Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জ্যাডন সাঞ্চো: এক স্কুলবালকের স্বপ্নপূরণ

ক্যাম্প ন্যু’তে মুখোমুখি বার্সেলোনা আর বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এইখানে বরুশিয়ার জন্য নেই সিগনাল ইদুনা পার্কের মতো উত্তাল হলুদ সমুদ্র, বরং আছে পাহাড়সমান চাপ। বার্সেলোনা, ন্যু ক্যাম্প, মেসি – যেকোনো ফুটবলপ্রেমী তরুণের জন্যই কয়েক খণ্ড স্বপ্নের নাম এগুলো। স্বপ্নালু চোখগুলোর সামনে সেই নামগুলোই আবার কখনো কখনো চাপ নামের জগদ্দল পাথর বলে ঠাহর হয়। আর দশটা তরুণের মতো জ্যাডন সাঞ্চো নামের এক তরুণও এই ধারার বিপরীতে ছিলেন না। ১৯ বছরের সেই তরুণ সেদিন শুধু অদৃশ্য এক চাপই জয় করেননি, ন্যু ক্যাম্পের হয়ে করেছেন দলের হয়ে একমাত্র গোলটিও

সময়টা আরো ৫ বছর আগের। ১৪ বছর বয়সী জ্যাডন তখন পড়তেন দক্ষিন লন্ডনের কেনিংটনের এক স্কুলে। তারও সাত বছর আগে ওয়াটফোর্ডের বয়সভিত্তিক দলের চোখে পড়েন তিনি। লুইস ল্যাঙ্কেস্টার ছিলেন ওয়াটফোর্ড অনূর্ধ্ব-১৫ দলটির কোচ। একদিন সেই স্কুলেই তার আগমন। সাঞ্চোসহ সেই স্কুলের আরো অনেকেই ছিলেন ফুটবলের প্রতি উৎসাহী। আর্সেনালের রিজ নিলসন ও পরবর্তীতে ম্যানচেস্টার সিটিতে সাঞ্চোর সতীর্থ হওয়া ইয়ান কার্লো পোভেদা ছিলেন সাঞ্চোর একেবারে কাছের বন্ধু। স্কুলের নিচতলার একটি ছোট রুমে সবাইকে ডেকে পাঠান ল্যাঙ্কেস্টার। সাদা শার্টের উপর পড়া কাঁধ বেয়ে নিচে হেলে যাওয়া ব্লেজারই বলে দিচ্ছিল তাদের শারীরিক সামর্থ্য। কিন্তু তারতম্য ছিল মনের জোরে। সেই জায়গাতেই সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন জ্যাডন। কোচ লুইস ল্যাঙ্কেস্টার যখন এক এক করে সবার মনোবাসনা জিজ্ঞেস করছিলেন, তখন সাঞ্চোর উত্তরটা ছিল স্পষ্ট, উচ্চাভিলাষী। তার স্বপ্ন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা, তার স্বপ্ন ইউরোপের সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর একটির হয়ে খেলা — যাতে শুধুমাত্র তার পরিবারই নয়, পুরো ইংল্যান্ডবাসী তাকে এক নামে চেনে।

ওয়াটফোর্ডের হয়ে মাঠে সাঞ্চো; Image Credit: Alan Cozzi/The Sun

সেইদিন নিজের প্রতি এত প্রবল বিশ্বাস সাঞ্চোর একদিনে আসেনি। মাত্র সাত বছর বয়সে ফুটবল নিয়ে সারাদিন মেতে থাকতেন এই বিস্ময় বালক। ওয়াটফোর্ড বয়সভিত্তিক দলগুলোর স্কাউটের নজরেও আসেন খুব দ্রুতই। কিন্তু বাদ সাধে যাতায়াত অসুবিধা। ওয়াটফোর্ডের অংশীদার স্কুল হেয়ারফিল্ড একাডেমি সাঞ্চোর বাসা থেকে অনেক দূর। তবুও নিজের স্বপ্ন বিফলে যেতে দিতে চাননি তিনি, তাই প্রতিদিন ট্রেনে করে বিশাল পথ ভ্রমণ করে স্কুলে যেতেন।

