Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল দুই মঞ্চেরই ম্যাচসেরা যারা

ম্যান অব দ্য ম্যাচ যেকোনো খেলোয়াড়েরই কাঙ্ক্ষিত একটি পুরস্কার, সেটা যদি বিশ্বকাপের মঞ্চে হয় তাহলে তো কথাই নেই। এর সাথে সেটা যদি হয় বিশ্বকাপ ফাইনাল তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এই পর্যন্ত ১১টি বিশ্বকাপ আসরের ১১টি ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ১১ জন খেলোয়াড়। তবে এদের মাঝে ৩ জন খেলোয়াড় একটু ব্যতিক্রম। তারা ফাইনালে সেরা হবার পাশাপাশি সেমি-ফাইনালেও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচের সেরা হওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন একটি অর্জন। একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কীর্তিমান সেই খেলোয়াড়দের দিকে।

মহিন্দার অমরনাথ: ১৯৮৩ বিশ্বকাপ

অমরনাথ ছিলেন কার্যকরী একজন অলরাউন্ডার; Image Source: The Cricket Monthly

সেমিফাইনাল: প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড

ম্যাচে ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ডই। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ২১৩ রানে অল আউট হয়ে গেলেও সেটা ভারত করে ফেলবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। ভারতের পক্ষে সবচেয়ে মিতব্যায়ী বোলিং করেন অমরনাথ, ১২ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়ে আউট করেন ডেভিড গাওয়ার এবং মাইক গ্যাটিংকে।

সেমি-ফাইনালে বোলিংয়ে ২ উইকেট নেবার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে করেছিলেন ৪৬ রান; Image Source: Sportstar – The Hindu

ভারতের ওপেনিং জুটিতে রান আসে ৪৬। ব্যক্তিগত ১৯ রানে শ্রীকান্ত আউট হবার পর মাঠে নামেন অমরনাথ। ৪ রান পরে আউট হয়ে যান আরেক ওপেনার সুনীল গাভাস্কার। ম্যাচে ইংল্যান্ডের ফেরত আসার সম্ভাবনাকে চাপা দেওয়ার জন্য যশপাল শর্মাকে নিয়ে অমরনাথ গড়ে তোলেন ৯২ রানের এক ধীর-স্থির কিন্তু সময়োপযোগী জুটি। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে অমরনাথ আউট হয়ে গেলেও ভারতের জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি।

বোলিংয়ে দুই উইকেটের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে মূল্যবান ৪৬ রান করে অমরনাথ পেয়ে যান ম্যাচসেরার পুরষ্কার।

ফাইনাল: প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

‘বিশ্বকাপ ফাইনালে তখন পর্যন্ত দুবার যে দু’দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা প্রথমে ব্যাটিং করেছে’ – ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হবার পর মনে হচ্ছিল ইতিহাস পাল্টাতে যাচ্ছে। মাত্র ১৮৩ রানে অল আউট হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াই করার ভাবনা ভাবাটাও তো সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিলাসিতা ছিল। তখন পর্যন্ত সেই বিশ্বকাপে এত অল্প রান তাড়া করতে গিয়ে কোনো দল হারেনি, তাছাড়া সেমি-ফাইনালেই পাকিস্তানের ১৮৪ রানের স্কোর উইন্ডিজ টপকিয়ে ফেলেছে মাত্র ৪৮.৪ ওভারেই (তখন ম্যাচ ৬০ ওভারে হতো)। তাছাড়া, তখন পর্যন্ত সেই টুর্নামেন্টে ১২ বার জয়ী হয়েছে পরে ব্যাটিং করা দলটি, যেখানে আগে ব্যাটিং করা দলের জয়ের সংখ্যা ১৪।

রিচার্ডসের এই শটই ম্যাচে ফিরিয়ে আনে ভারতকে; Image Source: ScoopWhoop

দলীয় মাত্র ৫ রানেই গ্রিনিজ আউট হলেও ডেসমন্ড হেইন্সকে নিয়ে সাবলীলভাবেই খেলতে থাকেন আগের ম্যাচে ৮০ রান করা ভিভ রিচার্ডস। দলীয় ৫০ রানে হেইন্স আউট হলেও অন্য প্রান্তে মাত্র ২৭ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৩ রান করা রিচার্ডস ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ঝামেলাটা হয়ে গেলো ২৮ তম বলে। মদন লালের একটি বল রিচার্ডস হুক করতে গেলে ক্যাচ উঠে যাওয়ায় পেছন থেকে দৌড়ে এসে এক অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে ভারতকে অক্সিজেন দিলেন অধিনায়ক কপিল দেব। গোমস, লয়েডরা আর পেরে ওঠেননি। মাত্র ১৪০ রানেই অল আউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে একটু প্রতিরোধ গড়েছিলেন জেফরি ডুজন। কিন্তু ২৫ রান করা ডুজনকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন অমরনাথ। পরে আরো ২টি উইকেট নিয়ে ৭ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে সেই ইনিংসেও ভারতের পক্ষে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেন তিনি।

