Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তখনকার দিনে ইচ্ছেমতো অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া-নেওয়া হতো: ডেরেক প্রিঙ্গেল

ইংল্যান্ডের ম্যাচে ধারাভাষ্যকক্ষে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন লম্বা চওড়া এক শ্বেতাঙ্গ। গায়ের রঙ অবশ্য কিছুটা তামাটে ধরেছে। জেমস  অ্যান্ডারসনের উইকেটগুলো নেওয়া দেখে যেন ফেটে পড়ছিলেন। তা হবেই না কেন, নিজেও তো পেসার ছিলেন! যদিও গতির দানব নয়, ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির শরীরে মিডিয়াম পেসে গতির চেয়ে সুইং আর লাইন-লেন্থে চোখ থাকতো। চোখে এখন চশমা এঁটেছেন। ভাব এসেছে বিশ্লেষকের। আগে ইংলিশ দলের হয়ে মাঠ দাপিয়েছেন, কিংবদন্তি ইয়ান বোথামের সতীর্থ ছিলেন; জুটিও বেঁধেছেন অনেকবার।

ধারাভাষ্যকার ডেরেক প্রিঙ্গেল; Image Source: AP

যাকে নিয়ে এত কথা তার নাম ডেরেক প্রিঙ্গেল। ১৯৮২ সালে ইংলিশ দলে অভিষেকের পর খেলেছেন ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। যদিও দলে খুব নিয়মিত তিনি ছিলেন না, কারণ তখনকার জামানা ছিল অন্যরকম। আগের ম্যাচে যতই ফুল ফোটাও, পরের ম্যাচে খারাপ খেলেছ কী মরেছ। সরাসরি দল থেকে বাদ। তারপরও কিভাবে কিভাবে যেন ডেরেক খেলে ফেলেছিলেন ৩০টি টেস্ট আর ৪৪টি ওয়ানডে ম্যাচ। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর নিজের চেষ্টায় হয়েছিলেন অলরাউন্ডার। তারই ধারাবাহিকতায় টেস্টে যেমন ৭০ উইকেট আছে, ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে নামা এই ক্রিকেটারের রয়েছে ৬৯৫ রান। ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৪৪ ম্যাচে সমান ৪৪ উইকেট। ব্যাট হাতে রান ৪২৫।

সম্প্রতি ডেরেক প্রিঙ্গেল কথা বলেছেন নিজের সময়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের অবস্থা, কপিল দেব-মহিন্দর অমরনাথদের স্বর্ণালী যুগ, ইয়ান বোথাম আর নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে। তার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে সেই সময়ের ক্রিকেট যুদ্ধের রেশও।

১৯৮৬ সালে টেক্সাকো ট্রফি ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন আপনি। সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুই দলের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে। আসলে ঐ সময়ে ইংল্যান্ডের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল? ঐ সময়ে তো ডেভিড গোয়েরের অধিনায়কত্বসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

ডেরেক প্রিঙ্গেল: আমার মনে হয় একবার যখন আমরা টেক্সাকো ওয়ানডে সিরিজ জিতে গেলাম, তখন আর গোয়েরের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু লর্ডসে যখন আমরা প্রথম টেস্টে হেরে গেলাম তখন সে বরখাস্ত হলো, মাইক গ্যাটিং দায়িত্ব পেলেন। আমার মনে হচ্ছিলো সে উইন্ডিজ সফরে তাদের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে গিয়ে চাপের মধ্যে ছিল। আমার কাছে দলের মানসিকতা স্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমি শুধু টেস্ট ম্যাচের আগে অনুশীলন করেছি আর ম্যাচের দিন খেলতে নেমে গেছি।

উইন্ডিজ কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডকে বল করছেন প্রিঙ্গেল; Image Source: Getty Image

যখন আপনাদের কাছে খবর এলো যে গোয়েরের যায়গায় গ্যাটিং দায়িত্ব পাচ্ছেন, আপনারা কি অবাক হয়েছিলেন?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: খানিকটা তো অবাক হয়েছিলামই। কিন্তু উইন্ডিজ সিরিজে যখন আবারও একই কাজ হলো, আমি অবাক হইনি। আমি সত্যিই জানি না আসলে। ঐ সময়ে তো যে কাউকে যখন তখন দায়িত্ব বসিয়ে দেওয়া যেত, আবার সরিয়েও নেওয়া যেত। এগুলো খুব স্বাভাবিক ঘটনা ছিল তখন।

লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ড সেবার খুব দ্রুত কিছু উইকেট হারায়। সেখান থেকে আপনি এবং গ্রাহাম গুচ বড় জুটি গড়েন। সেই ম্যাচের কোনো স্মৃতি আছে?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: আমি সেই ম্যাচে আমার সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস (৬৩) খেলেছিলাম। আমি ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলাম, যেটা কি না আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তবে আমার অলরাউন্ডার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। সে কারণেই আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানতাম গ্রায়াম অনেক ভালো ব্যাট করে। তাছাড়া আগের বছরেই সে ইংল্যান্ড দলে ফিরেছিল। সে দারুণ ক্রিকেটার ছিল। যার সাথে ব্যাট করতে নামলে আপনি অনুপ্রাণিত হবেন, বড় জুটিও হবে।

ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের তালুবন্দী ব্যাটসম্যান ডেরেক প্রিঙ্গেল; Image Source: PA photos

লর্ডসে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরির দিন দিলীপ ভেংসরকারের কারণেই ছোট হলেও একটা লিড নিতে পেরেছিল ভারত দল…