এভাবে ১১ বছর পর্যন্ত কষ্ট করার পর নিজের ক্যারিয়ারের খাতিরে বড়সড় এক ত্যাগ স্বীকার করেন তিনি, নিজ বাসভূম ছেড়ে চলে আসেন নর্থহল্টে নিজের আন্টির বাসায়। তারপরও ট্যাক্সি করে প্রতিদিন ১৪ মাইল ভ্রমণ করতে হতো তাকে। মাত্র ১১ বছর বয়সী ছেলের জন্য এই ধকল সামলে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়া কষ্টসাধ্য হলেও সাঞ্চোর স্বপ্নের সামনে তা ছিল একেবারেই নগণ্য। সোম থেকে শুক্র — সাঞ্চোর রুটিনে কোনো হেরফের ছিল না। সকালবেলা প্র্যাকটিস, বিকালে ক্লাস, আবার ফুটবুলে বুঁদ সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এরই মধ্যে লন্ডনের দুই ক্লাব আর্সেনাল ও চেলসি সাঞ্চোকে দলে ভেড়ানোর জন্য হাজির। কিন্তু তাতে বাদ সাধলেন স্বয়ং সাঞ্চো নিজেই। কারণ? প্র্যাকটিসের স্বাধীনতা। ওয়াটফোর্ডের সিস্টেমে স্কুলের পাশাপাশি নিজের স্বাধীনতা মতো অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল সাঞ্চোর হাতে। কিন্তু কোনো বড় ক্লাবে নিজের জন্য সেভাবে সময় খুঁজে নেওয়াটাও দুষ্কর ব্যাপার। তাই নিজেকে আরো শাণিত করতে ওয়াটফোর্ডেই থেকে যান সাঞ্চো।

ম্যানচেস্টার সিটির জার্সি গায়ে জ্যাডন সাঞ্চো; Image Source: 90 min.

সাঞ্চোর স্কুলমেট ও ওয়াটফোর্ডের বয়সভিত্তিক দলে লেফট-ব্যাকে খেলা পেরি প্রাইস বিবিসি রিপোর্টকে জানিয়েছেন, সেই সময় থেকেই সাঞ্চো সবসময় বড় বড় ক্লাবগুলোর নাম নিতেন — রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই নিজের শৈশবকে একপ্রকার বিসর্জনই দিয়েছিলেন তিনি। শুধু খেলার মাঠ নয়, ফুটবল জড়িয়ে ছিল সাঞ্চোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ক্লাসে বসেই ইউটিউবের ফুটবল ভিডিওগুলোতেই মজে থাকতেন তিনি। তার এক স্কুলশিক্ষক সেই সময়কে রোমন্থন করে জানিয়েছেন, সাঞ্চোর কম্পিউটারের স্ক্রিনে থাকতেন রোনালদিনহো আর নেইমার। বল নিয়ে কারিকুরির ক্ষেত্রে যাকে তখনকার ফুটবলবিশ্ব এক বাক্যে দেবতা মানতো, সেই রোনালদিনহো ছিলেন সাঞ্চোর বেড়ে উঠার সময়কার আদর্শ। তাই সেই ছাপ বিদ্যমান রয়েছে সাঞ্চোর খেলার ধরনেও।

ল্যাঙ্কেস্টার জানান, ১৩ বছর বয়সী সাঞ্চোর উইং ধরে দৌড় দেখেই তিনি বুঝে ফেলেছিলেন, ভবিষ্যৎ ফুটবলের রত্ন হতে যাচ্ছে এই ছেলে। খুব দ্রুতই ল্যাঙ্কেস্টারের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে জায়গা হয় সাঞ্চোর। ১৪ বছর বয়সী সাঞ্চো সেই দলে সবচেয়ে কম বয়স্ক হলেও দলের সেরা খেলোয়ারটি ছিলেন তিনিই। মিডউইকে আর্সেনালের বিপক্ষে জাদুকরী এক পারফরম্যান্সে মুহূর্তের মধ্যেই শোরগোল ফেলে দেন তিনি। সেই ম্যাচে সাঞ্চোকে ধরা দূরে থাক, সাঞ্চোর ছায়াটিরও স্পর্শ পায়নি আর্সেনাল রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা।

