Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সিরিজ জয়ের শিক্ষা

নয় বছর অপেক্ষার পর বিদেশের মাটিতে আরেকটা ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। এই সিরিজ জয় কেবল একটি জয় নয়; আরও কিছু শিক্ষা দিয়ে গেলো। এই সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো উপায় পাওয়া গেলো। সেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েই এবারের আলোচনা।

শেষ ম্যাচের ম্যাচসেরা তামিম; Image Source: AFP

তামিমের বিকল্প নেই

এই সিরিজে তামিম দুটো সেঞ্চুরি করেছেন, দু’টো ম্যাচেই বাংলাদেশ জিতেছে। এই সরল তথ্যটা ধরেই বলে ফেলা যায়, বাংলাদেশের ব্যাটিং পুরোপুরিই তামিম নির্ভর। কিন্তু ব্যাপারটা এত সরল নয়। তামিম ইকবাল তিন ম্যাচের এই সিরিজে ২৮৭ রান করেছেন। দু’টি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিসহ দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন। তারপরও এক ধরনের সমালোচনা তাকে সইতে হচ্ছে – তিনি নাকি প্রয়োজনের তুলনায় ধীরগতিতে খেলেছেন। কিন্তু যারা তামিমের খেলা দেখেছেন, এই উইকেট কাছ থেকে দেখেছেন, তারা স্বীকার করেছেন, এই ইনিংসগুলো কেবল তামিমের ক্যারিয়ারের নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। কারণ, উইকেট ছিলো, যারপরনাই কঠিন।

তামিম নিজে সিরিজ শেষে বলেছেন, এখানে লম্বা ইনিংস খেলাই তার ও দলের লক্ষ্য ছিলো,

আমি যা করতে চেয়েছি এবং আমার দল আমার কাছে যা চেয়েছে, তা হলো লম্বা সময় ব্যাট করা। এটাই ছিল পরিকল্পনা। আমি সেটা সফলভাবে করতে পেরেছি। ভালো লেগেছে। গায়ানার উইকেট খুব সহজ ছিল না (প্রথম দুই ওয়ানডেতে)। টার্ন করছিল, প্রথম ম্যাচে সিমিংও ছিল। ধৈর্য রাখতেই হতো। সেটা করতে পেরেছি বলেই বড় ইনিংস খেলতে পেরেছি। সবসময় বলেছি যে, যখন দল জেতে এবং তাতে রান করি, এটা হলো সবচেয়ে সেরা অনুভূতি। তিনটি ম্যাচেই যে ধৈর্য নিয়ে আমি খেলতে পেরেছি, কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। টেস্ট ম্যাচে ব্যর্থতার পর সবাই অনেক কষ্ট করেছে। আমি রান পেয়েছি। কিন্তু যারা পায়নি, তারাও অনেক কষ্ট করেছে।

অবশ্য যারা বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেকদিন ধরে অনুসরণ করছেন, তারা বুঝতে পারবেন, তামিমের এই একটু আস্তে আস্তে লম্বা ইনিংসটা খেলা গত বছর তিনেকে তার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আগে যেমন মারকুটে ব্যাটসম্যান ছিলেন, এখন পুরোপুরি তেমন নেই তিনি। নিজেকে অনেকটাই বদলে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভরসা করে তুলেছেন।

পরিষ্কার করে বললে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ থেকে এই পরিবর্তনটা চোখে পড়ে। তামিমের ক্যারিয়ার গড় হলো ৩৬.২৩। আর ২০১৫ সালের সেই সিরিজ থেকে এখন অবধি তার গড় হলো ৬২.২৮। ক্যারিয়ারের ১১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির সাতটাই এই তিন বছরে করেছেন তিনি। বুঝতেই পারছেন, এই সময়কালে নিজেকে বিকল্পহীন করে তুলেছেন তিনি।

সিরিজের ট্রফি হাতে মাশরাফি; Image Source: AFP

মাশরাফি জাদু

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ যখন টেস্টে খাবি খাচ্ছিলো, তখন একটাই ভরসা ছিলো, মাশরাফি গিয়ে দলে যোগ দিলে যদি কিছু হয়। মাশরাফি দেশ ছাড়ার আগেও এগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কোনো জাদু করতে পারবেন না। তবে সবার মনোবল বাড়ানোর জন্য পৌঁছানোর পরই কথাবার্তা বলবেন। প্রথম ওয়ানডেতেই বোঝা গেলো, মাশরাফির কথাবার্তায় কাজ হয়েছে। তিনি স্বীকার করুন আর নাই করুন, একটা জাদু তো আছেই। নইলে একেবারে হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটি দল কী করে অন্য ফরম্যাটে এসেই এমন বদলে যায়?

