ভারতের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন করুন নায়ার। কিন্তু ট্রিপল সেঞ্চুরিও তাকে দলে স্থায়ী করতে পারেনি। এরপর মাত্র আর ৩টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তারপর থেকে স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে জায়গা হয়নি। এবার স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েছেন।
ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও দলে জায়গা ধরে রাখতে না পারার এই যন্ত্রণা ও নিজের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন করুন নায়ার।
ট্রিপল সেঞ্চুরিটা আপনাকে খ্যাতি দিয়েছে। আবার ওই ট্রিপল সেঞ্চুরিটাই কি এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে? লোকে বারবার আপনার কাছ থেকে ওরকম কিছু আশা করে…
আমার মনে হয় না, ওটা আমার কোনো ক্ষতি করছে। এই কথা বলার কারণ, ঐ ঘটনার পর দুই বছর পার হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এখন সামনে এগোনোর সময় এসেছে। ওটা অতীত এবং ওটা চলে গেছে। আমাদের এখন সামনে তাকাতে হবে, দেখতে হবে সামনে কী আছে আমার মনে হয় না ওই ট্রিপল সেঞ্চুরি আমার জন্য কোনো খারাপ কিছু। যে কারো জন্যই ওটা একটা সুবিধা দেওয়ার কথা। কারণ, এর ফলে লোকেরা জানে, আমি কী করতে পারি। আমার নতুন করে এটা প্রমাণ করার দরকার নেই যে, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান করতে পারি। সেটা আমি আগেই করেছি। এই ধরনের আত্মবিশ্বাস আমার ঐ ইনিংস থেকে এসেছে। এটা সবসময়ই উপকারী। কারণ, আপনি যখন একবার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন মূল ব্যাপারটা হয় প্রতিদিন আরও পরিশ্রম করা এবং আরও উন্নতি করা।
কোনো এক জায়গায় আপনি বলেছিলেন, ওই ট্রিপল সেঞ্চুরি আপনাকে বোতলবন্দী করে ফেলেছিলো। আপনার ওখান থেকে বেরোতে সময় লেগেছে।
আসলে আমার অনুভূতিটা নেতিবাচকভাবে লেখা হয়েছিলো। আমি এটা ইতিবাচকভাবে বলেছিলাম। আমি যে অর্জন করেছি, সেটা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিলো। এর মানে হলো, আমি ওটাকে পার করে যেতে চাচ্ছি। এর মানে এই নয় যে, ওটা আমাকে চাপে ফেলেছে বা এরকম কিছু নয়। আমাকে বোতলবন্দী করে ফেলেছে এরপর আমার সুযোগ না পাওয়া। এরপর আমার যে সুযোগ পাওয়া উচিত ছিলো, সেটা আমি পাইনি।
এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যর্থ হওয়াটা মেনে নেওয়া কতটা কঠিন ছিলো? ওখানে শুরু পেয়েছেন, কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। এরপর দল থেকেই বাদ পড়লেন।
আমি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সম্ভবত চারটে ইনিংস খেলেছি। আমি মনে করি, যেকোনো ব্যাটসম্যান দুটো ইনিংসে শুরু পেয়েও আউট হতে পারে এবং আর দুটো ইনিংসে ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু এতেই দল থেকে বাদ পড়া এবং এরপর আর সুযোগ না পাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। অবশ্যই এটা আমার জন্য হতাশাজনক। এখন আমি যেটা করতে পারি, তা হলো ঘরোয়া ক্রিকেটে যত বেশি সম্ভব রান করা এবং যখনই কোনো সুযোগ আসবে, সেটা কাজে লাগানো। এরপর আমি যখনই একাদশে সুযোগ পাবো, চেষ্টা করবো শুরু পেলে সেটাকে বড় ইনিংসে পরিণত করতে। আমি আসলে কোনো কিছুই নেতিবাচকভাবে দেখতে চাই না। কারণ, তাতে আমার কোনো উপকার হবে না। আমি যেটা বলতে পারি, সবাই শুরু করে এবং ক্যারিয়ারের কোথাও না কোথাও বাদও পড়ে। আমার ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে। এরপর আমি আর সুযোগ পাইনি।
এই যে সুযোগ পাচ্ছেন না, এটা কী খুব কঠিন একটা ব্যাপার মেনে নেওয়ার জন্য?
জীবন আসলে এরকমই। টিম ম্যানেজমেন্ট ও বাকিরা তাদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর খেলোয়াড় হিসেবে আমার সে সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এটা নিয়েই সামনে এগোতে হবে আমাকে। আমি যেমনটা বলেছি, আমি কেবল আমার ব্যাট দিয়েই কথা বলতে পারি। এছাড়া এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পছন্দ করি না।
এই অবস্থায় নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখাটা কতটা কঠিন?