ক্ষিপ্রগতির সাঞ্চোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র সহজেই ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করা। শরীরের উপর দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ তাকে করে তুলেছে আরো পরিপূর্ণ। তাই পরের বছরই সাঞ্চো জায়গা পেয়ে যান এক লাফে অনূর্ধ্ব-১৮ দলে। তরতর করে এগিয়ে চলায় আর কোনো যতি পড়তে দেননি জ্যাডন সাঞ্চো।

সাঞ্চোর এই প্রতিভা ছাইচাপা থাকার কথা নয়, থাকেওনি। ১৩ বছর বয়স থেকেই সাঞ্চোকে খেয়াল করে আসছিল ম্যানচেস্টার সিটির স্কাউট দল। ২০১৫ সালের মার্চে ১৫ বছর হওয়ার পরপরই ৬৬ হাজার ইউরোর বিনিময়ে সাঞ্চোকে দলে ভেড়ায় সিটিজেনরা। সাঞ্চো নিজের ক্যারিয়ারের সাথে কখনোই কোনো আপোষ করেননি। তাই সিটির অফার পাওয়ার সাথে সাথেই সেটি লুফে নিয়ে পাড়ি জমান উত্তরে।

পেপ গার্দিওলার সাথে ট্রেইনিং এ; Image Source: Getty Image

মধ্য বসন্তের এক সন্ধ্যা। সেইন্ট অ্যান্ড্রু স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো ফিকে করে দিচ্ছে সন্ধ্যার ঝাপসা আলোকে। সিটির হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ দলে আজ বার্মিংহামের বিপক্ষে আজ প্রথমবারের মতো মাঠে নামবেন সাঞ্চো। কালো বুট আর স্লিভলেস জার্সি পড়া সাঞ্চো কি ম্যাচের আগে স্নায়ুচাপে ভুগেছিলেন? ভুগলেও বা কী! মাঠের পারফরম্যান্স বলে, সেগুলোকে থোড়াই কেয়ার করেন জ্যাডন। ৮-৩ গোলে জয় পাওয়া সেই ম্যাচে এক সাঞ্চোর পা থেকেই এসেছিল পাঁচটি গোল। পুরো মৌসুম ধরে সাঞ্চোর কৃতিত্বে সেবার অপরাজেয় থাকে সিটির এই বয়সভিত্তিক দল।

এই পারফরম্যান্সের উপহার পেয়ে যান সাথে সাথেই। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে সিটি প্রথমবারের মতো প্রফেশনাল চুক্তি অফার করে সাঞ্চোকে। দিনকয়েক পরই সেই চুক্তি অনুসারে প্রাক-মৌসুম ম্যাচ খেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রগামী প্লেনে উঠার কথা ছিল তার। চুক্তিমতে সাপ্তাহিক ৩০ হাজার ইউরো বেতনের পাশাপাশি সাঞ্চোর সুযোগ ছিল পেপ গার্দিওলার সাথে কাজ করার। কিন্তু ওই যে আপোষহীন মনোভাব! মুহূর্তের মধ্যেই বেঁকে বসলেন সাঞ্চো। সিটিজেনদের মূল দল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে যোগ দিলেন সিটির বয়সভিত্তিক দলে। হতবুদ্ধি পেপ গার্দিওলা বোর্ডকে চাপ দিয়ে বসলেন, যেকোনো মূল্যেই তার সাঞ্চোকে চাই। তৎকালীন সিটিজেনদের বিলিয়ন ডলারের স্কোয়াডে থেকে মূল দলে জায়গা করে নেওয়া যে বেশ কষ্টকর হবে, তা সাঞ্চো নিজেই জানতেন। তাই সিটিজেনদের অফার ফিরিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