ডেরেক প্রিঙ্গেল: আমার মনে  আছে, ১৯৮২ সালে আমি প্রথম দিলীপ ভেংসরকারকে দেখেছিলাম। সুনীল গাভাস্কারের পর সে-ই ছিল একমাত্র ব্যাটসম্যান যাকে আমরা সবাই আউট করতে চাইতাম। সে এবং মহিন্দর অমরনাথ। আমরা দিলীপকে বড়মাপের ক্রিকেটার হিসেবে দেখতাম। সে ফ্রন্টফুটে ভালো খেলত। কিন্তু ইংল্যান্ডে এটা কঠিন ছিল। তারপরও সে পারতো, লড়াই করতো।

দ্বিতীয় ইনিংসে তো ইংল্যান্ড ছোটখাটো একটা ধ্বসের মধ্যে পড়েছিল।

ডেরেক প্রিঙ্গেল: কপিল দেব দারুণ একটা বল করেছিল আমাকে। বলটা উঠে এসেছিল হুট করে। যদি আপনি বলটা ছেড়ে দেন তাহলে আপনি ভাগ্যবান। সেটা না করলে কানাই লাগিয়ে মারুন, যেটা আমি করেছিলাম। কিরন মোর বলটা তালুবন্দী করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে কপিল চার উইকেট নিয়েছিল। সে খুব ভালো বোলার ছিল।

লিডসে পরের টেস্টে কতটা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল ব্যাটসম্যানরা?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: ওই সময়ে হেডিংলির উইকেট ফেটে যেত। আর ফাটা উইকেটে উইকেট বেশি হারাতে হতো। বল এদিক-সেদিক, উপর-নিচ… সব মিলিয়ে ব্যাট করাটা ছিল খুব কঠিন ব্যাপার। বিশেষ  করে ভালো বোলারদের সামনে। মদন লাল ও কপিল দেব বেশ ভালো বল করছিল।

হেডিংলির পুরনো আচরণ বলে, যদি সূর্য আসে তাহলে সেখানে বোলারদের জন্য তেমন কিছু থাকতো না। কিন্তু যদি মেঘ হয় তাহলে বোলারদের জন্য পোয়াবারো। ওই ম্যাচে ভেংসরকার আরও একটা সেঞ্চুরি মারলো, পুরোটা সময় রোদ ছিল!

সিরিজের পরে কী হয়েছিল? আপনি দলে নিজের জায়গাটা শক্ত করতে পারলেন না কেন?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের টেস্ট আমি ইনজুরির  কারণে খেলতে পারলাম না। পরের টেস্টে টেন্ট ব্রিজে খেলতে নেমেছিলাম। কিন্তু সুবিধা করতে পারিনি। যেটা আমি আগেই বলেছি, ঐ সময়ে আপনি যদি ভালো করতে না পারেন তাহলে আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এটাই হয়েছিল। যদিও ভারতের বিপক্ষে আমি ছিলাম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ১৩ উইকেট নিয়েছিলাম। কিন্তু একটা ম্যাচে খারাপ খেলুন, আপনি বাদ।

সাবেক ইংলিশ অধিনায় জন এমবুরের সঙ্গে ডেরেক প্রিঙ্গেল; Image Source: PA photos

দলে আপনি সবসময় একজন অলরাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। সেটা কখনও ইয়ান বোথামের জায়গায় অথবা কখনও তার পাশাপাশি।

ডেরেক  প্রিঙ্গেল: আমরা যখনকার কথা বলছি, তখন তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বোথাম। যখন আমি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খারাপ করলাম, তখন তিনি সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দলে ফিরলেন। এটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি আমাদের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন।

সে সময় ইংলিশ ক্রিকেটে ব্যাটিং -বোলিং দুটোই যারা পারতো, তাদের সবাইকে বোথামের সাথে তুলনা করা হতো। আপনাকেও কি এটা সহ্য করতে হয়েছে?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: না, এই তালিকায় আমি ছিলাম না। আমি যেটা নিয়ে চিন্তিত থাকতাম সেটা হলো আমি এবং বোথাম দুজনে আলাদা ক্রিকেটার। তবে আমি অবাক হতাম যখন দেখতাম আমরা দুজনেই দলে আছি। আমি অবাক হতাম এটা ভেবে যে, আমরা দুজন একসাথে এতগুলো টেস্ট খেলেছি (১১ টেস্ট)। যদি ওয়ানডে দলে দুজন একসাথে থাকতাম তাহলেও আমি এমন অবাক হতাম না, কিন্তু টেস্টে দুজনের একই সঙ্গে সুযোগ পাওয়াটা অবাক হওয়ার মতোই ছিল।

আপনি এক মৌসুমে পাঁচ টেস্টের চারটিতে খেলেছেন চার অধিনায়কের অধীনে। ব্যাপারটা কেমন ছিল?

ডেরেক  প্রিঙ্গেল: সহজ ছিল না (হাসি)।

আপনি কি কখনও  নিজেকে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন?

ডেরেক প্রিঙ্গেল: আমি কখনোই এটা নিয়ে ভাবিনি। আমি কেবল একবারই অধিনায়কত্ব করেছিলাম যে টেস্টে গ্রাহাম গুচ আঙুলের ইনজুরিতে পড়লো। পরের মৌসুমে ইংল্যান্ড নতুন অধিনায়ক পেয়ে যায়।

ফিচার ইমেজ- PA Photos

Related Articles