন আফতাব আহমেদ। ওপেনার তামিম ইকবাল ১০ রানে আউট হন। আরেক ওপেনার নাজিমউদ্দিন ফেরেন ব্যক্তিগত ১ রান করে।

আফতাব আহমেদের অসাধারণ ফ্লিক; Source: Getty Image

এমন বাজে অবস্থা থেকে টেনে তুলেছিলেন আশরাফুল-আফতাব। খেলেছিলেন ১১০ রানের জুটি। শুধু জুটিই গড়েননি, জয়ও তুলে নিয়েছিলেন। আফতাব ৪৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আর আশরাফুল ৭ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ২৭ বলে খেলেছিলেন ৬১ রানের ইনিংস। ম্যাচে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, তা-ও দুই ওভার হাতে রেখেই!

সাকিব আল হাসান-সাব্বির রহমান (১০৫*)

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ। এরপর দেশে ফিরে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা সিরিজ জিতেছিল। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দারুণ একটি বছর ছিল ২০১৫ সাল

২৪ এপ্রিল, ২০১৫ সালে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের। তার তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান তোলে পাকিস্তান। বাঁহাতি মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ২০ রান খরচ করে দুই উইকেট নিয়েছিলেন। পাক ওপেনার মুক্তার আহমেদ সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

জবাবে ৩৮ রানে যথাক্রমে সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমকে হারায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ, উমর গুলদের উপর চড়ে বসেন সাকিব আল হাসান। দুজনের ১০৫ রানের অপরাজিত জুটি জয় এনে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। সাকিব ৪১ বলে সর্বোচ্চ ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাব্বির অপরাজিত ছিলেন ৩২ বলে ৫১ রান করে। ৭ উইকেট হাতে রেখে ১৬.২ ওভারে বাংলাদেশ সেই ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিল।

সেদিন সাকিব-সাব্বিরের জুটি; Source: Pinterest

সাকিব-সাব্বিরের সেই জুটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটির তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ১০০ রান কিংবা তার উপরে টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের জুটিই আছে কেবল পাঁচটি। ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত আর কেউ ১০০ রানের জুটি করতে পারেনি বাংলাদেশের জার্সিতে।

ফিচার ইমেজ- Getty Image

Related Articles