তবে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি সিটিজেন বোর্ড। গার্দিওলার ভাষ্যমতে, কয়েক দফা মিটিংয়ের পর তারা সাঞ্চোর বাবার কাছেও করজোড় মিনতি করেছিলেন। কিন্তু যখন না-সূচক বাক্যটি খেলোয়াড়ের মুখ থেকেই আসে, তাহলে আপনার হাতে বেশি কিছু আসলে করার থাকে না। সিটির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নিজ দেশ ত্যাগ করে পাড়ি জমান জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা সাঞ্চো দিনের পর দিন প্রমাণ করে চলেছেন।

ডর্টমুন্ডের অন্যতম তুরুপের তাস; Image Source: Tom Victor/Planet Football

২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট উসমান দেম্বেলের ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্যে সাঞ্চোর আগমন ডর্টমুন্ডে। প্রথম বছরে এসে নিজেকে গুছিয়ে নিতে একটু সময় নিয়েছেন সাঞ্চো। ডর্টমুন্ডও তাকে সেভাবে টানা খেলায়নি; ম্যাচে ৫৫ মিনিট, ৬৫ মিনিট, ৭৫ মিনিট করে খেলেছেন স্যাঞ্চো, ধীরে ধীরে জার্মান ফুটবলের সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। স্বভাবতই খুব কম ইংলিশ খেলোয়াড়ই এত অল্প বয়সে দেশ ছেড়ে অন্য ক্লাবে পাড়ি জমান। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, সাঞ্চোই ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী ইংলিশ ফুটবলার যিনি ইংল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ভিনদেশি ক্লাবে। তাই সাঞ্চোর বাইরে এসে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাও ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে সে বছরই ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় ঘোষিত হন সাঞ্চো। ফাইনালে স্পেনের সাথে পেনাল্টিতে হেরে গেলেও ইংল্যান্ডের ১৫ গোলের মধ্যে ১০টিতেই সরাসরি অবদান ছিল তার। কিন্তু সাঞ্চো তখন পাখির চোখ করেছিলেন সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপকে। চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দুই গোল করেন সাঞ্চো। কিন্তু ক্লাবের জন্য তাকে দল ত্যাগ করে চলে আসতে হয় ডর্টমুন্ডে।

কসোভোর বিপক্ষে জোড়া গোলের পর; Image Credit: Getty Images

ডর্টমুন্ড চলে আসাটা মোটেও সহজ ছিল না জ্যাডনের জন্য। নিজের মা-বাবা-বোনকে লন্ডনে ফেলে একাকী আরেক দেশে পাড়ি জমানো একজন তরুণের জন্য বেশ পীড়াদায়কই বটে। কিন্তু ডর্টমুন্ডে এসেও সেই ছোট্টবেলার সাঞ্চোর পরিবর্তন হয়নি। যেন কেনিংটনের ফুটবলকে আপন করে নেওয়া বাচ্চা সাঞ্চোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিগনাল ইদুনা পার্ক। ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসাই সাঞ্চোকে নিয়ে এসেছে আজকের জায়গায়।

প্রথম মৌসুমে ১২ ম্যাচ খেললেও প্রতিভার স্ফুরণ তাতেই ছিল স্পষ্ট, যদিও এক গোল আর চার অ্যাসিস্ট ঠিক নিজের নামের সাথে মেলে না। তবে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন পরের মৌসুমেই, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ডর্টমুন্ড দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে খেলেছেন মোট ৩৪টি ম্যাচ।

কিন্তু ১৮ বছরের বালকের জন্য ডর্টমুন্ডের মতো তারকাখচিত দলে জায়গা করে নেওয়া এতটা সহজও ছিল না। শুরুতে টানা ছয় ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। সেই ছয় ম্যচে সাঞ্চোর পারফরম্যান্স কী ছিল জানেন? ছয় অ্যাসিস্ট আর এক গোল! বেয়ার লেভারকুসেনের সাথে বদলি হিসেবে নেমে পিছিয়ে পড়া ডর্টমুন্ডকে দুই অ্যাসিস্টে ৪-২ গোলে জেতানোর পর আর বেঞ্চ গরম করতে হয়নি। সেবার দুর্দান্ত নৈপুন্যে ১২ গোলের পাশাপাশি সহায়তাও করেছেন ১৪ গোলে। অথচ কে বলবে, মৌসুমের আগে এই কিশোর সবেমাত্র পা দিয়েছিলেন আঠারোতে!