ব্যাটিংয়ে ৮০ বলে ২৬ রানের একটি ছোট ইনিংসের পাশাপাশি বোলিংয়ে ৩ উইকেট– প্রথমবারের মতো কোনো খেলোয়াড় হন সেমিফাইনালের পর ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

অরবিন্দ ডি সিলভা: ১৯৯৬ বিশ্বকাপ

১৯৯৬ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির পর উদযাপনরত ডি সিলভা; Image Source: sportskeeda.com

সেমিফাইনাল: প্রতিপক্ষ ভারত

ম্যাচে সবার আগ্রহ ছিল জয়াসুরিয়াকে নিয়ে। আগের ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৪৪ বলে ৮২ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে মিডিয়ার মনোযোগ বেশ ভালোভাবেই কেড়ে নিয়েছিলেন মাতারা হারিকেন। তবে ভারতের চিন্তার কারণ কেবলমাত্র সেই ইনিংসই ছিল না। গ্রুপ পর্বেই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে শচীন টেন্ডুলকারের ১৩৭ এবং আজহার উদ্দিনের অপরাজিত ৭২ রানের কল্যাণে ভারত ২৭১ রানের মতো পাহাড়সম স্কোর গড়লেও সেটাকে খুব সহজেই পেরিয়ে যাওয়ার পেছনে জয়াসুরিয়ার ৭৬ বলে ৭৯ রানের ইনিংসই ছিল প্রধান কারণ। জয়াসুরিয়া এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে, মনোজ প্রভাকরের মতো বোলারকেও সেই ম্যাচের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি।

অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স- এই নীতিতেই খেলেছিলেন সেদিন ডি সিলভা; Image Source: YouTube

কিন্তু ম্যাচ শুরুর পর হিসেবটা উল্টে গেলো। প্রথম ওভারেই জয়াসুরিয়া আর কালুভিথরানাকে আউট করে শ্রীলঙ্কাকে চমকেই দেয় ভারত। মাঠে নেমে অরবিন্দ ডি সিলভার কাছে চাওয়া ছিল ধাক্কাটাকে সামলে ইনিংস গড়া। কিন্তু কীসের কী? ডি সিলভা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে দিলেন। মাত্র ৪৭ বলে ৬৬ রানের এক ইনিংস খেলে উল্টো ভারতকেই চমকে দিলেন। শ্রীলঙ্কা পেয়ে গেলো ২৫১ রানের লড়াই করার মতো একটা স্কোর।

শচীন ক্রিজে থাকা অবস্থা পর্যন্ত ভারতও কক্ষপথেই ছিল। কিন্তু দলীয় ৯৮ রানে শচীন স্ট্যাম্পিং হবার পর থেকেই ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। মাত্র ১২০ রানেই ৮ উইকেট পড়ে যাবার পর দর্শকদের উম্মত্ত আচরণে ম্যাচ পন্ড হয়ে গেলে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় শ্রীলঙ্কাকে। ব্যাটিংয়ে ৬৬ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে ১ উইকেট এবং ফিল্ডিংয়ে ১টি ক্যাচ ধরার পর ম্যান অব দ্য ম্যাচের ক্ষেত্রে ডি সিলভার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না সেই ম্যাচে।

ফাইনাল: প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া

যে মুহূর্তে মাঠে নামলেন সেই মুহূর্তে সব কিছুই তার বিপক্ষে। ২৩ রানেই পড়ে গিয়েছে ২ উইকেট, ২৪১ রান তাড়া করতে গিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো ম্যাচে পরিস্থিতিকে বিপর্যয় বললেও ভুল বলা হবে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইতিহাস। এর আগে ৫টি বিশ্বকাপের কোনটিতেই পরে ব্যাটিং করা দল জিততে পারেনি– এই তথ্যটা ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস কমানোর জন্য যথেষ্ট।

তবে প্রথম বলেই বোলারের পাশ দিয়ে ড্রাইভ করে ৩ রান নিয়ে ডি সিলভা নিশ্চিত করলেন– আর যা কিছুই হোক না কেন, অন্তত আত্মবিশ্বাসের অভাবটা তার ভেতরে সেই মুহূর্তে নেই। পরের তিনটা ঘন্টা ধীর-স্থিরভাবে খেলে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের সবচাইতে মূল্যবান ইনিংসটাই খেলে ফেললেন অরবিন্দ ডি সিলভা। অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংস খেলার পথে চার মেরেছিলেন ১৩টি।