আমার জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার। আমি প্রতিদিনই উন্নতি করতে চাই। আমি যখন দলে ছিলাম, তখনও তা-ই করতাম। সেটা ফিটনেসে হোক, আমার ব্যাটিংয়ে হোক বা আমার ফিল্ডিংয়ে হোক। আমি প্রতিনিয়ত আমার স্কিল উন্নত করতে চাই। অবশ্যই আমি দ্রুত একটা সুযোগ আশা করি। আমি দ্রুতই বড় একটা স্কোর করতে চাই। আমি বড় স্কোরের জন্য ক্ষুধার্ত। দেখুন, মাত্র দুজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে। আমি তাদের একজন। আমি মনে করি না, আমি কমের দলে, আমি ৯০ শতাংশ মার্ক পাওয়াদের দলে আছি। আমাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে না। আমি এখন আসলে যা চাই, মাঠে গিয়ে ওই কাজটা আবার করতে চাই।
ভারতীয় নির্বাচকরা বলেন, তাদের সাথে খেলোয়াড়দের যোগাযোগ খুব ভালো। আপনার এই সুযোগ না পাওয়া নিয়ে কি তাদের সাথে কথা হয়েছে?
না। আমাদের কোনো কথা হয়নি। একেবারেই কথা হয়নি।
এটা তো কঠিন ব্যাপার। কারণ, আপনার নিশ্চয়ই সুযোগ না পাওয়ার কারণটা জানতে ইচ্ছে করে?
এটা কঠিন। তবে আমি এগিয়ে গিয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই না। এটাই সত্যি যে, আমার সাথে কারোর এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
আপনি দলে ছিলেন। তারপর দেখলেন দলের বাইরে থেকে একজন (হানুমা বিহারি) এসে আপনার আগে একাদশে নেমে গেলো। এটা মেনে নেওয়া মানসিকভাবে কতটা কঠিন ছিলো?
খুব কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ হিসেবে এরকম পরিস্থিতি সামলানো খুব কঠিন। একজন মানুষ হিসেবে এটা মেনে নেওয়াও শক্ত। তবে আগেও যেমন বলেছি, টিম ম্যানেজমেন্ট ও বাকিরা একটা সিদ্ধান্ত নেন। আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে সেটা মেনে নিতে হয়। এছাড়া তো আমি আর কিছু করতে পারি না। আমি আগেও যেমন বলেছি, আমি সুযোগ পেলে ব্যাট দিয়েই কথা বলতে চাই।
এরপর কঠিন সময়ে কাদের সাথে সময় কাটান?
অবশ্যই ঘনিষ্ঠদের সাথে। এরকম কঠিন সময় তাদের সাথেই কাটানো যায়। আমি কারো নাম বলতে চাই না। তবে আমার ঘনিষ্ঠ কিছু লোক আছে। অবশ্যই পরিবার তাদের মধ্যে আছে।
আপনি জাতীয় দলের স্কোয়াডে আছেন। ফলে ‘এ’ দল বা এসব ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলতে পারছেন না। এটা কি বাড়তি একটা সমস্যা?
আমি এই আন্তর্জাতিক স্তরে এসেছি অনেক পরিশ্রম করে। আমি নিশ্চয়ই চাইবো না যে, আবার নিচের স্তরে চলে যেতে। যারা এই আন্তর্জাতিক স্তরে আসে, এরা সবাই কঠোর পরিশ্রম করে আসে। তারা ঘরোয়া স্তর, ইন্ডিয়া ‘এ’ দল; সব জায়গায় রান করে আসে। নতুবা এখানে পৌঁছাতে পারতো না। এখন আবার ওই স্তরে ফিরে যাওয়া এবং আবার রান করে ফিরে আসা, এটা কঠিন। কখনোই এরকম ফিরে গিয়ে আবার আসাটা সোজা কাজ নয়। অবশ্যই আমি ম্যাচ খেলতে চাই। কিন্তু যেমন বলেছি, আমি এই সর্বোচ্চ স্তরেই থাকতে চাই। আমি এটার অংশ হতে চাই। নিজের দেশের হয়ে খেলাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।
আপনি সাইডলাইনে থেকে শেখার কথা বলেছিলেন। এই সময়ে আসলে কী শিখলেন?
আমি এই সময়ে আমাদের ট্রেনার (শঙ্কর) বসু স্যারের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। এছাড়া ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার স্যারের সাথেও অনেক সময় কাটিয়েছি। অনেক বল খেলেছি এবং অনেক নেট করেছি। তবে আমি বসু স্যারের সাথে বেশি সময় কাটিয়েছি। ওনার মতে, আমি এখন টিমের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড়দের একজন। আর এজন্য আমি খুব গর্বিত।