প্রত্যাশার চাপ জয় করে ফেলেছিলেন আঠারোতেই, তাকে আর থামানোর সাধ্য কার! নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নেশায় মত্ত সাঞ্চো পরের মৌসুমে করে বসলেন আরো গাদাখানেক রেকর্ড। আগের মৌসুম থেকে দুই ম্যাচ কম খেলেও গোল ও অ্যাসিস্টে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে। লিগে ১৭ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগে করেন ২ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট। সব মিলিয়ে ৪৪ ম্যাচে মাঠে থেকে ২০ গোল আর ২০ অ্যাসিস্ট – সাকুল্যে ৪০ গোলে সরাসরি অবদান। মাইকেল ওয়েন-পরবর্তী যুগে এত কম বয়সে কোন ইংলিশ ফুটবলার এমন মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তা খুঁজতে হলে আমাদের ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে হবে অনেকবার।

চলতি মৌসুমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সাঞ্চোর রেকর্ডবুকে যোগ হয় বেশ কিছু লাইন। বুন্দেসলিগার সবচেয়ে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ১৫ গোল করার রেকর্ড তারই দখলে। সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ১৫টির বেশি অ্যাসিস্টের মালিকও তিনিই। চলতি মৌসুমে বুন্দেসলিগায় লেওয়ানডস্কি (৩৮) ও টিমো ভার্নার (৩৪)-এর পর সাঞ্চোর (৩৩) চেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখতে পারেনি আর কেউ। এই শতাব্দিতে জন্ম নেওয়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে থ্রি লায়ন্সের জার্সি গায়ে জড়ানো খেলোয়াড় তিনিই। ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোতে ধারাবাহিক অ্যাসিস্টের যোগানদাতা ডি মারিয়া, মুলার, ডি ব্রুইনা, মেসি প্রমুখদের সাথে একই কাতারে উচ্চারিত হওয়া আরো একটি নাম সাঞ্চো। ডর্টমুন্ডে না আসলে এসব হতো কি না, তা নিয়ে ছিল বিরাট সংশয়। ম্যানচেস্টার সিটিতে পড়ে থাকা তারই জাতীয় দল সতীর্থ ফিল ফোডেনের চেয়ে সাঞ্চো মাঠে খেলেছেন প্রায় নয়গুণ বেশি সময়। অথচ দুইজনের প্রতিভাতে ছিল উনিশ-বিশ পার্থক্য। কঠিন পরিশ্রম, মনের জোর, ফুটবলের প্রতি ভালবাসা আর সর্বোপরি আপোষহীনতাই সাঞ্চোর সাফল্যের কারিগর।

ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেই যাচ্ছেন এই বালক; Image Source: Pinterest

“হ্যাকনি মার্শ কিংবা ওয়েম্বলি, ১০ হাজার দর্শক কিংবা ১ লক্ষ দর্শক – কোনো কিছুই সাঞ্চোকে প্রভাবিত করে না। ফুটবল মাঠ আর বল দিন, সে আনন্দ খুঁজে নেবে তাতেই।”

সাঞ্চো সম্পর্কে এই কথাগুলোই বলেছিলেন তার প্রথম কোচ ল্যাঙ্কেস্টার। সেই অফিস রুমে বসে ল্যাঙ্কেস্টারকে শুনানো নিজের স্বপ্নের কথা আর তা বাস্তবায়ন করার ফারাক কতটুকু, তা জানে কেবল জ্যাডোন সাঞ্চো। যেন এমিনেমের লুজ ইউরসেলফ গানের মতোই – 

‘You only get one shot, do not miss your chance to blow

This opportunity comes once in a lifetime.’

This Bangla article is about the english footballer Jadon Sancho. References are hyperliked in the article.

Feature Image: Sport Sunday/Behance

Background Image: Behance

Related Articles