ফাইনাল ম্যাচ জিতিয়ে ফেরার পর ডি সিলভা; Image Source: ESPNcricinfo.com

এর আগে বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এর মাঝে সেই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা দুই ব্যাটসম্যান মার্ক টেইলর (৭৩) আর পন্টিং (৪৫) ছাড়াও ছিলেন ইয়ান হিলি। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে ২টি ক্যাচ নেওয়ায় পরিণত হয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে সব্যসাচী পারফর্মার হিসেবে।

ম্যান অব দি ম্যাচের পুরষ্কার সিলভা বাদে আর কার হাতে মানায়?

শেন ওয়ার্ন: ১৯৯৯ বিশ্বকাপ

১৯৯৯ বিশ্বকাপে শেন ওয়ার্ন; Image Source: Getty Images

সেমিফাইনাল: প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা

সবকিছু ঠিকভাবে চললে অস্ট্রেলিয়ার এই পর্যন্তই আসার কথা ছিল না। সুপার সিক্সে ২৭১ রান তাড়া করতে গিয়ে স্টিভ ওয়াহর অপরাজিত ১২০ রানের ইনিংসের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া জয় পেলেও সেই জয়টাতে ছিল কিছুটা সৌভাগ্যের ছোঁয়া। স্টিভ ওয়াহ যখন ৫৬ রানে তখনই শেষ হয়ে যেতে পারতো সেই ইনিংস, হয়নি হার্শেল গিবসের কল্যাণে। মুঠোতে আসা ক্যাচটাও হাতে ধরে ফেলে উদযাপন করতে গিয়ে ফেলে দেন তিনি। ক্যাচটা ধরতে পারলে হয়তো সেই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়ে যেতেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সেই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা গিবস।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেট পাবার পর উল্লসিত ওয়ার্ন; Image Source: IMDb

সেমিফাইনাল শুরু হবার পর মনে হলো অস্ট্রেলিয়ার সেমিতে আসাটা আসলেই ভাগ্যের জোরে। মাত্র ২১৩ রানেই অল আউট হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার জয় পাওয়াটা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। ১১তম ওভার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেট শূন্য।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকান দুর্গে প্রথম আঘাত হানলেন ওয়ার্ন। টানা ৮ ওভারের স্পেলে উইকেট নিলেন ৩টি, ৪টি মেইডেন ওভারসহ রান দিলেন মাত্র ১২। দ্বিতীয় স্পেলে এসে আউট করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সেই ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার জ্যাক ক্যালিসকে।

অনেক নাটকীয়তার পর ম্যাচ টাই হলেও বাইলজ অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে ফাইনালে যায় অস্ট্রেলিয়াই, আর লো স্কোরিং ম্যাচে নাটকীয় বোলিংয়ের সুবাদে ম্যাচসেরা হন ওয়ার্ন।

ফাইনাল: প্রতিপক্ষ পাকিস্তান

গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তখন পাকিস্তানের রেকর্ড ছিল বাজে। ফাইনালে তাই অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েই খুশি হয়েছিল পাকিস্তান সমর্থকেরা। কিন্তু ম্যাচ শুরু হবার পর হিসেবে গড়মিল হয়ে গেলো। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১৩২ রানেই অল আউট হয়ে গেলো পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। শুরুটা করছিলেন ম্যাকগ্রা এবং ফ্লেমিংই। কিন্তু মাঝের লাইন আপটা ছাঁটার কাজটা করেন ওয়ার্ন। পাকিস্তানের পক্ষে সেই ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা ইজাজ আহমেদ (২২), ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই মঈন খান এবং শহীদ আফ্রিদি আর অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামকে আউট করে পাকিস্তানকে আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেননি ওয়ার্ন।

ফাইনালে ওয়ার্নের পারফর্মেন্স; Image Source: ESPNcricinfo.com

মাত্র ২০ ওভারেই ম্যাচ শেষ করে দিলেও ৩৩ রানে ৪ উইকেট পাওয়া শেন ওয়ার্নই হন ম্যাচ সেরা। একইসাথে পরিণত হন স্পেশালিষ্ট বোলার হিসেবে ফাইনালের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এর আগে অমরনাথ এবং ওয়াসিম আকরাম ফাইনালের ম্যাচসেরা হলেও তাদের সেরা হবার পেছনে ব্যাটিংয়ের ভূমিকাও ছিল।   

 

This article is in Bangla language. This is about the performances of those player who won tha man of the match award in semifinal and final in a row. References are given inside as hyperlinks.

Feature Image:  The Buzz Diary

Related Articles