মাশরাফি নিজে শেষ ম্যাচের পরও এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি অবশ্য বলেছেন, এটা মনস্তাত্তিক একটি ব্যাপার। খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন বলেই এই জয় এসেছে বলে তার ধারণা।

মাশরাফি বলছিলেন,

ক্রিকেট একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা। আমার মনে হয়, প্রথম ম্যাচ দিয়েই ছেলেরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ম্যাচ অবশ্যই আমাদের জন্য হতাশার ছিল। তবে সেদিন যেটা বলেছিলাম, ৯৯ ওভার নিয়ন্ত্রণে রেখে স্রেফ ১ ওভারে আমরা কাজটা শেষ করতে পারিনি। আজকে আমাদের পারফরম্যান্স ছিল পেশাদারী।

মাশরাফি অবশ্য কেবল খেলোয়াড়দের মানসিক সমর্থন দিয়ে বসে থাকেননি। বল হাতেও তিনি ছিলেন জাদুকরী। এই সিরিজের সেরা বোলার ছিলেন তিনি। দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন দলের জয়। প্রমাণ হয়েছে, এখনও ফুরিয়ে যাননি বোলার মাশরাফি।

দলের ভরসা এখনও এই সিনিয়ররা; Image Source: Facebook

সিনিয়ররাই ভরসা

এই ব্যাপারটা একাধারে বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর এবং খারাপ খবর। সিনিয়ররা সবাই বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আগে ফর্মে আছেন, এটা অবশ্যই ভালো খবর। কিন্তু বিপরীতে খারাপ দিকটা হলো, পারফরমারদের মধ্যে জুনিয়রদের কোনো দেখাই নেই। একমাত্র মুস্তাফিজ ছাড়া কোনো তরুণ ক্রিকেটার নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না। বিশেষ করে ব্যাট হাতে জুনিয়রদের পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক।

সিরিজে সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন, এদের প্রভাব কতটা বেশি ছিলো। তামিম ইকবাল ছিলেন দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান স্কোরার। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিলো সাকিব আল হাসানের-১৯০। এ ছাড়া বাংলাদেশের দু জন মাত্র ব্যাটসম্যান তিন ম্যাচে মোট শতাধিক রান করেছেন-মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। দু’জনই একটি করে ফিফটি করেছেন। তবে ফিফটি দিয়ে বোঝা যাবে না এই দু’জনের কৃতিত্ব। ছোট ছোট ইনিংস খেলে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন। আরেক সিনিয়র মাশরাফি ছিলেন সিরিজের সেরা বোলার।

সিনিয়রদের এই পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এখন জুনিয়রদের যে একটু এগিয়ে আশা দরকার, সেটা স্বয়ং মাশরাফি সিরিজ শেষে বলেছেন। তিনি বলছিলেন,

‘তামিম, সাকিব, মুশি, রিয়াদ সবাই খুব ভালো খেলেছে। এখন জুনিয়রদের একটু এগিয়ে আসতে হবে। ৩ ম্যাচেই বোলারদের পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বেশ ভালো দল। তবে আশা করি, আমরা শুরুটা ভালো করতে পারবো। এরপর, কে জানে!’

সিরিজ জয়ের পরের আনন্দ; Image Source: AFP

বিদেশে ‍জিততে শিখছি

বিদেশে বাংলাদেশের জিতে শেখাটা খুব জরুরী ছিলো। সামনে এশিয়া কাপ; বিদেশের মাটিতে। এরপর বিশ্বকাপ, সেটাও বিদেশে। এই টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো করার জন্য বিদেশে ভালো করার অভ্যাসটা গড়ে তোলা দরকার ছিলো। বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের রেকর্ড একদমই ভালো কিছু না।

এ অবধি বাংলাদেশ মোট ২৯টি সিরিজ খেলেছে দেশের বাইরে। এর মধ্যে এবারেরটি সহ মোট ৫টি সিরিজ জিতেছে তারা। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর আগে চারটি সিরিজ জয়ই এসেছে দুর্বল প্রতিপক্ষে বিপক্ষে। ২০০৬ সালে জিতেছিলো বাংলাদেশ কেনিয়ার বিপক্ষে, পরের বছর ছিলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়। ২০০৯ সালে ধর্মঘটে গিয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। তখন বিকল্প দলের বিপক্ষে ছিলো বাংলাদেশের একটি সিরিজ জয়। একই বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছিলো আরেকটি সিরিজ জয়। তার ৯ বছর পর এবার এলো সবচেয়ে বড় জয়টি।

গুণ ও মানের দিক থেকে এবারের জয়টাই সবচেয়ে বড়। আর এবারের জয়টাকে খেলোয়াড়রাও তাই এগিয়ে রাখছেন। এই সিরিজ জয়ের পর মাশরাফি নিজেই বলেছেন, এই জয়টা খুব দরকার ছিলো। তবে তিনি এখনও আরও কিছু উন্নতির জায়গা দেখছেন,

যদি গত ৩-৪ মাসের পারফরম্যান্স দেখেন, এই সিরিজ জয়টা আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল। এটা অবশ্যই এশিয়া কাপের আগে আমাদের জন্য ভালো হলো। তবে কিছু জায়গায় আমি মনে করি, এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে। সিরিজ জেতা মানেই তো সব না। অনেক জায়গায় এখনও অনেক উন্নতির দরকার, যেগুলো এখন আমরা পারছি না। ফিল্ডিংয়ে মনে হয়েছে অনেক উন্নতি প্রয়োজন। এছাড়া ব্যাটিংয়ে কিছু জায়গা আছে, বোলিংয়েও কিছু জায়গা আছে। উন্নতি করতে হবে।

Related Articles